নদী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Preetidipto.21 (আলোচনা | অবদান)
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা
১২ নং লাইন: ১২ নং লাইন:
====নদীর বৃদ্ধাবস্থা====
====নদীর বৃদ্ধাবস্থা====
এই অবস্থায় নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। তবে ভাঙার কাজ অল্পস্বল্প চলে। সাধারণত সমতল ভূমিতে নদীর এই অবস্থা হয়। এতে কোথাও কোথাও উঁচু ভূমি থাকতে পারে। এ সময় নদীর গতিমাত্রা এত কমে যায় যে, সামান্য বাধা পেলেই নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। নদী এই অংশে খুব এঁকেবেঁকে চলে। পথে পথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় নদী বর্ষাকালে প্রায়ই দু’কূলে বন্যার সৃষ্টি করে। নদীর পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বালি ও পলি দুই তীরে ছড়িয়ে পড়ে। নদীর বুকেও চর জাগে। তবে নদী সবসময় ঠিক এভাবে চলে না। মাঝে মাঝে ভূকম্পনের ফলে নদী আবার যৌবন পেতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণেও নদীর তীব্রতা ও গতি বাড়তে পারে।<br />
এই অবস্থায় নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। তবে ভাঙার কাজ অল্পস্বল্প চলে। সাধারণত সমতল ভূমিতে নদীর এই অবস্থা হয়। এতে কোথাও কোথাও উঁচু ভূমি থাকতে পারে। এ সময় নদীর গতিমাত্রা এত কমে যায় যে, সামান্য বাধা পেলেই নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। নদী এই অংশে খুব এঁকেবেঁকে চলে। পথে পথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় নদী বর্ষাকালে প্রায়ই দু’কূলে বন্যার সৃষ্টি করে। নদীর পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বালি ও পলি দুই তীরে ছড়িয়ে পড়ে। নদীর বুকেও চর জাগে। তবে নদী সবসময় ঠিক এভাবে চলে না। মাঝে মাঝে ভূকম্পনের ফলে নদী আবার যৌবন পেতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণেও নদীর তীব্রতা ও গতি বাড়তে পারে।<br />
ভূ-আন্দোলন যদি ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন তা গিরিজনিতে পর্যবাসিত হয়। এর ফলে নতুন নতুন পাহাড় পর্বতের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে এমন কিছুসংখ্যক বিরল নদী আছে, যারা উত্থিত পর্বতের শক্তিকে পর্যুদস্ত করে তাদের ক্ষয়কার্য অব্যাহত রেখেছে এবং পর্বতরাজির উত্থান সংঘটিত হবার পরও তাদের অস্তিত্ত বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ঐ সমস্ত নদীকে বলা হয় প্রাকভূমিরূপ নদী। উদাহরণস্বরূপ কলরেডো, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের নাম বলা যেতে পারে। কলরেডো রকি পর্বতের এবং সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয় পর্বতের উজানের অনেক আগে থেকেই সেখানে প্রবাহমান ছিল।<ref name="apahelp">বাংলাদেশের নদীঃ মোকাররম হোসেন; পৃষ্ঠা ৩২, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৫৮, ৫৯, ৬১ ও ৬২ কথাপ্রকাশ; দ্বিতীয় সংস্করণঃ আগস্ট ২০১৪</ref>
ভূ-আন্দোলন যদি ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন তা গিরিজনিতে পর্যবাসিত হয়। এর ফলে নতুন নতুন পাহাড় পর্বতের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে এমন কিছুসংখ্যক বিরল নদী আছে, যারা উত্থিত পর্বতের শক্তিকে পর্যুদস্ত করে তাদের ক্ষয়কার্য অব্যাহত রেখেছে এবং পর্বতরাজির উত্থান সংঘটিত হবার পরও তাদের অস্তিত্ত বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ঐ সমস্ত নদীকে বলা হয় প্রাকভূমিরূপ নদী। উদাহরণস্বরূপ কলরেডো, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের নাম বলা যেতে পারে। কলরেডো রকি পর্বতের এবং সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয় পর্বতের উজানের অনেক আগে থেকেই সেখানে প্রবহমান ছিল।<ref name="apahelp">বাংলাদেশের নদীঃ মোকাররম হোসেন; পৃষ্ঠা ৩২, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৫৮, ৫৯, ৬১ ও ৬২ কথাপ্রকাশ; দ্বিতীয় সংস্করণঃ আগস্ট ২০১৪</ref>


