বিষয়বস্তুতে চলুন

দেবী রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেবী রায়
জন্ম৪ আগস্ট , ১৯৪০
পরিচিতির কারণকবি

দেবী রায় (জন্ম: ৪ আগস্ট, ১৯৪০ ১৯শে শ্রাবণ), পরিবারপ্রদত্ত নাম হারাধন ধাড়া (যা তিনি হলফনামা দ্বারা ১৯৬৪ সালে পরিবর্তন করেন), হাংরি আন্দোলন -এর জনকদের অন্যতম, এবং বাংলা আধুনিক কবিতার জগতে প্রথম নিম্নবর্গীয় কবি।

পারিবারিক পরিচয় ও শিক্ষা

[সম্পাদনা]

মাহিষ্য কৃষক পরিবারে জন্ম হলেও, তাদের কোনো চাষজমি পৈতৃক ভিটা মেদিনীপুরে ছিল না। তার পিতা - মাতা দুই সন্তানসহ হাওড়া শহরে নেতাজি সুভায রোদের বস্তিতে বসবাস করতেন। পিতা - মাতা উভয়েই নানা প্রকার শ্রমজীবী কাজের মাধ্যমে দুই ছেলেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি দেবী রায়ও বাবা - মাকে মজদুরি করে সাহায্য করতেন। স্নাতক পর্যন্ত পড়াশুনার খরচ তিনি নিজেই নানা প্রকার কাজ করে রোজগার করে ১৯৫৯ সালে বাংলায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হন। সেই বছরই ভারতীয় দাক বিভাগে চাকরি পান এবং ছোট ভাইয়ের শিক্ষা ভার নেন। তার পরিবারে তিনিই প্রথম স্কুল - কলেজে পড়া মানুষ। চাকরি পাবার পর তিনি সরকারি বিভিন্ন হিন্দী পরীক্ষায় পাশ করেন, যা তাকে সাহিত্য অকাদেমির অনুবাদকরূপে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

হাংরি আন্দোলন

[সম্পাদনা]

১৯৬০ সালে ছোটগল্প পত্রিকার দপতরে মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে দেবী রায়ের পরিচয় হয় এবং তা একটি গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়। ১৯৬১ সালে সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও মলয় রায়চৌধুরী হাংরি আন্দোলন ঘটানোর জন্য পাটনায় যে প্রথম বৈঠকটি করেছিলেন তাতে নির্ণয় নেয়া হয় যে, প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিতব্য বুলেটিনগুলির সম্পাদনার ভার নেবেন দেবী রায়। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত যতগুলি বুলেটিন প্রকাশিত হয়েছিল, প্রতিটিতে দেবী রায়ের হাওড়াস্হিত চালাবাড়ির ঠিকানা ব্যবহৃত হয়েছে। হাংরি আন্দোলনএ যাঁরা যোগ দিতে চাইতেন তারা দেবি রায়ের বস্তিবাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতেন। অনেক তরুণ কবি ও লেখক বস্তির ঘর দেখে শেষাবধি যোগ দিতে পারেননি, কেন না ১৯৬০ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্য মোটামুটি ছিল উচ্চবিত্তের আয়ত্তে। চল্লিশের বেশি সদস্য সংখ্যা হয়ে গেলে, ১৯৬৩ সালের মাঝামাঝি থেকে যখন যার যেমন ইচ্ছা নিজে বুলেটিন প্রকাশের নির্ণয় নেবার পর, দেবী রায়ের কাজটি বিকেনগদ্রিত হয়ে যায়। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত তিনি হাংরি আন্দোলনএর পত্রিকা চিহ্ণ পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ তিনি হাংরি আন্দোলন মামলায় গ্রেপতার হন, কিন্তু ১৯৬৫ সালের মে মাসে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়েছিল। কয়েকজন হাংরি আন্দোলনকারী পুলিশের সাক্ষী হয়ে যাওয়ায় দেবী রায় ান্দোলন ত্যাগ করেন। সরকারি চাকরি চলে যাবার ভয় এবং পুনরায় বাবা ও মাকে দারিদ্রে ঠেলে দেবার অতঙ্কও হাংরি আন্দোলন ত্যাগের আরেকটি কারণ। বস্তুত হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যাবার কারণগুলির মধ্যে দেবী রায়ের আন্দোলন ত্যাগ অন্যতম।

সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

ড. অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন যে, 'দেবী রায় প্রথম থেকেই তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব গড়ে নিতে পেরেছিলেন, এবং সেকারণে হাংরি আন্দোলনকারীদের মধ্যে তাকে অনায়াসে চিনে নেয়া যায়'। ড. উত্তম দাশ বলেছেন, 'দেশে - কালে সর্বভূতে যে আন্ধকার, সেই সর্বস্ব হারানো অবস্হায় আত্মার ইরিটেশান থেকে' দেবী রায়ের কবিতা উৎসারিত; 'অস্তিত্বের অসহায়তায় নিমজ্জিত ব্যক্তির মধ্যে ডুবে নিজের মানবসত্ত্বার অর্থ খঁোজায় আছে তার কবিতার উদ্দেশ্য, কবিতার পরিত্রাণ; তার কবিতায় আছে বন্দী আত্মার ক্রন্দন, হতাশা, শোক,কৌমবেদনা, ক্ষোভ ও ক্রোধ।

কবিতার আঙ্গিক

[সম্পাদনা]

দেবী রায়ের কবিতার পংক্তিগুলি অর্ধসমাপ্ত; একটি পংক্তির সঙ্গে পরেরটি আপাতসংযোগহীন। ছন্দকে তিনি, অন্যান্য হারি আন্দোলনকারীদের মতই ইচ্ছাকৃতভাবে ভাঙেন; চিত্রকল্পকে নিটোল হতে দেন না। হাংরি আন্দোলনকারীরা এই প্রক্রিয়াকে বলেছেন লজিকাল ক্র্যাক বা যুক্তিফাটল। দেবী রায়ের কবিতার বাক্যগুলি ক্ষোভে আকস্মিক, ক্রোধে এলোমেলো, শোকে আসংলগ্ন, হতাশায় কেন্দ্রাতিগ, গ্লানিতে ব্যাজস্তুতিময়, এবং প্রেমে ক্রমান্বয়হীন। দেবী রায় এই ক্রমহীনতাকে বলেছেন থট জাম্পিং

উল্লেখযোগ্য গ্রন্হ

[সম্পাদনা]
  • উন্মাদ শহর
  • কলকাতা ও আমি
  • মানুষ,মানুষ
  • সাম্প্রতিক তিনজন
  • দেবী রায়ের কবিতা
  • ভ্রূকুটির বিরুদ্ধে একা
  • এই সেই তোমার দেশ
  • পুতুল নাচের গান
  • সর্বহারা,তবু অহংকার
  • ভারতবর্ষ,তোমায় খুঁজছে
  • আগুনের গান
  • ২১শে ফেব্রুয়ারি
  • নির্বাচিত কবিতা

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • ডেবী রায় আলোচনাসমগ্র। সম্পাদক: স্বরাজ সেনগুপ্ত। রেনেসঁস পাবলিশার্স, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০৭৩। (২০০৪)।
  • কবিতা:ষাট সত্তর। সম্পসদক : পরেশ মণ্ডল, মৃত্যুঞ্জয় সেন ও ড.উত্তম দাশ। মহাদিগন্ত, বারুইপুর, কলকাতা ৭০০১৪৪। (১৯৮২)।
  • হাংরি শ্রুতি ও শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন। ড.উত্তম দাশ। মহাদিগন্ত, বারুইপুর, কলকাতা ৭০০১৪৪। (১৯৮৬)।
  • ক্ষুধিত প্রজন্ম ও অন্যান্য প্রবন্ধ। ড.উত্তম দাশ। মহাদিগন্ত, বারুইপুর, কলকাতা ৭০০১৪৪। (১৯৯৫)।
  • একালের গদ্যপদ্য আন্দোলনের দলিল। সত্য গুহ। আধুনা, আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলকাতা। (১৯৭০)।
  • যুবযন্ত্রণা ও সাহিত্য। ড.আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। বসুমতী, বৌবাজার, কলকাতা। (১৯৬৮)।
  • কৃত্তিবাস। সম্পাদক: সূনীল গঠ্গোপাধ্যায়। যুগীপাড়া রোড, দমদম, কলকাতা। (১৯৬৬)।
  • হাংরি কিম্বদন্তি। মলয়রায়চৌধুরী। দে বুক স্টোর, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০৭৩। (১৯৯৪)।
  • হাওয়া ৪৯ হাংরি আন্দোলন সংখ্যা। সম্পাদক: সমীর রায়চৌধুরী ও মর্শিদ এ. এম। হাওয়া ৪৯, বাঁশদ্রোণি, কলকাতা ৭০০০৭০। (২০০৬)।
  • উত্তরপ্রবাসী হাংরি আন্দোলন সংখ্যা। সম্পাদক: গজেন্দ্রকুমার ঘোষ। গোথেনবুর্গ, সুইডেন। (১৯৮৬)।
  • বনতুলসী কা গন্ধ। ফণীশ্বরনাথ রেণু। রাজকমল প্রকাশন, দিল্লি। (১৯৮৮)।
  • Salted Feathers Hungryalist Issue. Editor: Lee Altman and Dick Bakken . Portland, Oregon, USA. (1969).
  • Intrepid Hungryalist Issue. Editor: Allan De Loach. Buffalo, New York, USA. (1967).

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]