ফ্রাঁসোয়া আরাগো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফ্রাঁসোয়া আরাগো
২৫তম ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৯ মে, ১৮৪৮ – ২৪ জুন, ১৮৪৮
পূর্বসূরীজ্যাকুয়েস-চার্লস ডুপোন্ট দ্য ল'ইউরে
উত্তরসূরীলুইস-ইউজেন কাভাইগনাক
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৭৮৬
এস্টাজেল
মৃত্যু২ অক্টোবর ১৮৫৩(1853-10-02) (বয়স ৬৭)
প্যারিস
রাজনৈতিক দলনেই
ধর্মনেই; নাস্তিক.[১]

ফ্রাঁসোয়া জিয়ান ডোমিনিক আরাগো (কাতালান: Francesc Joan Domènec Aragó), সহজভাবে ফ্রাঁসোয়া আরাগো (ফরাসি : [fʁɑ̃swa aʁaɡo]; কাতালান ভাষা: ফ্রান্সেস আরাগো, আইপিএ: [fɾənˈsɛsk əɾəˈɣo]) (১৭৮৬-১৮৫৩), একজন ফরাসি গণিতবিদ, পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, ফ্রিম্যাসন,[২] কার্বোনারি[৩] এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন।

প্রথম জীবন এবং কাজ[সম্পাদনা]

আরাগো ৩০০০-এর একটি ছোট গ্রান এস্টাজেলে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] স্থানটি ফ্রান্সের পিয়েরে-ওরিয়েন্টালেসের département -এ জন্মগ্রহণ করেন যেখানে তার পিতা পুদিনার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

চার ভাইয়ের মধ্যে আরাগোই ছিলেন জ্যেষ্ঠ। জিয়ান (১৭৮৮-১৮৩৬) উত্তর আমেরিকায় যান এবং মেক্সিকোর সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। জ্যাকুয়েস এত্তিনে ভিক্টর (১৭৯৯-১৮৫৫) লুইস দ্য ফ্রেসিনেট-এর ইউরেনি আবিষ্কারের অভিযানে (১৮১৭-১৮২১) যোগ দেন এবং ফ্রান্সে ফিরে আসার পর নিজেকে সাংবাদিকতা এবং নাটক-এর সাথে যুক্ত করান। চতুর্থ ভাই, এত্তিনে ভিনসেন্ট দে (১৮০২-১৮৯২) সম্পর্কে বলা হয়ে তাকে যে তিনি অনরে দ্য বালজা্কের সাথে ১৮২২ থেকে ১৮৪৭ সালের মধ্যকালে বিরাগের উত্তরাধিকারিণীর সাথে মৈত্রী করেন এবং বহুসংখ্যক হালকা ধাঁচের নাটকীয় টুকরো রচনা করেন, বস্তুত মৈত্রীবিষয়ক।[৫]

সামরিক স্বাদ পাবার উদ্দেশ্যে ফ্রাঁসোয়া আরাগোকে পারপিগ্নান পৌর কলেজে পাঠানো হয়। এখানে তিনি গণিতে্র ওপর শিক্ষা নিতে শুরু করেন এবং স্কুল পলিটেকনিক এর এনট্র্যান্সের জন্য প্রস্তুতি নেন। আড়াই বছরের মধ্যেই তিনি পরীক্ষার জন্য বলে দেয়া সব বিষয়ের জন্য প্রস্তুত হন এবং আরো বেশি পড়াশোনা করেন। তোউলৌসে পরীক্ষাকালীন তিনি জে. এল. ল্যাগরেঞ্জ সম্পর্কে জ্ঞান দেখিয়ে তার পরীক্ষককে বিস্ময়াভূত করে দেন।[৫]

