ঘূর্ণিঝড় হামুন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন
ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল)
ক্রান্তীয় ঝড় (স্যাফির-সিম্পসন স্কেল)
২৩ অক্টোবর ২০২৩ এ বঙ্গপসাগরে ঘূর্ণিঝড় হামুন
গঠন২৩ অক্টোবর, ২০২৩
বিলুপ্তি২৫ অক্টোবর, ২০২৩
সর্বোচ্চ গতি৩-মিনিট স্থিতি: ৭৫ কিমি/ঘণ্টা (৪৫ mph)
১-মিনিট স্থিতি: ১০০ কিমি/ঘণ্টা (৬৫ mph)
সর্বনিম্ন চাপ৯৭৮ hPa (mbar); ২৮.৮৮ inHg
হতাহত৩ জন নিহত [১]
প্রভাবিত অঞ্চলবাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা
২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের অংশ

অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় হামুন হল একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় যা বঙ্গোপসাগরে গঠিত হয়। আবহাওয়া অধিদফতর জানায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়।[২] সাইক্লোন হামুন ২০২৩ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের চতুর্থ নামকৃত ঘূর্ণিঝড় ছিল।

নামকরণ[সম্পাদনা]

সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়। হামুন নামটি ইরানের দেওয়া। ফার্সি ভাষায় মরুভূমিতে প্রাকৃতিক হ্রদ বা বড় জলাশয়কে বলা হয় হামুন৷[৩] আরব সাগরে এখন আরেকটি ঘূর্ণিঝড় রয়েছে, যার নাম ঘূর্ণিঝড় তেজ। সবশেষ গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার-মায়নমার উপকূলে আঘাত হানে।

আবহাওয়ার ইতিহাস[সম্পাদনা]

সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী, মানচিত্রে ঝড়টির পথ ও তীব্রতা দেখানো হয়েছে।
মানচিত্রের ব্যাখ্যা
     গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ (≤৩৮ মা/ঘ, ≤৬২ কিমি/ঘ)
     গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় (৩৯–৭৩ মা/ঘ, ৬৩–১১৮ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ১ (৭৪–৯৫ মা/ঘ, ১১৯–১৫৩ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ২ (৯৬–১১০ মা/ঘ, ১৫৪–১৭৭ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ৩ (১১১–১২৯ মা/ঘ, ১৭৮–২০৮ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ৪ (১৩০–১৫৬ মা/ঘ, ২০৯–২৫১ কিমি/ঘ)
     শ্রেণি ৫ (≥১৫৭ মা/ঘ, ≥২৫২ কিমি/ঘ)
     অজানা
ঝড়ের ধরন
ত্রিভুজ অক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, ছোট নিম্নচাপ, গ্রীষ্মমন্ডলীয় গোলযোগ বা মৌসুমী নিম্নচাপ

২১ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম-মধ্যভাগে একটি নিম্নচাপের এলাকা থেকে গঠিত হয়। ঘূর্ণিঝড়টি ২২ অক্টোবর একটি গভীর নিম্নচাপে[৪] এবং ২৩ অক্টোবর একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।[৫] হামুন ২৪ অক্টোবর তার সর্বোচ্চ তীব্রতায় পৌঁছে, স্থায়ী বাতাসের বেগ ৬২ কিমি/ঘণ্টা (৩৯ মাইল/ঘণ্টা) এবং ঝোড়ো হাওয়ার বেগ ৮৮ কিমি/ঘণ্টা (৫৫ মাইল/ঘণ্টা)।

মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, রাত ৭টার দিকে হামুন উপকূল অতিক্রম শুরু করার পর প্রাথমিক আঘাতের শিকার হয় বাংলাদেশের কক্সবাজার[৬]। ২৫ অক্টোবর রাত ১টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে এবং দুর্বল হয়ে সাতকানিয়া, চট্টগ্রামে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করে।[৭][৮]

প্রস্তুতি[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

২৩ অক্টোবর আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদসংকেত, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে ৫ নম্বর বিপদসংকেত ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলে।[৯] কক্সবাজার জেলার ৫৭৬টি সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলার নয় উপজেলার জন্য নগদ টাকা, ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।[১০] ঝড় মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় তিন হাজার ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। সেইসঙ্গে ছয় হাজার ২৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এক হাজার ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়ের জন্য খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।[১১] এসব উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। রাত আটটার মধ্যে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।[১২]এছাড়াও বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল অর্থাৎ রাঙ্গামাটি, বান্দরবানখাগড়াছড়ি জেলায় ভূমিধ্বসের জন্য বিশেষ সর্তকতা জারি করা হয়।

প্রভাব[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

সাইক্লোন হামুন বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং দমকা হাওয়া নিয়ে আসে।২৪ তারিখ থেকে দেশের নানা প্রান্তে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ২৫ তারিখ সন্ধ্যা বাড়ার সাথে সাথে এ প্রভাব আরও প্রকট হতে থাকে। রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অতিক্রম করতে শুরু করে। এতে সেসব অঞ্চলের প্রচুর দমকা হওয়া বয়ে যায়। সে সময় বাতাসে একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ১০৪–১০৮ কিমি ছিল। এতে সেসব জায়গায় প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় কক্সবাজার জেলার কিছু এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার নিমাঞ্চল ৫ থেকে ৩ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে কক্সবাজারে তিন জনের মৃত্যু হয়।[১৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ঘূর্ণিঝড় হামুন : গাছ ও দেয়ালচাপায় তিনজনের মৃত্যু"www.kalerkantho.com। 2023-10। সংগ্রহের তারিখ 2023-10-25  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "ঘূর্ণিঝড় হামুন: গভীর নিম্নচাপ রূপান্তরিত হয়ে ঘূর্ণিঝড় 'হামুন', এগোচ্ছে বাংলাদেশের দিকে"BBC News বাংলা। ২৩ অক্টোবর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০২৩ 
  3. "আসছে ঘূর্ণিঝড় হামুন! কোন দেশ দিল এই নাম? 'হামুন' শব্দের অর্থই বা কী? জানুন"News18 Bengali। ২৪ অক্টোবর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "সাগরে নিম্নচাপ, ১ নম্বর সংকেত"bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২৩ 
  5. প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ। "সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, ৩ নম্বর সংকেত"bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২৩ 
  6. কক্সবাজার, জেলা প্রতিনিধি (১ জানুয়ারি ১৯৭০)। "হামুনে লন্ডভন্ড কক্সবাজার, উড়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি"dhakapost.com 
  7. "উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় হামুন, স্থলে গভীর নিম্নচাপে পরিণত"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২৩ 
  8. ডেস্ক, ঢাকা পোস্ট। "উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় হামুন, গভীর নিম্নচাপে পরিণত"dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২৩ 
  9. "রাতে উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় 'হামুন'"দৈনিক ইত্তেফাক 
  10. "'হামুন' মোকাবিলায় প্রস্তুত কক্সবাজার"কালবেলা | বাংলা নিউজ পেপার। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০২৩ 
  11. "বরিশালে প্রস্তুত ৩৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র, খোলা সোয়া ৭ হাজার স্কুল"Sarabangla (ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ অক্টোবর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০২৩ 
  12. প্রতিনিধি, রাঙামাটি। "ঘূর্ণিঝড় 'হামুন': কাপ্তাই হ্রদে নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা"bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০২৩ 
  13. ডেস্ক, ঢাকা পোস্ট (১ জানুয়ারি ১৯৭০)। "ঘূর্ণিঝড় হামুন : কক্সবাজারে ৩ জনের মৃত্যু"dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২৩