== নদীর প্রকারভেদ ==
== নদীর প্রকারভেদ ==

০৯:৪১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

সুরমা নদী

নদী (সমার্থক শব্দ - তটিনী, তরঙ্গিনী, সরিৎ ইত্যাদি) সাধারণত মিষ্টি জলের একটি প্রাকৃতিক জলধারা যা ঝরনাধারা, বরফগলিত স্রোত অথবা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়ে প্রবাহ শেষে সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা অন্য কোন নদী বা জলাশয়ে পতিত হয় । মাঝে মাঝে অন্য কোন জলের উৎসের কাছে পৌঁছানোর আগেই নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে। নদীকে তার গঠন অনুযায়ী শাখানদী, উপনদী, প্রধান নদী, নদ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা যায়। আবার ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ছোট নদীকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রাচীন বাংলার অনেক শহর। সাধারণত নদীর নামকরণ করা হয়েছে মেয়েদের নামে। M.Moriswaএর মতে নদী হল খাতের মধ‍্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা।-River is a canal flow.

নদীর জন্ম ও তাত্ত্বিক ধারণা

গুয়াহাটির শুক্লেশ্বর ঘাট থেকে ব্ৰহ্মপুত্রের দৃশ্য

সাধারণত উঁচু ভূমি বা পাহাড় গিরিখাত থেকে সৃষ্ট ঝরণাধারা, বরফগলিত স্রোত কিংবা প্রাকৃতিক পরিবর্তন থেকে নদীর জন্ম। হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে তীব্র বেগে ধেয়ে আসা জলরাশিতে এক ধরনের প্রচন্ড গতি সঞ্চারিত হয়। ছুটে আসা এই দ্রুত গতিসম্পন্ন জলস্রোত স্থলভাগ অতিক্রম করার সময় নদী নামে পরিচিত হয়। নদী যখন পাহাড়ি এলাকায় প্রবাহিত হয় তখন তার যৌবনাবস্থা। এ সময় নদী ব্যাপক খননকাজ চালায় এবং উৎপত্তিস্থল থেকে নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি আহরণ করে অতি সহজে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে। নদী এভাবেই আবহমানকাল ধরে পৃথিবীপৃষ্ঠকে ক্ষয় করে চলেছে। তার এ কাজ শেষ হয় তখন, যখন সমস্ত নদী-অববাহিকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমভূমি বা প্রায় সমভূমি অঞ্চলে পরিণত হয়। উৎস থেকে মোহানা অবধি নদীর এই কাজকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়।

নদীর যৌবন অবস্থা

এ অবস্থায় নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় এবং বহন। সাধারণত পার্বত্য অবস্থাটিই নদীর যৌবনকাল। এ সময় নদী বড় বড় পাথর বহন করে নিয়ে আসে। এসব পাথরের ঘর্ষনে নদীর তলদেশ ক্ষয় পেয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়ক্রিয়ার ফলে গিরিখাত, ক্যানিয়ন এবং জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।

নদীর পরিপক্ক অবস্থা

এ অবস্থায় নদী একটু স্তিমিত হয়। ফলে নদীর বেগ ও বোঝা বয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। সাধারণত নদী মধ্যস্থানে বা উপত্যকায় প্রবেশ করলে এই পরিপক্ক বা প্রৌঢ় অবস্থা বোঝায়। এই অবস্থায় গিরিখাত, খরস্রোত, জলপ্রপাত প্রভৃতি আর দেখা যায় না। পাহাড়গুলো এবং তার মধ্যবর্তী জলবিভাজিকার উচ্চতাও আগের চেয়ে কম দেখা যায়।

নদীর বৃদ্ধাবস্থা

এই অবস্থায় নদীর ক্ষয় করার ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। তবে ভাঙার কাজ অল্পস্বল্প চলে। সাধারণত সমতল ভূমিতে নদীর এই অবস্থা হয়। এতে কোথাও কোথাও উঁচু ভূমি থাকতে পারে। এ সময় নদীর গতিমাত্রা এত কমে যায় যে, সামান্য বাধা পেলেই নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। নদী এই অংশে খুব এঁকেবেঁকে চলে। পথে পথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় নদী বর্ষাকালে প্রায়ই দু’কূলে বন্যার সৃষ্টি করে। নদীর পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বালি ও পলি দুই তীরে ছড়িয়ে পড়ে। নদীর বুকেও চর জাগে। তবে নদী সবসময় ঠিক এভাবে চলে না। মাঝে মাঝে ভূকম্পনের ফলে নদী আবার যৌবন পেতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণেও নদীর তীব্রতা ও গতি বাড়তে পারে।
ভূ-আন্দোলন যদি ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন তা গিরিজনিতে পর্যবাসিত হয়। এর ফলে নতুন নতুন পাহাড় পর্বতের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে এমন কিছুসংখ্যক বিরল নদী আছে, যারা উত্থিত পর্বতের শক্তিকে পর্যুদস্ত করে তাদের ক্ষয়কার্য অব্যাহত রেখেছে এবং পর্বতরাজির উত্থান সংঘটিত হবার পরও তাদের অস্তিত্ত বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ঐ সমস্ত নদীকে বলা হয় প্রাকভূমিরূপ নদী। উদাহরণস্বরূপ কলরেডো, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের নাম বলা যেতে পারে। কলরেডো রকি পর্বতের এবং সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয় পর্বতের উজানের অনেক আগে থেকেই সেখানে প্রবহমান ছিল।[১]