১৮০৩ সালের শেষের দিকে আরাগো প্যারিসের স্কুল পলিটেকনিকে প্রবেশ করেন তবে তিনি আবিষ্কার করেন যে সেখানকার অধ্যাপকেরা জ্ঞান প্রদানে বা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম নন। তার লক্ষ্য ছিল আর্টিলারি সেবা এবং ১৮০ সালে সাইমন পোসেন-এর পরামর্শ ও সুপারিশে তিনি প্যারিস মানমন্দিরের সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত হন। এখানে তিনি পিয়েরে-সাইমন ল্যাপলেস-এর সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। মাধ্যাহ্নিক চাপ জনিত পরিমাপের জন্য জিয়ান-ব্যাপটিস্টে বাইওট কর্তৃক তার প্রভাব আরো সুবিস্তৃত হয়ে। এই পরিমাপের কাজ শুরু হয়ে জে.বি.জে. ডিলামব্রের মাধ্যমে এবং ১৮০৪ সালে পি.এফ.এ. মিশাইনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাময়িক বিরতিসহ চলে। আরাগো ও বাইওট ১৮০৬ সালে প্যারিস ত্যাগ করেন এবং স্পেনের পর্বতসমূহের ওপর অভিযান পরিচালনা করতে যান।[৫] সর্বদক্ষিণের বিন্দু ফোরমেন্টেরার অক্ষাংশ নির্ণয়ের পর আবারও প্যারিসে চলে আসেন। আরাগোন ১৮০৯ সাল পর্যন্ত তাদের কাজ চালিয়ে যান। মিটারের প্রকৃত দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের জন্য তিনি মাধ্যাহ্নিক চাপ নির্ণয় করতে চান।

বাইওটের চলে যাবার পর স্পেনবর্ধিত ব্যালেরিক দ্বীপে ফরাসি প্রবেশ রাজনৈতিক খামিরা ডেকে আনে এবং মানুষ গালাৎজো পর্বতের (কাতালান: Mola de l'Esclop) ওপর গোলাবর্ষণকে সেনা আক্রমণমূলক আরাগোর কাজ বলে মনে করেন। তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল এমন যে তিনি বেলভারের দুর্গে জুন, ১৮০৮ সালে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। ২৮শে জুলাই তিনি একটি মাছ ধরার জাহাজে করে দ্বীপ থেকে পালিয়ে যান এবং একটি রোমাঞ্চকর অভিযানের পর তিনি ৩রা আগস্ট আলজিয়ার্স পৌছান। সেখান থেকে তিনি মারসেইলি পর্যন্ত একটি যাত্রা করেন। ১৬ই আগস্ট মারসেইলির একেবারে কাছে এসে এটি এক স্প্যানিশ জলদস্যুদের হাতে পড়ে। বাকি সদস্যদের মত তাকেও রোজেস নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে এক বায়ুকলে এবং এরপর এক দুর্গে তাকে বন্দী করা হয়। তিনি সেখানেই ছিলেন, যদ্দিন না ফরাসিদের হাতে ঐ শহর পড়ে এবং বাকি বন্দীদের পালামোস নিয়ে যাওয়া হয়।[৫]

তিনি মাসের জেলভোগের পর আরাগো এবং অন্যান্যরা আলজিয়ার্সের দে এর চাওয়ামত মুক্তি দেয়া হয়। ২৮শে নভেম্বর তারা আবারও মারসেইলির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু তাদের বন্দর যখন দৃষ্টিসীমায়, ঠিক তখনই এক উত্তরে বাতাসের কবলে পড়ে তারা বোউজি, আফ্রিকার উপকূলে চলে যান। এ স্থান থেকে সমুদ্রে আলজিয়ার্স যাত্রা তিন মাসের এক ফালতু দেরি বয়ে নিয়ে আসবে; আরাগো তাই স্থলপথেই যাত্রা শুরু করলেন। এক মুসলিম ইমাম তাকে রাস্তা চিনিয়ে দেয় এবং ক্রিসমাস-এর দিন গন্তব্যে পৌছান। ছয়মাস পর ২১শে জুন, ১৮০৯ সালে তিনি আলজিয়ার্স থেকে আবারও মারসেইলির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তাকে এক একঘেয়ে ও অনাত্মীয় পরিপার্শ্বের মধ্য দিয়ে ল্যাজারেট্টোতে পৌছতে হয়, যতদিন না সকল সমস্যা দূর হয়েন যায়। আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ডট-এর কাছ থেকেই তিনি প্রথম চিঠি পান; এবং এর মাধ্যমে তার সাথে সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে। আরাগোর ভাষায়, "চল্লিশ বছর ধরে এই সম্পর্ক কোন প্রকার মেঘের উৎপাত ছাড়াই বহাল ছিল।"[৫]

