সমতা নারীবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নারী সাংকেতিক চিহ্ন

সমতা নারীবাদ হলো সামগ্রিকভাবে নারীবাদ আন্দোলনের একটি উপসেট যা পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যগুলোকে কেন্দ্র করে সমস্ত ক্ষেত্রে সকল লিঙ্গের সমতা অর্জনকে মূল লক্ষ্য হিসাবে নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমতা, কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ, নিপীড়নমূলক প্রচলিত ধারণা থেকে মুক্তি এবং একটি উভলিঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি।[১][যাচাইকরণ ব্যর্থ হয়েছে (আলোচনা দেখুন।)]

নারীবাদী তত্ত্বটি পুরুষদের তুলনায় নারীদের সমান ও বৈসাদৃশ্যহীন আইনি মর্যাদাকে প্রচার করতে চায়। যদিও সমতা নারীবাদীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্মত হন যে পুরুষ এবং নারীদর শারীরবৃত্তীয় এবং মস্তিষ্কের মধ্যে ভিন্ন জৈবিক পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু তারা যুক্তি দিয়েছেন যে একটি মনস্তাত্ত্বিক স্তরে, যৌক্তিকতা এবং কারণের ব্যবহার উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সাম্যবাদী নারীবাদীদের মতে, পুরুষ ও নারীরা তাদের যুক্তি, লক্ষ্য অর্জন, কাজে এবং বাড়িতে উভয় ক্ষেত্রেই সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সমান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মেরি ওলস্টোনক্রাফট এর “এ ভিন্ডিকেশন অব দ্যা রাইটস অব ওমেন” ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরে সমতা নারীবাদই নারীবাদের প্রধান প্রভাব ছিল। পুরুষ ও নারীর সমতার বিষয়টি শিক্ষা এবং শ্রমিকের অধিকারে আত্মপ্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতের নারীদের সক্রিয়তা ও নারীবাদী তত্ত্ব অনুসরণের জন্য একটি প্রবাদমূলক পথ তৈরি করে।[২] সেই থেকে সক্রিয় সমতা নারীবাদীদের মধ্যে রয়েছেন সিমোন দ্যা বোভোয়ার, সেনেকা ফলস সম্মেলনের নেত্রীরা, এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটন, লুচারিয়া কফিন মট, সুসান বি অ্যান্টনি, বেটি ফ্রাইডান এবং গ্লোরিয়া স্টেইনেম।

উনিশ এবং বিংশ শতাব্দীতে সমতা নারীবাদ যখন নারীবাদের প্রধান দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তখন ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে জনপ্রিয় নারীবাদ, পার্থক্য নারীবাদ বা পুরুষ এবং নারীর মধ্যে প্রয়োজনীয় পার্থক্যগুলো মনোযোগ লাভ করে।[৩] সমতা নারীবাদের বিপরীত এই দৃষ্টিভঙ্গি সহানুভূতি, লালনপালন ও যত্নের মতো যে বিষয়গুলো ঐতিহ্যগতভাবে নারীদের বৈশিষ্ট্যে হিসেবে বিবেচনা করা হয় সে বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে "নারীত্ব" উদ্‌যাপন করা। যদিও সাম্যবাদী নারীবাদীরা মানব প্রকৃতিটিকে মূলত উভয়লিঙ্গের জন্য সত্য মনে করেন কিন্তু পার্থক্য নারীবাদীরা, এই দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরুষ-আধিপত্যবাদের প্রচলিত ধারণাকে ভালো বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন এবং তাদের মতে, এইভাবে এটি সমাজের পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য কাজ করে।[৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আইন এবং ধর্মতত্ত্ব উভয় ক্ষেত্রেই নারীদের শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে নিম্নমানের হিসেবে চিত্রিত করা হয়। ১৭৯২ সালে মেরি ওলস্টোনক্রাফট “ভিন্ডিকেশন অব দ্যা রাইটস অব ওমেন” লিখলে নারীবাদী আন্দোলন ঘটানোর পেছনে থাকা প্রথমদিকের নথিগুলোর একটির আবির্ভাব ঘটে। যখন তার সাহিত্যকে বিদ্রোহী বলে মনে করা হচ্ছিল তখন ওমেন’স রিপাবলিকান ক্লাব সেই স্বাধীনতা, সমতা এবং সহমর্মিতা উভয় নারী ও পুরুষের জন্য প্রযোজ্য বলে দাবি করে। তখন সেই সাহিত্য ফ্রান্স জুড়ে নারীদের অনুভূতি প্রতিধ্বনিত করে। যখন এই আন্দোলন আধিপত্য পায় তখন হঠাৎ করে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তা থামিয়ে দেয় এবং আইনের মাধ্যমে নেপোলিয়ন স্বামীদের তাদের পরিবারের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেয়।[৫]

