ফারাজ আইয়াজ হোসেন
ফারাজ আইয়াজ হোসেন | |
---|---|
জন্ম | ১৫ এপ্রিল ১৯৯৬ |
মৃত্যু | ১ জুলাই ২০১৬ | (বয়স ২০)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
অন্যান্য নাম | ছোটু |
ফারাজ আইয়াজ হোসেন ছিলেন ২০ বছর বয়সী একজন বাংলাদেশী তরুণ যাকে ২০১৬ সালের জুলাই মাসের ঢাকা আক্রমনে হত্যা করা হয়।[১][২][৩][৪] তিনি লতিফুর রহমান, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং শাহনাজ রহমান এর নাতি ছিলেন। ফারাজের বাবা মোহাম্মদ ওয়াকার রহমান এবং মা সিমিন হোসেন যিনি এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বোর্ড অফ ডিরেক্টরের সদস্য হিসাবে কর্মরত আছেন। ফারাজরা দুই ভাই, যাদের মধ্যে ফারাজ-ই ছোটো। তার বড় ভাই-এর নাম জারাফ হোসেন। ফারাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াতে অবস্থিত এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং দূর্ঘটনার সময় তিনি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।[৫]
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]ফারাজ হোসেন তার স্কুল জীবন শুরু করেন তিন বছর বয়সে, স্যার জন উইলসন স্কুলে। সেখানে তিনি ক্লাস ২ পর্যন্ত পড়েন এবং সেখান থেকে চলে আসেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকাতে। এখান থেকে ২০১৪ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। লেখা পড়ায় কৃতীত্বের জন্য পঞ্চম শ্রেণীতে থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এডুকেশন এওয়ার্ড লাভ করেন।[৬]
স্বীকৃতি
[সম্পাদনা]মাদার তেরেসা পুরস্কার
[সম্পাদনা]ফারাজ আইয়াজ হোসেনকে মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দ্বারা ভূষিত করা হয়। [৭][৮][৯] ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় তার বীরত্বপূর্ণ আচরণের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ঐ দিন সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে, যদিও একজন বাংলাদেশী এবং মুসলিম হিসাবে তিনি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ছিলেন না। সন্ত্রাসীরা তাকে চলে যাওয়া সুযোগ দিয়েছিলো কিন্তু সে তার বন্ধুদের পরিত্যাগ করে একা চলে আসতে অস্বীকৃতি জানায়। [১০]
মরণোত্তর মাদার তেরেসা পুরস্কার দেয়ার ঘটনা এইবারই প্রথম। ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম মাথাই এই পুরস্কারটি তুলে দেন এবং ফারাজের পক্ষে তার বাবা-মা এটি গ্রহণ করেন। [১১][১২]
তিউনিসিয়ার ধার্মিকদের বাগান
[সম্পাদনা]১৫ জুলাই ২০১৬ইং তারিখে বিশ্বব্যাপী ধার্মিকদের বাগানে ফারাজ হোসেনকে সম্মান জানাতে তাকে উৎসর্গ করে একটি গাছ রোপণ করা হয়েছিল, যা তিউনিসে ইতালিয়ান দূতাবাসের ভেতরে অবস্থিত।[১৩][১৪] ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটি অলাভজনক মিলানভিত্তিক সংস্থা উক্ত গার্ডেনটি স্থাপন করে। উক্ত সংস্থাটি ধার্মিক মুসলিম ব্যক্তিদের জন্য নিবেদিত গাছ এবং স্মারক পাথরের আয়োজন করে যারা গণহত্যা বা গণহত্যার সময় মানুষের জীবন রক্ষা করেছিল এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
ফারাজ হোসেন সাহস পুরস্কার
[সম্পাদনা]পেপসিকো ২০১৬ সাল থেকে বার্ষিক "ফারাজ হোসেন সাহস পুরস্কার" চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিশ বছর ধরে প্রতি বছর প্রদান করা হবে।[১৫] এই পুরস্কারের উদ্দেশ্য হলো, ব্যক্তিদের সহমর্মিতার উদাহরণ স্থাপন করে বাংলাদেশী তরুণদের মধ্যে সাহসিকতার চেতনাকে উৎসাহিত করার জন্য ব্যতিক্রমী সাহসিকতার কাজগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া।[১৬][১৭][১৮]
জনপ্রিয়তা
[সম্পাদনা]২০১৬ সালের ১লা জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে মর্মান্তিক হামলায় মৃত্যুবরণ করে ফারাজ নামের এই তরুণ। ২০ বছর বয়সী ফারাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় অবস্থিত এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
দুর্ভাগ্যবশত ওইদিনের জঙ্গি হামলার ঘটনার সময় হলি আর্টিজান হোটেলেই অবস্থান করছিলেন ফারাজ। যদিও দেশীয় এবং মুসলিম থাকার কারণে দুর্বৃত্তরা তাকে পালিয়ে যাবার সুযোগ দিয়েছিলো তবে তার বিদেশীয় বন্ধুদের মৃত্যুর মুখে রেখে সে পালায়নি।এতে করে সবার মতো তাকেও মর্মান্তিক হত্যাজজ্ঞের পরিণতি বরণ করতে হয়।[১৯][২০]
ফারাজের জীবনের এই দুঃসাহসী এবং শহীদী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বলিউডে নির্মিত হচ্ছে সিনেমা। আর এ সিনেমার নামকরণও করা হয়েছে ‘ফারাজ’ নামে। বিষয়টি জানিয়েছে বলিউডের অন্যতম প্রযোজনা সংস্থা টি-সিরিজ। এটি নির্মাণ করছেন হংসল মেহতা[২১] এবং প্রযোজনায় রয়েছে অনুভব সিনহা ও ভূষণ কুমার। আর এতে ফারাজের চরিত্রে অভিনয় করবে কারিনা কাপুর খানের চাচাতো ভাই জাহান কাপুর।
