সর্বভারতীয় মুহাম্মাদান শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অল ইন্ডিয়া মুহাম্মাদান এডুকেশনাল কনফারেন্স বা সমগ্র ভারত মুহাম্মাদান শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলন ছিলো ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আধুনিক ও উদার শিক্ষানীতির প্রচার করে এমন একটি সংস্থা। এটি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যার সৈয়দ আহমেদ খান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১] নিখিল ভারত মুসলিম লীগের জন্মস্থান ছিল অল ইন্ডিয়া মুহাম্মাদান এডুকেশনাল কনফারেন্স। ১৮৮৬ সালে আলীগড়ে সৈয়দ আহমেদ খান প্রতিষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুহাম্মাদান এডুকেশনাল কনফারেন্সের ২০ তম অধিবেশনে মুসলিম লীগের জন্ম হয়।[২] এই সম্মেলন বিভিন্ন শহরে বার্ষিক সভা করত, যেখানে স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতায় শিক্ষার অগ্রগতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হতো।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৮৮৬ সালে, স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলিগড়ে মুহাম্মাদান এডুকেশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৮৯০ সালে এটির নামকরণ করা হয় মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স। ১৮৮৬ সালের ডিসেম্বরে আলীগড়ে সংগঠনের প্রথম সম্মেলন গুপ্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর সভাপতিত্ব করেন মৌলভী সামিউল্লাহ খান। দ্বিতীয় সম্মেলন ১৮৮৭ সালের ডিসেম্বরে লখনউতে শেষ হয়েছিল।[৩]

লক্ষ্যসমূহ[সম্পাদনা]

সম্মেলনের মূল লক্ষ্যসমূহ ছিল:

  • মুসলমানদের মধ্যে পশ্চিমা শিক্ষা উচ্চতর স্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা।
  • মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও প্রদত্ত ইংরেজি বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া এবং এটি সর্বোত্তম উপায়ে পরিচালনার উপায় খুঁজে বের করা।
  • ধর্মীয় ও অন্যান্য প্রাচ্য শিক্ষায় মুসলিম ধর্মোপদেষ্টাদের দ্বারা স্বেচ্ছায় প্রদত্ত নির্দেশনাকে কিছু শক্তিশালী সমর্থন দেওয়া এবং এটি একটি জীবন্ত উদ্বেগ হিসাবে বজায় রাখার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  • আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার অবস্থা এবং নির্দেশনা পরীক্ষা করা এবং তাদের অগ্রগতির পথে পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের বর্তমান ক্ষয় অবস্থা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া।

১৯০৬ সালের সম্মেলন[সম্পাদনা]

স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, সর্বভারতীয় মুহাম্মাদান শিক্ষা সম্মেলনের প্রতিষ্ঠাতা

বঙ্গভঙ্গের (১৯০৫) বিরুদ্ধে কংগ্রেস সমর্থিত আন্দোলনের পর শাহবাগে একটি সর্বভারতীয় মুহাম্মাদান শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, তখন ১৯০৬ সালে শাহবাগ ছিলোপূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী।[৪] সম্মেলনটি স্পন্সর পেয়েছিলো ঢাকার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ দ্বারা। সম্মেলনটি ২৭ ডিসেম্বর ১৯০৬ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং ২৯ ডিসেম্বর ১৯০৬ পর্যন্ত শিক্ষা সম্মেলন হিসাবে চলেছিলো। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কলকাতা হাইকোর্টের নবনিযুক্ত বিচারপতি নবাব বিচারপতি শরফুদ্দিন।

১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর সম্মেলনের রাজনৈতিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নবাব ওয়াকার-উল-মুলক। এই অধিবেশনে একটি নিখিল ভারত মুসলিম লীগ (এআইএমএল) গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রাথমিকভাবে অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেসি নামে একটি দল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু, এই প্রক্রিয়ায় নবাব খাজা স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুরের প্রস্তাবিত এবং হাকিম আজমল খানের প্রস্তাবিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ নামটি সভায় সমাধান করা হয়। মুহসিন-উল-মুলকের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত দলের সদস্য হিসেবে সকল প্রতিনিধি নিবন্ধিত ছিলেন এবং জনাব ভিকার-উল-মুলক ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক।[৫]

