আব্দুল্লাহ ইবনে মাসআদা আল-ফরাজী
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসআদা আল-ফরাজী ছিলেন বনু ফাজারা গোত্রের একজন আরব সেনাপতি ছিলেন যিনি উমাইয়া খলিফা প্রথম মুয়াবিয়া (রাজত্ব ৬৬১-৬৮০) এবং প্রথম ইয়াজিদের (রাজত্ব ৬৮০—৮৩) অনুুুগত হয়ে লড়াই করেন। তিনি খলিফা প্রথম মারওয়ান (রাজত্ব ৬৮৪-৬৮৫) এবং আবদুল আল-মালিক (রাজত্ব ৬৮৫—৭০৫) এর অধীনেও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন।
জীবনী
[সম্পাদনা]আবদুল্লাহ বনু ফাজারা গোত্রের মাসআদা ইবনে হাকামা ইবনে মালিক ইবনে বদর (ধ্রুপদী মুসলিম উৎস অনুসারে মাসআদা ইবনে হুদায়ফা ইবনে বদর[১]) এর ছেলে। মাসআদাকে ইসলামের নবী মুহাম্মদের নির্দেশে ৬২৭/২৮ খ্রিস্টাব্দে যায়েদ ইবনে হারেসা দ্বারা এই গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় মুসলিমদের দ্বারা ওয়াদি আল-কূরা উপত্যকায় হত্যা করা হয়েছিল।
অভিযানের সময় আব্দুল্লাহ ছিল ছোট বালক এবং তাকে বন্দী করে মুহাম্মদের কাছে নিয়ে আসা হয়[২][৩], তিনি (মুহাম্মাদ) তাকে তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে দাস হিসাবে উপহার দেন।[৪] তিনি আবদুল্লাহকে মুক্তি দেন এবং তাঁর স্বামী মুহাম্মদের চাচাত ভাই আলীর সাথে তাঁর বেড়ে ওঠেন।[৪] পরে তিনি দামেস্কে বসতি স্থাপন করেন।[৫]
আব্দুল্লাহ প্রথম ফিতনার সিফফিনের যুদ্ধে তৎকালীন সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়ার পক্ষে এবং খলিফা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।[৬] ৬৫৯/৬০ মুয়াবিয়া তাকে ১,৭০০ ঘোড়সওয়ারের প্রধান করে তায়েমা মরুউদ্যানের বাসিন্দা ও যাযাবর আরবদের কাছ থেকে তাঁর খিলাফতের আনুগত্যমূলক কর আদায় এবং শপথ গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি অস্বীকারী যে কাউকে হত্যা করতে পারতেন।[৭][৮] তার সাথে তার ফাজারা গোত্রের অনেকে তার সাথে যোগ দেয়। আবদুল্লাহর দেওয়া অভিযানের মোকাবিলার জন্য আলী তার নিজস্ব ফাজারা গোত্রের অনুগত আল-মুসাইয়াব ইবনে নাজাবাকে প্রেরণ করেন।
পরে যখন তিনি আবদুল্লাহর মুখোমুখি হয়, তখন তাদের বাহিনী কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধ চালায় এবং আবদুল্লাহকে তিনবার আল-মুসায়াব আঘাত করেন। এরপরে তার কিছু সৈন্য সিরিয়ায় পালিয়ে যায়, কিন্তু আবদুল্লাহ এবং তার বেশিরভাগ লোক তায়মার দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করে। তিন দিনের অবরোধের পরে, আল-মুসাইয়াব দুর্গটি ঘিরে রাখেন,কিন্তু আবদুল্লাহ গোত্রগত আত্মীয়তার আবেদন করেন,তখন আল-মুসায়াব আগুন নিভিয়ে দিলে আবদুল্লাহ সিরিয়ায় পালিয়ে যান।[৯][১০]
মুয়াবিয়ার খেলাফত (৬৬১—৮০) এর সময় আবদুল্লাহ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইতিহাসবিদ খলিফা ইবনে খাইয়াতের মতে আবদুল্লাহ ৬৬৯/৭০ সালে আনাতোলিয়ার বিরুদ্ধে বার্ষিক শীতকালীন অভিযানের নেতৃত্ব দেন।[১১] ঐতিহাসিকগণ যেমন আল-ওয়াকিদি এবং আল-ইয়াকুবি মনে করেন যে ৬৭২ এর অভিযানে সুফিয়ান ইবনে আওফের মৃত্যুর পরে আবদুল্লাহ আরবদের সেনাপতি হিসাবে উত্তরসূরি হন।[১২] আধুনিক ঐতিহাসিক মারেক জাঙ্কোভিয়কের মতে, এই পর্বের মুসলিম বিবরণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে আক্রমণটি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল এবং আবদুল্লাহ "এটি [আরব সেনাবাহিনী] উদ্ধার করতে এবং নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছিল"।[১৩]
