আদর্শ গ্যাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আদর্শ গ্যাস (ইংরেজি: Ideal gas) হল ইতস্তত বিচরণকারী বিন্দুকণা সমষ্টি দ্বারা গঠিত তাত্ত্বিকভাবে প্রতিষ্ঠিত গ্যাস, যার কণাগুলির মধ্যে কেবল সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ হয়। আদর্শ গ্যাস তত্ত্ব অবস্থার সমীকরণ থেকে প্রাপ্ত আদর্শ গ্যাস সূত্র মেনে চলে। এই তত্ত্বটি আবার সংখ্যাতত্ত্বীয় বলবিদ্যার একটি সরল প্রয়োগ। তাই এই তত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।

১৯৮২ সালে IUPAC-এর পরিমাপ অনুযায়ী, প্রমাণ চাপ (১০ প্যাস্কেল পরম চাপ) ও উষ্ণতায় (২৭৩.১৫ কেলভিন উষ্ণতা) এক মোল আদর্শ গ্যাসের আয়তন হয় ২২.৭১০৯৪৭(১৩) লিটার[১]। ১৯৮২ সালের আগে ২৭৩.১৫ কেলভিন উষ্ণতা ও ১ atm চাপকে প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতা হিসেবে ধরা হত। ওই চাপ ও উষ্ণতায় আদর্শ গ্যাসের আয়তন হয় ২২.৪১৩৯৬২(১৩) লিটার[২]। IUPAC-এর নির্দেশ অনুযায়ী এই পুরোনো মানকে বন্ধ করা উচিত, বাংলাদেশের পাঠ্য বইয়ে এখনও এটা ব্যবহার করা হয়[৩] কিন্তু কিছু পাঠ্যবইয়ে এখনও এই মান লেখা থাকে।

প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতায় বেশিরভাগ বাস্তব গ্যাসই মোটামুটি আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে। কিছু গ্যাস, যেমন– নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নিষ্ক্রিয় গ্যাস, এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের মতো কিছু ভারী গ্যাস নির্দিষ্ট শর্তের অধীনে[৪] আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করতে পারে। সাধারণত উচ্চ উষ্ণতা ও নিম্ন চাপে[৪] কোনো গ্যাস অধিকতর আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে, কারণ উপরি-উক্ত শর্তাধীন অবস্থায় গ্যাসের কণাগুলির গতিশক্তি আন্তরাণবিক বলজনিত স্থিতিশক্তি অপেক্ষা অনেক বেশি হয়, এবং, অণুগুলির আকার তাদের পারস্পরিক দূরত্বের তুলনায় নগণ্য হয়।

আদর্শ গ্যাসের ধারণা নিম্ন উষ্ণতা ও উচ্চ চাপে কাজ করে না, যেহেতু এই সময় আন্তআণবিক বল আর অণুর আকার ― দুটোই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এই ধারণা ভারী গ্যাস (রেফ্রিজারেন্ট) ও তীব্র আন্তআণবিক আকর্ষণযুক্ত গ্যাসের (জলীয় বাষ্প) ক্ষেত্রেও কার্যকর নয়। উচ্চ চাপে আদর্শ গ্যাসের থেকে বাস্তব গ্যাসের আয়তন অনেক বেশি হয়। আবার কম উষ্ণতায় বাস্তব গ্যাসগুলির চাপও আদর্শ গ্যাসের তুলনায় অনেক কম। আসলে কম উষ্ণতায় ও উচ্চ চাপে বাস্তব গ্যাসগুলির অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, অর্থাৎ এরা গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরল কিংবা কঠিন অবস্থায় পৌঁছোয়। কিন্তু আদর্শ গ্যাস সূত্রটি অবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আরও জটিল অবস্থার সমীকরণ দিয়ে একে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আদর্শ গ্যাস থেকে বাস্তব গ্যাসের এই বিচ্যুতি মাত্রাহীন সংখ্যা এবং সংনম্যতা গুণক দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।

