মানব আচরণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সামাজিক আন্তঃক্রিয়া ও সৃষ্টিশীল অভিব্যক্তি মানব আচরণের কিছু রূপ

মানব আচরণ বলতে সমগ্র জীবনব্যাপী একক ব্যক্তি বা দলগতভাবে অভ্যন্তরীণ বা বহিরাগত উদ্দীপনার মানুষের সম্ভাব্য বা অভিব্যক্ত (মানসিক, শারীরিকসামাজিক) প্রত্যুত্তর প্রদানের সামর্থ্যকে বোঝায়।[১][২] কোনও একক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, মেজাজবংশাণুগত চরিত্রের বিশেষ বিশেষ দিক স্থিতিশীল থাকলেও যখন সে জীবনের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে, যেমন শৈশব থেকে কৈশোর হয়ে প্রাপ্তবয়স্কপ্রাপ্তি, কিংবা মাতৃপিতৃত্বঅবসরগ্রহণ, তখন তার আচরণও পরিবর্তিত হয়।[১]

অধিকন্তু, আচরণ চিন্তা ও অনুভূতি দ্বারা চালিত হতে পারে, যা ব্যক্তিগত অন্তরাত্মার সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, এবং এভাবে মনোভঙ্গিমূল্যবোধ জাতীয় ব্যাপারগুলি উন্মোচন করতে পারে। মানব আচরণ মনস্তাত্বিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। যেহেতু ব্যক্তিভেদে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়ে থাকে, তাই ভিন্ন ভিন্ন কর্মকাণ্ড ও আচরণের সৃষ্টি হয়। যেমন অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের তুলনায় বহির্মুখী ব্যক্তিদের সামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন উৎসবে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।[৩]

মানুষের আচরণ (অন্য যেকোনও জীবের মতো) একটি পরিসরের মধ্যে অবস্থান করে। কিছু কিছু আচরণ খুব সাধারণ, আবার কিছু কিছু আচরণ ব্যতিক্রমী ধরনের। কিছু কিছু আচরণ গ্রহণযোগ্য, আবার কিছু কিছু আচরণ গ্রহণযোগ্য সীমা লঙ্ঘনকারী হতে পারে। কোনও আচরণের গ্রহণযোগ্যতা সমাজনির্ধারিত মানের উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। এটিকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যার আংশিক কারণ হল মানব সমাজের অন্তর্নিহিত প্রথানুবর্তী প্রকৃতি। সুতরাং সমাজনির্ধারিত মানগুলিও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যেখানে মানুষেরা চাপে পড়ে এমন কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে ও এমন কিছু আচরণ প্রদর্শন করতে বাধ্য হয়, যেগুলিকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য গণ্য করা হয়। তবে একই আচরণ সমাজভেদে বা সংস্কৃতিভেদে গ্রহণযোগ্য কিংবা অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।

মানব আচরণকে অনেকগুলি উচ্চশিক্ষায়তনিক শাস্ত্রে অধ্যয়ন করা হয়, যেমন মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থশাস্ত্র ও নৃবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানে আচরণ বলতে ব্যাপক অর্থে সব ধরনের মানব কর্মকাণ্ডকে নির্দেশ করা হতে পারে, এমনকি যেসব কাজ কোনও ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করে করা হয় না, সেগুলিও। সামাজিক আচরণ হল মানব আচরণের একটি উপবিভাগ যেটিতে অপর ব্যক্তির প্রতি কৃত কাজের হিসাব নেওয়া হয়, এবং যেটি সামাজিক আন্তঃক্রিয়াসংস্কৃতির তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবসহ নৈতিকতা, সামাজিক পরিবেশ, কর্তৃত্ব, মনজয়দমন, ইত্যাদি বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kagan, Jerome, Marc H. Bornstein, and Richard M. Lerner. "Human Behaviour." Encyclopædia Britannica. 2020. Retrieved 5 June 2020.
  2. Farnsworth, Bryn. 4 July 2019. "Human Behavior: The Complete Pocket Guide." iMotions. Copenhagen. So What Exactly is Behavior?
  3. Argyle, Michael, and Luo Lu. 1990. "The happiness of extraverts." Personality and Individual Differences 11(10):1011–17. ডিওআই:10.1016/0191-8869(90)90128-E.