আলফা ক্ষয়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্প্রসারণ
২৯ নং লাইন: ২৯ নং লাইন:
এখন প্রশ্ন হল একক [[প্রোটন নিঃসরণ|প্রোটন]] বা [[নিউট্রন নিঃসরণ|নিউট্রন]] বা [[ঝাঁক বাঁধা ক্ষয়|অন্যান্য পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের]] বদলে আলফা কণা, হিলিয়াম নিউক্লিয়াসকেই কেন পছন্দ করা হবে নিঃসরণ করার জন্য।<ref group="note">এই অন্যান্য ক্ষয় মোডগুলি, যদিও সম্ভব, কিন্তু আলফা ক্ষয়ের তুলনায় অত্যন্ত বিরল।</ref> এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায় [[ওয়েভ ফাংশন প্রতিসাম্য সংরক্ষণ]] থেকে, যা একটি কণাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবর্তিত হয়ে [[বোস–আইনস্টাইন পরিসংখ্যান]] (যদি এর নিউক্লিয়নগুলি যুগ্ম সংখ্যায় থাকে) থেকে [[ফার্মি–ডিরাক পরিসংখ্যান]] (যদি এর নিউক্লিয়নগুলি বিজোড় সংখ্যায় থাকে) প্রদর্শন করতে বাধা দেয় অথবা তদ্বিপরীত। একক প্রোটন নিঃসরণ, বা বিজোড় স্ংখ্যার নিউক্লিয়নের কোনও কণার নির্গমন হলে সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘিত হয়। উত্তরের বাকি অংশটি পাওয়া যায় আলফা কণার খুব উচ্চ [[বন্ধন শক্তি]] থেকে। সমীকরণের দ্বারা মোট বিভাজন শক্তি গণনা করে পাওয়া যায়:
এখন প্রশ্ন হল একক [[প্রোটন নিঃসরণ|প্রোটন]] বা [[নিউট্রন নিঃসরণ|নিউট্রন]] বা [[ঝাঁক বাঁধা ক্ষয়|অন্যান্য পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের]] বদলে আলফা কণা, হিলিয়াম নিউক্লিয়াসকেই কেন পছন্দ করা হবে নিঃসরণ করার জন্য।<ref group="note">এই অন্যান্য ক্ষয় মোডগুলি, যদিও সম্ভব, কিন্তু আলফা ক্ষয়ের তুলনায় অত্যন্ত বিরল।</ref> এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায় [[ওয়েভ ফাংশন প্রতিসাম্য সংরক্ষণ]] থেকে, যা একটি কণাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবর্তিত হয়ে [[বোস–আইনস্টাইন পরিসংখ্যান]] (যদি এর নিউক্লিয়নগুলি যুগ্ম সংখ্যায় থাকে) থেকে [[ফার্মি–ডিরাক পরিসংখ্যান]] (যদি এর নিউক্লিয়নগুলি বিজোড় সংখ্যায় থাকে) প্রদর্শন করতে বাধা দেয় অথবা তদ্বিপরীত। একক প্রোটন নিঃসরণ, বা বিজোড় স্ংখ্যার নিউক্লিয়নের কোনও কণার নির্গমন হলে সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘিত হয়। উত্তরের বাকি অংশটি পাওয়া যায় আলফা কণার খুব উচ্চ [[বন্ধন শক্তি]] থেকে। সমীকরণের দ্বারা মোট বিভাজন শক্তি গণনা করে পাওয়া যায়:
