কুন্দন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কুন্দন হল রত্নপাথর সমৃদ্ধ ভারতবাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অলঙ্কারের একটি ঐতিহ্যবাহী রূপ। এগুলি সাধারণত সুন্দর নকশা যুক্ত রত্নপাথরের কণ্ঠহার, যেখানে পাথর এবং তার স্থাপনের মধ্যে সোনালি পাতা থাকে। পদ্ধতিটি রাজস্থান ও গুজরাটের রাজদরবার থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। এটি ভারতে তৈরি এবং ব্যবহার করা গহনাগুলির একটি পুরানো রূপ।[১][২] কুন্দন শব্দের অর্থ হল অত্যন্ত পরিশোধিত সোনা এবং গলিত সোনার একটি অত্যন্ত পরিশোধিত ও খাঁটি রূপ।

কুন্দন

রাজস্থানের জয়পুর শহরটি ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের কুন্দনের কেন্দ্র হয়ে আছে।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ভারতে কুন্দন জুয়েলারির উৎপত্তি অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে।[৩] কুন্দনের ব্যবহার রাজস্থানের রাজদরবারে শুরু হয়েছিল এবং তারপর মুঘল যুগে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল।[৪] বছরের পর বছর ধরে, রাজদরবারের কুন্দন গহনাগুলিকে রাজস্থান, বিহার এবং পাঞ্জাবে সফলভাবে রুপোর গয়নায় অনুলিপি করা হয়েছিল এবং তার ফলে সেগুলি সাধারণ মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৫]

নববধূর ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল কুন্দনের গহনা। থাপ্পা এবং রাস রাওয়া সহ ঐতিহ্যবাহী গহনাগুলির পুনরুজ্জীবন ঘটছে।[৬] অতি সম্প্রতি, ২০০৮ সালের মহাকাব্যিক জোধা আকবর চলচ্চিত্রে, ঐশ্বর্যা রাই দ্বারা চিত্রিত প্রধান চরিত্রটিকে ব্যাপকভাবে কুন্দন গহনা পরা দেখানো হয়েছিল, এতে রাজস্থানী রাজপরিবারের মধ্যে এর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছিল।[১]

২০০৬ সালে, "আমেরিকান ডায়মন্ড" এবং কুন্দন জুয়েলারী ভারতীয় গহনার বাজারে পরিমান এবং বাজার মূল্য উভয় ক্ষেত্রেই বৃহত্তম অংশে (৭৩ শতাংশ) অবদান রেখেছিল।[৭]

প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

কুন্দন জুয়েলারী তৈরি করা হয় হীরার সঙ্গে উজ্জ্বল বহু রঙের রত্নপাথর ব্যবহার করে। চমৎকার নকশা অনুযায়ী খাঁটি সোনা বা নকল ধাতুর ভিত্তির ওপর আছাঁটা হীরাকে যত্ন সহকারে আকার দিয়ে বসানো হয় এবং তার সঙ্গে মানানসই রত্নপাথর বসিয়ে নকশা সম্পূর্ণ করে গহনা তৈরি হয়।[৪] বিস্তৃত প্রক্রিয়াটি ঘাট নামক মূল কাঠামো দিয়ে শুরু হয়। তারপরে, পাঢ় পদ্ধতিটি করা হয়। এই সময় কাঠামোর উপর মোম ঢেলে দেওয়া হয় এবং নকশা অনুযায়ী ঢালাই করা হয়। এর পরে আসে খুদাই প্রক্রিয়া, যখন পাথর বা কাটা রত্নগুলি কাঠামোর মধ্যে বসানো হয়। এর ওপর মীনাকারি করা হয়, যেটি হল নকশার পুঙ্খানুপুঙ্খ বোঝানোর জন্য এনামেল বা কলাই করা। এর পরে হয় পাকাই প্রক্রিয়া, এখানে সোনার পাতা বসানো হয় যেগুলি রত্নগুলিকে কাঠামোর উপর ধরে রাখে; এটি এক ধরনের শীতল ঝালাই যেখানে পালিসের কৌশল ব্যবহার করা হয়। অবশেষে, ছিলাই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে রত্নগুলিকে পালিশ করা হয়।[১]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Royal jewellery of Jodhaa Akbar"The Hindu। ২০০৮-০৬-২০। ২০১৪-০৫-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১৩ 
  2. Kundan Jewellery Let's Know Handicrafts of India, by Amar Tyagi. Star Publications, 2008. আইএসবিএন ১-৯০৫৮৬৩-১৮-৭. p. 32.
  3. Advance, Volume 24, p. 32, Punjab Public Relations Department
  4. "Bedazzled!"The Indian Express। ২০০৭-০৫-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১১-১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Indian folk arts and crafts - the land and the people, by Jasleen Dhamija. National Book Trust, India. 1970. p. 73
  6. This wedding season, gold loses sheen Deeksha Chopra, TNN, The Times of India, 15 November 2009.
  7. Indian Art Jewellery Market Business Standard, Mumbai November 28, 2006.