এআইএমএল ভারতের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম রাজনৈতিক দল। সমকালের তারিখ থেকে সমস্ত ভারতীয় প্রদেশের মুসলমানরা মুসলিম লীগের মূলধারার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ছিলেন, ১৯৪৭ সালে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা না হওয়া পর্যন্ত। পাকিস্তান আমলে আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং আওয়ামী লীগও পার্টির বিলম্বিত উৎপাদন হিসেবে গঠিত হয়েছিল। ইন্দো-পাক-বাংলা উপমহাদেশে সেই দলগুলোর অংশ লীগ আজ পর্যন্ত মুসলিম লীগের ঐতিহ্যের অধিকারী। মুসলমানদের রাজনৈতিক সচেতনতা, আগ্রহ এবং উত্থান অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।

সম্মেলনের স্থান[সম্পাদনা]

ইশরাত মঞ্জিল

যে স্থানে অল ইন্ডিয়া মুহাম্মাদান এডুকেশনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা সকলের কাছে ইশরাত মঞ্জিল নামে পরিচিত। ঢাকার নবাব পরিবারের একটি প্রাসাদ যা পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দান করা হয়েছিল। এই সম্মেলনের ৫ বছর পর ১৯১১ সালে দিল্লি দরবারে বঙ্গভঙ্গ বাতিল করা হয়। ১৯১২ সালে খাজা নবাব স্যার সলিমুল্লার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল লর্ড হার্ডিঞ্জ লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সাথে দেখা করে, ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে একই স্থানে সমবেত হয়েছিলো এবং এই বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। এর উপর ভিক্তি করে বর্তমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই একটি স্থানে কাজ শুরু করে। এখন ইশরাত মঞ্জিল ঢাকার নবাব পরিবারের ঐতিহ্য, খ্যাতি এবং নামকে হারিয়ে ফেলে এবং মধুর ক্যান্টিন নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

প্রতিনিধিদল[সম্পাদনা]

মোট ১৯৫৫ প্রতিনিধি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে অধিকাংশ মুসলিম জমিদার, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন:

  • নওয়াব মুহসিনুল মুল্ক বাহাদুর
  • মুমতাজুল মুল্ক খালিফা সৈয়দ মুহাম্মদ হোসেন, পাতিয়ালা
  • হাকিম মুহাম্মদ আজমল খান, দিল্লি
  • Khan Bahadur Raja Sir Mohammad Ali Mohammad Khan of Mahmudabad
  • H.M. Malek of Nagpur
  • Khan Bahadur Ahmad Muhiuddin of Madras
  • Khan Bahadur Sheikh Gulam Sadik of Amritsar
  • Raja Naushad Ali Khan, Talukder of Audh
  • Mr Nabiullah, Bar at law, Lucknow
  • Syed Zahur Ahmad, lawyer, Lucknow
  • Honourable Khan-Bahadur Nawab Syed Navaab Ali Chowdhury, Zaminder of Mymensingh
  • Khan Bahadur Ali Nawab Chowdhury, Zaminder, Comilla
  • Honourable Moulvi Khan Bahadur Syed Abdul Majid, District Session Judge, Assam
  • Abdul Karim, School Inspector, Chittagong Division
  • Khan Bahadur Moulvi Syed Muhammad, Inspector General of Registration, Bengal
  • Mr. Sharp, Director of Public Instructions, East Bengal
  • H.P. Mosurior, CIE, Commissioner, Dacca
  • B.C. Allen, Magistrate and Collector, Dacca
  • Mr H Stapleton
  • Mr. Kelp, editor, Bengal Times
  • Colonel J Hardinge, CIE
  • Mr Campbell
  • Rafiuddin Ahmed, Bar-at-law, of Bombay
  • Nizamuddin Ahmed, B.A.B.L.Deputy Commissioner, Berar

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "All-India Muhammadan Educational Conference"global.britannica.com। Encyclopædia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৫ 
  2. Jones, Justin (২৪ অক্টোবর ২০১১)। Shi'a Islam in Colonial India: Religion, Community and Sectarianism (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781139501231 
  3. Hasan (Journalist), Tariq (২০০৬)। The Aligarh Movement and the Making of the Indian Muslim Mind, 1857-2002 (ইংরেজি ভাষায়)। Rupa & Company। আইএসবিএন 9788129108470 
  4. Khan, Zaigham। "Pakistan of the Ismailis"The News International। ১১ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৫ 
  5. Hasan (Journalist), Tariq (২০০৬)। The Aligarh Movement and the Making of the Indian Muslim Mind, 1857-2002 (ইংরেজি ভাষায়)। Rupa & Company। আইএসবিএন 9788129108470 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]