জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(রূপান্তর্জাতিক ইতিহাস থেকে পুনর্নির্দেশিত)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ

জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাস বা জাতিরাষ্ট্রাতিক্রমী ইতিহাস হল ইতিহাস সঙ্কলনের একটি শাখা বা ঘরানা যাতে এমন সব ঐতিহাসিক ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয় যা জাতীয় ইতিহাসে সচরাচর আলোচনা করা হয় না। ইতিহাসবেত্তা আকিরা ইরিয়ের মতে, "জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাসকে জাতীয় গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়া বিভিন্ন আন্দোলন এবং শক্তির অধ্যয়ন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে"।[১] মার্কিন বিদ্যার সূত্র ধরে এই শব্দটি সেই সকল ইতিহাসবিদরা প্রয়োগ করেছেন যারা জাতীয় ইতিহাসকে ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের জন্য একটি "সহজাত" পরিকাঠামো বলে এড়াতে চেয়েছিলেন এবং এর পরিবর্তে জাতিরাষ্ট্রের পরিকাঠামো ছাড়াই অতীতকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ঐতিহাসিক গবেষণাক্ষেত্রের এই দিক পরিবর্তনটিকে ১৯শ শতাব্দীতে ইউরোপে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থানের বিরোধী হিসেবে দেখা যেতে পারে, কারণ এই আন্দোলন চলাকালেই জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাস শাখাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[২] বৈশ্বিক বা বিশ্ব ইতিহাসের সাথে এর কিছু মিল রয়েছে।

উৎস এবং সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

"জাতীয় সীমাতিক্রমী" ধারণাটি ১৯৯১ সালে আবিষ্কার হয়েছে বলা যেতে পারে। এ সময় মার্কিন বিদ্যার আলোচনায় ইয়ান টাইরেল এই পদ্ধতিটির পথ দেখিয়েছিলেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগে ধারণাটি সত্যই বিকশিত হয়েছিল। সেই থেকে এই শব্দটি ইতিহাসের অঙ্গনে গ্রহণ করেছে। ইতিহাসের সাথে এই ধারণাটি এখনও তুলনামূলকভাবে নতুন হওয়ায় এই শব্দটি কীভাবে সংক্ষিপ্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় সে সম্পর্কে এখনো কোনো ঐক্যমত্য হয়নি। সেবাস্তিয়ান কনরাড, কিরন প্যাটেল, টমাস অ্যাডাম, টমাস বেন্ডার, ড্যানিয়েল টি. রডজার্স এবং আয়ান টাইরেলের কাজগুলিতে অনেক প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক ধারণা উদ্ভূত হয়েছে। আকিরা ইরিয় এবং পিয়েরে-ইয়ভেস সুনিয়ার জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাসকে আধুনিক যুগে সমাজের মধ্যে "সংযোগ এবং প্রচলন" এর সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন। [৩] আয়ান টাইরেল যুক্তি দিয়েছিলেন যে জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাস আনালেস স্কুলের সাথে সম্পর্কিত। [৪]

নীতিমালা[সম্পাদনা]

জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাসের উত্থান হয় মূলত জাতিরাষ্ট্রের সীমিত ও সীমাবদ্ধ পরিসীমার মধ্যে ঐতিহাসিক ঘটনাবলী অধ্যয়নের প্রতি কিছু ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে জাগা ক্রমশ অসন্তুষ্টি থেকে। প্রগতিশীল এবং উদার প্রকৃতির কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীর অনেক ইতিহাসবিদদের দ্বারা গ্রহণ করা এই জাতিরাষ্ট্র ধারণাটি বিংশ শতাব্দীতে একটি বিশ্লেষণমূলক খাঁচায় পরিণত হয়েছে এবং এর অনেকটা ব্যাখ্যা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] একটি নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে কোনও জাতির নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার ফলে কিছু ইতিহাসবিদ কেবল নির্বাচিত এবং কৃত্রিম জাতীয় পরিসীমার মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক বিষয়গুলো এবং বিষয়ের অংশগুলি অধ্যয়ন করতে পেরেছিলেন এবং ইতিহাসবিদরা পরিসীমার বাইরে থাকা ঘটনাদির জটিল অংশগুলোকে উপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাসবিদদের মতে, বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ঘটনাই কেবল একটি জাতীয় পরিসীমায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা এমন একটি গাছের মতো বেড়ে উঠেছিলো যা শিকড় এবং শাখা বিস্তৃত্ব করে, একইভাবে এটিও অন্যান্য দেশ, সাম্রাজ্য এবং জাতির পরিসীমায় প্রসারিত এবং বিস্তৃত হয়। কেবলমাত্র একটি জাতির পরিসীমার মধ্যে এই জাতীয় ঘটনা অধ্যয়ন করার অর্থ সর্বদা কেবল একটি মাত্র শাখা বা তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো অঙ্গ নিয়ে অধ্যয়ন করা।[৫]

জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাস বিশ্বজুড়ে মানুষের ক্রিয়াকলাপ পরস্পর সংযুক্ত রয়েছে এমন মৌলিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ভাষ্যমতে, "উদ্ভাবনগুলো এক জায়গায় বিকশিত হয়েছিল, খনিজগুলি অন্য জায়গায় আবিষ্কার করা হয়েছিল, এবং অন্য জায়গায় উদ্ভিদের চাষ শুরু হয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের উত্সের অবস্থান (গুলি) থেকে অনেক দূরের কোনো জায়গায় সংস্কৃতি ও সমাজ গঠনে প্রভাবিত করে।"[৫]

জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাস কেবল ইতিহাসকে বি-জাতীয়করণ এবং বি-অঞ্চলিকরণ করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে না, বরং এটি অ-রাষ্ট্রীয় ইতিহাসকর্মীদেরকেও বৃহৎভাবে তুলে ধরে। ব্যক্তি এবং অরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি প্রায়শই জাতীয় সীমাতিক্রমী ইতিহাস বিবরণীর কেন্দ্রে থাকে। এটি ইতিহাসের বিকেন্দ্রীকরণের দিকে অধিক জোর দেয়, যার প্রায় অধিকাংশই ইউরোপকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে। এই ইউরোপকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এশিয়ার দেশগুলির জন্য কালানুক্রমিক এবং টার্নিং পয়েন্ট আরোপ করে যার সাথে তাদের তেমন কোনো অর্থবহ সম্পর্ক নেই। বিকেন্দ্রীকরণের আরেকটি অর্থ হতে পারে নতুন কিছু সৃষ্টি এবং এমনকি একাধিক কালানুক্রম সৃষ্টি।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Iriye, Akira (২০০৪)। "Transnational History": 213। জেস্টোর 20081208 
  2. Nils Arne Sørensen (2009) "Den transnationale vending?"i Historisk Tidsskrift Volume 109, Issue 2: 459-472.
  3. Akira Iriye and Pierre-Yves Saunier (2009) Palgrave Dictionary of Transnational History. Basingstoke: Palgrave Macmillan.
  4. Ian Tyrrell (2008) "What is transnational history?"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Ian Tyrell (blog)
  5. Thomas Adam, "Transnational History: A Program for Research, Publishing, and Teaching," in: Yearbook of Transnational History vol. 1 (20198): 1-10.

সাহিত্য[সম্পাদনা]

  • ইয়ান টাইরেল (২০০৭) ট্রান্সন্যাশনাল নেশন। ১৭৮৯ সাল থেকে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস । বেসিংস্টোক: পালগ্রাভ ম্যাকমিলান।
  • নীল আর্ন সেরেনসেন (২০০৯) " ডেন ট্রানজিশন ভেন্ডিং? " হিস্টোরিস্ক টিডসক্রিফ্ট ভলিউম ১০৯, ইস্যু ২: ৪৫৯-৪৭২।
  • টমাস অ্যাডাম, "ট্রান্সন্যাশনাল হিস্ট্রি:আ প্রোগ্রাম ফ রিসার্চ, পাবলিশিং এন্ড টিচিং," ইয়ারবুক অফ ট্রান্সন্যাশনাল হিস্ট্রিতে খন্ড ১ (২০১৮): ১-১০
  • আঞ্চলিক ইতিহাসের বর্ষপুস্তক https://www.fdupress.org/transnational-history-annual-j पत्रकार/