ত্রি-ভাষা সূত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ত্রি-ভাষা সূত্র ভাষা শিক্ষার জন্যে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে অঙ্গরাজ্যগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষা মন্ত্রক, ভারত সরকার দ্বারা সূত্রায়িত হয়েছিল। এই সূত্রটা জাতীয় নীতি প্রস্তাবে নির্বাচিত হয়েছিল ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে, যাতে শিক্ষার সংস্থানের কথা বলা হয়েছে, "হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে হিন্দি, ইংরেজি এবং আধুনিক ভারতীয় ভাষা (পছন্দ অনুযায়ী দক্ষিণ ভারতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে একটা) এবং অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে হিন্দি, ইংরেজি এবং আঞ্চলিক ভাষা।"[১]

দক্ষিণ ভারতের অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলো যেমন কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ এবং প্রধানত তামিলনাড়ু, এদের দাবিতে সাড়া দিয়ে এই ত্রি-ভাষা সূত্রটা সূত্রায়িত হয়েছিল। সাম্প্রতিককালে, তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সি এন আন্নাদুরাই-এর প্রচেষ্টায় ওই রাজ্যে তিন ভাষা পদ্ধতি মানা হয়নি।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন একটা ত্রি-ভাষা নীতির জন্যে প্রথম সুপারিশ করেছিল, যাতে দেখানো হয়েছিল যে, তিন ভাষা শিক্ষার ব্যাপারটা কোনো অপচয়ের মধ্যে পড়েনা, এব্যাপারে তারা নেদারল্যান্ডস এবং সুইৎজারল্যান্ডের উদাহরণ টেনেছিল। যখন এটা মানা হয় যে, হিন্দি একটা সংখ্যালঘু ভাষা, এবং অন্যান্য ভাষাগুলোর ওপর এর আধিপত্য নেই, এগুলো হচ্ছে: কন্নড়, তেলুগু, তামিল, মারাঠি, বাংলা, উর্দু এবং ব্রজ, এদের সকলের একটা দীর্ঘ ইতিহাস এবং মহানতর সাহিত্য কাঠামো আছে; তবুও কমিশনের দূরদৃষ্টি হল হিন্দি পরিণামে ইংরেজির বিকল্প হিসেবে কাজ করে যাতে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য প্রজাতন্ত্রের কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে পারে। [২]

১৯৬৫-৬৬ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষা কমিশন পরিবর্তিত এবং মাত্রাঙ্কিত ত্রি-ভাষা সূত্রের সুপারিশ করে। কিছু বিতর্কের পর, আসল ত্রি-ভাষা সূত্রটা ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় সংসদ দ্বারা গৃহীত হয়েছিল। [৩] ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের সূত্রের পুনরাবৃত্তি করা হয়ছিল।[১]

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে উর্দু ভাষার উন্নতিবর্ধনে ইন্দ্র কুমার গুজরালের সভাপতিত্বে সরকার এক কমিটি গঠন করে। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে কমিটির রিপোর্টে সুপারিশ করা হয় যে, বিশেষত (যা ১০ শতাংশের বেশি) উর্দু ভাষাভাষী সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, তার সঙ্গে উর্দুকে নির্দেশিকা এবং কার্যালয়ে ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে রাখা। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মন্ত্রিসভার অনুমোদন অনুসরণ করে, এবং ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত তারাক্কি-এ-উর্দু পর্ষদের দ্বারা, গুজরাল কমিটি থেকে পরিবর্তিত প্রস্তাবগুলো ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য সরকারগুলোর ওপর পাস হয়। [৪]

১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে গুজরাল কমিটির সুপারিশগুলো কার্যকর করার পরীক্ষা করতে বিশেষজ্ঞদের এক নতুন কমিটি গঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন আলি সর্দার জাফরি। নতুন কমিটি এই বলে ত্রি-ভাষা সূত্র পরিবর্তন করার সুপারিশ করে যে, "হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলোতে: (ক) হিন্দি (যৌগিক নিয়মের অংশ হিসেবে সঙ্গে সংস্কৃত); (খ) উর্দু অথবা অন্য যেকোনো আধুনিক ভারতীয় ভাষা এবং (গ) ইংরেজি অথবা অন্য যেকোনো ইউরোপীয় ভাষা। অ-হিন্দি ভাষাভাষী রাজ্যগুলোতে: (ক) স্থানীয় ভাষা; (খ) হিন্দি; (গ) উর্দু অথবা অন্য যেকোনো আধুনিক ভারতীয় ভাষা (ক) এবং (খ) ছাড়া; এবং (ঘ) ইংরেজি অথবা অন্য যেকোনো আধুনিক ইউরোপীয় ভাষা।"[১]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

তৎকালীন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী সি এন আন্নাদুরাই  তামিলনাড়ু রাজ্যে হিন্দি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিরোধিতা করেন, "যে পরিষেবা আমাদেরকে বহর্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করবে নিশ্চিতভাবে সেই একই পরিষেবা ভারতের মধ্যেও ভালোভাবে পাওয়া যাবে। দুটো যোগাযোগের ভাষার পক্ষে সওয়াল হচ্ছে বেড়ালছানার জন্যে দেওয়ালে একটা ছোটো ফুটো বানানো, যেখানে ধাড়ি বেড়ালের জন্যে একটা বড়ো ফুটো রয়েছে। যেটা ধাড়ি ও কচি দুজনের পক্ষেই কার্যকর।" [৫]

শিক্ষাবিজ্ঞানীরা সূত্রটার ব্যর্থতার দিকে নজর দিয়েছেন।পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর দ্রাবিড়ীয় সংস্কৃতি বিশারদ হেরল্ড এফ স্কিফম্যানের ত্রি-ভাষা সূত্র সম্পর্কে উপলব্ধি: "বাস্তব অবস্থার চেয়েও সংঘাতপূর্ণ অবস্থাকে বেশি সম্মান দেওয়া হয়েছে" এবং একটা প্রতীকী জাতীয় ভাষার অভাবে সেটা ঘটেছে, একটা প্রবণতা আছে ভারতে "ইংরেজির জন্যে নেওয়া হয়েছে যান্ত্রিক ভাষা"। [৬] হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এর রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ব্রায়ান ওয়েইনস্টাইন বলেছেন যে, "হিন্দিভাষী এবং অ-হিন্দিভাষী কোনো রাজ্য-ই (১৯৬৮) নির্দেশিকা অনুসরণ করেনা।" [৩]

উল্লেখসমূহ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Three Language Formula"। Government Of India Ministry Of Human Resource Development Department Of Education। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৬ 
  2. "Report of the University Education Commission (December 1948 – August 1949) Volume I" (পিডিএফ)। Ministry of Education, Government of India। ১৯৬২। পৃষ্ঠা 280। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৬Every boy and girl must obviously know the regional language, at the same time he should be acquainted with the Federal language, and should acquire the ability to read books in English. 
  3. Weinstein, Brian (১৯৯০)। Language Policy and Political Development। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 95। আইএসবিএন 0-89391-611-0। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৬ 
  4. "The Gujral Committee Report on Urdu"Language In India। ৮ মে ১৯৭৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৬ 
  5. "Anna and the Dravidian Movement"South Asia Masala। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৬ 
  6. Schiffman, Harold। "Indian Linguistic Culture and the Genesis of Language Policy in the Subcontinent" 

বহির্সংযোগসমূহ[সম্পাদনা]

  • "[ Annexure 1: Three language formula]". IQRA Society for Career Guidance. Archived from [ the original] on 28 April 2003. Retrieved 16 May 2016.