:<math>E = (m_\text{i} - m_\text{f} - m_\text{p})c^2</math>
:<math>E = (m_\text{i} - m_\text{f} - m_\text{p})c^2</math>
এখানে <math>m_\text{i}</math> হল নিউক্লিয়াসের প্রাথমিক ভর, <math>m_\text{f}</math> হল কণা নিঃসরণের পরে নিউক্লিয়াসের ভর, এবং <math>m_\text{p}</math> হল নির্গত কণার ভর। এটা থেকে বোঝা যায় যে, আলফা কণা নির্গমন নিউক্লিয়াসের নিজস্ব শক্তি দ্বারাই সম্ভব, অন্যান্য ক্ষয়কারী নিঃসরণের জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ, [[ইউরেনিয়াম-২৩২]] এর জন্য গণনা সম্পাদন করে দেখা যায় যে আলফা কণা নিঃসরণে মাত্র ৫.৪ মেগা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রয়োজন হবে, যখন কোনও একক প্রোটন নিঃসরণে লাগবে ৬.১ মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট। এই বিভাজন শক্তির বেশিরভাগই আলফা কণার নিজের [[গতিশক্তি]] হয়ে যায়, যদিও [[ভরবেগ]] বজায় রাখার জন্য এই শক্তির কিছু অংশ নিউক্লিয়াসেই ফিরে আসে। তবে, যেহেতু বেশিরভাগ আলফা নির্গত রেডিও সমস্থানিকের ভর সংখ্যা ২১০ এর বেশি হয়, যা আলফা কণার ভর সংখ্যার চেয়ে অনেক বড় (৪), নিউক্লিয়াসে পুনরুদ্ধার হওয়া শক্তির অংশটি সাধারণত খুব কম হয়।<ref name="beiser"/>
এখানে <math>m_\text{i}</math> হল নিউক্লিয়াসের প্রাথমিক ভর, <math>m_\text{f}</math> হল কণা নিঃসরণের পরে নিউক্লিয়াসের ভর, এবং <math>m_\text{p}</math> হল নির্গত কণার ভর। এটা থেকে বোঝা যায় যে, আলফা কণা নির্গমন নিউক্লিয়াসের নিজস্ব শক্তি দ্বারাই সম্ভব, অন্যান্য ক্ষয়কারী নিঃসরণের জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ, [[ইউরেনিয়াম-২৩২]] এর জন্য গণনা সম্পাদন করে দেখা যায় যে আলফা কণা নিঃসরণে মাত্র ৫.৪ মেগা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রয়োজন হবে, যখন কোনও একক প্রোটন নিঃসরণে লাগবে ৬.১ মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট। এই বিভাজন শক্তির বেশিরভাগই আলফা কণার নিজের [[গতিশক্তি]] হয়ে যায়, যদিও [[ভরবেগ]] বজায় রাখার জন্য এই শক্তির কিছু অংশ নিউক্লিয়াসেই ফিরে আসে। তবে, যেহেতু বেশিরভাগ আলফা নির্গত রেডিও সমস্থানিকের ভর সংখ্যা ২১০ এর বেশি হয়, যা আলফা কণার ভর সংখ্যার চেয়ে অনেক বড়(৪), নিউক্লিয়াসে পুনরুদ্ধার হওয়া শক্তির অংশটি সাধারণত খুব কম হয়।<ref name="beiser"/>