নদীর প্রকারভেদ

প্রধান নদী সাধারণত পাহাড় হতে সৃষ্ট ঝরণা, হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হয়, যেমন পদ্মা গঙ্গোত্রী হিমবাহ হতে উৎপন্ন হয়েছে। শাখানদী অন্য কোন নদী হতে উৎপন্ন হয়। যেমন বুড়িগঙ্গা ধলেশ্বরীর শাখা নদী। উপনদী সাধারণত অন্য নদীতে গিয়ে মেশে এবং প্রবাহ দান করে, যেমন আত্রাই নদী। কোন প্রধান নদী অন্য নদীর উপনদীও হতে পারে। আবার পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দের ভিত্তিতে এই জলস্রোতকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যে সকল জলস্রোতের নাম স্ত্রীবাচক তাদের নদী বলা হয়। এদের নাম দীর্ঘস্বর কারান্ত হয়। যেমনঃ মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, কুশিয়ারা ইত্যাদি। যে সকল জলস্রোতের নাম পুরুষবাচক তাদের বলা হয় নদ। এদের নাম হ্রস্বস্বর কারান্ত হয়। যেমনঃ কপোতাক্ষ, ব্রহ্মপুত্র, নীল নদ ইত্যাদি নদ। তবে এই নিয়ম সেসকল নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য,যাদের নাম পৌরাণিক।

নদীর ভৌগোলিক জ্ঞান ও গাণিতিক সূত্র

নদীর উৎসমূল সাধারণত একটি সু-উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল, যেখানে বরফগলা পানি ও বৃষ্টির পানি একটি ঢাল বেয়ে মাধ্যাকর্ষণজনিত প্রবল স্রোতস্বিনী সৃষ্টি করে। একাধিক ক্ষুদ্র জলধারার পর্যায়ক্রমিক সমন্বিত প্রক্রিয়াই পর্বতের গা ক্ষয় করে নদীনালার সৃষ্টি করে।
পর্যায়গুলো হচ্ছে (হোমস, ১৯৫১)
পাতপ্রবাহ-মিহিনালি-শিরানালি-গুহানালি-নদী উপত্যকা। কার্যত নদী উৎসমূলে ক্ষয়কার্য কয়েকটি নিয়ামক দ্বারা প্রবাহিত, যেমন-

E = F (S+,Q+,V+,R-); যখন-
E = ক্ষয়ক্রিয়ার মাত্রা
F = কার্যচিহ্ন
S = ভূমির ঢাল
Q = প্রবাহমান
V = প্রবাহগতি
R = বন্ধুরতা ও শিলাকাঠিন্য

সহজেই অনুমেয় যে একটি নদীর ধারা সৃষ্টির পেছনে ঐসব অনুকূল ও প্রতিকূল নিয়ামকের প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব অপরিহার্য। আবার নদীর প্রবাহগতি ও ক্ষয়ক্রিয়া পরস্পর আনুপাতিক কিন্তু প্রবাহগতিমাত্রা, অববাহিকার ঢাল ভূমিরূপের উপর নির্ভরশীল, যা ভূবিজ্ঞানী চেজি’র সমীকরণ অনুযায়ী নিম্নরূপ-
V = CVRS; যখন-
V = প্রবাহগতি
S = ভূমির ঢাল
R = ভূমি বন্ধুরতা ও শিলাকাঠিন্য
C = ধ্রুব সংখ্যা

যে কোন নদীর গঠনরূপ, পর্যায়, প্রকৃতি ও ক্রিয়াকান্ড নিয়তই বিবর্তনশীল। এ রূপান্তর পর্যায়গুলো ‘অর্গানিসমিক কনসেপ্ট’ অনুসারে একটি জীবন্ত প্রাণীর সাথে তুলনীয়। আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত নদীর তিনটি প্রধান পর্যায়-

তরুণ → পরিণত → বৃদ্ধ
ক্ষয়ভবন → পরিবহন → সঞ্চায়ন

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান নদীগুলোর উৎস হিমালয় পর্বত। বরফগলা পানি ও বৃষ্টির পানি প্রবলবেগে উত্তর থেকে দক্ষিণে সর্পিল গতিতে বইতে থাকে। এদের গন্তব্যস্থল বঙ্গোপসাগর।[১]

