বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি লিমিটেড
ধরনরাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা
শিল্পপরিবহন
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৭৬
সদরদপ্তর,
ভারত
বাণিজ্য অঞ্চল
ভারত
প্রধান ব্যক্তি
মোহাম্মদ আসাদ আলম, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
পণ্যসমূহরোলিং স্টক
মালিকভারত সরকার
ওয়েবসাইটwww.burnstandard.com

বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানী লিমিটেড (বিএসসিএল) হ'ল ভারত সরকারের একটি রাষ্ট্রায়েত্ত সংস্থা (পিএসইউ)। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় এর সদর দফতর, বিএসসিএল প্রধানত রেল মন্ত্রকের অধীনে রেলওয়ে ওয়াগন তৈরির কাজে নিযুক্ত রয়েছে। ৪ এপ্রিল ২০১৮ সালে, মন্ত্রিপরিষদ বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি লিমিটেড লোকসান বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে।[১]. বার্ন অ্যান্ড কোম্পানী (প্রতিষ্ঠিত ১৭৮১ সালে) এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন (প্রতিষ্ঠিত ১৯১৮ সালে)[২] এবং দুটি সংস্থার সংমিশ্রণে এই সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল এবং [১৯] ১৯৫৫ সালে জাতীয়করণ করা হয়েছিল। ২০০৬ অর্থবছরে, সংস্থাটির মোট রাজস্ব ₹১,৩৭৩ মিলিয়ন টাকা ($১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এরপরে, হাওড়া ও বার্নপুরে দুটি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট নিয়ে সংস্থাটি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে রেলপথ মন্ত্রকের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে আসে। তামিলনাড়ুর সালেমে সংস্থার অবস্থিত একটি রিফ্র্যাক্টরি ইউনিট স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডে স্থানান্তরিত হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্টের মতে, ২০০৮ সালের মার্চ মাসে মার্কিন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ ম্যাকডার্মট ইন্টারন্যাশনালের প্রধান আইনজীবী জন মেসার বোম্বে হাই তেল ক্ষেত্রের জন্য ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে একটি বিশাল অফশোর প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য গৃহীত একটি চুক্তির অর্থ পেতে চেষ্টা করছিলেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে, ম্যাকডার্মটকে প্রকল্পের কাজ করার জন্য সাব-কন্ট্রাক্ট করা ভারতীয় প্রকৌশল সংস্থা বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে, আদালতের রায়ে মার্কিন দলকে ৯০ মিলিয়ন (£৪৫ মিলিয়ন) প্রদানের নির্দেশের বিরুদ্ধে তার আবেদন কররা ক্ষমতা হারিয়েছিল। ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত সালিশীকরণ এবং উদ্যোগ চূড়ান্ত করার পরে ইতোমধ্যে প্রদত্ত পরিমাণ পরিশোধ করা হয়।[৩][৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বার্ন অ্যান্ড কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৭৮১ সালে৷ তখন এর দপ্তর ছিল হাওড়ায়৷ কলকাতার বহু গুরুত্বপূর্ণ ভবন স্থাপত্যের সঙ্গী ছিল এই কোম্পানি, যেমন ১৮১৮ সালের অ্যান্ড্রূজ চার্চ, ১৮২৮ সালে শহিদ মিনার৷ ১৯২৭ সালে রাজেন মুখোপাধ্যায়ের মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি অধিগ্রহণ করে নেয় বার্ন অ্যান্ড কোম্পানির নির্মাণ ব্যবসা৷ তখন তার নাম হয় মার্টিন অ্যান্ড বার্ন। তার কয়েক দশকের মধ্যেই কলকাতার বহু নামী ভবন- যেমন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ভবন , বেলুড় মঠ , রামকৃষ্ণ মিশনের সদর দপ্তর , গ্র্যান্ড হোটেল আর্কেড , বিধানসভা , ইউনাইডেট ব্যাঙ্ক বিল্ডিং , ইডেন গার্ডেন্সের ক্লাব হাউস ইত্যাদি নির্মাণ করে সুনাম কুড়োয় মার্টিন অ্যান্ড বার্ন৷ এই কারণে কলকাতা শহরকে অনেকে ‘মার্টিন বার্ন সিটি ’ও বলেন৷[৫]

