পোলোনিয়াম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
84 বিসমাথপোলোনিয়ামএস্টাটিন
Te

Po

Uuh
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
নাম, প্রতীক, পারমাণবিক সংখ্যা পোলোনিয়াম, Po, 84
রাসায়নিক শ্রেণী metalloids
গ্রুপ, পর্যায়, ব্লক 16, 6, p
Appearance silvery
পারমাণবিক ভর (209) g/mol
ইলেক্ট্রন বিন্যাস [Xe] 4f14 5d10 6s2 6p4
প্রতি শক্তিস্তরে ইলেকট্রন সংখ্যা 2, 8, 18, 32, 18, 6
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশা কঠিন
ঘনত্ব (সাধারণ তাপ ও চাপে) (alpha) 9.196 g/cm³
ঘনত্ব (সাধারণ তাপ ও চাপে) (beta) 9.398 g/cm³
গলনাঙ্ক 527 K
(254 °C, 489 °F)
স্ফুটনাঙ্ক 1235 K
(962 °C, 1764 °F)
গলনের লীন তাপ ca. 13 kJ/mol
বাষ্পীভবনের লীন তাপ 102.91 kJ/mol
তাপধারণ ক্ষমতা (২৫ °সে) 26.4 জুল/(মোল·কে)
বাষ্প চাপ
P/প্যাসকেল ১০ ১০০ ১ কে ১০ কে ১০০ কে
T/কেলভিন তাপমাত্রায়       (846) 1003 1236
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
কেলাসীয় গঠন cubic
জারণ অবস্থা 4, 2
(amphoteric oxide)
তড়িৎ ঋণাত্মকতা 2.0 (পাউলিং স্কেল)
Ionization energies 1st: 812.1 kJ/mol
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ 190 pm
Atomic radius (calc.) 135 pm
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
Magnetic ordering nonmagnetic
Electrical resistivity (0 °C) (α) 0.40 µΩ·m
তাপ পরিবাহিতা (300 K)  ? 20 W/(m·K)
Thermal expansion (25 °C) 23.5 µm/(m·K)
সি এ এস নিবন্ধন সংখ্যা 7440-08-6
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমস্থানিক
প্রধান নিবন্ধ: poloniumের সমস্থানিক
iso NA half-life DM DE (MeV) DP
208Po syn 2.898 y α 5.215 204Pb
ε, β+ 1.401 208Bi
209Po syn 103 y α 4.979 205Pb
ε, β+ 1.893 209Bi
210Po syn 138.376 d α 5.407 206Pb
References
পোলোনিয়ামের ইলেক্ট্রন বিন্যাস
মেরি কুরি, পোলোনিয়ামের আবিস্কারক

পোলোনিয়াম তেজস্ক্রিয়ামিতি পদ্ধতির দ্বারা আবিষ্কৃত প্রথম মৌল। এটি একটি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক মৌল। তেজস্ক্রিয়াতা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে রেডিয়ামের পরেই সবচেয়ে বড় অবদান পোলোনিয়ামের। এরপর থেকেই তেজস্ক্রিয়াতা বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়ে চলেছে।

নামকরণ[সম্পাদনা]

১৮৯৮ সালের ১৮ জুলাই প্যারিস বিজ্ঞান একাডেমির বিজ্ঞান সভায় ক্যুরি দম্পতি এক বিবৃতি পেশ করেন যার নাম ছিল, "পিচব্লেন্ডে অবস্থিত একটি নতুন তেজস্ক্রিয় পদার্থ সম্বন্ধে"। এখানে তারা একটি নতুন মৌল আবিষ্কারের ইঙ্গিত দেন। মারি ক্যুরি জানান, নতুন মৌলের আবিষ্কার নিশ্চিত হলে তার নাম যেন পোল্যান্ড দেশটির সম্মানে পোলোনিয়াম রাখা হয়। কারণ মারি ক্যুরি পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার শৈশব ও কৈশোর সেখানেই কাটে।

আবিষ্কারের ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে দিমিত্রি মেন্ডেলেয়েভ সর্বপ্রথম পোলোনিয়ামের প্রধান ধর্ম সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি একটি নিবন্ধে এ বিষয়ে লিখেছিলেন,

মেন্ডেলেয়েভ অজ্ঞাত এই মৌলটির নাম দিয়েছিলেন দ্বি-টেলুরিয়াম। এরপর উনিশ বছর পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে মেন্ডেলেয়েভ এই পদার্থের আরও কয়েকটি ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী সংযোজন করেন। তার এ সকল ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে ছিল: আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর ২১২, DtO3 বিশিষ্ট অক্সাইড গঠন করবে। মুক্ত অবস্থায় মৌলটি হল স্বল্প গলনাঙ্কবিশিষ্ট অনুদ্বায়ী ও ধূসর বর্ণের কেলাসিত ধাতব পদার্থ যার ঘনত্ব ৯.৮, ধাতুটি সহজেই DtO3-তে জারিত হয়, অক্সাইডটির মৃদু অম্লীয় ও ক্ষারকীয় ধর্ম থাকবে তবে তা হবে অবশ্যই অস্থায়ী যৌগ, ধাতুটি অন্যান্য ধাতুর সাথে মিলে সঙ্কর ধাতু উৎপন্ন করবে।