ফ্রান্সে সংঘটিত অধিকাংশ সমতা নারীবাদ সফল হয়নি কিন্তু এগুলো ১৮০০ শতকে উত্তর আমেরিকায় সংঘটিত অনেক আন্দোলনকে প্রভাবিত করে। অ্যাবিগেইল অ্যাডামস এবং মার্সি ওটিস ওয়ারেন ১৭৭৬ সালের সংবিধানে নারীর স্বাধীনতা কোনো সহায়তা ছাড়াই যুক্ত করার চেষ্টা করেন। ১৯৪৮ সালে নিউ ইয়র্কে অবস্থিত সেনেকা জলপ্রপাতে সংঘটিত নারী চুক্তির মাধ্যমে এলিজাবেথ কেডি স্টান্টন এবং লুক্রেসিয়া কোফিন সহ হাজার হাজার নারী সমতা নারীবাদের গতি পরিবর্তন করে দেয়। এতে তারা স্বাধীনতার পাশাপাশি তারা সকল ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বৈধ সমতা দাবি করেন (শিক্ষা, ক্ষতিপূরণ, অর্থনৈতিক সুবিধা এবং ভোটাধিকার ইত্যাদি)। এলিজাবেথ কেডি স্টান্টন এবং সুজান বি. এনথোনি এর প্রভাবে এই আন্দোলন ইউরোপে বিস্তার লাভ করে। ১৯৬৯ সালে জন স্টুয়ার্ট মিল “দ্য সাবজেকশন অব ওমেন” প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতার অর্থ মানবিক ও অধ্যাত্মিক অগ্রসরতা এবং প্রত্যেকের জন্য আরও সুখ নিয়ে আসবে বলে যুক্তি দেন।[৬]:৮৭–৮৯

ইউরোপে এই আন্দোলন অগ্রসর হওয়ার পর তা ১৯২০ সালে নারীর ভোটাধিকার আন্দোলন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। নারীরা পুরুষের সমান কিনা এ বিষয়টি নিয়ে অনেক নারী ভিন্ন মতের অধিকারী ছিলেন। বিশ্বজুড়ে নারীদের রাজনৈতিক, অথনৈতিক এবং শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষে জাতিসংঘ নারী মর্যাদা কমিশন স্থাপিত হওয়া পর্যন্ত এটি চলতে থাকে। ফরাসি অস্তিত্ববাদী সিমোন দে বিউভোয়র তার কীর্তি “দ্বিতীয় লিঙ্গ” প্রকাশ করেন, যাতে তিনি নারী এবং লিঙ্গ সমতা সম্পর্কিত অনেক দাবির সত্যতা প্রকাশ করে দেন। ১৯৬৩ সালে সমতা নারীবাদ সংক্রান্ত আরেকটি সাহিত্য সামনে আসে। যা ‍ছিল বেটি ফ্রাইডেন এর “দ্যা ফেমিনাইন মিস্টিক” তিনি “যে সমস্যার কোনো নাম নেই” তা নিয়ে এতে আলোচনা করেছেন, যা দ্বারা তিনি ১৯৫০ এর দশকের নারীদের মধ্যে বৃহৎভাবে বিস্তৃত থাকা হতাশাকে নির্দেশ করেছেন।[৭] তথ্যের মাধ্যমে সমাজের তৈরি অসমতা দেখিয়েছেন যা এ দুঃখজনক পরিস্থিতির কারণ ছিল। সাথে তিনি তার নিজের সন্তানের যত্ন নিতে তার মনোস্তাত্ত্বিকের কর্মজীবন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন। ১৯৬৬ সালে জাতীয় সংস্থার উন্নয়নের সাথে এই সাহিত্যগুলোকে নির্দেশনা হিসেবে ব্যবহার করে আবার যুক্তরাষ্ট্রে নারীবাদ জেগে ওঠে। এই সংঘ নারী এবং পুরুষের মধ্যে আবার সকল বৈষম্য দূর করতে নারীদের উপর থেকে সকল আইনী এবং সামাজিক বাধা সরিয়ে দিতে সংগ্রাম করে। ১৯৭২ সালে বেলা আফজাং, বেটি ফ্রেইডেন এবং গ্লোরিয়া স্টেইনেম এই সমতা অধিকার আন্দোলনকে কংগ্রেস পর্যন্ত নিয়ে যায়।[৮]

