নোয়াখালী জিলা স্কুল
নোয়াখালী জিলা স্কুল | |
---|---|
অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক | ২২°৫১′৫১″ উত্তর ৯১°০৫′৫১″ পূর্ব / ২২.৮৬৪১° উত্তর ৯১.০৯৭৬° পূর্ব |
তথ্য | |
ধরন | সরকারী |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৫০ |
প্রধান শিক্ষক | মোহাম্মদ মীর হোসেন[১] |
শ্রেণি | ৫ম - ১০ম |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ১৫০০ |
ওয়েবসাইট | www |
নোয়াখালী জিলা স্কুল বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার মাইজদী কোর্ট শহরে অবস্থিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জন্মলগ্ন থেকেই এটি সরকারি স্কুল। তখন এটি গঠনে আয়ারল্যান্ডের ইংরেজ কর্মকর্তা মি.জোনসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিল। ইংরেজ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশে ১৩টি জেলায় ১টি করে জিলা স্কুল গঠন করে। আর বিভাগীয় পর্যায়ে যেসব স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো কলেজিয়েট নামে পরিচিত হয়েছে। অতঃপর পাকিস্তান আমলে আরো ২টি জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [২] তন্মধ্যে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একটি জিলা স্কুল নোয়াখালী জিলা স্কুল।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বিদ্যালয়টি পুরাতন নোয়াখালী শহরে ১৮৫০ সালে জোনস, আয়ারল্যান্ডের একজন বিটিশ কর্মকর্তা বেসরকারি ভাবে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।[২] পরবর্তীতে প্রায় তিন বছর পর একটি হাই স্কুল (আরকে হাই স্কুল) রুপে সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯২০ সালে বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়, ফলে ১৯২১ সালে মহববতপুর গ্রামের পূর্ব প্রান্তে মন্তিয়ার ঘোনায় বিদ্যালয়টিকে স্থানান্তরিত হয়। বিদ্যালয়টি আবারো নদী ভাঙ্গনের শিকার হলে ১৯২৩ সালের ১ জানুয়ারি আর.কে জুবিলী বিদ্যালয়ে এটিকে স্থানান্তর করা হয় ও বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় আর.কে জিলা স্কুল। ১৯৩১ সালে বিদ্যালয়টি আবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে, ফলে বিদ্যালয়কে আহম্মদিয়া মাদ্রাসায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে এটির প্রভাতী শাখা চালু হয়। বিদ্যালয়টি আবারও নদী ভাঙ্গনে পড়লে বঙ্গ বিদ্যালয়ে ও ১৯৪৮ সালে তা বঙ্গবিদ্যালয় থেকে কারামতিয়া মাদ্রাসায় আনা হয়। ১৯৫৩ সালে কারামতিয়া মাদ্রাসা থেকে এটি বর্তমান মাইজদী সদরে প্রধান সড়কের পাশে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৮ ও ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়, পরে এটিকে পুনঃনির্মাণ করা হয়।[২]
অবকাঠামো
[সম্পাদনা]বিদ্যালয়টি ৮ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এখানে ৩টি বড় ভবন, ছাত্রদের জন্য ২ টি আবাসিক হোস্টেল রয়েছে। বিদ্যালয়ের আঙিনায় একটি বড় মাঠ রয়েছে। বিদ্যালয়ে বড় মিলনায়তন, ক্যান্টিন, শাহীদ মিনার রয়েছে। বিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ বিজ্ঞান গবেষণাগার রয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকালে সমাবেশ, বার্ষিক ক্রীড়া এবং গেমস, বার্ষিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করে।[২]
সুবিধাসমূহ
[সম্পাদনা]বিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ের আলাদা আলাদা বিজ্ঞানাগার রয়েছে। এছাড়াও একটি স্কাউট, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট,সাইন্স ক্লাব এবং ডিবেটিং ক্লাবসহ আরও বিভিন্ন ধরনের ক্লাব আছে।
শিক্ষার্থীদের পোশাক