এই বিভাজন শক্তিগুলি নিউক্লিয়ার বলের দ্বারা সরবরাহিত [[বিভব বাধা]]র থেকে যথেষ্ট কম, যা আলফা কণা নির্গমনে বাধা দেয়। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে গিয়ে অসীম থেকে একটি আলফা কণাকে নিউক্লিয়াসের কাছে নিউক্লিয়ার বলের প্রভাবের সীমার ঠিক বাইরে আনতে যে পরিমাণ কাজ করতে হবে, তা হল প্রায় ২৫ এমইভি। মনে করা যেতে পারে আলফা কণা ২৫ এমইভি বিভব বাধার মধ্যে রয়েছে। তবে আলফা কণাগুলিতে কেবল ৪ এমইভি থেকে প্রায় ৯ এমইভি গতিশক্তি থাকে, যা প্রয়োজনীয় মুক্তি গতিশক্তির চেয়ে অনেক কম।

তবে, কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের প্রক্রিয়া মাধ্যমে, কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে এর একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ১৯২৮ সালে আলফা ক্ষয়ের কোয়ান্টাম টানেলিং তত্ত্বটি স্বাধীনভাবে জর্জ গ্যামফ,<ref>
{{cite journal
|author=G. Gamow
|year=1928
|title=Zur Quantentheorie des Atomkernes (On the quantum theory of the atomic nucleus)
|journal=[[Zeitschrift für Physik]]
|volume=51
|issue=3
|pages=204–212
|doi=10.1007/BF01343196
|bibcode = 1928ZPhy...51..204G }}</ref>[[রোনাল্ড উইলফ্রেড গার্নি]] এবং [[এডওয়ার্ড কন্ডন]] প্রকাশ করেছিলেন।<ref name="gurney-condon">{{cite journal
|author=Ronald W. Gurney & Edw. U. Condon
|year=1928
|title=Wave Mechanics and Radioactive Disintegration
|journal=[[Nature (journal)|Nature]]
|volume=122
|page=439
|doi=10.1038/122439a0
|bibcode = 1928Natur.122..439G }}</ref> এটি কোয়ান্টাম তত্ত্বের খুব উল্লেখযোগ্য নিশ্চিতকরণ হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিল। মূলত, আলফা কণা নিউক্লিয়াস থেকে কোয়ান্টাম টানেল দিয়ে বেরিয়ে যায়। গার্নি এবং কন্ডন তাঁদের গবেষণাপত্রে নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ করেছেন:
<blockquote>এযাবৎ নিউক্লিয়াসের কিছু বিশেষ অবাধ ‘অস্থিরতা’র মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা দরকার ছিল; তবে নীচের টীকায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে এই বিভাজন কোনও বিশেষ অনুমান ছাড়াই কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান সূত্রের স্বাভাবিক ফল... যে বিস্ফোরণ নিয়ে α কণা নিউক্লিয়াসে তার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে তাই নিয়ে অনেক কিছু লেখা হয়েছে। কিন্তু উপরের চিত্র থেকে যে প্রক্রিয়াটি পাওয়া যায়, কেউ বরং বলবেন যে α কণা প্রায় অদৃশ্য ভাবে বেরিয়ে যায়।<ref name="gurney-condon"/></blockquote>
তত্ত্বটি বলে যে আলফা কণাকে নিউক্লিয়াসের মধ্যে একটি স্বাধীন কণা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যা সর্বক্ষণ গতিমান থাকে, কিন্তু নিউক্লিয়ার বলের দ্বারা নিউক্লিয়াসের মধ্যে আটকে থাকে। নিউক্লিয়ার বলের বিভব বাধার সাথে প্রতিটি সংঘর্ষে, একটি ছোট, কিন্তু শূণ্য নয়, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয় যাতে এটি টানেলিং করে বেরিয়ে যেতে পারে। ১.৫ x ১০<sup>৭</sup> মি./সে. গতি সহ একটি আলফা কণা, যেটি প্রায় ১০<sup> −১৪</sup> মি. পারমাণবিক ব্যাসের মধ্যে থাকে, সেটি প্রতি সেকেন্ডে ১০<sup>২১</sup> বারের বেশি বিভব বাধার সাথে ধাক্কা খাবে। তবে, প্রতিটি সংঘর্ষে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা যদি খুব সামান্য হয়, তবে রেডিওসোটোপের অর্ধেক জীবন খুব দীর্ঘ হবে, যেহেতু মুক্তির মোট সম্ভাব্যতা ৫০% এ পৌঁছানোর জন্য এটি প্রয়োজনীয় সময়। চরম উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, [[বিসমাথ-২০৯]] আইসোটোপের অর্ধ-জীবন হল ১.৯ x ১০ <sup>১৯ </sup> বছর।


