বিষয়বস্তুতে চলুন

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসআদা আল-ফরাজী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসআদা আল-ফরাজী ছিলেন বনু ফাজারা গোত্রের একজন আরব সেনাপতি ছিলেন যিনি উমাইয়া খলিফা প্রথম মুয়াবিয়া (রাজত্ব ৬৬১-৬৮০) এবং প্রথম ইয়াজিদের (রাজত্ব ৬৮০—৮৩) অনুুুগত হয়ে লড়াই করেন।  তিনি খলিফা প্রথম মারওয়ান (রাজত্ব ৬৮৪-৬৮৫) এবং আবদুল আল-মালিক (রাজত্ব ৬৮৫—৭০৫) এর অধীনেও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন।

জীবনী

[সম্পাদনা]

আবদুল্লাহ বনু ফাজারা গোত্রের মাসআদা ইবনে হাকামা ইবনে মালিক ইবনে বদর (ধ্রুপদী মুসলিম উৎস অনুসারে মাসআদা ইবনে হুদায়ফা ইবনে বদর[]) এর ছেলে। মাসআদাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদের নির্দেশে ৬২৭/২৮ খ্রিস্টাব্দে যায়েদ ইবনে হারেসা দ্বারা এই গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় মুসলিমদের দ্বারা ওয়াদি আল-কূরা উপত্যকায় হত্যা করা হয়েছিল।

অভিযানের সময় আব্দুল্লাহ ছিল ছোট বালক এবং তাকে বন্দী করে মুহাম্মদের কাছে নিয়ে আসা হয়[][], তিনি (মুহাম্মাদ) তাকে তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে দাস হিসাবে উপহার দেন।[] তিনি আবদুল্লাহকে মুক্তি দেন এবং তাঁর স্বামী মুহাম্মদের চাচাত ভাই আলীর সাথে তাঁর বেড়ে ওঠেন।[] পরে তিনি দামেস্কে বসতি স্থাপন করেন।[]

আব্দুল্লাহ প্রথম ফিতনার সিফফিনের যুদ্ধে তৎকালীন সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়ার পক্ষে এবং খলিফা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।[] ৬৫৯/৬০ মুয়াবিয়া তাকে ১,৭০০ ঘোড়সওয়ারের প্রধান করে তায়েমা মরুউদ্যানের বাসিন্দা ও যাযাবর আরবদের কাছ থেকে তাঁর খিলাফতের আনুগত্যমূলক কর আদায় এবং শপথ ​​গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি অস্বীকারী যে কাউকে হত্যা করতে পারতেন।[][] তার সাথে তার ফাজারা গোত্রের অনেকে তার সাথে যোগ দেয়। আবদুল্লাহর দেওয়া অভিযানের মোকাবিলার জন্য আলী তার নিজস্ব ফাজারা গোত্রের অনুগত আল-মুসাইয়াব ইবনে নাজাবাকে প্রেরণ করেন।

পরে যখন তিনি আবদুল্লাহর মুখোমুখি হয়, তখন তাদের বাহিনী কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ চালায় এবং আবদুল্লাহকে তিনবার আল-মুসায়াব আঘাত করেন। এরপরে তার কিছু সৈন্য সিরিয়ায় পালিয়ে যায়, কিন্তু আবদুল্লাহ এবং তার বেশিরভাগ লোক তায়মার দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে। তিন দিনের অবরোধের পরে, আল-মুসাইয়াব দুর্গটি ঘিরে রাখেন,কিন্তু আবদুল্লাহ গোত্রগত আত্মীয়তার আবেদন করেন,তখন আল-মুসায়াব আগুন নিভিয়ে দিলে আবদুল্লাহ সিরিয়ায় পালিয়ে যান।[][১০]

মুয়াবিয়ার খেলাফত (৬৬১—৮০) এর সময় আবদুল্লাহ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইতিহাসবিদ খলিফা ইবনে খাইয়াতের মতে আবদুল্লাহ ৬৬৯/৭০ সালে আনাতোলিয়ার বিরুদ্ধে বার্ষিক শীতকালীন অভিযানের নেতৃত্ব দেন।[১১] ঐতিহাসিকগণ যেমন আল-ওয়াকিদি এবং আল-ইয়াকুবি মনে করেন যে ৬৭২ এর অভিযানে সুফিয়ান ইবনে আওফের মৃত্যুর পরে আবদুল্লাহ আরবদের সেনাপতি হিসাবে উত্তরসূরি হন।[১২] আধুনিক ঐতিহাসিক মারেক জাঙ্কোভিয়কের মতে, এই পর্বের মুসলিম বিবরণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে আক্রমণটি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল এবং আবদুল্লাহ "এটি [আরব সেনাবাহিনী] উদ্ধার করতে এবং নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছিল"।[১৩]