নিউটনীয় বলবিদ্যা (গতীয় তত্ত্ব) এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যাতেও (পাত্রে আবদ্ধ গ্যাস) আদর্শ গ্যাসের উল্লেখ আছে। এছাড়া ধাতুতে ইলেক্ট্রনের আচরণ (ড্রুড মডেল ও মুক্ত ইলেক্ট্রন মডেল) ব্যাখ্যা করতেও আদর্শ গ্যাস মডেল ব্যবহৃত হয়। সংখ্যাতত্ত্বীয় বলবিদ্যাতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল।

আদর্শ গ্যাসের প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

আদর্শ গ্যাস মূলত ৩ প্রকার:

  • সাধারণ বা ম্যাক্সওয়েল-বোল্‌ৎজ়ম্যান আদর্শ গ্যাস
  • আদর্শ কোয়ান্টাম বোস গ্যাস, যা বোসন কণা দ্বারা গঠিত; এবং
  • আদর্শ কোয়ান্টাম ফার্মি গ্যাস, যা ফার্মিয়ন দিয়ে গঠিত।

সাধারণ আদর্শ গ্যাসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: সাধারণ তাপগতীয় আদর্শ গ্যাস আর আদর্শ কোয়ান্টাম বোল্‌ৎজ়ম্যান গ্যাস। দুটো গ্যাস মোটামুটি একইরকম, শুধু সাধারণ তাপগতীয় আদর্শ গ্যাস সংখ্যাতত্ত্বীয় বলবিদ্যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, আর এনট্রপির মতো রাশিগুলিকে ধ্রুবক হিসেবে রাখা হয়েছে। কোয়ান্টাম বোস গ্যাস ও কোয়ান্টাম ফার্মি গ্যাসে উচ্চ তাপমাত্রাতেও এই ধ্রুবক নির্ধারণ করা যায়, কিন্তু আদর্শ কোয়ান্টাম বোল্‌ৎজ়ম্যান গ্যাসে তা সীমিত উষ্ণতায় সম্ভব হয়। এই ধ্রুবক বাদ দিলে আদর্শ তাপগতীয় গ্যাস ও কোয়ান্টাম বোল্‌ৎজ়ম্যান গ্যাসের ধর্ম প্রায় সমান। কোয়ান্টাম বোল্‌ৎজ়ম্যান গ্যাস থেকে প্রাপ্ত ফল সাঁকুর-টেট্রোড সমীকরণে আদর্শ গ্যাসের এনট্রপির জন্য, আর সাহা আয়নীকরণ সমীকরণে দুর্বলভাবে আয়নিত প্লাজমার জন্য ব্যবহৃত হয়।

সাধারণ তাপগতীয় আদর্শ গ্যাস[সম্পাদনা]

স্থূল পরিমাপ[সম্পাদনা]

আদর্শ গ্যাস সূত্রটি পূর্বের গ্যাস সূত্রেরই অনুসিদ্ধান্ত। বাস্তব গ্যাসগুলি কম চাপ ও উচ্চ উষ্ণতায় প্রায় আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে। কম উষ্ণতা ও চাপে বাস্তব গ্যাসগুলি আদর্শ আচরণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়, কারণ এই সময় গ্যাসগুলি অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘনীভূত হয়ে তরল কিংবা অবক্ষিপ্ত হয়ে কঠিনে পরিণত হয়। বাস্তব গ্যাসের এই বিচ্যুতির পরিমাপকেই সংনম্যতা (Compressibility) বলে।

দুটি সমীকরণের মাধ্যমে আদর্শ গ্যাসের তাপগতীয় ধর্ম ব্যাখ্যা করা যায়:[৫][৬]

একটি হল আদর্শ গ্যাস সমীকরণ,

যেখানে,

এই সমীকরণটি বয়েলের সূত্র: V = +k/p (Tn স্থির); চার্লসের সূত্র: V = bt (Pn স্থির); এবং অ্যাভোগাড্রোর সূত্র: V = an (TP স্থির) থেকে প্রতিষ্ঠিত, যেখানে,

  • k হল বয়েলের সূত্রে ব্যবহৃত ধ্রুবক,
  • b হল আনুপাতিক ধ্রুবক, এর মান +V/T,
  • a হল আনুপাতিক ধ্রুবক, এর মান +V/n