শেষ দিনগুলো[সম্পাদনা]

আইফেল টাওয়ারের ৭২টি নামের মধ্যে অবস্থিত তাঁর নাম।

আরাগো শেষ পর্যন্ত একজন ধারাবাহিক প্রজাতান্ত্রিক ছিলেন এবং ১৮৫২ সালের অভ্যূত্থানের পর ডায়াবেটিসে ভোগার ফলে এবং এরপর শ্বেতরোগ যা ড্রপসির মাধ্যমে মারাত্মক হয়ে ওঠে, তিনি জ্যোতির্বিদ হিসেবে তার পদ ত্যাগ করেন এবং আনুগত্যের শপথ নেন। তৃতীয় নেপোলিয়ন বলে দিয়েছিলেন যে বুড়ো মানুষকে কোনক্রমেই যেন বিরক্ত করা না হয় এবং তার যা ইচ্ছা সে যেন তাই করতে পারে। ১৮৫৩ সালের গ্রীষ্মে আরাগোর শারীরবিদেরা তাকে হাওয়া বদলানোর উপদেশ দিলে তিনি পূর্ব পিয়েরেনেস-এর দিকে যাত্রা করেন। তবে এই পরামর্শ কোন কাজে আসে না এবং তিনি প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। প্যারিসের বিখ্যাত পিয়েরে ল্যাচাইজ সমাধিক্ষেত্রে তাকে দাফন করা হয়,

মঙ্গল গ্রহের জ্বালামুখ এবং চাঁদ এবং নেপচুনের একটি বলয় তার এবং টুয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নামানুসারে রাখা হয়েছে। আইফেল টাওয়ারে খোদাইকৃত ৭২টি নামের মধ্যে তার নাম রয়েছে।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

প্যারিসের পিয়েরে ল্যাচাইজ সমাধিক্ষেত্রে আরাগোর কবর

আরাগোর কাজগুলো তার মৃত্যুর পর জে.এ.ব্যারেল-এর হাত ধরে ১৭টি ভলিউমে প্রকাশিত হয়। পৃথকভাবেও জনপ্রিয় জ্যোতির্বিদ্যা (Astronomie populaire) ৪ ভলিউমে, জীবনী (Notices biographiques) ৩ ভলিউমে, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ (Indices scientifiques) ৫ ভলিউমে, বৈজ্ঞানিক অভিযান (Voyages scientifiques) ১ ভলিউমে, বৈজ্ঞানিক টোমেস (Grimoires scientifiques) ২ ভলিউমে, মিশ্রণ (Mélanges) ১ ভলিউমে এবং বিশ্লেষণাত্নক টেবিল এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি (ছবিসহ) ১ ভলিউমে প্রকাশিত হয়।

আরাগোর কাজের নিম্নলিখিত অংশগুলো ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছেঃ

  • ধূমকেতু আখ্যান (Treatise on Comets), লেখাঃ দি. কোল্ড, সি.বি. (লন্ডন, ১৮৩৩); ডব্লিউ.এইচ. স্মিথ ও গ্রান্ট কর্তৃক অনূদিত হয়েছে (লন্ডন, ১৮৬১
  • জেমস ওয়াট এর বাখান (Euloge of James Watt), লেখাঃ মুরহেড (লন্ডন, ১৮৩৯); ব্রাহাম কর্তৃক অনূদিত, টীকাসহ
  • জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক লোকপ্রিয় লেকচার (Popular Lectures on Astronomy), লেখাঃ ওয়াল্টার কেলি ও রেব. এল. টমলিনসন (লন্ডন, ১৮৫৪); ড. ডব্লিউ.এইচ. স্মিথ ও অধ্যাপক আর. গ্রান্ট কর্তৃক অনূদিত, ২ ভ. (লন্ডন, ১৮৫৫)
  • আরাগোর আত্মজীবনী (Arago's Autography), রেভারেন্ড বাডেন পাওয়েল কর্তৃক অনূদিত (লন্ডন ১৮৫৫, ৫৮)
  • আরাগো রচিত আবহাওয়াসম্পর্কিত রচনা (Arago's Meteorological Essays), আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ডট-এর ভূমিকা সহ, কর্নেল এডওয়ার্ড সাবাইন এর নির্দেশ মোতাবেক (লন্ডন, ১৮৫৫)
  • আরাগো লিখিত বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিদের জীবনী (Arago's Biographies of Scientific Men), স্মিথ, পাওয়েল ও গ্রান্ট কর্তৃক অনূদিত, ৮ ভ. (লন্ডন, ১৮৫৭)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Theresa Levitt (২০০৯)। "4: A Vital Matter: Light and Life"। The Shadow of Enlightenment : Optical and Political Transparency in France 1789-1848: Optical and Political Transparency in France 1789-1848। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 105আইএসবিএন 9780191562631। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৩The same Arago who spent his time criticizing unfounded myths now peddled them. Arago the atheist now spoke of souls. 
  2. Victor SCHOELCHER Républicain et franc-maçon, Anne GIROLLET, ed. Maçonnique Française, p. 26
  3. Dictionnaire universel de la Franc-Maçonnerie By Monique Cara, Jean-Marc Cara, Marc Jode
  4. "Francois Arago"The Canadian Journal2: 159। ১৮৫৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৩ 
  5.  এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনেচিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Arago, Dominique François Jean"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ2 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • হান, রোজার (১৯৭০)। "আরাগো, ডমিনিক ফ্রাঁসোয়া জিয়ান"। বৈজ্ঞানিক জীবনীর অভিধান (Dictionary of Scientific Biography)। নিউ ইয়র্ক: চার্লস স্ক্রিবনার-এর পুত্রCharles Scribner's Sons। পৃষ্ঠা ২০০–২০৩। আইএসবিএন 0-684-10114-9 
  • লিকোয়েক্স, জেমস (২০০৮), ফ্রাঁসোয়া আরাগো, একজন মহৎ বিজ্ঞব্যক্তি (François Arago, un savant généreux), প্যারিস: ইডিপি-সাইন্সেস, আইএসবিএন 978-2-86883-999-2 
  • ওয়াল্টার বেইলি, আরাগোর ঘূর্ণন উৎপাদন করতে একটি মোড. ২৮শে জুন, ১৮৭৯. (দর্শন ম্যাগাজিনঃ তাত্ত্বিক পরীক্ষামূলক এবং ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের একটি জার্নাল. টেইলর ও ফ্রান্সিস., ১৮৭৯)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
জ্যাকুয়েস-চার্লস ডুপোন্ট দ্য ল'ইউরে
ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রাদেশিক সরকারের চেয়ারম্যান
ফ্রান্সের রাজ্যপ্রধান
৬ মে ১৮৪৮ – ২৮ জুন ১৮৪৮
নির্বাহী কমিশন সাথে ছিলেন:
লুইস-এন্টনি গার্নিয়ের-পেজেস
আলফোনসে দ্য ল্যামার্টিন
আলেকজান্ডার লেড্রু-রোলিন
পিয়েরে মারিয়ে (দ্য সেইন্ট-জর্জেস)
উত্তরসূরী
লুইস-ইউজেন কাভাইগনাক
মন্ত্রিপরিষদ সভাপতি

টেমপ্লেট:১৮৪৮ সালের ফরাসি প্রাদেশিক সরকার প্রধান টেমপ্লেট:১৮৪৮ সালের ফরাসি নির্বাহী কমিশন