==তথ্যসূত্র==
==তথ্যসূত্র==

১২:৪৯, ১৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

আলফা ক্ষয়ের দৃশ্যমান উপস্থাপনা

টেমপ্লেট:নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যা আলফা ক্ষয় বা α-ক্ষয় হল এক ধরণের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় যেখানে একটি পারমাণবিক নিউক্লিয়াস একটি আলফা কণা (হিলিয়াম নিউক্লিয়াস) নির্গত করে এবং এর মাধ্যমে একটি অন্য 'পারমাণবিক নিউক্লিয়াস'এ বা 'ক্ষয়প্রাপ্ত' রূপান্তরিত হয়, যার আণবিক ভর সংখ্যা চার কমে যায় এবং পারমাণবিক সংখ্যা দুই কমে যায়। একটি আলফা কণা একটি হিলিয়াম-৪ পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সমান, যা দুটি প্রোটন এবং দুটি নিউট্রন নিয়ে গঠিত। এর বৈদ্যুতিক আধান দুটি ইলেকট্রনের বৈদ্যুতিক আধানের (২ই) সমান এবং ভর ৪ একক। উদাহরণস্বরূপ, ইউরেনিয়াম-২৩৮ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে থোরিয়াম-২৩৪ গঠিত হয়। আলফা কণাগুলির আধান ২ই (2e), তবে পারমাণবিক সমীকরণ যেহেতু ইলেকট্রনকে বিবেচনা না করে পারমাণবিক বিক্রিয়া বর্ণনা করে – এটি এমন একটি প্রচলিত রীতি যেখানে প্রশমিত পরমাণুতে নিউক্লিয়াস থাকে তা বোঝায় না – আধানটি সাধারণত দেখানো হয় না।

আলফা কণার ক্ষয় সাধারণত সবচেয়ে ভারী নিউক্লাইডে ঘটে। তত্ত্বগতভাবে, নিকেল (উপাদান ২৮) এর চেয়ে কিছুটা ভারী নিউক্লিয়াসে এটি ঘটতে পারে, যেখানে প্রতি নিউক্লিওনে সামগ্রিক বন্ধন শক্তি সর্বনিম্ন থাকছেনা এবং তাই অস্থিতিশীল নিউক্লাইডগুলি স্বতঃস্ফূর্ত বিভাজন-প্রক্রিয়াকরণের দিকে এগোয়। বাস্তবক্ষেত্রে দেখা গেছে, নিকেলের চেয়ে যথেষ্ট ভারী নিউক্লাইড গুলিতেই শুধুমাত্র এই পদ্ধতিতে ক্ষয় হয়। সবচেয়ে হালকা আলফা নির্গমনকারী পদার্থটি হল টেলুরিয়াম (উপাদান ৫২) এর সমস্থানিক (ভর সংখ্যা ১০৪-১০৯)। ব্যতিক্রমীভাবে, বেরিলিয়াম-৮ দুটি আলফা কণা নির্গত করে।

আলফা কণার ক্ষয় এখন পর্যন্ত ঝাঁক বাঁধা ক্ষয়ের সবচেয়ে সাধারণ রূপ, যেখানে মূল পরমাণুটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় নিউক্লিয়নের কনা নির্গত করে, এরপর পড়ে থাকে আর একটি নির্দিষ্ট পদার্থ। আলফা কণার ভর তুলনামূলকভাবে কম এবং পারমাণবিক বন্ধন শক্তি অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এটি ক্ষয়ের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। ঝাঁক বাঁধা ক্ষয়ের মত, আলফা ক্ষয় মূলত একটি কোয়ান্টাম টানেলিং প্রক্রিয়া। এটি নিউক্লিয়ার বল এবং তড়িচ্চুম্বকীয় বল উভয়ের পারস্পরিক ক্রিয়ায় ঘটে, যা বিটা ক্ষয় থেকে আলাদা।