তিনটি সমীকরণকে একসাথে গুণ করলে পাই:

বা,

আদর্শ গ্যাস অবস্থার শর্ত অনুযায়ী,

 ;

অর্থাৎ,

আদর্শ গ্যাসের অন্য সূত্রটি জুলের সূত্র থেকে প্রাপ্ত, যেখানে স্থির ভরের কোনো আদর্শ গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তি কেবল তার উষ্ণতার অপেক্ষক। এই ক্ষেত্রে শর্তের সাপেক্ষে সমীকরণটিকে লেখা যেতে পারে,

যেখানে,

  • U হল অভ্যন্তরীণ শক্তি,
  • ĉV হল স্থির আয়তনে আপেক্ষিক তাপগ্রাহিতা, যা এক পরমাণুক গ্যাসের ক্ষেত্রে +/, দ্বি-পরমাণুক গ্যাসের ক্ষেত্রে +/ আর বহু-পরমাণুক গ্যাসের ক্ষেত্রে +/

সূক্ষ্ম পরিমাপ[সম্পাদনা]

বৃহদাকার কণার (নিচের সমীকরণের বামপক্ষে) সাথে আণুবীক্ষণিক কণার (সমীকরণের ডানপক্ষে) সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য এই সমীকরণটি ব্যবহৃত হয়:

যেখানে,

ম্যাক্সওয়েলের বেগ বণ্টন সূত্রের দ্বারা গ্যাস কণাগুলি বেগ ও শক্তির সম্ভাব্যতা অনুযায়ী বণ্টিত থাকে।

আদর্শ গ্যাস সূত্রটি কয়েকটি স্বীকার্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত:

  • গ্যাসের অণুগুলি কঠিন, গোলাকার, ক্ষুদ্র এবং পরস্পর সম্পূর্ণ সদৃশ।
  • সমস্ত সংঘর্ষ স্থিতিস্থাপক আর সমস্ত গতি ঘর্ষণহীন (সংঘর্ষ বা গতিশীল অবস্থায় কোনো শক্তিক্ষয় হয় না)।
  • নিউটনের সূত্র প্রযুক্ত হয়।
  • অণুগুলির আকার তাদের পারস্পরিক গড় দূরত্বের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য।
  • অণুগুলি সরলরৈখিক পথে যে কোনো দিকে নির্দিষ্ট বেগ নিয়ে ইতস্ততভাবে সদা সঞ্চরণশীল।
  • অণুগুলির মধ্যে কোনো পারস্পরিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল নেই।
  • গ্যাস অণু ও পারিপার্শ্বিকের মধ্যে ক্রিয়াশীল একমাত্র বল অণু ও পাত্রের দেয়ালের মধ্যে সংঘর্ষের জন্য দায়ী।
  • আর কোনো বেশি পাল্লার বল গ্যাস অণু ও পারিপার্শ্বিকের মধ্যে ক্রিয়া করে না।

স্বীকার্যগুলির মধ্যে গ্যাস অণুর গোলাকার গঠনটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর থেকে বোঝা যায়, অণুর নিজস্ব ঘূর্ণনকে ধরা হয়নি, যদিও দ্বি-পরমাণুক গ্যাসের ক্ষেত্রে এই ধারণা প্রযোজ্য নয়। গ্যাস অণু কঠিন, সংঘর্ষ স্থিতিস্থাপক, এবং আন্তরাণবিক কোনো বল নেই ― এই তিনটি স্বীকার্য পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। অণুগুলির পারস্পরিক দূরত্বের তুলনায় এদের আকার নগণ্য ― এই স্বীকার্যটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মাধ্যমেই ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়েছে যে, কেন উচ্চ চাপে গ্যাস আদর্শ আচরণ থেকে বিচ্যুত হয়।

তাপগ্রাহিতা[সম্পাদনা]

স্থির আয়তনে আদর্শ গ্যাসের তাপগ্রাহিতা (বা তাপ ধারকত্ব) হল:

