মণিলাল ভৌমিক
ড.মণিলাল ভৌমিক বা সংক্ষেপে মণি ভৌমিক হলেন একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি মার্কিন পদার্থবিদ ও বিখ্যাত লেখক। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি বিজ্ঞানী একই সঙ্গে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি এবং ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স-এর ফেলো নির্বাচিত হন।
মণি ভৌমিক | |
---|---|
জন্ম | |
নাগরিকত্ব | মার্কিন |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আই আই টি খড়গপুর |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী (২০১১) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | পদার্থবিদ্যা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, লং বিচ |
উচ্চশিক্ষায়তনিক উপদেষ্টা | সত্যেন্দ্রনাথ বসু |
প্রথম জীবন[সম্পাদনা]
মণি ভৌমিক ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত তৎকালীন মেদিনীপুরের তমলুকের শহীদ মাতঙ্গিনী সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের এক অখ্যাত গ্রাম শিউরি'তে জন্মগ্রহণ করেন।[১]পিতা গুণধর ভৌমিক ছিলেন স্কুল শিক্ষক, মাতা ললিতা দেবী।[২]:২৩। এক সময় তার পিতা স্কুলের চাকরি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন গাঁধীজির অসহযোগ আন্দোলনে। স্বভাবতই তার পরিবার একদিকে যেমন ব্রিটিশ শাসকের রোষের মুখে পড়ে তেমনই আর্থিক অনটনে। মণিলাল কিন্তু শৈশব হতেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। শৈশবে কৃষ্ণগঞ্জ কৃষি শিল্প বিদ্যালয়ে ভরতি হন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভালো ফল করেন কোলাঘাটের কোলা ইউনিয়ন হাই স্কুলের শেষ পরীক্ষায়।[১] কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন স্কলারশিপ পেয়ে।
বাল্যকালে মহিষাদল শিবিরে মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন। তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি সত্যেন্দ্রনাথ বসুর (যিনি বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন তত্ত্বের উদ্ভাবক) নজরে আসেন, যিনি তার অসাধারণ কৌতূহলে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। মণি প্রথম ব্যক্তি যিনি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুর থেকে পিএইচডি লাভ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে সেখান থেকে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি লাভ করেন। তিনি Resonant Electronic Energy Transfer-এর ওপর গবেষণা করেছিলেন। এই বিষয়কেই পরবর্তীকালে তিনি তার লেসারের কাজে ব্যবহার করেছিলেন।
বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]
মণি ভৌমিক ১৯৫৯ সালে স্লোন ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ লাভ করে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলসে যান তার পোস্ট ডক্টরাল পড়াশোনা করা জন্য। ১৯৬১ সালে তিনি জেরক্স ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল সিস্টেমস-এর কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রনিক বিভাগে একজন লেসার বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন।এর পাশাপাশি তিনি লং বিচের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যায় অধ্যাপনাও চালিয়ে যান। ১৯৬৮ সালে তিনি নরথ্রপ রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন, যেখানে পরবর্তীকালে তিনি লেসার টেকনোলজি ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর হন এবং একটি দলের নেতৃত্ব দেন, যা এক্সাইমার লেসার প্রযুক্তির গবেষণার ক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৩ সালের মে মাসে এই গবেষণার ওপর লিখিত প্রবন্ধ অপ্টিক্যাল সোসাইটি অফ আমেরিকা কলোরাডো অধিবেশনে পেশ করা হয়।
এই অধিবেশনে তিনি প্রথমবার পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ সাপেক্ষে দেখান যে, এক্সাইমার লেসারকে এতটাই ক্ষমতাসম্পন্ন ও কার্যকরী করা যেতে পারে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব।পরবর্তীকালে লেসিক সার্জারিতে এক্সাইমার লেসারের প্রয়োগ ঘটিয়ে বহু ক্ষেত্রেই সাফল্যের সাথে দৃষ্টি সংশোধন করা হয়েছে। মণি ভৌমিকের নতুন ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন লেসার উদ্ভাবনের ফলে তার সতীর্থরা তাকে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি ও ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স-এর সদস্যপদের জন্য নির্বাচিত করেন।
বর্তমানে মণি ভৌমিকের ভালো লাগার জায়গা হল কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা ও মহাকাশবিজ্ঞানের অগ্রগতি ও মানুষের জীবন-জীবিকা, প্রযুক্তি, আধ্যাত্মিক উন্নয়নে তার প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে বোঝানো। এই প্রচেষ্টারই ফসল হল তার বহু প্রবন্ধ, বক্তৃতা, কোড নেম গড (বাংলায় ‘বিজ্ঞানে ঈশ্বরের সংকেত’) ও দ্য কসমিক ডিটেক্টিভ-এর মতো বই এবং কসমিক কোয়ান্টাম রে-র মতো টিভি প্রোগ্রাম।
মণি ভৌমিক বহু পেশাদারি পত্রিকায় পঞ্চাশটিরও বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ডজনখানেক মার্কিন পেটেন্টের অধিকারীও বটে।
রচিত গ্রন্থসমূহ[সম্পাদনা]
- ভৌমিক, মণি (২০০৭)। বিশ্ব জীবনী। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক অনূদিত। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 81-7756-660-1।
- ভৌমিক, মণি (২০১০)। বিজ্ঞানে ঈশ্বরের সংকেত। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক অনূদিত। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-7756-924-7। (২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ইংরাজীতে লেখা- কোড নেম গড বইটির বঙ্গানুবাদ)
- ভৌমিক, মণি (২০১২)। ব্রহ্ম সত্য জগৎ সত্য। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক অনূদিত। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 978-93-5040-131-6।
- ভৌমিক, মণি (২০১৩)। আমি নরেন:বিদেশে বিবেকানন্দ। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক অনূদিত। পত্র-ভারতী কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-8374-188-0।
- ভৌমিক, মণি (২০১৪)। হ্যালো আইনস্টাইন: চেনা নাম অচেনা গল্প। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক অনূদিত। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 978-93-5040-380-8।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ "মেদিনীপুরের চোখের মণি বিজ্ঞানী মণিলাল ভৌমিক"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫।
- ↑ ভৌমিক, মণি (২০১০)। বিজ্ঞানে ঈশ্বরের সংকেত। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক অনূদিত। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-7756-924-7।
- ১৯৩১-এ জন্ম
- বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী
- ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী
- পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ব্যক্তি
- স্কটিশ চার্চ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ভারতীয় স্মৃতিকথাকার
- বাঙালি বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় পদার্থবিদ
- বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পদ্মশ্রী প্রাপক
- ২০শ শতাব্দীর মার্কিন পদার্থবিদ
- ২০শ শতাব্দীর বাঙালি
- মার্কিন হিন্দু
- বাঙালি হিন্দু
- বাঙালি পদার্থবিদ
- বাঙালি বিজ্ঞানী
- আইআইটি খড়গপুরের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- ভারতীয় আত্মজীবনীকার
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় অভিবাসী
- জীবিত ব্যক্তি
- পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞানী
- তমলুকের ব্যক্তি