সমতা নারীবাদী তত্ত্ব[সম্পাদনা]

সমতা নারীবাদ তত্ত্বীয় এবং দশর্নের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমতার প্রসারণকে বোঝায়। এর ভিত্তি ইচ্ছা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন এবং লক্ষ্যে নারী ও পুরুষের সমানতাকে সমর্থন করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে সংস্কৃতির বাহিরে মানুষের প্রকৃতি সাধারণ এবং সমান।[১][যাচাইকরণ ব্যর্থ হয়েছে (আলোচনা দেখুন।)]

অধিকাংশ সমতা নারীবাদ নারী এবং পুরুষ উভয়ের মতের মিলকে নিরপেক্ষভাবে কেন্দ্রীয় মতবাদ হিসেবে গণ্য করে।[৯]: মেরি ওলস্টোনক্রাফ্ট নারী অধিকারের বিষয়ে লিখেছেন যে, তার “এ ভিন্ডিকেশন” (১৭৯২) এ নারীদের মানুষ হিসেবে সমান আইনী এবং রাজনৈতিক অধিকার পাওয়া উচিত। এছাড়াও, তিনি বিশেষভাবে যেসব অধিকার নিয়ে পুরুষ এবং নারী উভয়ই বিতর্ক করে সেগুলো নিয়ে জোড়ালো বিতর্ক করেছেন।[৯]: অনুরূপভাবে, নারী এবং পুরুষের বিতর্কের দক্ষতা একই থাকায় তাদের তাদের সমান অধিকার পাওয়া উচিত। জন স্টুয়ার্ট মিল “দ্যা সাব্জেকশন অব ওমেন” (১৮৬৯) -এ সমাজকে অবশ্যই যুক্তির মাধ্যমে প্রস্তুত হতে হবে এবং “জন্ম দুঘর্টনা” প্রাসঙ্গিক নয় বলে যুক্তি দেন। নারী ও পুরুষ উভয়ই যুক্তি মান্য করলে জৈবিক উপাদান যেমন, লিঙ্গ, জাতি কারো গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃতিগত বিষয় হিসেবে থাকে না। মিল অনুভব করেন যে, “একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, নারীদের অধীনে রাখতে পুরুষেরা তাদের কাছে ভদ্রতা প্রদর্শন করে এবং আজ্ঞাবহভাবে পুরুষের কাছে প্রত্যেকের সমর্পনকে যৌন আকর্ষণ হিসেবে প্রদর্শন করে।”[৬]:১–১২৭ অনুরূপভাবে নারীদের তাদের লিঙ্গের সমর্পনের বৈশিষ্ট্য প্রকৃতিগতভাবে আছে তা বলা একটি বিরোধিতামূলক পদক্ষেপ হবে এবং তা সকল মানুষের প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণকারী যুক্তির মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ[সম্পাদনা]

মেরি ওলস্টোনক্রাফ্ট[সম্পাদনা]

১৭৯২ সালে, মেরি ওলস্টোনক্রাফ্ট প্রথম দিকের নারীবাদী দর্শনের প্রথম কীর্তিগুলোর একটি তৈরি করেন এবং যদিও তিনি স্পষ্টভাবে নারী ও পুরুষ সমান বলেননি, কিন্তু জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমতার ডাক দিয়েছেন, যা পরবর্তী সমতা নারীবাদী কীর্তিগুলোর জন্য পথ প্রসস্থ করে দেয়। তিনি তার “এ ভিন্ডিকেশন অব দ্যা রাইটস অব ওমেন” -এ রাজেনৈতিক এবং নৈতিক বিষয়গুলোর উপর জোর দিয়ে, নারীদের তাদের সমাজের অবস্থার সাথে ‍তুলনাযোগ্য শিক্ষা থাকা উচিত বলে যুক্তি প্রদান করেন। যেহেতু নারীরা প্রধান যত্নশীল ব্যক্তি, তাই তারা যদি এ সুযোগ পায়, তাহলে তারা তাদের সন্তানদের আরও ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারবে এবং স্বামীদের কাছে তারা স্ত্রী এর পরিবর্তে সঙ্গী হিসেবে গণ্য হতে পারবে বলে তিনি তার যুক্তিটি ব্যক্ত করেছেন। তিনি নারীদের বিয়ের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হওয়া ‘সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করার পরিবর্তে তারা মানুষ এবং তাদের পুরুষের সমান অধিকার পাওয়া উচিত এই বিষয়টি মান্য করেন।[৯]:৭৪–৮৮