এখানে S হল এনট্রপি। এই মাত্রাহীন স্থির আয়তনে আপেক্ষিক তাপগ্রাহিতা আন্তরাণবিক বলজনিত তাপমাত্রার অপেক্ষক। মধ্যম উষ্ণতায় এক পরমাণুক গ্যাসের ক্ষেত্রে ধ্রুবক ĉV = +/, দ্বি-পরমাণুক গ্যাসের ĉV = +/। দেখা গেছে, তাপগ্রাহিতার স্থূল (Macroscopic) পরিমাপে অণুর আণুবীক্ষণিক গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

+/R মোল আদর্শ গ্যাসের স্থির চাপে আপেক্ষিক তাপ হল:

এখানে H = U + PV হল গ্যাসের এনথ্যালপি। আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ĉVĉp-এর মানের পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু বাস্তব গ্যাসের ক্ষেত্রে তা কখনও হবে না।

স্থির চাপে আপেক্ষিক তাপ ও স্থির আয়তনে আপেক্ষিক তাপের অনুপাত:

নানা গ্যাসের মিশ্রণ বায়ুর ক্ষেত্রে এই অনুপাতের মান ১.৪।

এনট্রপি[সম্পাদনা]

শুধু তাপগতিবিদ্যার ফলাফল প্রয়োগ করেই আদর্শ গ্যাসের এনট্রপির চরিত্র সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। তাপগতীয় স্থিতিশক্তির সূত্র অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ শক্তি U, আয়তন V, এবং অণুর সংখ্যা N-এর অপেক্ষক হিসেবে ধরে নিলে, আদর্শ গ্যাসের তাপগতীয় আচরণ নির্ণয় করা যায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। একইসাথে এর মাধ্যমে আদর্শ গ্যাস সূত্র আর অভ্যন্তরীণ শক্তির ক্রিয়াও নির্ণয় করা সম্ভব।

এনট্রপি একটি যথার্থ অবকল। অবকলনের শৃঙ্খল সূত্র ব্যবহার করে, প্রাথমিক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পৌঁছোতে এনট্রপি S-এর পরিবর্তন ΔS-কে লেখা যেতে পারে,

এখানে অধীন চলটি অণুর সংখ্যা N-এর অপেক্ষক হতে পারে। প্রথম অবকলে স্থির আয়তনে আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা আর দ্বিতীয় অবকলে ম্যাক্সওয়েলের সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া যায়,

CV-কে ĉv হিসেবে লিখে, আদর্শ গ্যাস সমীকরণের অবকলন ও সমাকলন করে পাওয়া যায়,

অর্থাৎ এনট্রপিকে লেখা যেতে পারে,

এখানে সমস্ত ধ্রুবককে f(N) হিসেবে লগারিদ্‌মের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই N এর মাত্রা আর VTĉV-এর মাত্রা সমান এবং লগারিদ্‌মের আর্গুমেন্ট মাত্রাহীন। এক্ষেত্রে এনট্রপিকে ব্যাপক চল হিসেবে ধরে নিতে হবে। সেই অনুসারে, অন্যান্য ব্যাপক চলগুলিকে (VN) যে ধ্রুবক দিয়ে গুণ করা হবে, এনট্রপিকেও সেই ধ্রুবক দিয়েই গুণ করতে হবে।

এর থেকে পাওয়া যায়,

সমীকরণটিকে a-র সাপেক্ষে অবকলন করে আর a-র মান 1 ধরে সমাধান করে পাওয়া যায়,

এই Φ-এর মান বিভিন্ন গ্যাসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন, কিন্তু গ্যাসের তাপগতীয় অবস্থার সাপেক্ষে স্বাধীন। এর মাত্রা VTĉV/N এর সমান। এই মান এনট্রপির সমীকরণে বসিয়ে পাই,

এবার গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তির সাপেক্ষে এনট্রপিকে লিখে পাই,

এই সমীকরণই হল U, V, N-এর সাপেক্ষে এনট্রপির প্রাথমিক সমীকরণ, যার থেকে আদর্শ গ্যাসের অন্যান্য সব ধর্ম নির্ণয় করা যায়।

