আমিনুল ইসলাম বাদশা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমিনুল ইসলাম বাদশা
জন্ম(১৯২৯-০৪-১৪)১৪ এপ্রিল ১৯২৯
মৃত্যু৪ আগস্ট ১৯৯৮(1998-08-04) (বয়স ৬৯)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
পরিচিতির কারণভাষা আন্দোলন
পুরস্কারএকুশে পদক (২০২০)

আমিনুল ইসলাম বাদশা (১৪ এপ্রিল ১৯২৯ - ৪ আগস্ট ১৯৯৮) একজন বাংলাদেশি ভাষা আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।[১]

জন্ম[সম্পাদনা]

আমিনুল ১৯২৯ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনা শহরের কৃষ্ণপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নুরুজ্জামান শেখ ও মাতা খবিরন নেছা। [২]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

আমিনুল ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পাবনার গোপালচন্দ্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র অবস্থায় সেলিনা বানু ও কমরেড প্রণতি কুমার রায়ের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সংস্পর্শে যান এবং ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশ নেন।[২]

রাজশাহীর নেতা আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালে ৪ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত যুব সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হলে আমিনুল এতে অংশ নেন। ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে তিনি গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং ১৯৫৩ সালে বন্দিমুক্তিসহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগবিরোধী নানা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন পরিচালনায় পাবনা জেলা গণতান্ত্রিক কর্মী শিবিরের যুগ্ম-আহবায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপে যোগ দেন এবং দলটির প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিযুদ্ধের হাইকমান্ডের সদস্য হন। ওই বছর ১০ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী পাবনা জেলা দখল করলে তিনি কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রগতিশীল বিকল্প ধারা তৈরিতে ভূমিকা রাখেন।[২]

ভাষা আন্দোলন[সম্পাদনা]

১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হলে আমিনুল এ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পাবনা শহরে হরতাল পালিত হয়। ওই হরতালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে পাবনা শহরে ছাত্র-জনতার মিছিলে নেতৃত্বে দেন তিনি। [২]

কারাবরণ[সম্পাদনা]

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় পুলিশ হরতাল কর্মসূচি থেকে আমিনুল ইসলাম বাদশাসহ ৬৪ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে। পরে আন্দোলনের মুখে ওই দিনই আদালত থেকে তার আরো কর্মীসহ সবাই মুক্তি পান। ২ মার্চ তিনি আবার গ্রেফতার হন ও ক'দিন পর ছাড়া পান। [২]

১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে আটক রাজবন্দিদের উপর জেল পুলিশের গুলিবর্ষণে ৭ জন বিপ্লবী নিহত ও ৩০ জনেরও অধিক বন্দি গুরুতর আহত হন। আমিনুল আহতদের একজন ছিলেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তার পায়ে বুলেটবিদ্ধ ছিলো।[২]

১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনী অভিযান চালানোকালে ২২ ফেব্রুয়ারি আমিনুলকে গ্রেফতার করা হয়। সে নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজিত হলে তিনি এক মাস কারাভোগের পর পর মুক্তি পান। এর দু্ই মাস পর যুক্তফ্রন্ট নেতা শেরেবাংলা ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত পূর্ববাংলার প্রাদেশিক সরকার বাতিল করার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হন। [২]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

আমিনুল ১৯৯৮ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "একুশে পদক পাচ্ছেন কিংবদন্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. সায়েবা"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  2. "বিপ্লবী আমিনুল ইসলাম বাদশা"দৈনিক সমকাল। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]