আবদুল্লাহ মুসলিম ইবনে উকবার সেনাবাহিনীতে দামেস্ক সেনাদলের কমান্ডার হিসাবে ৬৮৩ সালের আল-হাররা এবং মক্কা অবরোধের যুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, যাকে মুয়াবিয়ার পুত্র এবং উত্তরসূরি প্রথম ইয়াজিদ পাঠিয়েছিলেন মদীনা ও মক্কার বিদ্রোহ দমন করতে।[৫][১৪] ইয়াজিদ ও তাঁর উত্তরসূরী দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পরে,উমাইয়া খিলাফতের শাসন ভেঙে পড়ে। বংশের বিভিন্ন শাখার একজন উমাইয়া মারওয়ান ইবনে আল-হাকাম খিলাফতের জন্য মনোনয়ন প্রেরণ করলে আবদুল্লাহ তাঁর আনুগত্য করে।[৫][১৫] তিনি মারওয়ানের পুত্র এবং উত্তরসূরি আবদুল আল-মালেকের সময় অবধি বেঁচে ছিলেন। তিনি আবদুল-মালেককে তার আত্মীয় আমর আল-আশদাকের ভাই ইয়াহিয়া ইবনে সাদকে ৬৮৯ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরে প্রাণে বাঁচানোপরামর্শ দিয়েছিলেন; খলিফা আবদুল্লাহর পরামর্শ মেনে চলেন।[১৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854।
- ↑ Fishbein 1997, পৃ. 96।
- ↑ Hawting 1996, পৃ. 200, note 785।
- ↑ ক খ Madelung 1997, পৃ. 290, note 543।
- ↑ ক খ গ Morony 1987, পৃ. 222, note 585।
- ↑ Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854, note 1415।
- ↑ Madelung 1997, পৃ. 289।
- ↑ Hawting 1996, পৃ. 200।
- ↑ Hawting 1996, পৃ. 200–201।
- ↑ Madelung 1997, পৃ. 289–290।
- ↑ Jankowiak 2013, পৃ. 267।
- ↑ Jankowiak 2013, পৃ. 266–67।
- ↑ Jankowiak 2013, পৃ. 279।
- ↑ Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854 note 1415, 944।
- ↑ Biesterfeldt ও Günther 2018, পৃ. 854 note 1415।
- ↑ Fishbein 1990, পৃ. 164।
উৎস
[সম্পাদনা]- Biesterfeldt, Hinrich; Günther, Sebastian (২০১৮)। The Works of Ibn Wāḍiḥ al-Yaʿqūbī (Volume 3): An English Translation। Leiden: Brill। আইএসবিএন 978-90-04-35621-4।
- Fishbein, Michael, সম্পাদক (১৯৯০)। The History of al-Ṭabarī, Volume XXI: The Victory of the Marwānids, A.D. 685–693/A.H. 66–73। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-0221-4।
- Fishbein, Michael, সম্পাদক (১৯৯৭)। The History of al-Ṭabarī, Volume VIII: The Victory of Islam: Muḥammad at Medina A.D. 626–630/A.H. 5–8। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-3149-8।
- Hawting, G.R., সম্পাদক (১৯৯৬)। The History of al-Ṭabarī, Volume XVII: The First Civil War: From the Battle of Siffīn to the Death of ʿAlī, A.D. 656–661/A.H. 36–40। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-2393-6।
- Jankowiak, Marek (২০১৩)। "The First Arab Siege of Constantinople"। Zuckerman, Constantin। Travaux et mémoires, Vol. 17: Constructing the Seventh Century। Paris: Association des Amis du Centre d’Histoire et Civilisation de Byzance। পৃষ্ঠা 237–320।
- Madelung, Wilferd (১৯৯৭)। The Succession to Muhammad: A Study of the Early Caliphate। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-56181-7।
- Morony, Michael G., সম্পাদক (১৯৮৭)। The History of al-Ṭabarī, Volume XVIII: Between Civil Wars: The Caliphate of Muʿāwiyah, 661–680 A.D./A.H. 40–60। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-87395-933-9।