শুধুমাত্র তাপগতিবিদ্যাকে ব্যবহার করে এতদূরই এগোনো সম্ভব। লক্ষণীয় যে, উপরের সমীকরণে কিছু ত্রুটি আছে– এক্ষেত্রে উষ্ণতা শূন্য হলে এনট্রপি ঋণাত্মক অসীমের দিকে এগিয়ে যায়, যা তাপগতিবিদ্যার তৃতীয় সূত্র বিরোধী। এই আদর্শ চরিত্র বিকাশের সময় এমন একটি ক্রান্তিক বিন্দু আসে (পরম শূন্য উষ্ণতায় নয়), যখন লগারিদ্‌মের আর্গুমেন্ট স্বাধীন হয়ে পড়ে, আর এনট্রপি শূন্য হয়ছ যায়। এটা স্বাভাবিক নয়। উপরের সমীকরণটি তখনই গ্রাহ্য হবে, যখন লগারিদ্‌মের আর্গুমেন্টের মান অনেকটা বড়ো হয় – +V/N-এর মান কমে গেলে আদর্শ গ্যাসের ধারণা আর কাজ করে না। সমীকরণের এনট্রপি ও বাস্তবিক এনট্রপির মান মোটামুটি সমান হলেই ধ্রুবকটির মান যথাযথ হবে। সাকুর-টেট্রোড সমীকরণ, যা এক-পরমাণুক গ্যাসের (ĉV = +/) এনট্রপির পরিচয় দেয়, তার থেকে ওই ধ্রুবকের কোয়ান্টাম বলজাত মান পাওয়া যায়। সাকুর-টেট্রোড সমীকরণে ওই ধ্রুবকের মান কেবল গ্যাস অণুর ভরের ওপর নির্ভর করে। এই সমীকরণ পরম শূন্য উষ্ণতায় গ্যাসের এনট্রপির মান দিতে অক্ষম, কিন্তু উচ্চ উষ্ণতায় এক-পরমাণুক গ্যাসের এনট্রপি নির্ধারণ করতে পারে। ★ এনট্রপির ভৌত তাৎপর্যঃ ১. এনট্রপি একটি প্রাকৃতিক রাশি যায় মান তাপ ও পরম তাপমাত্রার অনুপাতের সমান ২.

তাপগতীয় স্থিতিশক্তি[সম্পাদনা]

এনট্রপিকে V, TN-এর অপেক্ষক ধরে নিলে,

অবস্থার সমীকরণ থেকে রাসায়নিক স্থিতিশক্তি গণনা করা যাবে:

এখানে গিব্‌স মুক্ত শক্তি G হল U + PV - TS এর সমান, অর্থাৎ,

এখন আদর্শ গ্যাসের তাপগতীয় স্থিতিশক্তিকে V, TN-এর অপেক্ষক ধরে লেখা যেতে পারে,

যেখানে,

এই সব সমীকরণগুলি অন্যান্য তাপগতীয় চলরাশি নির্ণয়ে সহায়তা করে। তবুও তাপগতীয় স্থিতিশক্তিকে প্রকাশ করার সবচেয়ে উপযোগী উপায় হল, তাদের বাস্তব চলরাশির সাপেক্ষে প্রকাশ করা। সেই অনুযায়ী কোনো আদর্শ গ্যাসের তাপগতীয় স্থিতিশক্তিকে লেখা যেতে পারে,

সংখ্যাতত্ত্বীয় বলবিজ্ঞানে হেল্ম্‌হোল্‌জ মুক্ত শক্তি ও বিভাজন অপেক্ষকের সম্পর্কটি গুরুত্বপূর্ণ, এটি বস্তুর তাপগতীয় ধর্ম নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। আরও তথ্য পেতে দেখুন configuration integral

শব্দের বেগ[সম্পাদনা]

আদর্শ গ্যাসে শব্দের বেগের রাশিমালা হল:

যেখানে,

  • γ হল রুদ্ধতাপীয় আপেক্ষিক তাপদ্বয়ের অনুপাত (+ĉP/ĉV),
  • s হল গ্যাস অণুর এনট্রপি,
  • ρ হল গ্যাসের ঘনত্ব,
  • P হল গ্যাসের চাপ,
  • R হল সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক,
  • T হল উষ্ণতা,
  • M গ্যাসের মোলার ভর।