বাংলাদেশের নদ-নদী

বলা হয়ে থাকে হাজার নদীর দেশ বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশে ঠিক কত নদী আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে নেই। কোন নদী কোথা থেকে উৎপত্তি হয়ে কোথায় শেষ হয়েছে কিংবা একটি নদী আরেকটি নদীকে কোথায় অতিক্রম করেছে এসব যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ এখনো মানুষের অজানা। অনেক গবেষকদের মতে বাংলাদেশে উপনদী ও শাখানদীর মোট সংখ্যা ২২৫। তবে নদী, উপনদী ও শাখানদীর সর্বমোট সংখ্যা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যথেষ্ট মতদ্বৈততা আছে। একটি নদী থেকে অসংখ্য নদী সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোন কোন নদী থেকে খাল বা ছড়া উৎপন্ন হয়েছে। এগুলোও প্রাকৃতিক নদীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- কর্ণফুলী নদী। মোহনা থেকে কাপ্তাই বাঁধ পর্যন্ত এই নদীতে অন্তত ২৪-২৫টি ছোটবড় উপনদী এসে মিশেছে। এই হিসাব থেকে অনুমান করলে বাংলাদেশকে হাজার নদীর দেশ বলা যেতে পারে। যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালীতে রয়েছে অজস্র নদী। এসব নদীর নামকরণও ঠিকমত হয়নি। আবার কোন কোন নদীর বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন নাম। বাংলাদেশের প্রধান নদী পাঁচটি- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, পশুর ও কর্ণফুলী। এরপর আসে তিস্তা, গড়াই, মধুমতী, রুপসা, আড়িয়াল খাঁ, কুমার, আত্রাই, কীর্তনখোলা, বিষখালী ইত্যাদি নদ-নদীর নাম। এসব নদীর মধ্যে কোনটা বড় কোনটা ছোট বলা কঠিন। তবে অনুমান ও হিসাব কষে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৭০০ নদী আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।[১]

জীবন ও জীবিকায় নদীর ভূমিকা

নদীকে ঘিরেই বিশ্বের প্রতিটি শহর, বন্দর, গঞ্জ, বাজার প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। মালামাল পরিবহন ও যোগাযোগের সহজ উপায় হলো নৌকা। মালামাল পরিবহনে খুবই স্বল্প খরচে নৌকার জুড়ি মেলা ভার। যিনি নৌকা চালান তিনি মাঝি হিসেবে চিহ্নিত। একসময় নৌকায় পাল তোলা থাকত। সময়ের বিবর্তনে এর স্থান দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। মাঝ নদীতে জেলেরা উত্তাল তরঙ্গের সাথে যুদ্ধ করে মাছ আহরণ করে। নদী পাড়াপাড়ে ইজারাদার কর্তৃক কর হিসেবে অর্থ আদায় করতে দেখা যায়।

যানবাহন

নৌকা ও নদী - একে-অপরের পরিপূরক। নদীতে মূলত নৌকা চললেও লঞ্চ, স্টিমার, স্পীডবোট, ট্রলার ইত্যাদির দেখা পাওয়া যায়।

সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সঙ্গীতে নদী

বাংলা সাহিত্যে নদী গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তন্মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর পদ্মা নদীর মাঝি অন্যতম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সুজন-সখী’র গান হিসেবে ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলা নেব সখী’ - প্রেমের গানটি তৎকালীন সময়ে সকলের মুখে মুখে ছিল। সঙ্গীত জগতে ‘নদী’ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে। মান্নাদে’র এ নদী এমন নদী; জগজিৎ সিং এর ‘নদীতে তুফান এলে কুল ভেঙ্গে যায়, সহজেই তাকে দেখা যায়। মনেতে তুফান এলে বুক ভেঙ্গে যায় দেখানোর নেইজে উপায়!’পথিক নবীর আমার একটা নদী ছিল। কিংবা আরতী মুখোপাধ্যায়ের ‘নদীর যেমন ঝরনা আছে, ঝরনারও নদী আছে’ ইত্যাদি অমর সঙ্গীত হিসেবে টিকে থাকবে আজীবন। এছাড়াও, মোহনায় এসে নদী পিছনের পথটাকি ভুলতে পারে - গানটি বেশ জনপ্রিয়। এই যে নদী যায় সাগরে, কত কথা সুধাই তারে , ও নদী রে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, বল কোথায় তোমার দেশ,তমার নেইকো চলার শেষ , নদী যদি বলে সাগরের কাছে আসব না

তা কী হয় ইত্যাদি ।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশের নদীঃ মোকাররম হোসেন; পৃষ্ঠা ৩২, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৫৮, ৫৯, ৬১ ও ৬২ কথাপ্রকাশ; দ্বিতীয় সংস্করণঃ আগস্ট ২০১৪

অধিক পঠন

বহি:সংযোগ