মেন্ডেলেয়েভের এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অনেকাংশেই নিখুঁত ছিল। এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অবশ্য মৌলটি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ কোন ভূমিকা পালন করে নি, কেবল একটি পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিল। ১৮৯৭ সালের ডিসেম্বর ১৬ তারিখ থেকে মারি ক্যুরি এবং পিয়ের ক্যুরি বেকেরেল রশ্মি তথা ইউরেনিয়াম রশ্মি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাদের গবেষণাকর্মের লগবই থেকে এটি জানা গেছে। গবেষণাটি অবশ্য মারি ক্যুরি নিজেই শুরু করেছিলেন, ১৮৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পিয়েরে তার সাথে যোগ দেন। পিয়েরে মাপজোখের কাজ এবং ফলাফল গণনা করতেন। তারা দুজনে মিলে ইউরেনিয়াম খনিজ, লবণ এবং ধাতব ইউরেনিয়াম থেকে প্রাপ্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইউরেনিয়াম যৌগের তেজস্ক্রিয়তা ধর্ম সবচেয়ে কম। যৌগের চেয়ে ধাতব ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। ধাতবগুলোর মধ্যে আবার পিচব্লেন্ড নামক ইউরেনিয়াম আকরিকের তেজস্ক্রিয়তা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ থেকে তারা স্পষ্টতই বুঝতে পারেন, পিচব্লেন্ডে এমন একটি মৌল উপাদান আছে যার তেজস্ক্রিয়তা ইউরেনিয়ামের থেকে অনেক বেশি। এখান থেকেই সন্দেহের সূত্রপাত। ১৮৯৮ সালের ১২ এপ্রিল ক্যুরি দম্পতি তাদের গবেষণা প্রকল্পটির বিবরণ প্যারিস আকাদেমি অফ সাইন্সে পেশ করেন। ১৪ এপ্রিল জি বেমন্টের সাহায্য নিয়ে তারা নতুন এই মৌলটির সন্ধানে কাজে নেমে পড়েন।

ক্যুরি দম্পতি ও জি বেমন্ট ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পিচব্লেন্ড আকরিকের বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেন এবং আকরিক থেকে পাওয়া প্রতিটি পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করতে থাকেন। বিসমাথ লবণে অবস্থিত একটি অংশটির উপর তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। কারণ এই অংশের তীব্রতা ইউরেনিয়াম থেকে ৪০০ গুণ বেশি। অজ্ঞাত মৌলটি থাকলে সেখানেই থেকে থাকবে। ঐ বছরের ১৮ জুলাই তারা আকাদেমিতের বিজ্ঞান সভায় "পিচব্লেন্ডে অবস্থিত একটি নতুন তেজস্ক্রিয় পদার্থ সম্বন্ধে" শীর্ষক একটি বিবৃতি পেশ করেন। তারা বলেছিলেন, পিচব্লেন্ড থেকে অজ্ঞাত এই নতুন মৌলটির সালফার যৌগ নিষ্কাশনে তারা সক্ষম হয়েছেন। ধর্ম অনুযায়ী নতুন মৌলটি ছিল বিসমাথের প্রতিবেশী। উল্লেখ্য এই বিবৃতিতেই প্রথবারের মত তেজস্ক্রিয়তা নামটি ব্যবহৃত হয়। এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে মৌল আবিষ্কার সম্ভব বলে সবাই খানিকটা আম্বস্ত হন। তেজস্ক্রিয়ামিতি প্রকৌশলের সাহায্যে তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করে নতুন মৌলের বৈশিষ্ট্য বলে দেয়ার এই পদ্ধতিটি ছিল নতুন। এর আগে যে মৌলকে দেখা যায় না, অনুভব বা ওজন করা যায় না, প্রাকৃতিক বস্তুতে তার উপস্থিতি প্রমাণের জন্য বর্ণালি বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। এবার বর্ণালির স্থানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ যুক্ত হল।

ক্যুরিদের দলের এই ফলাফল নির্ভুল ছিল না। তারা বলেছিলেন বিসমাথের সাথে নতুন এই মৌলের রাসায়নিক সাদৃশ্য রয়েছে যা সঠিক নয়। অবশ্য বিশুদ্ধ ধাতুটি নিষ্কাশন করতে পারেন নি বিধায় তাদের এ ধরনের ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমনকি তারা পোলোনিয়ামের পারমাণবিক ভর এবং বিসমাথের সাথে এর বর্ণালির পার্থক্যও নির্ণয় করতে পারেন নি। আসলে পোলোনিয়ামের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে টেলুরিয়ামের যা তারা ধরতে পারেননি। এ হিসেবে ১৮৯৮ সালের ১৮ জুলাই তারিখটিকে পোলোনিয়ামের প্রাথমিক আবিষ্কারের দিন বলা যেতে পারে এর বেশি নয়, পূর্ণ আবিষ্কার সম্পন্ন করতে আরও অনেক সময় লেগেছিল। কারণ পোলোনিয়াম গবেষণার বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ অত্যধিক যাতে কেবল আলফা রশ্মি থাকে, বিটাগামা থাকে না। সময়ের সাথে এর তেজস্ক্রিয়তা কমতে থাকাটা অবশ্য বেশ আশ্চর্যজনক। থোরিয়াম বা ইউরেনিয়ামের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় না। এসব কারণে পোলোনিয়াম আসলেই আছে কি-না তানিয়ে অনেক বিজ্ঞানীই সন্দেহ পোষণ করতেন। তারা বলতেন, এটি হল সামান্য পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ মিশ্রিত সাধারণ বিসমাথ