জন স্টুয়ার্ট মিল[সম্পাদনা]

জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮৬৯ সালে তার স্ত্রী, হ্যারিয়েট টেয়লর মিল এর সাহায্যে “দ্যা সাব্জেকশন অব ওমেন” প্রকাশ করেন। এতে তিনি লিঙ্গ সমতার পক্ষে বিতর্ক করেন। তিনি তার স্ত্রীর তৈরি প্রবন্ধ, “দ্যা এনফ্রানচাইজমেন্ট অব ওমেন” (যাতে তিনি নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতার দরজা খুলে দেন) -এর থেকে কিছু যুক্তি কাটিয়ে দিতে সক্ষম হন। মিল বিশ্বাস করেন যে, নারীদের সমান হিসেবে গণ্য হওয়া থেকে পাওয়া নৈতিক এবং বুদ্ধিমত্তার অগ্রসরতা প্রত্যেকের জন্য বৃহত্তর অর্থে সুখ নিয়ে আসতে পারে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রত্যেকেরই নিজেকে শিক্ষিত এবং উন্নত করার অধিকার আছে, একই সাথে তিনি নারীদের ভোটাধিকার প্রদানের পক্ষে বিতর্ক করেন। সম্পূর্ণ বই জুড়ে তিনি নারী ও পুরুষ উভয়েই ভোট দিয়ে নিজেদের অধিকার রক্ষা করার সুযোগ এবং নৈতিক এবং বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে নিজেদের পায়ে দাড়ানোর সুযোগ সবার পাওয়া উচিত বলে বিতর্ক করেন এবং তার অবস্থান নারীদের ভোটাধিকারের জন্য ব্যবহার করেন।[১০]

তিনি “নারীরা বিভিন্ন কাজে কম পারদশী, আর এ কারণে তাদের সুযোগ দেওয়া হয় না -এ কথা বলে তারা করে না, আর তাই আমরা তাদের যোগ্যতা জানি না” -এ রকম অনেক বিতর্কের বিরুদ্ধে গিয়েছেন। তিনি দাবি করেন যে, পুরুষেরা একটি আধিপত্যবাদী বক্তব্য এবং শুধুমাত্র প্রমাণহীন তত্ত্ব নিয়ে বিতর্ক করছে। নারীদের তাদের যোগ্যতা খুজে বের করার সুযোগ দেওয়া হলে তা মনুষ্যত্বের সেবা করার মানসিক দক্ষতা দ্বিগুণ করে দেবে এবং মানব উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি দাবি করেন।[৬]:৫৬–৭৯

সিমোন দে বিউভোয়র[সম্পাদনা]

সিমোন দে বিউভোয়র তার তিন অংশে বিভক্ত বই, দ্বিতীয় লিঙ্গ লেখার মাধ্যমে সমতা নারীবাদে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রথম অংশ “ডেসটিনি” -তে তিনি মানুষের মধ্যে তুলনা করার পূর্বে বিভিন্ন প্রাণিদের মধ্যে নারীর সাথে পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। এই শারীরবৃত্তীয় এবং মনোবিশ্লেষণ সম্পর্কিত তথ্যগুলো থেকে তিনি এই সারমর্মে পৌছান যে, ইতিহাসে স্ত্রী লিঙ্গ কখনো পরাজিত হয়নি। দ্বিতীয় অংশ, “হিস্টোরি” -তে তিনি নারীদের দুটি ক্রমবিন্যাসে আলোকপাত করেছেন: উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ এবং প্রজননের দাসত্ব থেকে মুক্তি। যেভাবে পুরুষ পশু স্ত্রী পশুর উপর আধিপত্য বিস্তার করে, সেভাবে তিনি এই দুটি অংশে নারী হওয়াকে পশু হওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। অবশেষে, তৃতীয় অংশে, তিনি পুরুষের ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কল্পিত “চিরন্তন হতাশা” নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারপর তিনি অবস্থার সম্পূর্ণ প্রকৃত বাস্তবতায় নিয়ে আলোচনা করে তার কল্পনা এবং বাস্তবতার মধ্যকার বৈসাদৃশ্য দেখান।[১১] তার সম্পূর্ণ সাহিত্যিক কর্মজীবনে তিনি লিঙ্গ বিষয়ে কিছু কুসংস্কার স্পষ্ট করতে সাহায্য করেছেন এবং নারী ও পুরুষকে সমান অধিকারের সাথে সমানভাবে বিবেচনা করতে হবে -এ শক্ত বার্তা দিয়েছেন।

