ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত
ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত
জন্ম১৮৮৩ সাল
মৃত্যু১৯৫২ সাল (আনুমানিক) কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাব্যায়ামবীর
সন্তানরবীন্দ্রনাথ গুপ্ত
পিতা-মাতাগোসাইদাস গুপ্ত

ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত (জন্ম:১৮৮৩ - মৃত্যু:১৯৫২) একজন ডাক্তার ও ব্যায়ামবীর ছিলেন। তার পুরো নাম হলো কাপ্তেন (মেজর) ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত আই .এম. এস (অবসরপ্রাপ্ত)। তিনই আমাদের সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ব্যয়ামকে প্রচলন করেন এবং জটিল ব্যাধি আরোগ্য করিবার জন্য নতুন প্রণালী আবিষ্কার করেন।

প্রথম জীবন[সম্পাদনা]

১৮৮৩ সালে কলিকাতা শহরে ফণীন্দ্রকৃষ্ণের জন্ম হয়। তার পিতা হলেন গোসাইদাস গুপ্ত। বাংলার খ্যাতনামা কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার মাতামহ ছিলেন।[১] হাওড়া জেলার বালিতে তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল। কিন্তু এক শত বছর কলিকাতা শহরে বসবাস করিয়াছেন।

ফণীন্দ্রকৃষ্ণের শিক্ষা কলিকাতাতেই আরম্ভ হয়। তিনি প্রথমে নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের পড়া শেষ করে মট্রোপলিটান কলেজে কিছুকাল পড়েন। তারপর সেখান থেকে সেন্ট্টাল কলেজে ভর্তি হন। কলেজের সাধারণ শিক্ষা শেষ করিয়া তিনি কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে আরম্ভ করিলেন। ১৯০৮ সালে ডাক্তারি পরীক্ষা পাশ করিয়া বাহির হন।

শরীর ভাল রাখার জন্য তিনি অম্বুবাবুর আখড়ায় ভর্তি হন। সাত বছর তিনি অম্বুবাবুর আখড়ায় সাত বছর কস্তি লড়েন। প্রত্যকদিন ভোরে কুস্তি লড়িতেন এবং বিকেলবেলা ডাম্বেল নিয়ে ব্যায়াম করিতেন।।২৫০০ ডন ওজন ১৫০০ বৈঠক দিতেন। অম্বুবাবুর মৃত্যর পর ফণীন্দ্রকৃষ্ণ নিজের বাড়ির কাছে একটি আখড়া খোলেন। এখানে ব্যাঙালী ও পশ্চিমদেশীয় যুবকদিগকে কুস্তি শেখাতেন।।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে তিনি কলিকাতাতেই প্রাইভেট প্রাকটিস করিতেন। সেই সময়ে তিনি কিছুকাল জাহাজের সার্জেন হয়ে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ঘুরিয়া আসেন। ১৯১৪ সালে যখন ইঊরোপের মহাসময় আরম্ভ হয়, তখন তিনি ইণ্ডিয়ান মেডিক্যাল সারভিসে যান। সেই সময়ে বধমানের মহারাজাধিরাজ ও ডাঃ সব্রাধিকারীর চেষ্টায় বেঞ্জল এ্যাম্বুলেন্স কোর নামে একটি স্বেছাসেবক-দল যুদ্ধের জন্য গঠিত হয়। তিনি তাদের গঠন কাজে ও সামরিক শিক্ষা দিয়ে এদের কাছে একজন নায়ক হয়ে মেসোপটেমিয়া যান। এই দলের সবাই শিক্ষিত ও ভদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন।

ভারতীয় সেনা দলে কাজ করিবার সময় তিনি ভিন্ন ভিন্ন রেজিমেন্টের নামজাদা পালোয়ানদের কুস্তি শিখাইতেন। অনেক সময় সেনাপতির আদেশে কুস্তির প্রতিযোগিতাতে বিচারক থাকিতেন। ৯ বছর তিনি ভারতীয় মেডিক্যাল সারভিস কাজ করিয়া অবসর নেন। তিনি ব্যায়াম শিক্ষার মধ্যে দিয়ে চিকিৎসা করিয়া অনেক কঠীন রোগীরও আরোগ্য করিয়াছেন। তিনি এইভাবে বহু রোগীকে রোগ মুক্তি করেছেন।

শেষ জীবন[সম্পাদনা]

১৯২৩-২৪ সালে কলিকাতার প্রদশণীতে যে নিখিল-ভারত কুস্তির প্রতিযোগিতা ( All India Championship Wrestling Tournament ) হয়, তাতে ফণীন্দ্রকৃষ্ণ ও মুশিদাবাদের নবাব সাহেব মধ্যস্ত ছিলেন। ইনি চব্বিশ বছরের সময় বিবাহ করেন। তিনি অতিরিক্ত আহারের বিরোধী ছিলেন।এনার বাহু ছিল ১৮"(world record that time)৫'৫" ইঞ্চি উচ্চতায়। পুরোবাহু ১৪" ওজন ৩ মন।120 kg বুক ৪৯ ইঞ্চি।

তিনি যখন পশ্চিমদেশের কোন অঞ্চলে কর্মরত তখন দুজন বলশালী সামরিক তার তাঁবুতে আসেন কুস্তি লড়তে। তিনি তখন তার মুগুর দুটি তাদের ঘোরাতে বলেন।১৫ সের ওজনের এই মুগুর তারা অতিকষ্টে ঘোরান।এবং তারপর বুঝতে পারে তার শক্তি সম্পর্ক এ। তিনি দুপ্যাকেট তাস একটানে ছিঁড়ে ফেলতে পারতেন। ফণীন্দ্রকৃষ্ণ এক দল যুবক গড়িয়া তুলিয়াছেন। তিনি প্রায় ৭০ বছরের জীবনের শেষ পর্যন্ত শক্তি এবং মনোবল সম্পূর্ণ একটি শক্তিশালী এবং পেশীবহুল শরীর, বজায় রাখতে সক্ষম ছিলেন। তার মৃত্যুতে শরীর- চর্যা ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। লৌহমানব নীলমণি দাশ। নারায়ন চন্দ দাশ তার ছাত্র ছিলেন।[২]

রচিত গ্রন্থাবলী[সম্পাদনা]

  • My System of Physical

Culture

পাদটীকা[সম্পাদনা]

সূত্র[সম্পাদনা]

  • সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র; বসু, অঞ্জলি, সম্পাদকগণ (২০০২), সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খন্ড (চতুর্থ সংস্করণ), কলকাতা: শিশু সাহিত্য সংসদ, আইএসবিএন 81-85626-65-0 
  • ঘোষ, অনিলচন্দ্র (১৯২৭), ব্যায়ামে বাঙালী, কলকাতা: প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরী, আইএসবিএন 81-89466-04-6 
  • চক্রবর্তী, বাণীব্রত, সম্পাদক (১৯৯২), লৌহমানব নীলমণি দাশ, কলকাতা: আয়রনম্যান পাবলিশিং হাউস 
  • গুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ (২০০৮)। "My Father – A Doctor and A Cultured Strongman" (ইংরাজি ভাষায়)। দাদি নানি ফাউন্ডেশন। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৪