একতারা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এক তারা

একতারা হচ্ছে একজাতীয় বাঙালি লোকবাদ্যযন্ত্র। এক তারবিশিষ্ট বলে এটি একতারা নামে অভিহিত হয়। একসময় এর নাম 'একতন্ত্রী বীণা' ছিল বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়।[১] আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির স্বকীয়তা আর ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যে বাদ্যযন্ত্রটি আদি ও অকৃত্রিমভাবে বহমান রয়েছে তার নাম একতারা। এই বাদ্যযন্ত্রটির বাদন ভঙ্গি আর সুরের মূর্ছনায় আজো খুঁজে পাওয়া যায় মাটির ঘ্রান। এখনো এদেশের গ্রাম-গ্রামান্তর আর নগরে পাড়ি জমানো নগর বাউলদের কাছে শুনতে পাওয়া যায় এ বাদ্যযন্ত্রের বোল। আর মাত্র একটি তারের তৈরি এ বাদ্যযন্ত্রটি দিয়ে বাউল সাধকেরা সুরের যে বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর।[২][৩]

একতারার ইতিহাস[সম্পাদনা]

একতারা আবিষ্কারের ইতিহাস সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় প্রায় ১০০০ বছর ধরে এর ব্যবহার হয়ে আসছে। আর এ যন্ত্রটি যে সম্পূর্ণ আমাদের দেশের আবহতেই তৈরি হয়েছে তা এর উপকরণের দিকে তাকালেই বুঝা যায়।[২] আবার অনেক বাউল শিল্পী মনে করেন, মরমি সাধক লালন শাহের কালেই একতারার জন্ম। তারা মনে করেন ফকির লালন শাহ তার মনের ভেতর উদয় হওয়া কথাগুলো ভক্তদের মধ্যে প্রচারের সময় কথাগুলো আরো মধুময় করে তোলার জন্য কথার ভাঁজে ভাঁজে তালের অনুভব থেকেই একতারার জন্ম। তবে একতারার জন্ম যেখানে বা যখনই হোক না কেন এই যন্ত্র নিয়ে আমাদের দেশে একটি জনপ্রিয় গানের শিরোনাম হচ্ছে একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল

একতারা তৈরির উপকরণ ও প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

একতারা তৈরির জন্য লাউ,কুমড়া,কদ বেল মোটা বাঁশ বা কাঠ, নারিকেলের খোল কিংবা পিতলের পাতলা আবরণ যাই ব্যবহার করা হোক না লক্ষ্য রাখতে হবে এটি যেন উপরে-নিচে খোলা এবং বৃত্তাকার হয়। বৃত্তাকারের খোলা মুখের ব্যাস সাধারণত ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি হয়। প্রায় ৩ ফুট লম্বা বিশেষ এক ধরনের মুলি বাঁশের উপরের দিকে গিঁট রেখে নিচের দিকে ফাঁড়তে হবে। এমনভাবে ফাঁড়তে হবে যাতে বাঁশ বা কঞ্চিটি চিমটা আকারের হয়। বিশেষ ধরনের মুলি বাঁশ বা কঞ্চির মাঝ দিয়ে কাঠের একটি কাঁন (কাঠ দিয়ে তৈরি এক ধরনের কাঠি) তৈরি করতে হবে। চিমটার নিচের দিকটি লাউ, মোটা বাঁশ, কাঁঠ বা নারিকেলের খোল কিংবা কাঁসার পাতলা বৃত্তাকারের খোলটির দু'প্রান্তে শক্ত করে বাঁধতে হবে। ওই খোলটির তলায় চামড়া দিয়ে ঢেকে ফেলতে হবে। চমড়াটি শুকিয়ে এলে চামড়ার মধ্যে সূক্ষ্ম ছিদ্র করতে হবে। সেই ছিদ্রটির মধ্য দিয়ে একটি সরু পিতল বা লোহা কিংবা ইস্পাতের তার ঢুকিয়ে দিয়ে সেই তারের একটি মাথা দু'পাশে দেওয়া বিশেষ মুলি বাঁশ অথবা কঞ্চির মাঝে থাকা কাঁনের সঙ্গে বাঁধতে হবে। কাঁন দিয়ে তারটি টান বা ঢিলা করা হয়। দুই পাশে থাকা কঞ্চিতে চার আঙুলে ধরে এক আঙুল দিয়ে একতারায় সুর তোলা হয়। এভাবেই কাজ করে একতারা।[১]

নিজের বানানো একতারা বাজিয়ে লোকসংগীত গাইছেন ভাণ্ডারী আবদুল জাব্বার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা, বাংলাদেশ।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বাউলের সাধন যন্ত্র"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  2. একতারা
  3. ওয়াকিল আহমেদ। "একতারা"বাংলাপিডিয়া। ১৪ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৩, ২০১৪