আলফা কণার সাধারণ গতিশক্তি ৫এমইভি (মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট) (অথবা তাদের মোট শক্তির ≈০.১৩%, ১১০ টেরাজুলস/কেজি) এবং প্রায় ১৫,০০০,০০০ মি/সেকেন্ড গতিবেগ রয়েছে, বা আলোর গতিবেগের এর ৫%। উৎপাদিত শক্তির উপর এই প্রক্রিয়াটির অর্ধজীবনের নির্ভরতার কারণে, বিস্ময়করভাবে এই শক্তির সামান্য পার্থক্য হয় (গাইগার–নিউটাল সূত্রের সমীকরণ দেখুন)। তুলনামূলকভাবে ভর বেশি, বৈদ্যুতিক আধান ২ই এবং তুলনামূলকভাবে কম গতিবেগ হওয়ার কারণে, আলফা কণাগুলি সহজেই অন্যান্য পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া করে শক্তি ক্ষয় করে। এবং তাদের সম্মুখ গতি কয়েক সেন্টিমিটার বায়ু দ্বারা থামানো যেতে পারে। পৃথিবীতে উৎপাদিত হিলিয়ামের প্রায় ৯৯% ভূগর্ভস্থ খনিজ এর ইউরেনিয়াম বা থোরিয়ামের আলফা ক্ষয়ের ফল। প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের উপ-পণ্য হিসাবে হিলিয়াম পাওয়া যায়।

ইতিহাস

১৮৯৯ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড দ্বারা তেজস্ক্রিয়তার পরীক্ষার সময় প্রথম আলফা কণা সামনে আসে, ১৯০৭ সালের মধ্যে তাদের হিলিয়াম২+ (He2+) আয়ন বলে চিনতে পারা যায়।

১৯২৮ সালের মধ্যে, জর্জ গ্যামফ আলফা ক্ষয়ের তত্ত্বটি টানেলিংয়ের মাধ্যমে সমাধান করেছিলেন। আলফা কণা নিউক্লিয়াস দ্বারা একটি বিভব কূপের মধ্যে আটকা পড়ে। তত্ত্বগতভাবে, এটি থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন, তবে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এর নতুন (তখন) আবিষ্কৃত নীতি অনুসারে, বাধা অতিক্রম করে এর "টানেলিং" এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াস থেকে মুক্ত হয়ে অন্য দিকে চলে আসার স্বল্প (তবে শূন্য নয়) সম্ভাবনা থেকে যায়। গ্যামফ নিউক্লিয়াসের জন্য একটি মডেল বিভবের সমাধান করেন এবং প্রথম নীতি থেকে ক্ষয়ের অর্ধজীবন এবং নির্গমন শক্তির মধ্যে একটি সম্পর্ক উদ্ভাবন করেন। সেটি আগে প্রায়োগিকভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং এটি গাইগার–নিউটাল সূত্র নামে পরিচিত ছিল।[১]

পদ্ধতি

পারমাণবিক নিউক্লিয়াসকে একসাথে ধরে রাখা নিউক্লিয়ার বলটি খুব শক্তিশালী হয়, প্রোটনগুলির মধ্যে বিকর্ষণকারী তড়িচ্চুম্বকীয় বলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে নিউক্লিয়ার বল খুব স্বল্প পরিসরে কাজ করে, প্রায় ১ ফেমটোমিটারের বাইরে দ্রুত এর শক্তি হ্রাস পায়, কিন্তু তড়িচ্চুম্বকীয় বল বহুদূর পর্যন্ত কাজ করে। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসকে একসাথে ধরে রাখার আকর্ষণকারী নিউক্লিয়ার বলের শক্তি নিউক্লিয়নের সংখ্যার সাথে সমানুপাতিক, তবে যে তড়িচ্চুম্বকীয় বল নিউক্লিয়াসকে পৃথক করে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে, মোটামুটিভাবে সেটি তার পারমাণবিক সংখ্যার বর্গের সমানুপাতিক। ২১০ বা তারও বেশি নিউক্লিয়ন সহ একটি নিউক্লিয়াস এত বড় যে এটি একত্রে ধরে রাখা শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বলটি এর মধ্যের প্রোটনগুলির মধ্যে বিকর্ষণকারী তড়িচ্চুম্বকীয় বলের সমবল মাত্র হতে পারে। এই সব নিউক্লিয়াস গুলিতে আকার কমিয়ে স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য আলফা ক্ষয় ঘটে।[২]

