অজিতকুমার চক্রবর্তী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অজিতকুমার চক্রবর্তী (২০শে আগস্ট, ১৮৮৬- ২৯ ডিসেম্বর ১৯১৮) বাঙালি সাহিত্যিক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসাহিত্য-সমালোচক। শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের অধ্যাপক ছিলেন।[১] ফরিদপুরের মঠবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্র সাহিত্য অনুবাদ করে ইউরোপে রবীন্দ্রনাথকে পরিচিত করে তোলেন। তিনি একজন দক্ষ অভিনেতা এবং সুকন্ঠ গায়ক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।[২]

জন্ম ও পরিবার[সম্পাদনা]

অজিতকুমার চক্রবর্তী ১৮৮০ সালের ২০ আগস্ট ফরিদপুর জেলার মঠবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শ্রীচরণ চক্রবর্তী ও মাতা সুশীলা দেবী। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে গ্রীষ্মাবকাশের পর তিনি শান্তিনিকেতনে আসেন। এর আগে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন। শান্তিনিকেতনে তার শ্রম ও নিষ্ঠা ছিল সকলের সুবিদিত। শিক্ষকতার পাশাপাশি অনুবাদক, সঙ্কলক ও সম্পাদক হিসাবে তার দক্ষতা ছিল। রবীন্দ্রনাথ নিশ্চিন্তে নিজের একাধিক রচনা তার হাতে তুলে দিতেন অনুবাদের জন্য। শান্তিনিকেতন এবং রবীন্দ্রনাথের কথা বিলেতবাসীর কাছে পৌঁছে দেন অজিতকুমার ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে।[৩] তিনি ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে অধ্যয়ণের জন্য বৃত্তি লাভ করে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর প্রথম বিলেত যাত্রা করেছিলেন এবং এর ঠিক চার মাস আগে আশ্রমকন্যা লাবণ্যলেখাকে বিবাহ করেন।

রবীন্দ্রসাহিত্য-সমালোচক[সম্পাদনা]

অজিতকুমার চক্রবর্তী শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে ত্যাগব্রতী শিক্ষকরূপে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের অধ্যাপক হন। সাহিত্য সঙ্গীত অভিনয় প্রভৃতি কলাবিদ্যার সকল দিকেই ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার আদর্শ রূপায়ণে তিনি অন্যতম সহায়ক ছিলেন। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের একজন প্রধান ব্যাখ্যাতা হিসাবে তার পরিচিতি ছিল। তার রচিত রবীন্দ্রনাথ (১৯১২) এবং কাব্য পরিক্রমা (১৯১৪) গ্রন্থদুখানি রবীন্দ্রকাব্যলোচনার ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের নিজের অনূদিত রচনা ইউরোপে প্রকাশিত হওয়ার আগেই অজিতকুমারের রবীন্দ্রসাহিত্যের অনুবাদ ইংল্যান্ডে প্রচারিত হয়। ক্ষিতিমোহন সেন সংকলিত কবীর-দোঁহার অনেকগুলি ইংরাজীতে অনুবাদ করেন। এই অনুবাদকে ভিত্তি করে রবীন্দ্রনাথ ওয়ান হান্ড্রেড পোয়েমস অফ কবির গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। [৪]

রচিত গ্রন্থ[সম্পাদনা]

রবীন্দ্র কাব্যলোচনার ইতিহাস-
  • রবীন্দ্রনাথ (১৯১২)
  • কাব্যপরিক্রমা (১৯১৪)
জীবনী গ্রন্থ-
  • মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১১)
  • রামমোহন চরিত (১৯১৬)
কিশোরপাঠ্য ছোটো গ্রন্থ-
  • ব্রহ্মবিদ্যালয় (১৯১১)
  • খৃষ্ট (১৯১১) [১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে ডিসেম্বর (১৩২৫ সনের ১৪ পৌষ) তার মৃত্যু হয়। [৩]

অজিতকুমারের মৃত্যুর তিন দিন পর, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারি জগদীশচন্দ্র বসুকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন

"অজিতের অকাল-মৃত্যুতে সাহিত্যের ক্ষতি হবে। তার গুণ ছিল— সে সম্পূর্ণ নির্ভীকভাবে সকল পক্ষের বিরুদ্ধে এবং প্রচলিত মতের বিরুদ্ধে নিজের মত প্রকাশ করতে পারত। ঠিক বর্তমানে সে রকম আর কোনো বাংলা লেখক ত মনে পড়ছে না।"

আর একটি চিঠিতে অমল হোমকে লিখছেন-

"তার (অজিত) যৌবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলি সে দিয়েছে আমাকে ঘিরে। ইদানীং সে একটু দূরে সরে গিয়েছিল, সেটা একদিক থেকে ভালই হয়েছিল তার স্বাতন্ত্র্যবিকাশে।"

[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  2. "চক্রবর্তী, অজিতকুমার"। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৬ 
  3. "কবির কাছের,তবু স্বীকৃতিহীন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২৫ 
  4. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