আদর্শ গ্যাস সমীকরণের তালিকা[সম্পাদনা]

দেখুন [https://en.m.wikipedia.org/wiki/Table_of_thermodynamic_equations#Ideal_gas.html আদর্শ গ্যাস সমীক রণের তালিকা]

আদর্শ কোয়ান্টাম গ্যাস[সম্পাদনা]

পূর্বে উল্লিখিত সাকুর-টেট্রোড সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়, এনট্রপি ধ্রুবক কণার তাপীয় কোয়ান্টাম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সাথে সমানুপাতিক। আর যে বিন্দুতে লগারিদ্‌মটির আর্গুমেন্ট শূন্য হয়, প্রায় সেই একই বিন্দুতে দুটি কণার পারস্পরিক গড় দূরত্ব ও তাপীয় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মান সমান হয়। কোয়ান্টাম তত্ত্ব এটিই নির্দেশ করে। যে কোনো গ্যাস উচ্চ তাপমাত্রা ও কম ঘনত্বে আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে ঠিকই, কিন্তু যে বিন্দুতে সাকুর-টেট্রোড সমীকরণও কাজ করে না, সেই বিন্দুতে গ্যাস বোসনফার্মিওন সমন্বিত কোয়ান্টাম গ্যাসের মতো আচরণ শুরু করে। (আদর্শ কোয়ান্টাম গ্যাস, বিশেষত বোল্‌ৎজম্যান গ্যাসের সম্পর্কিত আরো তথ্য পেতে দেখুন পাত্রে আবদ্ধ গ্যাস"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ])

গ্যাসের উষ্ণতা বয়েল উষ্ণতায় পৌঁছোলে, একটি নির্দিষ্ট চাপের পাল্লার মধ্যে তার আচরণ আদর্শ হয়।

আদর্শ বোল্‌ৎজম্যান গ্যাস[সম্পাদনা]

আদর্শ বোল্‌ৎজম্যান গ্যাসের ধর্ম সাধারণ তাপগতীয় গ্যাসের মতোই, কিন্তু এক্ষেত্রে Φ ধ্রুবক মান হয় নিম্নরূপ:

যেখানে Λ হল গ্যাসের তাপীয় ডি ব্রগ্‌লি তরঙ্গদৈর্ঘ্য আর g হল অবস্থার অবনমন।

আদর্শ বোস ও ফার্মি গ্যাস[সম্পাদনা]

আদর্শ বোসন গ্যাস (যেমন, ফোটন গ্যাস) বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান মেনে চলে আর এর শক্তির বণ্টন হয় বসু-আইনস্টাইন বণ্টন অনুযায়ী। আদর্শ ফার্মিওন গ্যাস মেনে চলে ফার্মি-ডিরাক পরিসংখ্যান, এবং ফার্মি-ডিরাক বণ্টন অনুযায়ী শক্তি বণ্টিত হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "CODATA Value: molar volume of ideal gas (273.15 K, 100 kPa)"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৭ 
  2. "CODATA Value: molar volume of ideal gas (273.15 K, 101.325 kPa)"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০৭ 
  3. Calvert, J. G. (১৯৯০)। "Glossary of atmospheric chemistry terms (Recommendations 1990)"। Pure and Applied Chemistry62 (11): 2167–2219। ডিওআই:10.1351/pac199062112167 
  4. Cengel, Yunus A.; Boles, Michael A.। Thermodynamics: An Engineering Approach (4th সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 89। আইএসবিএন 0-07-238332-1 
  5. Adkins, C. J. (১৯৮৩)। Equilibrium Thermodynamics (3rd সংস্করণ)। Cambridge, UK: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 116–120। আইএসবিএন 0-521-25445-0 
  6. Tschoegl, N. W. (২০০০)। Fundamentals of Equilibrium and Steady-State Thermodynamics। Amsterdam: Elsevier। পৃষ্ঠা 88আইএসবিএন 0-444-50426-5