এখন প্রশ্ন হল একক প্রোটন বা নিউট্রন বা অন্যান্য পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের বদলে আলফা কণা, হিলিয়াম নিউক্লিয়াসকেই কেন পছন্দ করা হবে নিঃসরণ করার জন্য।[note ১] এর কিছুটা উত্তর পাওয়া যায় ওয়েভ ফাংশন প্রতিসাম্য সংরক্ষণ থেকে, যা একটি কণাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরিবর্তিত হয়ে বোস–আইনস্টাইন পরিসংখ্যান (যদি এর নিউক্লিয়নগুলি যুগ্ম সংখ্যায় থাকে) থেকে ফার্মি–ডিরাক পরিসংখ্যান (যদি এর নিউক্লিয়নগুলি বিজোড় সংখ্যায় থাকে) প্রদর্শন করতে বাধা দেয় অথবা তদ্বিপরীত। একক প্রোটন নিঃসরণ, বা বিজোড় স্ংখ্যার নিউক্লিয়নের কোনও কণার নির্গমন হলে সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘিত হয়। উত্তরের বাকি অংশটি পাওয়া যায় আলফা কণার খুব উচ্চ বন্ধন শক্তি থেকে। সমীকরণের দ্বারা মোট বিভাজন শক্তি গণনা করে পাওয়া যায়:

এখানে হল নিউক্লিয়াসের প্রাথমিক ভর, হল কণা নিঃসরণের পরে নিউক্লিয়াসের ভর, এবং হল নির্গত কণার ভর। এটা থেকে বোঝা যায় যে, আলফা কণা নির্গমন নিউক্লিয়াসের নিজস্ব শক্তি দ্বারাই সম্ভব, অন্যান্য ক্ষয়কারী নিঃসরণের জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ, ইউরেনিয়াম-২৩২ এর জন্য গণনা সম্পাদন করে দেখা যায় যে আলফা কণা নিঃসরণে মাত্র ৫.৪ মেগা ইলেকট্রন ভোল্টের প্রয়োজন হবে, যখন কোনও একক প্রোটন নিঃসরণে লাগবে ৬.১ মেগা ইলেকট্রন ভোল্ট। এই বিভাজন শক্তির বেশিরভাগই আলফা কণার নিজের গতিশক্তি হয়ে যায়, যদিও ভরবেগ বজায় রাখার জন্য এই শক্তির কিছু অংশ নিউক্লিয়াসেই ফিরে আসে। তবে, যেহেতু বেশিরভাগ আলফা নির্গত রেডিও সমস্থানিকের ভর সংখ্যা ২১০ এর বেশি হয়, যা আলফা কণার ভর সংখ্যার চেয়ে অনেক বড়(৪), নিউক্লিয়াসে পুনরুদ্ধার হওয়া শক্তির অংশটি সাধারণত খুব কম হয়।[২]

এই বিভাজন শক্তিগুলি নিউক্লিয়ার বলের দ্বারা সরবরাহিত বিভব বাধার থেকে যথেষ্ট কম, যা আলফা কণা নির্গমনে বাধা দেয়। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে গিয়ে অসীম থেকে একটি আলফা কণাকে নিউক্লিয়াসের কাছে নিউক্লিয়ার বলের প্রভাবের সীমার ঠিক বাইরে আনতে যে পরিমাণ কাজ করতে হবে, তা হল প্রায় ২৫ এমইভি। মনে করা যেতে পারে আলফা কণা ২৫ এমইভি বিভব বাধার মধ্যে রয়েছে। তবে আলফা কণাগুলিতে কেবল ৪ এমইভি থেকে প্রায় ৯ এমইভি গতিশক্তি থাকে, যা প্রয়োজনীয় মুক্তি গতিশক্তির চেয়ে অনেক কম।