আবদুল্লাহ মুসলিম ইবনে উকবার সেনাবাহিনীতে দামেস্ক সেনাদলের কমান্ডার হিসাবে ৬৮৩ সালের আল-হাররা এবং মক্কা অবরোধের যুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, যাকে মুয়াবিয়ার পুত্র এবং উত্তরসূরি প্রথম ইয়াজিদ পাঠিয়েছিলেন মদীনা ও মক্কার বিদ্রোহ দমন করতে।[][১৪] ইয়াজিদ ও তাঁর উত্তরসূরী দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পরে,উমাইয়া খিলাফতের শাসন ভেঙে পড়ে। বংশের বিভিন্ন শাখার একজন উমাইয়া মারওয়ান ইবনে আল-হাকাম খিলাফতের জন্য মনোনয়ন প্রেরণ করলে আবদুল্লাহ তাঁর আনুগত্য করে।[][১৫] তিনি মারওয়ানের পুত্র এবং উত্তরসূরি আবদুল আল-মালেকের সময় অবধি বেঁচে ছিলেন। তিনি আবদুল-মালেককে তার আত্মীয় আমর আল-আশদাকের ভাই ইয়াহিয়া ইবনে সাদকে ৬৮৯ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরে প্রাণে বাঁচানোপরামর্শ দিয়েছিলেন; খলিফা আবদুল্লাহর পরামর্শ মেনে চলেন।[১৬]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854।
  2. Fishbein 1997, পৃ. 96।
  3. Hawting 1996, পৃ. 200, note 785।
  4. Madelung 1997, পৃ. 290, note 543।
  5. Morony 1987, পৃ. 222, note 585।
  6. Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854, note 1415।
  7. Madelung 1997, পৃ. 289।
  8. Hawting 1996, পৃ. 200।
  9. Hawting 1996, পৃ. 200–201।
  10. Madelung 1997, পৃ. 289–290।
  11. Jankowiak 2013, পৃ. 267।
  12. Jankowiak 2013, পৃ. 266–67।
  13. Jankowiak 2013, পৃ. 279।
  14. Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854 note 1415, 944।
  15. Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854 note 1415।
  16. Fishbein 1990, পৃ. 164।
  • Biesterfeldt, Hinrich; Günther, Sebastian (২০১৮)। The Works of Ibn Wāḍiḥ al-Yaʿqūbī (Volume 3): An English Translation। Leiden: Brill। আইএসবিএন 978-90-04-35621-4 
  • Fishbein, Michael, সম্পাদক (১৯৯০)। The History of al-Ṭabarī, Volume XXI: The Victory of the Marwānids, A.D. 685–693/A.H. 66–73। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-0221-4 
  • Fishbein, Michael, সম্পাদক (১৯৯৭)। The History of al-Ṭabarī, Volume VIII: The Victory of Islam: Muḥammad at Medina A.D. 626–630/A.H. 5–8। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-3149-8 
  • Hawting, G.R., সম্পাদক (১৯৯৬)। The History of al-Ṭabarī, Volume XVII: The First Civil War: From the Battle of Siffīn to the Death of ʿAlī, A.D. 656–661/A.H. 36–40। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-2393-6 
  • Jankowiak, Marek (২০১৩)। "The First Arab Siege of Constantinople"। Zuckerman, Constantin। Travaux et mémoires, Vol. 17: Constructing the Seventh Century। Paris: Association des Amis du Centre d’Histoire et Civilisation de Byzance। পৃষ্ঠা 237–320। 
  • Madelung, Wilferd (১৯৯৭)। The Succession to Muhammad: A Study of the Early Caliphate। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-56181-7 
  • Morony, Michael G., সম্পাদক (১৯৮৭)। The History of al-Ṭabarī, Volume XVIII: Between Civil Wars: The Caliphate of Muʿāwiyah, 661–680 A.D./A.H. 40–60। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-87395-933-9