অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল
মূল যুদ্ধ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহের মানচিত্র
অবস্থান
ফলাফল পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর মুক্তিবাহিনীর বিজয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
বাংলাদেশের অভ্যুত্থান
বিবাদমান পক্ষ
 বাংলাদেশ  পাকিস্তান
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী

বাংলাদেশ

মেজর খালেদ মোশাররফ
মেজর এটিএম হায়দার
ক্র্যাক প্লাটুন
লেফটেনেন্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী
শক্তি
মুক্তিবাহিনী,
ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডোগণ

পাকিস্তান সেনাবাহিনী:
১৪শ পদাতিক সৈন্যদল
৯ম পদাতিক সৈন্যদল
১৬শ পদাতিক সৈন্যদল
৩৯তম অ্যাড-হক পদাতিক সৈন্যদল
৩৬তম অ্যাড-হক পদাতিক সৈন্যদল
৯৭তম স্বাধীন পদাতিক সৈন্যদল
৪০তম সেনা লজিস্টিক ব্রিগেড
৪র্থ বিমানবাহিনী উপদল
বিশেষ সেবা দল
পাকিস্তান নৌবাহিনী
পাকিস্তান মেরিন কর্পস
পাকিস্তান বিমান বাহিনী

আধা-সামরিক বাহিনী:
পূর্ব-পাকিস্তান বেসামরিক সেনাদল সদর দপ্তর[১]

অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডো ইউনিট কর্তৃক হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান। ১৯৭১ সালের ৯ জুন অভিযান সংঘটিত হয়। আন্তর্জাতিক মহলে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিক বলে পাকিস্তানের প্রচারণা এর মাধ্যমে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়।

ক্র্যাক প্লাটুন প্রতিষ্ঠা ও আক্রমণের প্রস্তুতি[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের জুনে বিশ্ব ব্যাংক পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে। পাকিস্তান সরকারের গণমাধ্যম পাকিস্তানের অবস্থা স্থিতিশীল এবং স্বাভাবিক বলে দাবি করছিল। মুক্তিবাহিনীর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ বিশেষ সেনা কমান্ডো মোতায়নের পরিকল্পনা করেন। অভিযানে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের দায়িত্ব ছিল ঢাকায় কমান্ডো আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা অস্বাভাবিক এটা প্রমাণ করাই ছিল অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য। তারওপর পাকিস্তান এই সময়ে বিশ্ব ব্যাংকের থেকে অর্থায়ন আশা করছিল। মূলত বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের প্রকৃত অবস্থা বোঝানো এবং অর্থায়ন বন্ধ করাই ছিল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।[২] মেজর এটিএম হায়দারের (সাবেক এসএসজি কমান্ডো এবং সেক্টর অধিনায়ক) সাথে খালেদ মোশাররফ ক্র্যাক প্লাটুন গঠন করেন। প্রাথমিকভাবে প্লাটুনে কমান্ডো সংখ্যা ছিল ১৭ জন। তারা মেলাঘর ক্যাম্পে কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।[৩] ১৯৭১ সালের ৪ জুন ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডোরা মেলাঘর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং ৫ জুন গেরিলা আক্রমণ সংঘটিত হয়।[২] পরবর্তীতে কমান্ডো সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ঢাকা শহর ও আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।[৪]

অভিযান পরিচালনা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের শুরুর দিকে মেজর খালেদ মোশাররফ এবং মেজর এটিএম হায়দার ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডোদের ঢাকা শহরে প্রেরণ করেন। ঢাকায় পৌঁছে কমান্ডটা শহরে একটি অভিযানের পরিকল্পনা করেন। তারা প্রথমে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালকে তাদের লক্ষবস্তুতে পরিণত করে। কেননা তখন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছিল। পাকিস্তান সরকার তাদেরকে বোঝাতে চাইছিল যে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিক। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা যে স্বাভাবিক নয় বিশ্বকে এটা দেখানোর সুযোগ পায় মুক্তিবাহিনী। অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল এবং শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনের প্রধান প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খানকে পাকিস্তানের জান্তা সরকারের অর্থায়ন থেকে বিরত রাখা।[৫]

১৯৭১ সালের ৯ জুন কমান্ডোরা ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রথম আক্রমণ করে। কমান্ডোরা একটি গাড়ি ব্যবহার করে হোটেলের সামনে অবস্থান করছিল। তারা এনার্জা গ্রেনেড, বেয়োনেট এবং সাব-মেশিনগান ব্যবহার করছিল। কমান্ডো মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মায়া প্রথম গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। বাদল নামের অন্য আরেকজন কমান্ডো দ্বিতীয় গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন এবং তৃতীয়টি নিক্ষেপ করেন জিয়া। চতুর্থ এবং পঞ্চম গ্রেনেডটিও মায়া নিক্ষেপ করেছিলেন। এটি ছিল আক্রমণ এবং পলায়ন অভিযান। পরিকল্পনা অনুসারে অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই আক্রমণকারীরা নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। বিবিসি নিউজ পাকিস্তানি সৈন্যদের আহত ও নিহত হওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ করে।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Jacob, Lt. Gen. J. F. R., Surrender At Dacca: The 1395-8
  2. মোশাররফ, খালেদ (২০১৩)। মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্স। প্রথমা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৫৫–৫৬। আইএসবিএন 978-984-90253-2-0 
  3. ইসলাম, জহিরুল (২০১৩)। মুক্তিযুদ্ধে মেজর হায়দার ও তার বিয়োগান্ত বিদায়। প্রথমা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৭৭। আইএসবিএন 978-984-90253-1-3 
  4. ইসলাম, জহিরুল (২০১৩)। মুক্তিযুদ্ধে মেজর হায়দার ও তার বিয়োগান্ত বিদায়। প্রথমা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৭৮। আইএসবিএন 978-984-90253-1-3 
  5. "Operation Hotel Intercontinental: "HIT & RUN""দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৯