১৯০২ সালে জার্মান রসায়নবিদ ডব্লিউ মার্কওয়াল্ড দুই টন ইউরেনিয়াম আকরিক থেকে বিসমাথের উল্লেখিত অংশটি নিষ্কাশন করেন। সেখানকার বিসমাথ ক্লোরাইড দ্রবণের মধ্যে একটি বিসমাথ দণ্ড প্রবেশ করান এবং দেখেন, অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় গুণ সম্পন্ন একটি পদার্থ এই দণ্ডের উপর অধঃক্ষিপ্ত হচ্ছে। এটিকে একটি নতুন মৌল ধরে তিনি এর নাম দেন রেডিওটেলুরিয়াম তথা তেজস্ক্রিয় টেলুরিয়াম। অবশ্য তিনি বলেছেন, তার মূল অভিপ্রায় ছিল পোলোনিয়াম নিষ্কাশন করা। এ সম্বন্ধে এক স্মৃতিচারণে তিনি উল্লেখ করেছেন,

নতুন রেডিওটেলুরিয়ামের পক্ষে যুক্তি দেখানোর জন্য মার্কওয়াল্ড তৎক্ষণাৎ পূর্বে আবিষ্কৃত পোলোনিয়ামকে একাধিক তেজস্ক্রিয় পদার্থের মিশ্রণ বলে ঘোষণা করেন। ফলে পোলোনিয়াম ও রেডিওটেলুরিয়াম নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই অবশ্য ক্যুরিদেরকে সমর্থন করেন। এ দুটোর মধ্য তুলনার মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টি উদ্‌ঘাটিত হলে পরে বিজ্ঞানীদের মত ক্যুরিদের পক্ষেই যায়। পূর্বতন পোলোনিয়াম নামটিই থেকে যায়। এটি ছিল নতুন প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌলদের মধ্যে প্রথম। কিন্তু এটি তখন পর্যায় সারণীর সঠিক ঘরে স্থান পায় নি। কারণ এর পারমাণবিক ভর নির্ণয় করা ছিল বেশ কঠিন। ১৯১০ সালে এর বর্ণালি রেখাগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়। এরপরই ১৯১২ সালে পোলোনিয়ামের প্রতীক তথা Po-কে পর্যায় সারণীতে সঠিক স্থানে দেখা যায়।

তখনও কিন্তু বিশুদ্ধ পোলোনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। এর যৌগ অবস্থা নিয়েই বিজ্ঞানীরা সন্তুষ্ট ছিলেন। অনেক পরে ১৯৪৬ সালে বিশুদ্ধ ধাতুটি প্রস্তুত করা হয়। নির্বাত উর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ার দ্বারা উৎপাদিত সেই ধাতুর অধিক ঘনত্ববিশিষ্ট স্তরটির বর্ণ ছিল রুপার মত সাদা। পরবর্তীতে পোলোনিয়ামের বৈশিষ্ট্যগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর দেথা গেছে সেগুলো মেন্ডেলেয়েভের ভবিষ্যদ্বাণীর অনেকটাই কাছাকাছি। অর্থাৎ এ সম্পর্কে মেন্ডেলেয়েভের ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটাই সত্য ছিল।

রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম[সম্পাদনা]

পোলোনিয়াম স্বল্প গলনাঙ্কের (পাশের ছকে গ. ও স্ফু. দেখুন) নমনীয় ধাতু যার ঘনত্ব প্রায় ৯.৩ গ্রাম/ঘন সেমি। একে বাতাসে উত্তপ্ত করলে সহজেই স্থায়ী অক্সাইড উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন অক্সাইডের অম্লীয় বা ক্ষারকীয় ধর্ম খুব একটা দেখা যায় না। পোলোনিয়ামের হাইড্রাইটটি আবার অস্থায়ী। পোলোনিয়াম জৈব ধাতুর যৌগ উৎপন্ন করে। অনেক ধাতুর সাথে আবার সংকর ধাতুও তৈরি করে। যেমন: সীসা, পারদ, ক্যালসিয়াম, দস্তা, সোডিয়াম, প্লাটিনাম, রুপা, নিকেল, বেরিলিয়াম ইত্যাদি ধাতুর সাথে।