এম এন দস্তুর
মিনু নরিম্যান দস্তুর | |
---|---|
জন্ম | ১৮ মার্চ ১৯১৬ |
মৃত্যু | ৫ জানুয়ারি ২০০৪ | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা | কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি |
সন্তান | নরিম্যান এম দস্তুর(পুত্র) রুস্তম এম দস্তুর (পুত্র) জেরো শিরয় রনজি (কন্যা) |
টেমপ্লেট:Infobox engineering career |
ড .মিনু নরিম্যান দস্তুর (এম এন দস্তুর নামে সংক্ষেপে সুপরিচিত) (১৮ মার্চ ১৯১৬ – ৫ জানুয়ারি ২০০৪) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। একজন প্রকৃত দূরদর্শী ও জাত নেতা হিসাবে তিনি ভারতে ও বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রে পরামর্শক ব্যবসার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ভারতে লভ্য দেশীয় দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে এবং তার যথোপযুক্ত সদ্ব্যবহারে তাকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করে বিদেশি টেকনোলজি আমদানির পথ রুদ্ধ করা তাঁর দর্শন ছিল।[১][২] ইস্পাত ক্ষেত্রে গতি আনতে জাতীয় ইস্পাত নীতির দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা রূপায়নে তিনি ছিলেন ভারত সরকারের একজন প্রথম "ধারক পৃষ্ঠপোষক" (retainer consultant)।[৩]
জীবনী
[সম্পাদনা]ড. দস্তুরের জন্ম ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মার্চ বৃটিশ ভারতের বোম্বে প্রেসিডেন্সির অধুনা মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ের এক পার্সি (পার্সিয়ান জরথুষ্ট্রীয় হতে আগত) পরিবারে। তিনি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক হন এবং স্নাতক শিক্ষানবিশ হিসাবে তিনি জামশেদপুরের টাটা স্টিলে (পূর্বতন টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেডে) যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।[৪] বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি জে এন টাটা স্কলারশিপ লাভ করলে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে যান। শিক্ষান্তে তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ধাতুবিদ্যায় ডক্টরেট (ডি.এসসি) ডিগ্রি লাভ করেন। কিংবদন্তি ধাতুবিজ্ঞানী ড.জন চিপম্যানের অধীনে ইস্পাতনির্মাণ বিষয়ে গবেষণা করে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেন।[২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]শিক্ষান্তে পরবর্তী সাত বৎসর ড.দস্তুর যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত শিল্পের পুরোধা এইচ এ ব্রাসের্ট অ্যান্ড কোম্পানি এবং রামসেয়র অ্যান্ড মিলার ইনকর্পোরেটেড সহ বহু নামী সংস্থার হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইস্পাত কারখানার স্থাপনা ও তার ডিজাইনের পরামর্শক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। ‘ব্রাসের্ট ওর ড্রেসিং ল্যাবরেটিজ’-এর পরিচালক হিসাবে তিনি বর্তমানের খাদ চুল্লি পদ্ধতির পূর্বসূরি ব্রাসের্ট ডাইরেক্ট রিডাকশন প্রসেস উদ্ভাবন করেছেন। [৪] ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ড.দস্তুর মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএইড-এর প্রকল্পে ভারতের ভদ্রাবতীতে মাইশোর আয়রন অ্যান্ড স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেডের আধুনিকিকরণ ও সম্প্রসারণের জন্য পরামর্শ বিশেষজ্ঞ হয়ে ভারতে আসেন। সেসময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সংস্পর্শে আসেন। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তার দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ভারতে ফিরে আসার অনুরোধ করেন এবং তার সুগভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় ভারতের ইস্পাত শিল্পের প্রভূত অগ্রগতি হবে। ড.দস্তুর সঙ্গে সঙ্গেই সম্মতি দেন এবং ঠিক পরের বছরেই ভারতে ফিরে আসেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে কলকাতায় শুরু করেন ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের, প্রকৌশল পরামর্শদাতা সংস্থা - এম এন দস্তুর অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড।
সংস্থাটি শুরুর থেকেই দেশের ইস্পাত শিল্পে অগ্রগতির এবং আত্মনির্ভরতা অর্জনে প্রভূত সহায়তা করেছে। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী ছিলেন। স্বাধীনতা লাভের অব্যাহতি সময়ের কেন্দ্রীয় পরিকল্পিত অর্থনীতি যখন বিশ্বায়নের ফলে অবাধ হতে চলেছে, তখন তিনিও তার পেশাগত অভিজ্ঞতায় ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তির বিভিন্ন দিকে পরামর্শদানে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিতে থাকেন এবং পরিকল্পিত ভাবে পরিষেবার ক্ষেত্রের পরিধিও বাড়িয়ে নেন। তার প্রতিষ্ঠান জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে সহায়ক সংস্থা তথা সাবসিডিয়ারি এবং টোকিও শহরে একটি অফিস খোলে।।
অবদানসমূহ
[সম্পাদনা]ধাতুবিদ্যায় ড.দস্তুরের অসীম পাণ্ডিত্য ছিল। ভারতে ও দেশের বাইরের ইস্পাত শিল্প ও প্রযুক্তির উপর ২৮০ টির বেশি গবেষণাপত্র রচনাও প্রকাশ করেন।
ড.দস্তুর ভারতে ধাতুবিদ্যায় শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে তার সহপাঠী ধাতুবিজ্ঞানী দারা পিরোজশ আন্তিয়াকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেটাল'স প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেন।
ড.দস্তুর ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ধাতুবিদ্যায় উচ্চতর গবেষণার জন্য বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে নিজের অর্থে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেন, যেটি এখন তার নামাঙ্কিত - ড.এম এন দস্তুর স্কুল অফ মেটেরিয়াল সায়েন্স।[৫]
ড.দস্তুর বিভিন্ন সময় ভারত সরকারের ভারতীয় ইস্পাত মিশন ও কমিটির সদস্য হিসাবে বিদেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ইস্পাত মিশন সোভিয়েত রাশিয়ায় এবং ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইস্পাত মিশনে চিনে যান।
এছাড়াও তিনি ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ হতে তিন বৎসর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জাতীয় কমিটির এবং ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ হতে দুই বৎসর ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে বিজ্ঞান উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন।[৪]
সম্মান ও পুরস্কার
[সম্পাদনা]ড.দস্তুর ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের বহুমূল্য পরামর্শদানে দেশে ও বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।
- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেটাল'স হতে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে জে আর ডি টাটা স্বর্ণপদক।
- আমেরিকান সোসাইটি ফর মেটাল'স হতে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।
- ব্রাসেলের ইউরোপীয়ান মার্কেটিং রিসার্চ সেন্টার হতে "সার্টিফিকেট অফ অনার।
- কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে সাম্মানিক ডি.এসসি।
- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেটাল'স হতে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে আইআইএম প্লাটিনাম পদক।
- বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি হতে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দ আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]ডক্টর দস্তুর ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি সোমবার সকালে কলকাতায় ৮৭ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন। [১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "MN Dastur passes away"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৪।
- ↑ ক খ "Engineering, metallurgy doyen passes away"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৪।
- ↑ "Pioneer Steel Consultant MN Dastur passes away"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৪।
- ↑ ক খ গ "M.N.Dastur & Company Private Limited - About the Founder"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৪।
- ↑ "Dr M N Dastur School of Material Science & Engineering"। ২০২২-০৬-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১৯।