ভেলোর বিদ্রোহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভেলোর সিপাহী বিদ্রোহ
ভেলোর সিপাহী বিদ্রোহ স্মরণে হাজরথ মক্কা জংশনে স্তম্ভ।
তারিখ১০ জুলাই ১৮০৬ (1806-07-10)
ভেন্যুভেলোর দুর্গ
অবস্থানভেলোর
ধরনবিদ্রোহ
হতাহত
সিপাহী সৈন্যদলের ব্রিটিশ অফিসারগণ: ১৪
৬৯তম ব্রিটিশ সৈন্যদলের ব্রিটিশ সেনা: ১১৫

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহেরও প্রায় অর্ধ শতাব্দীর পূর্বে ভেলোর বিদ্রোহ ছিল ১০ জুলাই ১৮০৬ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সিপাহিদের দ্বারা সঞ্চালিত সর্বপ্রথম বৃহৎ বিদ্রোহ। দক্ষিণ ভারতের ভেলোর শহরে সংঘটিত বিদ্রোহটি একটি পুরো দিন চলে, এবং বিদ্রোহীরা ভেলোর দুর্গ দখল করতে ও ২০০ জন ব্রিটিশ সেনাকে হত্যা বা আহত করতে সক্ষম হয়। আর্কট হতে আগত ঘোড়া ও আর্টিলারি বাহিনীর সাহায্যে এই বিদ্রোহটিকে জব্দ করা হয়। বিদ্রোহ দমনের সময় প্রায় ১০০ জন বিদ্রোহীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়, যার পরবর্তিতে ছোট সংখ্যার আনুষ্ঠানিক আদালত-মার্শালের অনুসরণ করা হয়।

কারণসমূহ[সম্পাদনা]

১৮০৫ সালের নভেম্বরে সিপাহি সিপাহি পোশাক কোডে পরিবর্তনকে ঘিরে তীব্র অসন্তোষবোধ উদ্বেগজনকভাবে অনুভূত হয়। বিদ্রোহের আশু কারণ বলতে মনে করা যেতে পারে ইংরেজদের দ্বারা সিপাহীদের জন্য ১৮০৫ সনে পরিধান রীতি - নীতি ঘোষণা করা। হিন্দু সিপাহীদের কপালে কোনরকমের ধার্মিক চিহ্ন ধারণ করাতে নিষেধাজ্ঞা ও মুসলমান সিপাহীদের গোফ, দাঁড়ি কামিয়ে ফেলার নিয়ম জারি করার পাশাপাশি মাদ্রাজ সেনার সর্বাধিনায়ক জেনারেল স্যার জন ক্র্যাডক[১] ইউরোপীয় সংস্কৃতির আদলে সকল সিপাহীদের বৃত্তাকার টুপি পরার আদেশ জারি করে। এই আদেশকে তীব্র অপমানের চোখে দেখে ভারতীয় হিন্দু ও মুসলমান সিপাহীরা, কারণ বৃত্তাকার টুপি সাধারণত হিন্দু কিম্বা মুসলমান ধর্ম হইতে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত মানুষজনদের বোঝাতো।[১] পাগড়ি পরিবর্তে একটি নতুন শিরোভূষণ পরার রীতি চালু করার নির্ণয় নেওয়া হয়। এই নির্ণয়টি হিন্দু তথা মুসলমান উভয় বর্গের মানুষজনদেরই তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে তথা নির্ণয়টি ইংরেজদের দ্বারা অতীতে লিখিত একটি বিজ্ঞপ্তির সাথেই অসঙ্গত হয়, যেখানে পরিষ্কারভাবে রচিত ছিল সেনাবাহিনীর পোশাকে যেকোনো বদল আনার নির্ণয়ই সংবেদনশীলতাপূর্বক নেওয়া উচিৎ।[১]

ফলাফল[সম্পাদনা]

আনুষ্ঠানিক বিচার প্রদানের পরবর্তিতে ৬ জন বিদ্রোহীদের কামান দিয়ে উড়িয়ে মেরে ফেলা হয়, ৫ জনকে গুলি করে মারা হয়, আটজনকে ফাঁসি দেওয়া হয় ও পাঁচজনকে ভিনদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দণ্ড দেয় ইংরেজরা। যে তিনটি মাদ্রাজ ব্যাটেলিয়ন এই বিদ্রোহের জন্য দায়ী ছিল সেই সব ব্যাটেলিয়নগুলিকে তৎক্ষণাৎ বিগঠিত করে দেওয়া হয়। পোশাকে বদল আনার নির্ণয়ের জন্য দায়ী ৬ জন ব্রিটিশ সেনা পদাধিকারীদের ব্রিটেনে ডাকিয়া ফিরাইয়া আনা হয়। এই ছয়জন পদাধিকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন জেনারেল স্যার জন ক্র্যাডক, যাঁর বিলেত ফেরৎ যাওয়ার খরচ পর্যন্তও ব্রিটিশ কোম্পানি ওঠাতে নারাজ হয়। নতুন শিরোভূষণে সম্পর্কিত আদেশটিকেও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

সাহিত্যে ভেলোর বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

ইংরেজি কবি স্যার হেনরি নিউবোল্টের কবিতা "গিলেস্পি", ভেলোর বিদ্রোহ সম্পর্কিত ঘটনাগুলি নিয়ে লেখা।[২]

জর্জ শিপওয়ের স্ট্রেঞ্জার্স ইন দ্য ল্যান্ড (১৯৭৬; আইএসবিএন ০-৪৩২-১৪৭৫৬-X) ইংরেজ এবং ভারতীয় উভয় অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে, ভেলোর বিদ্রোহে কেন্দ্র করে লেখা উপন্যাস।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Philip Mason, page 238, A Matter of Honour – an Account of the Indian Army, আইএসবিএন ০-৩৩৩-৪১৮৩৭-৯
  2. Alden, Raymond Macdonald (১৯২১)। Poems of the English Race। C. Scribner's Sons। পৃষ্ঠা 213–214। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]