আয়নিকরণ শক্তি
আয়নিকরণ শক্তি (ইংরেজি: Ionization energy) বা আয়নিকরণ বিভব হলো গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল বিচ্ছিন্ন পরমাণু থেকে একটি করে ইলেকট্রন অসীম দূরত্বে অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তার পরিমাণ।[১][২]।
- X + শক্তি → X+ + e-
অথবা: গ্যাসীয় অবস্থায় এক মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে ঐ মৌলের আয়নিকরণ শক্তি বলে।
আয়নিকরণ বিভব শব্দটি অতীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না। আয়নিকরণ বিভব এর একক হল kilojoules পার মোল (kJ/mol) or kilocalories পার মোল (kcal/mol). এটি Ei দ্বারা সূচিত হয়।[৩] আয়নিকরণ শক্তি একক বিজ্ঞানের শাখাভেদে পরিবর্তিত হয়। পদার্থবিজ্ঞানে এর একক ইলেকট্রন ভোল্ট (eV), রসায়ন বিজ্ঞানে আয়নিকরণ শক্তিকে I.P দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং এর একক কিলোজুল (KJ)।[৪]
সর্বনিম্ন আয়নিকরণ শক্তিটবিশিষ্ট মৌল হলো সিজিয়াম (Cs) এবং এর মান ৩৭৫.৭ kJ/mol। অপরদিকে, সর্বাধিক আয়নিকরণ শক্তিবিশিষ্ট মৌল হলো হিলিয়াম (He); এবং এর মান ২৩৭২ kJ/mol।
- X(g) + শক্তি → X+(g) + e−
এখানে, X হল গ্যাসীয় অবস্থায় একটি মৌল, X+ হল একটি ইলেকট্রন অপসারণ করা ক্যাটায়ন এবং e− হল অপসারিত ইলেকট্রন।[৫]
n-তম 'ইলেকট্রন এর ক্ষেত্রে আয়নিকরণ শক্তি বলতে ইলেকট্রন সংখ্যা (n-1) পরিবর্তন সহ একটি ইলেকট্রন অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় শক্তি কে বোঝায়। উদাহরণ সরূপ প্রথম তিনটি আয়নিকরণ শক্তিকে নিম্নোক্ত ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়:
- ১ম আয়নিকরণ শক্তি
- X → X+ + e−
- ১ম আয়নিকরণ শক্তি
- ২য় আয়নিকরণ শক্তি
- X+ → X2+ + e−
- ২য় আয়নিকরণ শক্তি
- ৩য় আয়নিকরণ শক্তি
- X2+ → X3+ + e−
- ৩য় আয়নিকরণ শক্তি
পরিবর্তন
[সম্পাদনা]আয়নিকরণ শক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম।
পর্যায় সারণির একই পর্যায়ের বামের মৌলের আকার বড় অর্থাৎ পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি। আবার, একই গ্রুপের ওপরের মৌলের চেয়ে নিচের মৌলের আকার বড়। অর্থাৎ,পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে আয়নিকরণ শক্তির মান বাড়ে, আর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে আয়নিকরণ শক্তির মান কমে। অর্থাৎ, একই পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে আয়নিকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পায়। একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচে গেলে আয়নিকরণ শক্তি হ্রাস পায়।
ভিন্ন প্রয়োগ
[সম্পাদনা]পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে আয়নিকরণ শক্তির ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।[৬]
- পদার্থবিজ্ঞানে—একটি পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় শক্তিকে পদার্থবিজ্ঞানে আয়নিকরণ শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- রসায়নে—পূর্বোক্ত সংজ্ঞাটি রসায়নের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ, এক মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে ঐ মৌলের আয়নিকরণ শক্তি বলে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "onization Energies and Electron Affinities"। chemwiki.ucdavis.edu। ১৪ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Ionization potential"। www.princeton.edu। ৪ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Muller, P. (১৯৯৪)। "Glossary of terms used in physical organic chemistry (IUPAC Recommendations 1994)"। Pure and Applied Chemistry। 66 (5): 1077–1184। আইএসএসএন 0033-4545। ডিওআই:10.1351/pac199466051077।
- ↑ "মৌলসমূহের পর্যায়ভিত্তিক ধর্ম"। www.edpdbd.org। ১৮ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Miessler, Gary L.; Tarr, Donald A. (১৯৯৯)। Inorganic Chemistry (2nd সংস্করণ)। Prentice Hall। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 0-13-841891-8।
- ↑ "Ionization Energy"। ChemWiki। University of California, Davis। ২০১৩-১০-০২। ২০১০-০৪-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-০২।