অনাস্থা প্রস্তাব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অনাস্থা প্রস্তাব (অন্যান্য নাম অনাস্থা ভোট, আস্থা প্রস্তাব, ও আস্থা ভোট) বলতে কোনো সরকার বা ব্যবস্থাপনায় কোনো দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো ব্যক্তি এখনও সেই পদে থাকার যোগ্য কি না, তা নিয়ে এক মন্তব্য বা ভোটকে বোঝায়। এর কারণ, ব্যক্তিটি কিছু ব্যাপারে অযোগ্য, তাঁর কর্তব্য মানতে ব্যর্থ, কিংবা তিনি এমন সিদ্ধান্ত নেন যে অন্যান্য সদস্যগণ একে ক্ষতিকর বলে মনে করে। এই সংসদীয় প্রস্তাবটি সরকারের প্রধানের সামনে এটা প্রদর্শন করা হয় যে মনোনীত নির্বাহীর এক বা একাধিক সদস্যের উপর নির্বাচিত সংসদের কোনো আস্থা আছে বা নেই। কিছু দেশে কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে করা অনাস্থা প্রস্তাবের ফলে ঐ মন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হতে পারে। মন্ত্রীটি এক প্রধানমন্ত্রী হলে অনেকক্ষেত্রে অন্যান্য মন্ত্রীদেরকেও ইস্তফা দিতে হতে পারে।

সংসদীয় ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

ভারত[সম্পাদনা]

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে কেবলমাত্র সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভাতেই অনাস্থা প্রস্তাব করা যায় এবং এর জন্য কমপক্ষে ৫০ জন সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন।[১] প্রস্তাবটি কার্যকরী হলে লোকসভা ঐ প্রস্তাবের জন্য বিতর্ক ও ভোট করে। যদি বেশিরভাগ সাংসদ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়, তবে এটি পাস হয় এবং সরকারকে কার্যালয় খালি করতে হয়। চীন-ভারত যুদ্ধের ঠিক পরে আগস্ট ১৯৬৩-এ আচার্য কৃপালিনী লোকসভার সামনে সর্বপ্রথম অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন।[২][৩] জুলাই ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, ২৭টি অনাস্থা প্রস্তাব লোকসভার সামনে আনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সবচেয়ে বেশি অনাস্থা প্রস্তাবের সম্মুখীন হয়েছিলেন (১৫)। তার পরে আছেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীপি. ভি. নরসিংহ রাও (প্রত্যেকে ৩), মোরারজি দেশাই (২), এবং জওহরলাল নেহেরু, রাজীব গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ী, ও নরেন্দ্র মোদী (প্রত্যেকে ১)। এপ্রিল ১৯৯৯-এ বাজপেয়ী এক ভোটের ব্যবধানে অনাস্থা প্রস্তাবে পরাজিত হয়েছিলেন (২৬৯–২৭০)।[৪] অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশাই ১২ জুলাই ১৯৭৯-এ ইস্তফা দিয়েছিলেন। জুলাই ২০২১-এ লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এক অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু ৩২৫–১২৬ ভোটের জন্য বাতিল হয়েছিল।[৫]

দলবদল বিরোধী আইনের জন্য অনাস্থা ভোটের কোনো গুরুত্ব নেই যদি সংখ্যাগুরু দলের কাছে পরম সংখ্যাগরিষ্ঠতা (ইংরেজি: absolute majority) থাকে যেহেতু এটি সরকারের পক্ষে ভোট করানোর জন্য দলের সদস্যদের হুইপ করে। সুতরাং, অনাস্থা প্রস্তাবের দ্বারা কোনো সরকারকে অপসারণ করা অসম্ভব, এবং লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব কার্যত দলে অনাস্থা প্রস্তাবে পরিণত হয়।[৬]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব রাখার কোন বিধান নেই। যার ফলে সংসদ সদস্যদের তাদের নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না এবং বর্তমান সরকারের অপসারণকে অসম্ভাব্য করে তোলে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Parliament of India, Lok Sabha"164.100.47.194। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০২২ 
  2. "Procedure regarding motion of no-confidence 9 December 2013"। ৯ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "Rules of confidence"Indianexpress.com। ১২ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৩What happens if the prime minister loses a motion of confidence? In such a case, he is obliged to resign 
  4. "When NDA's first PM Atal Bihari Vajpayee lost no-confidence motion by 1 vote"Hindustantimes.com। ২০ জুলাই ২০১৮। 
  5. Agarwal, Nikhil (২০ জুলাই ২০১৮)। "No-confidence motion against NDA govt rejected. Day's highlights"Livemint.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২১ 
  6. Kumar, S (জুন ২০১৭)। "Threatening Indian democratic system: Case of Anti-Defection Law"The Voice