বেটি ফ্রাইডেন[সম্পাদনা]

বেটি ফ্রাইডেন তার “দ্যা ফেমিনাইন মিস্টিক” বইটি লেখার পর সর্বোস্বীকৃত সমতা নারীবাদীদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেন। এ বইটিতে তিনি “যে সমস্যার কোনো নাম নেই” (১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের নারীদের হতাশাকে নির্দেশ করা হয়েছে) নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তার বইয়ের মাধ্যমে তিনি অনেক সমস্যা সনাক্ত করতে সক্ষম হন এবং তার ব্যাপকভাবে বিস্তৃত স্বীকৃতির জন্য পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর ওমেন (এনএও) -এর সভাপতি হন।

বইটি জুড়ে তিনি দেখান যে, নারীরা “স্বামী,সন্তান এবং বাড়ি ছাড়াও আরও কিছু চায়”। তিনি সন্তান বড় করার সামাজিক প্রত্যাশা এবং তা কীভাবে অনেক নারীকে সে যা করতে চেয়েছিল তা করা থেকে বিরত রাখে তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। নারীদের অনেক সিদ্ধান্ত পুরুষদের নেওয়ায় নারীদের মধ্যে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়ে। অনেক পরিবার শুধু ছেলে সন্তানের শিক্ষার উপর মনোযোগ দিত এবং মেয়েদের শিশু সন্তান জন্মদানের আশা পূরণের জন্য বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো -এ সমস্যা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন।[৭] তার সাহিত্যের কারণেই নারীদের সামাজিক প্রত্যাশ্য অমান্য করা স্বাভাবিক এবং সুযোগ, উপায়, বিয়ে, শিক্ষা এবং ভোটের ক্ষেত্রে নারীরা সমতা পাওয়ার সংগ্রামের স্বর তুলতে পারে।

অভিযোগ[সম্পাদনা]

সমতা নারীবাদের প্রধান আপত্তি আসে নারীবাদের সাথে পার্থক্য থেকে বলা হয় এই বিশ্বাস যা শুধুমাত্র নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্যের উপর জোর দেয়। কেরেল জিলিগান, হোয়ান টোরোন্টো, এভা ফেদার কিটেয়, জেনেভাইব লোয়েড, অ্যালিসোন জেগার এবং ইয়েনেসতা কিং -এর মতো নারীবাদীদের দ্বারা সমর্থিত এই দৃষ্টিভঙ্গিটি সমতা নারীবাদে জোর দেওয়া উভলিঙ্গ মনুষ্য প্রকৃতি বিষয়টি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। মূলত ১৯৮০ সালে শুরু সমতা নারীবাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের ভিন্ন অভিজ্ঞতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এইভাবে পুরুষদের প্রভাবশালী উচ্চাকাঙ্ক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।[১২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Stanford University. Gendered Innovations. Retrieved 3 October 2014.
  2. Wollstonecraft, Mary. "A Vindication of the Rights of Woman". Retrieved 4 October 2014.
  3. The University of Alabama. "Kinds of Feminism". Retrieved 3 October 2014.
  4. Ethics of Care (International Encyclopedia of Philosophy). Retrieved 2 October 2014.
  5. Landes, Joan B. Women and the Public Sphere in the Age of the French Revolution. Ithaca: Cornell UP, 1988. Retrieved 1 October 2014
  6. Mills, John Stuart and Okin, Susan Moller. The Subjection of Women. Hacking Publishing, 1998. Retrieved 4 October 2014.
  7. Friedan, Betty. "The Feminine Mystique." The Essential Feminist Reader. Ed. Estelle B. Freedman. New York: Random House Group, 2007. Retrieved 2 October 2014.
  8. Castro, Ginette. American Feminism: A Contemporary History. Trans. Elizabeth Loverde-Bagwell. New York: New York UP, 1990. Retrieved 1 October 2014.
  9. Wollstonecraft, Mary. A Vindication of the Rights of Women. Retrieved 4 October 2014.
  10. John Stuart Mills (Stanford Encyclopedia of Philosophy)". plato.stanford.edu. Retrieved 30 September 2014.
  11. Beauvoir, Simone De. The Second Sex. New York: Alfred A. Knopf, 1949.
  12. Bromley,Victoria L. (2012). Feminisms Matter: Debates. Theories. Activism. Toronto, Ontario: University of Toronto Press Inc. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৪৪২৬-০৫০০-৮