[সম্পাদনা]বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পোশাক হল সাদা প্যান্ট, সাদা হাফ শার্ট/শীতকালে ফুল শার্ট (এক পকেট বিশিষ্ট), সাদা কেডস, নেভি ব্লু সোয়েটার (শীতকালে), কালো বেল্ট (দেড় ইঞ্চি চওড়া)
অতিরিক্ত ক্রিয়াকলাপ
[সম্পাদনা]- বিএনসিসি
- স্কাউটিং
- রেড ক্রিসেন্ট
- ক্রীড়া (ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন)
- বিজ্ঞান ক্লাব
- বিতর্ক
- বিজ্ঞান মেলা
- সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচি
- শিক্ষা সফর
অর্জন
[সম্পাদনা]জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর নানা আসরে অংশগ্রহণ ও জয় লাভ করে আসছে।
অলিম্পিয়াড
[সম্পাদনা]২০২০ সালে ৯ম শ্রেণির নীলেশ সাহা বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এ জাতীয় পর্যায়ে ২য় রানার্সআপ এবং ২০২০ ও ২০২১ এ দ্য কুইন্স কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ সনদ জয় লাভ করে।[৩]
২০২২ সালে বাংলাদেশ ইংলিশ অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে পদক লাভ করে ৮ম শ্রেণির সাকিফ মোবাররাত চৌধুরী।
২০২৩ সালে দশম শ্রেণির রেদওয়ান মাহমুদ বাংলাদেশ এ.আই. অলিম্পিয়াড ফর বিগিনার্স-এ ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে।
বিতর্ক
[সম্পাদনা]দেশের সবচেয়ে বড় স্কুল বিতর্ক আসর, সমকাল জাতীয় বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবে এখন পর্যন্ত নোয়াখালী জিলা স্কুল ৬ বার জেলা, ২ বার বিভাগীয় এবং ১ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০২২ সালে এই প্রতিযোগীতায় সারা দেশে ৫২০টি স্কুলের মাঝে নোয়াখালী জিলা স্কুল জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে দেশসেরা বিতার্কিক হয় দলনেতা ফাইজুস সালেহীন সামিন।[৪]
নোয়াখালী জিলা স্কুল দুদক জাতীয় বিতর্কে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন এবং জাতীয় পর্যায়ে সেমিফাইনালিস্ট হয়।
২০২৩ সালে প্রথম আলো আঞ্চলিক স্কুল বিতর্ক উৎসবে চ্যাম্পিয়ন হয় স্কুলটির ডিবেট ক্লাব।
অন্যান্য
[সম্পাদনা]"বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪" এ বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ মাওলা।
এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে নোয়াখালী জিলা স্কুল কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ স্কুলের একটি।
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্র
[সম্পাদনা]যে সব খ্যাতনামা ব্যক্তি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হল:
- মোজাফফর আহমদ, অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ
- জহুরুল হক, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী ও শহীদ ব্যক্তিত্ব
- আবদুল মান্নান, রাজনীতিবিদ, শিল্পোদ্যক্তা
- মুজফ্ফর আহ্মেদ, রাজনীতিবিদ
- আহমদ নজীর, সাবেক সংসদ সদস্য, সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক
- মোহাম্মদ ফজলুল আজিম, বাংলাদেশী শিল্পপতি, ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা ও রাজনীতিবিদ।
- সা’দত হুসাইন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ শিক্ষক-শিক্ষিকা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে। নোয়াখালী জিলা স্কুল
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "নোয়াখালী জিলা স্কুল"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০২০।
- ↑ "6th bdbo-Samakal Online National Biology Olympiad 2020 – Bangladesh Biology Olympiad" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৫-১৬।
- ↑ "বিজ্ঞান বিতর্কের মহোৎসব"। সমকাল। ১৬ মে ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২৪।