ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি
Psarisomus dalhousiae
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: প্যাসারিফর্মিস
পরিবার: Eurylaimidae
গণ: Psarisomus
Swainson, 1837
প্রজাতি: P. dalhousiae
দ্বিপদী নাম
Psarisomus dalhousiae
Jameson, 1835

ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি (বৈজ্ঞানিক নাম: Psarisomus dalhousiae) (ইংরেজি: Long-tailed Broadbill) বা ল্যাজঝোলা গোদাঠোঁটি Eurylaimidae (ইউরিলাইমিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Psarisomus (স্যারিসোমাস) গণের এক প্রজাতির মাঝারি আকারের বনচর পাখি।[১][২] ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ডালহৌসির কটিঙ্গা ( psaris = কটিঙ্গা; গ্রিক: soma = দেহের, dalhousiae = ডালহৌসির, ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর লর্ড ডালহৌসির স্ত্রী ক্রিস্টিনা ডালহৌসির নামে)।[২] সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৩ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস।[৩] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৪] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয়।[২] পৃথিবীতে এদের সংখ্যা সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায় নি।[৩]

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটির মূল আবাস দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াভিয়েতনাম জুড়ে এদের বিস্তৃতি।[৪]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটির মোট নয়টি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা গেছে।[৫] উপপ্রজাতিগুলো হল:

  • P. d. dalhousiae, (Jameson, 1835) - উত্তর ভারত (হিমালয়ের পাদদেশ থেকে), নেপাল, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ, উত্তর মায়ানমার, দক্ষিণ চীন (ইউনান প্রদেশ, গুইঝু, গুয়াংজি), থাইল্যান্ড, লাওস, ও মধ্য ভিয়েতনাম এদের মূল আবাস। দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বতেও দেখা যায় বলে খবর পাওয়া গেছে।
  • P. d. cyanicauda (Riley, 1935) - দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া জুড়ে এদের বিস্তৃতি।
  • P. d. divinus (Deignan, 1947) - এদের বিচরণ দক্ষিণ ভিয়েতনামে সীমাবদ্ধ।
  • P. d. psittacinus (S. Müller, 1836) - মালয় উপদ্বীপ ও সুমাত্রা জুড়ে এদের বিস্তৃতি।
  • P. d. borneensis (Hartert, 1904) - উত্তর বোর্নিও

বিবরণ[সম্পাদনা]

জন গুল্ড অঙ্কিত ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি, ১৮৫০-৫৮

ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি মাঝারি আকারের সবুজ পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৭ সেন্টিমিটার, ডানা ১০.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.২ সেন্টিমিটার, পা ২.৯ সেন্টিমিটার ও লেজ ১১.৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫ গ্রাম।[২] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা ও আকার অভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ কালচে সবুজ। দেহতল হালকা নীলচে-সবুজ। মাথার চাঁদিতে নীল ছোপ থাকে। মাথার কপাল ও টুপি কালো। মাথার দু'পাশে হালকা হলুদ ফোঁটা থাকে। গলার উজ্জ্বল হলুদ ছোপ চোখ পর্যন্ত বিস্তৃত। লেজ নীল ও ক্রমবিন্যাস্ত। সবুজ ডানার প্রান্ত পালকে নীল পট্টি থাকে। ডানার পালক-তল কালো। ওড়ার সময় পালক-তলে সাদা পট্টি নজরে পড়ে। চোখ বাদামি। চোখের চারিদিকে সবজে বলয় থাকে। ঠোঁট বেশ মোটা। নিচের ঠোঁটের গোড়া পাটকিলে রঙের। এছাড়া পুরো ঠোঁট হলদে-সবুজ রঙের। পা ও পায়ের পাতা চুন-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির শরীরে উজ্জ্বল হলুদের জায়গায় ফিকে হলদে-সবুজ রঙ দেখা যায়। টুপি সবুজ রঙের হয়।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ৮৪।
  2. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৩১৩।
  3. Psarisomus dalhousiae, BirdLife International এ ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি বিষয়ক পাতা।
  4. Psarisomus dalhousiae, The IUCN Red List of Threatened Species এ ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি বিষয়ক পাতা।
  5. Long-tailed Broadbill, The Internet Bird Collection এ ল্যাঞ্জা মোটাঠুঁটি বিষয়ক পাতা।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]