হাসান গুল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাসান গুল
হাসান গুল (ফাইল ছবি)
জন্মআগস্ট, ১৯৭৭
মৃত্যু১ অক্টোবর ২০১২(2012-10-01) (বয়স ৩৫)
অন্যান্য নামমোস্তফা হাজ্জি মুহাম্মদ খান
পেশাআল-কায়েদার উচ্চ পদস্থ কমান্ডারদের কুরিয়ার
সামরিক কর্মজীবন
আনুগত্য আল কায়েদা
সেবা/শাখা আল কায়েদা

হাসান গুল বা মুস্তফা হাজ্জি মুহাম্মদ খান ( আরবি: حسن غول; জন্ম: আগস্ট ১৯৭৭– ১ অক্টোবর, ২০১২) [১] ছিলেন একজন সৌদি বংশোদ্ভূত পাকিস্তানি [২] [৩] আল–কায়েদার সদস্য, যিনি বিন লাদেনের ব্যক্তিগত বার্তাবাহকের কুনিয়া প্রকাশ করেছিলেন, যা অবশেষে পর্যন্ত অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার ও বিন লাদেনের মৃত্যুতে সহযোগিতা করে। গুল জাতিগতভাবে একজন পশতুন ছিলেন। তার পরিবার উত্তর ওয়াজিরিস্তানের একটি অঞ্চল থেকে এসেছিল। [৪] [৫] [৬] ২০১২ সালে নিরাপত্তা পরিষদের আল–কায়েদা এবং তালেবান বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা কমিটি তাকে মনোনীত করে। [৭]

ইরান সীমান্ত পারাপার হওয়ার সময় ইরাকি কুর্দিস্তানে কুর্দি পেশমার্গা বাহিনী তাকে করে এবং ২০০৪ সালের প্রথম দিকে মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয় এবং বলা হয়, হাসান একজন কুরিয়ার থেকে যেকোনো একটি জায়গায় কাজ করেছেন, যিনি আল-কায়েদা সদস্যদের জন্য ওসামা বিন লাদেন এবং আবু মুসাব আল-জারকাবির একজন উচ্চপদস্থ সহযোগীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।

তাকে দুই বছর ধরে সিআইএ'র ব্ল্যাক সাইটে আটকে রাখা হয়। [৮] [৯] ২০০৬ সালে হাসানকে পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের হেফাজতে স্থানান্তর করা হয়, যারা তাকে ২০০৭ সালে মুক্তি দেয় [২] [১০] ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সিআইএ ড্রোন হামলায় গুল নিহত হন। [১১]

জীবনী[সম্পাদনা]

হাসান গুল ১৯৭৭ সালের দিকে সৌদি আরবের মদিনা বা পাকিস্তানের সিন্ধু রাজ্যের সাংরার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১২] ৯/১১ কমিশনের রিপোর্টে হাসানের উল্লেখ করা হয়েছিল যে, হাসান আবু জোবায়দাহ পরিচালিত একটি গেস্টহাউসে মুশাবিব আল-হামলানসহ তিনজন সদস্যের নেতৃত্ব দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। [১৩]

২০০৪ সালের ২৩ জানুয়ারি মাসে [১৪] কালারের কাছে ইরানের সীমান্ত ক্রসিংয়ে কুর্দি পেশমার্গা বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং তারা সিআইএ-এর কর্মকর্তাদের ইমেইল করা একটি ছবিসহ হাসানের পরিচয় নিশ্চিত করে। [১৫] পরস্পরবিরোধী দাবি রয়েছে যে, তিনি আল -জারকাউইর অর্থ ও বোমা পরিকল্পনা আনতে ইরাকে প্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন [১৬] অথবা তিনি ইরাকে সফল আত্মঘাতী বোমা হামলার বিষয়ে আল-জারকাভির অগ্রগতি প্রতিবেদন আনতে ইরান ছেড়ে চলে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। [১৭]

গুল একটি ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ও দুইটি সিডি বহন করছিল, যার মধ্যে একটি সতের পৃষ্ঠা-ব্যাপী অগ্রগতি প্রতিবেদনসহ অভিযোগ করা হয়েছে, যেটি জারকাভি লিখেছেন এবং তাতে তিনি ইরাকে আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গৃহীত গল্পের বিপরীতে বলে যে, অগ্রগতি প্রতিবেদনটি পরে বাগদাদের একটি পরিত্যক্ত সেফ-হাউসে পাওয়া গিয়েছিল। [১৮] [১৯] উপরন্তু, মার্কিন সামরিক বাহিনী মিডিয়াকে "মূল হাতে লেখা আরবি বর্ণের ফটোকপি" সরবরাহ করে, যেগুলি তখন অনুবাদ করা হয়েছিল। [২০] তার থলিতে থাকা একটি নোটবুকে সন্দেহভাজন সহযোগীদের নাম ও ফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়। [১৫]

পেশমারগা বাহিনী অবিলম্বে গুলকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেয় এবং দেশে থাকা অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। [১৮] [২১]

তিনি আনসার আল-ইসলামের সদস্য ছিলেন বলেও সন্দেহ করা হয়।

তাকে ধরার বিষয়ে বিবৃতি[সম্পাদনা]

তাকে ধরার পর, ফক্স নিউজ জানায় যে, তিনি প্রথম থেকেই আল-কায়েদার সদস্য ছিলেন; অন্তত দশ বছর আগে এবং জিহাদি চক্রে 'দারোয়ান' নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। যদিও কোনো প্রমাণ বা অন্য কোনো সূত্র নেই, যা এই দাবি সমর্থন করেছে। [২২] মিডিয়াতে একইভাবে উল্লেখবিহীন বলা হয়েছে যে, হাসান গুল আফ্রিকায় ১৯৯৮ সালে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা ঘটনায় ভূমিকা রেখেছিল। [২৩] [২২]