এ প্রসঙ্গে কারিনা কাপুর লেখেন, "জাহান, বড় পর্দায় তোমাকে দেখার অপেক্ষা আর সহ্য হচ্ছে না। তোমাকে নিয়ে আমরা খুবই গর্বিত। এই ছবির গল্পটি বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। যে ঘটনায় নায়ক হয়ে ধরা দেয় ফারাজ। যে কি না নিজের জীবনের বিনিময়ে বন্ধুত্বের মান রেখে অসাধারণ এক মানবিক গুণের পরিচয় দেয়।[২২][২৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Latifur Rahman's grandson killed in Dhaka attack"। ২ জুলাই ২০১৬।
- ↑ "20 hostages killed in 'Isil' attack on Dhaka restaurant popular with foreigners"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ Rome, Saad Hammadi Rosie Scammell in; York, and Alan Yuhas in New (২০১৬-০৭-০৩)। "Dhaka cafe attack ends with 20 hostages among dead"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ CNN, Madison Park, Saeed Ahmed and Steve Visser। "Bangladesh mourns victims of cafe attack"। CNN। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ফারাজ বেঁচে আছে মানুষের হৃদয়ে"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Faraaz Hossain (২০১৭-০১-০৫), "Chotoo" - Faraaz Ayaaz Hossain (with English Subtitle), সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৬
- ↑ "About Events - Mother Teresa Memorial Awards" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে। Mother Teresa Memorial Awards (en-US ভাষায়)। সংগৃহীত ২০১৭-০১-০৫।"About Events - Mother Teresa Memorial Awards"। Mother Teresa Memorial Awards (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ "Faraaz named for Mother Teresa Award"। The Daily Star। ২০১৬-১১-০৮। সংগৃহীত ২০১৭-০১-০৫।"Faraaz named for Mother Teresa Award"। The Daily Star। ২০১৬-১১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ "Gulshan attack victim Faraaz honoured with Mother Teresa Award | Dhaka Tribune"। Dhaka Tribune (en-US ভাষায়)। ২০১৬-১১-২১। সংগৃহীত ২০১৭-০১-০৫।"Gulshan attack victim Faraaz honoured with Mother Teresa Award | Dhaka Tribune"। Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ "Mother Teresa award for Dhaka cafe attack victim"। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ "‘Faraaz is Bangladesh’ posters now define 20-yr-old who stood by his friends during Dhaka attack"। The Indian Express। ২০১৬-১১-২১। সংগৃহীত ২০১৭-০১-০৫।"'Faraaz is Bangladesh' posters now define 20-yr-old who stood by his friends during Dhaka attack"। The Indian Express। ২০১৬-১১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-০৫।
- ↑ "Gariwo: the gardens of the Righteous"। en.gariwo.net (en-US ভাষায়)। সংগৃহীত ২০১৭-০১-১১।"Gariwo: the gardens of the Righteous"। en.gariwo.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-১১।
- ↑ "Garden of the Righteous to be created in Tunis"। en.gariwo.net (ইতালীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭। zero width space character in
|শিরোনাম=
at position 1 (সাহায্য) - ↑ "Faraaz Hussein"। en.gariwo.net (ইতালীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ "Faraaz Hossain honored with social justice award"। news.emory.edu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ফারাজ বেঁচে আছে মানুষের হৃদয়ে"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Nov 20, Mohammed Wajihuddin / TNN / Updated:; 2016; Ist, 02:18। "'We have all joined the battle Faraaz has begun' | Mumbai News - Times of India"। The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ Correspondent, Staff (২০১৬-১২-০৭)। "Faraaz Hossain Courage Award ceremony today"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ "জঙ্গিদের রাইফেলের সামনে বাঁচল 'বন্ধুত্ব', প্রাণ গেল ফারাজের– News18 Bangla"। News18 Bengali। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ "Bollywood's Hansal Mehta announces next project 'Faraaz' on Holey Artisan massacre"। Dhaka Tribune। ২০২১-০৮-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ "Hansal Mehta reveals his next film titled Faraaz, watch its first look"। The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৮-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ ""Super Proud" Kareena Kapoor Shares Faraaz First Look With A Shout Out For Cousin Zahan Kapoor"। NDTV.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।
- ↑ "ঢাকার হলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে বলিউডে সিনেমা"। achalpatra.xyz (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৮-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৭।