নুয়াইম ইবনে মাসুদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নুয়াইম ইবনে মাসুদ আল-গাতাফানি (আরবি: نعيم بن مسعود) (বিকল্প প্রতিবর্ণীকরণ: নাইম ইবনে মাসুদ, নাঈম ইবনে মাসুদ) ছিলেন আরবের উত্তর উচ্চভূমি এলাকার নাজদ হতে আগত মুহাম্মাদ (সাঃ)-র একজন সাহাবী, যিনি সে সময়ের শক্তিশালী গাতাফান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয় যখন আবু সুফিয়ান মুসলিমদেরকে কুরাইশদের বিপুল সংখ্যক সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই না করতে বুঝিয়ে বলার জন্য তাকে মদিনায় পাঠান। দ্বিতীয় বদরের যুদ্ধ প্রসঙ্গে এটি বলা হয়েছিলো যে বিষয়ে উহুদের যুদ্ধে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।[১]

খন্দকের যুদ্ধের সময়, তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে ইসলামের সেবা করার আবেদন পেশ করেন। তিনি তার গোত্রে নিজ মর্যাদাগত অবস্থানকে ব্যবহার করে যুদ্ধের বিষয়ে মুসলিমদের সহায়তা করার অনুমতি চান। মুহাম্মাদ তাকে এই বলে অনুমতি দেন যে, "যুদ্ধ তো হল ছলনা/প্রতারণা/কৌশলের নামান্তর মাত্র।" অতঃপর নুয়াইম এক কার্যকরী কৌশল অবলম্বনে তার লক্ষ্যে এগিয়ে যান। তিনি প্রথমে বনু কুরাইজা গোত্রের কাছে গিয়ে তাদের অন্যান্য মিত্রদের দুরভিসন্ধির ব্যপারে সতর্ক করেন। তিনি বললেন, যদি অবরোধ ব্যর্থ হয়, তবে বাকি মিত্ররা ইহুদিদেরকে (বনু কুরাইজা ছিল ইহুদি গোত্র) মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হাতে তুলে দিতে পিছপা হবে না। তাই কুরাইজাদের উচিত মিত্রবাহিনীর কিছু প্রতিনিধিকে সহায়তার বিনিময়স্বরূপ তাদের কাছে জামিন হিসেবে রেখে যাওয়ার দাবি করা। নুয়াইমের এই পরামর্শ কুরাইশদের মনপুত হল, যা মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের ভীতিকে আরও পাকাপোক্ত করে দিল।[২]

এরপর নুয়াইম মিত্রবাহিনীর নেতা আবু সুফিয়ানের কাছে গেলেন, এবং বললেন কুরাইজাগণ মুহাম্মাদের (সাঃ) কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি দাবি করলেন যে, ইহুদি গোত্র সহায়তার বিনিময়ে মিত্রবাহিনীর সদস্যদের জামিন রাখার আবেদন করবে বলে অভিসন্ধি করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা তাদেরকে মুহাম্মাদের হাতে তুলে দিতে চায়। তাই মিত্রবাহিনী যেন তাদেরকে একটি লোকও জামিন হিসেবে না দেয়। এই একই বার্তা নুয়াইম মিত্রবাহিনীর অন্যান্য গোত্রগুলোর কাছেও পৌছে দেয়।[১]

ফলে গাতাফান কুরাইশগণ ইক্রিমা ইবনে আবু জেহেলসহ একটি প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে ইহুদিদের খবর পাঠালো যে, কুরাইশদের অবস্থান তেমন ভালো নয়, ঘোড়া উট মারা যাচ্ছে। একারণে তারা একযোগে মোহাম্মদের ওপর হামলা করার প্রস্তাব দিচ্ছে। ইহুদিগণ যেন তাদের দিক থেকে হামলা করে এবং কুরাইশগণও তাদের নিজেদের দিক হতে আক্রমণ করতে প্রস্তুত। ইহুদিগণ প্রত্যুত্তরে বলল, আজ শনিবার। অতীতে যারা এইদিন সম্পর্কে ধর্মীয় নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে, তারাই ভয়ানক শাস্তি পেয়েছে। তাছাড়া কুরাইশগণ যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কিছু লোক জামিন স্বরূপ তাদের কাছে না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে না। দূত ইহুদীদের জবাব শুনে এসে বলার পর কুরাইশ এবং গাতাফান বললো, আল্লাহর শপথ, নঈম সত্য কথাই বলেছিলো। এরপর তারা ইহুদীদের খবর পাঠালো যে, তারা জামিন স্বরূপ কোন লোক পাঠাতে পারব না। একথা শুনে কুরাইজা গোত্রের লোকেরা বললো, নুয়াইম তো সত্য কথাই বলেছে। এভাবে উভয় দলের মধ্যে অবিশ্বাস, দলের সৈন্যদের মধ্যে হতাশা এবং জোটভুক্ত সৈন্যদের মধ্যেও ফাটল দেখা দিলো।[২][৩][৪]

নুয়াইম এভাবে তার উদ্দেশ্যে সফল হন এবং বনি কুরাইজা গোত্র মুসলিম বাহিনীর উপর আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে। অবরোধ যখন পঁচিশ দিন ছাড়িয়ে যাওয়ার পর প্রচন্ড ধূলিঝড় শুরু হয় এবং প্রবল ঝড়ে মুসলিমদের শত্রুপক্ষের তাবু তছনছ হয়ে যায়। শত্রুপক্ষ তাদের করনীয় কি তা ভেবে উঠতে পারল না। প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস ও তীব্র সেই শীতের রাতে মুহম্মদ হুযাইফাকে খবর আনার জন্য প্রেরণ করলেন। হুযাইফা ফিরে এসে কাফিরদের পলায়নের খবর দিলেন। যখন এ খবর মুসলিম বাহিনীতে পৌছাল, তখন সেখানে কেবল তিনশত সৈন্য অবশিষ্ট ছিল। বাকিরা সবাই নানা অযুহাতে ফিরে গিয়েছিল। নুয়াইমের এই সমরকৌশলের ফলে কোন হতাহতের ঘটনা ছাড়াই মুসলিমগণ শত্রুপক্ষের আক্রমণ হতে রক্ষা পায়।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Qadhi, Yasir. A Mercy to Mankind
  2. Lings, pp. 224–226.
  3. Lings, pp. 221–223.
  4. Ramadan, In the Footsteps of the Prophet, pp. 137–145.
  5. Lings, pp. 227f.