আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন
আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (আরবি: حركة القوميين العرب, হারকাত আল-কাওমিয়িন আল-আরব), যা আরব জাতীয়তাবাদের আন্দোলন এবং হারাকিইয়িন নামেও পরিচিত, আরব বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে প্রভাবশালী একটি প্যান-আরব জাতীয়তাবাদী সংগঠন ছিল, বিশেষ করে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের মধ্যে। ১৯৫১ সালে জর্জ হাবাশ এটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১]
উৎস এবং আদর্শ
[সম্পাদনা]১৯৪০ এর দশকের শেষের দিকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুতের জর্জ হাবাশের নেতৃত্বে একটি ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা ঘটে। ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে হাবাশ এবং তার অনুসারীরা এই দলটির আদর্শ জুরিকের চিন্তাধারার নিকট অনেক ঋণী ছিল: এটি ছিল বৈপ্লবিক এবং প্যান-আরববাদী। নেতৃত্বে একটি বৃহত্তর ছাত্র সংগঠনে যোগ দেয়। এটি আরবের ঐক্য ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য আরব চেতনা বিপ্লবে অগ্রণী ভূমিকা নেবে এমন একটি জাতীয় সচেতন বুদ্ধিজীবী সমাজ গঠনের উপর জোর দেয়। আদর্শিকভাবে, এটি সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, তবে প্রথমদিকে মার্কসবাদ নয়। এর আরব জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ ছিল সাধারণভাবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের প্রতি আপোষহীন বিরোধিতা এবং বিশেষত ইসরায়েল, কারণ এই আন্দোলনটি ইহুদিবাদ-বিরোধী মতবাদ গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
এই দলটি বিভিন্ন আরব রাজ্যে শাখা গঠন করে এবং ১৯৫৮ সালে আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নাম গ্রহণ করে। আন্দোলনের মধ্যে কিছু রাজনৈতিক বিভেদ দেখা দেয়। অনেকগুলি, বিশেষত সিরিয়া এবং ইরাকে স্থানীয় নাসেরবাদী আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং লেভেন্টের কিছু অংশ প্রকৃতপক্ষে নাসেরবাদের মূল স্তম্ভে পরিণত হয়। তবে হাবাশ ও নায়ফ হাওয়াতমেহ সহ আরও একটি দল মার্কসবাদের দিকে ঝুকে পড়ে, যা তাদের গামাল আবদেল নাসেরের সাথে বিরোধ ডেকে আনে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে তারা প্যান-আরব জাতীয়তাবাদের চেয়ে সমাজতন্ত্রের উপর বেশি জোর দেয়। এছাড়াও আরব দেশগুলিতে সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থাগুলি এএনএম শাখা সংগঠনগুলিকে স্থানীয় অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য করে এবং সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পাওয়া ক্রমশ দূরহ হয়ে পড়ে।
পতন ও বিভেদ
[সম্পাদনা]এই চাপা উত্তেজনা ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে আন্দোলনের পতন ঘটায় এবং ১৯৭০ সালের মধ্যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে এর উপস্থিতি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালের ছয়-দিনের যুদ্ধে মিশরের পরাজয়ের ফলে এই বিকাশ আংশিকভাবে প্রসারিত হয়েছিল, যা নাসেরবাদের কুখ্যাতি ঘটিয়েছিল এবং এএনএমকে তার দলবদ্ধ করণ, প্যান-আরব ধর্ম খর্ব করতে বাধ্য করেছিল। এএনএম-এর উপর চূড়ান্ত ধাক্কাটা আসে ১৯৬৭–৬৯ সালে, যেহেতু লেভানটাইন শাখাগুলি প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কসবাদী দলগুলিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে ত্বরন্বিত হয়। চারপাশের এই প্রবণতার মধ্যে হাবাশ আরব সমাজতান্ত্রিক অ্যাকশন পার্টিকে নতুন প্যান-আরব রাজনৈতিক কাঠামো হিসাবে গঠন করে এই আন্দোলনকে পুনরায় দলবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
এমনকি আজ এএনএম-এর কিছু না থাকলেও, এর বিভেদে বিপুল সংখ্যক দল তৈরি হয় এবং আরব রাজনীতিতে বাম পন্থি আন্দোলনকে উৎসাহিত করে। এর মধ্যে কিছু উদাহরণ হলো, ফিলিস্তিনি আন্দোলন এবং দক্ষিণ ইয়েমেন, তারা তাদের নিজ নিজ দেশে খুব প্রভাবশালী হয়ে উঠে।
বাহরাইন
[সম্পাদনা]বাহরাইনের এএনএম ক্যাডাররা প্রথমদিকে অধিকৃত আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের মুক্তির জন্ পপুলার ফ্রন্টে (পিএফএলওএজি) যোগ দেয়। ১৯৭৪ সালে পিএফএলওএজির বাহরাইনি অংশটি বাহরাইনের মুক্তির জন্য পপুলার ফ্রন্টে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে পপুলার ফ্রন্ট দেশটির বিশিষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন সোসাইটির জন্ম দিয়েছে।
মিশর
[সম্পাদনা]মিশরে এএনএম শাখা আরব সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের নাসেরের মিশরীয় শাখায় একীভূত হয়ে যায়, তবে পরে অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযানের পর তাদের বহিষ্কার করা হয়।
কুয়েত
[সম্পাদনা]কুয়েতে এএনএম শাখাটি প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাটস হিসাবে পুনর্গঠিত হয়, একটি রাজনৈতিক দল এখনও বিদ্যমান।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Dawisha, Adeed (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। Arab Nationalism in the Twentieth Century: From Triumph to Despair (New Edition with a new chapter on the twenty-first-century Arab world সংস্করণ)। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 156। আইএসবিএন 978-0-691-16915-6। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৮।