তবে, কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের প্রক্রিয়া মাধ্যমে, কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে এর একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ১৯২৮ সালে আলফা ক্ষয়ের কোয়ান্টাম টানেলিং তত্ত্বটি স্বাধীনভাবে জর্জ গ্যামফ,[৩]রোনাল্ড উইলফ্রেড গার্নি এবং এডওয়ার্ড কন্ডন প্রকাশ করেছিলেন।[৪] এটি কোয়ান্টাম তত্ত্বের খুব উল্লেখযোগ্য নিশ্চিতকরণ হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিল। মূলত, আলফা কণা নিউক্লিয়াস থেকে কোয়ান্টাম টানেল দিয়ে বেরিয়ে যায়। গার্নি এবং কন্ডন তাঁদের গবেষণাপত্রে নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ করেছেন:

এযাবৎ নিউক্লিয়াসের কিছু বিশেষ অবাধ ‘অস্থিরতা’র মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা দরকার ছিল; তবে নীচের টীকায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে এই বিভাজন কোনও বিশেষ অনুমান ছাড়াই কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান সূত্রের স্বাভাবিক ফল... যে বিস্ফোরণ নিয়ে α কণা নিউক্লিয়াসে তার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে তাই নিয়ে অনেক কিছু লেখা হয়েছে। কিন্তু উপরের চিত্র থেকে যে প্রক্রিয়াটি পাওয়া যায়, কেউ বরং বলবেন যে α কণা প্রায় অদৃশ্য ভাবে বেরিয়ে যায়।[৪]

তত্ত্বটি বলে যে আলফা কণাকে নিউক্লিয়াসের মধ্যে একটি স্বাধীন কণা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যা সর্বক্ষণ গতিমান থাকে, কিন্তু নিউক্লিয়ার বলের দ্বারা নিউক্লিয়াসের মধ্যে আটকে থাকে। নিউক্লিয়ার বলের বিভব বাধার সাথে প্রতিটি সংঘর্ষে, একটি ছোট, কিন্তু শূণ্য নয়, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয় যাতে এটি টানেলিং করে বেরিয়ে যেতে পারে। ১.৫ x ১০ মি./সে. গতি সহ একটি আলফা কণা, যেটি প্রায় ১০ −১৪ মি. পারমাণবিক ব্যাসের মধ্যে থাকে, সেটি প্রতি সেকেন্ডে ১০২১ বারের বেশি বিভব বাধার সাথে ধাক্কা খাবে। তবে, প্রতিটি সংঘর্ষে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা যদি খুব সামান্য হয়, তবে রেডিওসোটোপের অর্ধেক জীবন খুব দীর্ঘ হবে, যেহেতু মুক্তির মোট সম্ভাব্যতা ৫০% এ পৌঁছানোর জন্য এটি প্রয়োজনীয় সময়। চরম উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বিসমাথ-২০৯ আইসোটোপের অর্ধ-জীবন হল ১.৯ x ১০ ১৯ বছর।

তথ্যসূত্র

  1. "Gamow theory of alpha decay"। ৬ নভেম্বর ১৯৯৬। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Arthur Beiser (২০০৩)। "Chapter 12: Nuclear Transformations"। Concepts of Modern Physics (পিডিএফ) (6th সংস্করণ)। McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 432–434। আইএসবিএন 0-07-244848-2 
  3. G. Gamow (১৯২৮)। "Zur Quantentheorie des Atomkernes (On the quantum theory of the atomic nucleus)"। Zeitschrift für Physik51 (3): 204–212। ডিওআই:10.1007/BF01343196বিবকোড:1928ZPhy...51..204G 
  4. Ronald W. Gurney & Edw. U. Condon (১৯২৮)। "Wave Mechanics and Radioactive Disintegration"। Nature122: 439। ডিওআই:10.1038/122439a0বিবকোড:1928Natur.122..439G 

টীকা

  1. এই অন্যান্য ক্ষয় মোডগুলি, যদিও সম্ভব, কিন্তু আলফা ক্ষয়ের তুলনায় অত্যন্ত বিরল।

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Nuclear processes