সেন্টিনেলী জনগোষ্ঠী
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
মূলত উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ (ভারত) | |
ভাষা | |
সেন্টিনেলী ভাষা, সঠিকভাবে জানা যায়নি কিন্তু সাধারণত ধারণা করা হয়, এটি আন্দামানি ভাষাগুলোর একটি | |
ধর্ম | |
অজানা | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
অজানা, তবে সাধারণ ধারণা করা হয়, এটি অন্যান্য আন্দামানি আদিবাসীদের সাথে সংশ্লিষ্ট, যেমন: ওঙ্গে |
সেন্টিনেলী জনগোষ্ঠী হল আন্দামানি জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী। বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত একটি বিচ্ছিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এই জাতি দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীগুলোর একটি। গ্রেট আন্দামান উত্তর সেন্টিনেলী দ্বীপপুঞ্জে এই জনগোষ্ঠীর বাস। বহিরাগতদের ওপর আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্য তারা বিশেষভাবে পরিচিত। সেন্টিনেলী জাতি মূলত একটি শিকারী-নির্ভর জাতি। তারা তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ শিকার, মাছ ধরা, এবং বন্য লতাপাতার মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এখন পর্যন্ত তাদের মাঝে কৃষিকাজ করা বা আগুন ব্যবহারে প্রমাণ পাওয়া যায় না।[১]
জনসংখ্যা
[সম্পাদনা]এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে সেন্টিনেলীদের জনসংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। ধারণা অনুযায়ী এদের জনসংখ্যা সর্বনিম্ন ৩৯ থেকে ২৫০-এর মধ্যে, এবং সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যন্ত। ২০০১ সালে পরিচালিত ভারতের জনপরিসংখ্যানে ৩৯ জন পৃথক ব্যক্তির উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়[২] যাদের মাঝে ২১ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী। নিরাপত্তাজনিত কারণে এই জরিপটি প্রয়োজনের চেয়েও বেশি দূর থেকে পরিচালনা করা হয়েছিলো[৩] এবং এটি সুনিশ্চিতভাবেই ৭২ বর্গকিলোমিটার (১৮,০০০ একর) আয়তনে দ্বীপটির সঠিক জনসংখ্যা নির্দেশ করে না। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সংঘটিত ভূকম্পন ও সংশ্লিষ্ট সুনামির ফলে সেন্টিনেলীদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর সৃষ্ট কোনো মধ্যম বা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কথা জানা যায় না। শুধু এটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তারা এই দুর্যোগের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছে।[৪]
বর্তমান অবস্থা
[সম্পাদনা]সেন্টিনেলদের বাসস্থল এই দ্বীপটি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ হিসেবে শাসিত হয়, কিন্তু বাস্তবে সেন্টিনেলটা তাদের অঞ্চলে, তাদের সকল বিষয়ে সর্বপ্রকার স্বাধীনতা ভোগ করে। ভারত সরকারের সম্পৃক্ততার মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ব্যতিক্রম কিছু ক্ষেত্রে দ্বীপটিতে পরিদর্শন অভিযান পরিচালনা করা, এবং সাধারণ জনগণকে দ্বীপটিতে যেতে নিরুৎসাহিত করা। তাই এটি কাগজে-কলমে ভারত সরকারের অধীনস্থ অঞ্চল হলেও, বাস্তবে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন।
১৯৬৭ সাল থেকে পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থিত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেন্টিনেলদের সাথে যোগাযোগ করার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। নৃতাত্ত্বিক ও ভারতের ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক টি এন পণ্ডিতের নেতৃত্বে সেন্টিনেলদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে তাদেরকে উপহার হিসেবে সমুদ্র সৈকতে খাবার ছড়িয়ে (যেমন: নারকেল) বন্ধুত্ব স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেন্টিনেলদের মধ্যে তৈরি বহিরাগতদের সম্পর্কে সৃষ্ট হিংস্র মনোভাব দূর করার চেষ্টা করা হয়। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি বাঙালি নৃতত্ত্ববিদ মধুমালা চট্টোপাধ্যায় সহ ১৩ জনের একটি যোগাযোগকারী দল পৃথিবীর অন্যতম এই বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী সেন্টিনেলীদের সঙ্গে প্রথম এবং একমাত্র বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সাধনে সক্ষম হন।[৫] পরবর্তীতে, বেশ কিছু সময়ের জন্য ধারণা করা হয়েছিলো, অভিযানগুলো ফলপ্রসূ হচ্ছে, কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে বহিরাগতদের সাথে দক্ষিণ ও মধ্য আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত জারোয়া জাতিগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত একইরকম অভিযানে সৃষ্ট বেশ কিছু ধারাবাহিক আক্রমণে কিছু মানুষ প্রাণ হারায়। এছাড়াও নতুন রোগের বিস্তারের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় অভিযানগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৬ সালে সেন্টিনেল তীরন্দাজরা তাদের দ্বীপে অনুপ্রবেশকারী দুই জন জেলেকে তীর মেরে হত্যা করে। পরবর্তীতে সেন্টিনেল তীরন্দাজরা মরদেহ উদ্ধারে আসা হেলিকপ্টারটিকেও তীর মেরে হটিয়ে দেয়। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ঐ জেলেদের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। যদিও উদ্ধার অভিযানে আসা হেলিকপ্টার থেকে তাদের মরদেহ দেখা গিয়েছিলো। কারণ উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারের পাখার ঘূর্ণনে সৃষ্ট প্রবল বাতাদের তোড়ে সেন্টিনেলদের অল্পগভীর কবরের মাটি সরে গিয়ে ঐ দুজন জেলের মৃতদেহ দেখা যায়।
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ B. K. Roy, সম্পাদক (১৯৯০)। Cartography for development of outlying states and islands of India: short papers submitted at NATMO Seminar, Calcutta, December 3-6, 1990। National Atlas and Thematic Mapping Organisation, Ministry of Science and Technology, Government of India। পৃষ্ঠা 203। ওসিএলসি 26542161।
- ↑ Indian Census
- ↑ as noted in description text on 29 April 2005 image, North Sentinel Island, European Space Agency
- ↑ http://news.nationalgeographic.com/news/2005/01/0125_050125_tsunami_island.html
- ↑ "Meet the first woman to contact the Sentinelese"। Culture (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৫।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Goodheart, Adam (২০০০)। "The Last Island of the Savages"। The American Scholar। 69 (4): 13–44। ২৫ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল (reproduced online by the Andaman Association) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১২।
- Pandit, T. N. (১৯৯০)। The Sentinelese। Kolkata: Seagull Books। আইএসবিএন 81-7046-081-6।
- Weber, George (n.d.)। "The Andamanese"। The Lonely Islands। The Andaman Association। ২৪ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2007‑02‑07। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)