১৯১৮ সালে বার্নপুরে এদেরই একটি শাখা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন লিমিটেড কাজ শুরু করে৷ রেল ওয়াগন , ওয়াগনের সরঞ্জাম , স্প্রিং ইত্যাদি তৈরি করত তারা৷ ১৯৫০ সাল থেকে রেলের সরঞ্জাম তৈরির কাজে হাত দেয় এই কারখানা৷ এই কোম্পানির জাতীয়করণ হয় ১৯৭৬ সালে৷ তখন ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ওয়াগন কোম্পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে এই সংস্থা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি লিমিটেড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রেল ওয়াগন তৈরির কারখানা হয়ে ওঠে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড৷ বার্নপুরেই তখন প্রধান কারখানা হয়৷ শুধু ভারতীয় রেলের চাহিদা মেটানোই নয় , অন্য সেক্টরের জন্য বিশেষ ধরনের ওয়াগন তৈরির কাজও শুরু হয় এখানে৷ তার মধ্যে বিদ্যুত্, ইঞ্জিন কারখানাও আছে৷ এমনকি ন্যালকো (ন্যাশনাল অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানি লিমিটেড , ১৯৮১ সালে স্থাপিত হয় ওডিশায় )-র অ্যালুমিনিয়াম পাউডার ভর্তি বড় বড় বাক্সগুলিকে কারখানার মধ্যে এক তলা থেকে অন্য তলায় ওঠানো ও নামানোর জন্য বিশেষ ধরনের ওয়াগনও তৈরি করা হত এখানে৷ সেই ওয়াগনগুলিকে এখনকার লিফটের সঙ্গে অনায়াসে তুলনা করা যেতে পারে৷ এনটিপিসি -র জন্যও বিশেষ ওয়াগন এখানে তৈরি হয়৷ আজও ভারতীয় রেলের জন্য উন্নতমানের ওয়াগন অনেক কম দামে এখানে তৈরি হচ্ছে৷[৫]

১৯৮৪ সাল থেকে রেল ওয়াগনের অর্ডারের সংখ্যা কমতে থাকে৷ শুরু হয়ে যায় খোলা টেন্ডার ব্যবস্থা৷ টেন্ডারে বেসরকারি সংস্থাও যোগ দেয়৷ ওয়াগন কারখানার জন্য পৃথক ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবিতে ৪২ দিনের ধর্মঘট পালন করে শ্রমিক ইউনিয়নগুলি৷ যদিও সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়।[৫]

পতনের সূত্রপাত[সম্পাদনা]

১৯৯৫ সালে এই কারখানাটিকে রুগ্ন শিল্প বলে ঘোষণা করা হয়৷ ২০১০ সালে ভারী শিল্প মন্ত্রকের হাত থেকে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের প্রশাসনিক দায়িত্ব রেল মন্ত্রকের হাতে যায়৷ সেই সময়ে রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই সময়ে রেল মন্ত্রক কর্মীদের দীর্ঘ বকেয়া বাবদ ২০ কোটি টাকা এবং কারখানার সংস্কারে ৩০ কোটি টাকার অনুমোদন করে৷ শ্রমিক ইউনিয়নগুলির অভিযোগ ছিল, কারখানা সংস্কারে বরাদ্দ হওয়া ওই ৩০ কোটি টাকা সঠিক ভাবে খরচ হয়নি৷ কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো এবং কাঁচামাল কেনার পরিবর্তে সবুজ গালিচা , একাধিক এসি গাড়ি কেনার মতো নানা ‘অকারণ ’-এ খরচ করা হয় ওই টাকা৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার পরে বার্নপুরের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার ছোট শপগুলো একের পর এক বন্ধ হতে শুরু করে৷ এর আগে ওয়াগন তৈরির যাবতীয় যন্ত্রাংশ এখানেই তৈরি করা হত৷ শ্রমিক ইউনিয়নগুলির অভিযোগ , ওই শপগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পিছনে কারখানার উচ্চপদস্থ কর্মীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল , কিছু বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে কম দামে নিম্নমানের জিনিস কিনে আনা ও তার বিনিময়ে টাকার দুর্নীতি করা৷[৫]

বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার সময়ে দেনা ছিল মাত্র ৮২ কোটি টাকা৷ তার মধ্যে ১২ কোটি টাকা শুধু বিভিন্ন কর্মী ও আধিকারিকদের পাওনা৷ সব মিলিয়ে কোম্পানির দাবি , এখনও পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ২৮৪ কোটি টাকা৷[৫]

বিলোপ[সম্পাদনা]

৪ এপ্রিল ২০১৮ সালে, ভারত সরকার বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানির বিলোপকে অনুমোদন করে।[৬][৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Cabinet approves closure of loss making Burn Standard Company Limited - a Central Public Sector Enterprise (CPSE)"pib.nic.in 
  2. "Archived copy"। ৮ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৩ 
  3. "Financial Statement" (পিডিএফ)। ১৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২০ 
  4. "'It's viewed as a game': Western groups recoil at India's culture of"The Independent। ৩০ মার্চ ২০০৮। ২২ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২০ 
  5. "বার্ন স্ট্যান্ডার্ড"। এই সময়। ২২ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২০দীর্ঘ যাত্রাপথের নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর সাফল্যের মাইলস্টোন পেরিয়ে এখন খাদের কিনারায়। 
  6. India, Press Trust of (৪ এপ্রিল ২০১৮)। "Cabinet approves closure of loss-making Burn Standard Company Ltd" – Business Standard-এর মাধ্যমে। 
  7. সুশান্ত বণিক (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "'শতবর্ষের পুরস্কার নয়, হল বিদায়'"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]