তার বন্দী হওয়ার প্রায় তিন দিন পর, প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের একটি বক্তৃতায় গুলকে উল্লেখ করা হয়:

ঠিক গতকাল -- গতকাল নয় -- এই মাত্র গত সপ্তাহে, আমরা আমেরিকাকে আরো নিরাপদ করার জন্য আরও অগ্রগতি করেছি। আমরা হাসান গুল নামে একজন সহকর্মীকে ইরাকে বন্দী করেছি। হাসান গুল -- সরাসরি খালিদ শাইক মুহাম্মাদকে রিপোর্ট করেছিলেন, যিনি ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার মূলহোতা ছিলেন এবং তিনি একজন খুনি ছিলেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আল-কায়েদা নেতাদের কাছে অর্থ ও বার্তা পাঠাচ্ছিলেন। তিনি বিদ্বেষীদের এই নেটওয়ার্কের একটি অংশ ছিলেন যা আমরা ভেঙে দিচ্ছি। আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভালো কাজ করেছেন। সে ইরাকে ধরা পড়েছিল, যেখানে সে আমাদের সৈন্যদের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যে আল-কায়েদাকে সাহায্য করত।

তাকে ধরার ৬ দিন পর মার্কিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রিকার্ডো সানচেজ গুলকে উল্লেখ করে বলেন, গুলকে আটক করা বেশ শক্তিশালী প্রমাণ যে, আল–কায়েদা তাদের হত্যামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাবার জন্য ইরাকে পা রাখার চেষ্টা করছে। [২৪] সিআইএ পরিচালক জর্জ টেনেট সিনেট সিলেক্ট কমিটির কাছে তার সাক্ষ্যদানে আল-কায়েদার সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যিনি মার্কিম জনগণকে আর কখনও হুমকি দিতে পারবেন না।[২৫] কলামিস্ট উইলিয়াম সাফায়া দাবি করেছেন যে এটি একটি "ধূমপানকারী বন্দুক" যা ইরাক এবং আল-কায়েদার মধ্যে যোগসূত্র প্রমাণ করে। [২৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Treasury Targets Three Senior Al-Qa'ida Leaders"U.S. Treasury Department। সেপ্টেম্বর ৭, ২০১১। 
  2. Roston, Aram (৯ জানুয়ারি ২০১৪)। "Cloak and Drone: The Strange Saga of an Al Qaeda Triple Agent"Vocativ। ২৫ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  3. "Security Council Al-Qaida Sanctions Committee Adds Four Names to Its Sanctions List, Amends One Entry"U.N. Security Council। মার্চ ১২, ২০১৪। 
  4. "The courier: The multiple identities of the man who led U.S. To bin Laden" 
  5. "How the CIA really caught bin Laden's trail"। ২৯ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  6. "Leader's profile: Hassan Ghul"। Memorial Institute for the Prevention of Terrorism। জুন ৯, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১০, ২০০৭ 
  7. "AQ Sanctions List"un.org 
  8. "Senate Intelligence Committee Study on CIA Detention and Interrogation Program, page 384."। ১৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০২৩ 
  9. ""Senate Intelligence Committee Study on CIA Detention and Interrogation Program, page 384-388."."। ১৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০২৩ 
  10. Testimony of Rangzieb Ahmed ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৩-২৭ তারিখে
  11. Miller, Greg; Tate, Julie (অক্টোবর ১৭, ২০১৩)। "Documents reveal NSA's extensive involvement in targeted killing program"The Washington Post 
  12. "Treasury Targets Three Senior Al-Qa'ida Leaders" 
  13. "Notes to Chapter 7"9/11 Commission Report 
  14. "List of "Ghost Prisoners" Possibly in CIA Custody"Human Rights Watch। সংগ্রহের তারিখ জুন ১০, ২০০৭ 
  15. Brian Bennett, Vivienne Walt (ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০০৪)। "Fields of Jihad"Time। মার্চ ৮, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  16. Andrea Mitchell (জানুয়ারি ২৯, ২০০৪)। "Al-Qaida captive in Iraq talking: U.S. intelligence: Ghul was likely bearing money, plans for bombings"NBC News। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১০ 
  17. "AIM Report: Breaking America's Resolve"Accuracy in Media। মে ১৯, ২০০৪। অক্টোবর ২২, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১০, ২০০৭ 
  18. "Emerging face of al-Qaeda's man in Iraq"Sydney Morning Herald। ফেব্রুয়ারি ১১, ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  19. Dexter Filkins (ফেব্রুয়ারি ৯, ২০০৪)। "U.S. Says Files Seek Qaeda Aid In Iraq Conflict"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  20. Cesar Soriano (জুন ১৫, ২০০৬)। "Iraqi leaders: Memo details al-Qaeda plans"USA Today। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  21. Bill Gertz (জানুয়ারি ২৪, ২০০৪)। "U.S., Iraqis capture al Qaeda 'facilitator'"Washington Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  22. "Suspected al-Qaeda Operatives Nabbed in Iraq"Fox News। জানুয়ারি ২৪, ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  23. Bill Gertz (জানুয়ারি ২৪, ২০০৪)। "U.S., Iraqis capture al Qaeda 'facilitator'"Washington Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  24. "U.S. Commander Says Qaeda Working in Iraq"New York Times। জানুয়ারি ২৯, ২০০৪। ২০০৭-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-১১ 
  25. Testimony of Director of Central Intelligence George J. Tenet Before the Senate Select Committee on Intelligence
  26. Safire, William, New York Times Editorial, "Found: A Smoking Gun, February 11, 2004