কবীন্দ্র পরমেশ্বর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কবীন্দ্র পরমেশ্বর
কবীন্দ্র পরমেশ্বর
পেশাকবি

কবীন্দ্র পরমেশ্বর মধ্যযুগীয় (১৬শ শতাব্দী) বাঙালি কবি। তিনিই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত অনুবাদ করেন। তিনি হোসেন শাহের সেনাপতি ও চট্টগ্রামের শাসনকর্তা পরাগল খাঁ-র সভাকবি ছিলেন।[১] পরমেশ্বর চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

কবীন্দ্র পরমেশ্বরের জীবন সম্পর্কে বিশেষ তথ্য পাওয়া যায় না। ষোড়শ শতাব্দীতে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের "লস্কর" (সেনাপতি) পরাগল খাঁ চট্টগ্রাম অধিকার করেন। গৌড়েশ্বর তাকেই চট্টগ্রামের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। পরাগল খাঁ ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি। তিনি হিন্দু পুরাণের কাহিনী লোকমুখে শুনে উৎসাহিত হয়ে পরমেশ্বরকে এক দিনের মধ্যে শোনার উপযোগী করে বাংলায় মহাভারত রচনা করার নির্দেশ দেন:[২]

মূল মহাভারতের মোট শ্লোক সংখ্যা এক লক্ষ, তা এক দিনে শোনা কার্যত অসম্ভব। তাই তার উপরোধে পরমেশ্বর উক্ত মহাকাব্যের কাহিনী সংক্ষেপ করে পাণ্ডববিজয় কাব্য রচনা করেন:[২]

পরাগল খাঁর নির্দেশে লিখিত বলে এই কাব্যের অপর নাম হয় পরাগলী মহাভারত। কাব্য লিখে পরমেশ্বর পরাগল খাঁ-র কাছ থেকে "কবীন্দ্র" উপাধি পান। পরমেশ্বর লিখেছেন, পরাগল খাঁ রোজ পাণ্ডববিজয় শুনতে চাইতেন।[৩]

রচনাকাল[সম্পাদনা]

গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। পরাগল খাঁ-ও এই সময়েই চট্টগ্রামের শাসক ছিলেন। সুতরাং পাণ্ডববিজয় কাব্য এই সময়ই রচিত হয় বলে অনুমান করা হয়। অর্থাৎ, কবীন্দ্র পরমেশ্বর চৈতন্য মহাপ্রভুর সমসাময়িক ছিলেন।[২]

পাণ্ডববিজয় কাব্য[সম্পাদনা]

পরাগল খাঁ পৌরাণিক কাহিনীর অনুরাগী হলেও মুসলমান ছিলেন; তাই মহাভারতের জটিল দার্শনিক অংশ তার ভাল নাও লাগতে পারে, এই কথা ভেবে কবীন্দ্র পরমেশ্বর শুধু মহাভারতের উপাখ্যানভাগ অতি সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ করেন। সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করলেও তিনি মহাভারতের কোনো অংশই বাদ দেননি। আবার অনুবাদ সংক্ষিপ্ত হওয়ার দরুন তিনি তার কবিত্ব শক্তির যথাযথ প্রকাশের সুযোগও পাননি। যদিও স্থানে স্থানে তিনি যথাযথভাবে মূলানুগ অনুবাদই করেছিলেন।[৩]

মহাভারত অনুবাদকালে পরমেশ্বরের সামনে নির্দিষ্ট কোন পূর্ব-আদর্শ বা মানদণ্ড ছিল না। তাই পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে সরল ভাষায় তার কাব্য রচনা করেছিলেন। উচ্চমানের কবিত্বশক্তির পরিচয় দিতে না পারলেও, কাব্যটি নিকৃষ্ট মানের অবশ্যই নয়। কাব্যভাষার খানিক নমুনা নিচে দেওয়া হল:[৩]

পরমেশ্বর ছিলেন সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত রাজসভার কবি। তা সত্ত্বেও তার কাব্যে পাণ্ডিত্যের আতিশায্য দেখা যায় না। তার বাংলা তৎসম-বহুল। শ্রীকৃষ্ণের রূপবর্ণনা অংশে তিনি লিখেছেন:[২]

তবে রাজসভার বাইরে তার কাব্য বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়নি।[২]

রচিত গ্রন্থ[সম্পাদনা]

পরাগল খাঁ'র আদেশে কবিন্দ্র পাণ্ডববিজয় বা পরাগলী মহাভারত রচনা করেন। এই গ্রন্থের বহু অনুকরণ আছে। কিন্তু মূল পাণ্ডববিজয় বা পরাগলী মহাভারত গ্রন্থ এখন পর্যন্ত অপ্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে।[১]

বিতর্ক[সম্পাদনা]

অনেকের মতে কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্রীকর নন্দী একই লোক। তবে এ বিষয়ে গবেষণার সুযোগ এখনো আছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সম্পাদনাঃ অঞ্জলি বসু, ৪র্থ সংস্করণ, ১ম খণ্ড, ২০০২, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ৭৬
  2. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, কালীপদ চৌধুরী, বাণী সংসদ, কলকাতা, ২০০২ পৃ. ১২০
  3. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, বিজনবিহারী ভট্টাচার্য, শ্রীধর প্রকাশনী, কলকাতা, ১৯৯৬, পৃ. ১২৭