নীলরতন ধর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নীলরতন ধর
নীলরতন ধর
জন্ম২ জানুয়ারি ১৮৯২
যশোর জেলা মনিরামপুর উপজেলা, হরিহর নগর ইউনিয়ন, ষোলখাদা গ্রাম (বর্তমান বাংলাদেশ বাংলাদেশ)
মৃত্যু৫ ডিসেম্বর ১৯৮৬
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৬৪ সাল পর্যন্ত)
(বাংলাদেশ
পেশাবিজ্ঞানী
পিতা-মাতা
  • প্রসন্নকুমার ধর (পিতা)
  • নিরোদমোহিনী দেবী (মাতা)
পরিবারপ্রেমচাঁদ ধর (পিতামহ)

নীলরতন ধর (২ জানুয়ারি ১৮৯২ — ৫ ডিসেম্বর ১৯৮৬) ছিলেন ভৌতরসায়ন ক্ষেত্রের একজন বাঙালি রসায়ন বিজ্ঞানী।[১]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

নীলরতন ধরের জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিহর নগর ইউনিয়নের যোলখাদা নামক গ্রামে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ২রা জানুয়ারি। পিতা আইনজীবী প্রসন্নকুমার ধর। পিতামহ প্রেমচাঁদ ধর। মাতা ছিলেন যশোরের ফতেপুর জমিদার কুঞ্জবিহারী ঘোষের কন্যা নিরোদমোহিনী দেবী। পিতা স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। প্রসন্নকুমারের ছয় পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে নীলরতন ছিলেন তৃতীয়। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে পাঁচ বৎসর বয়সে স্থানীয় সরকারি জেলা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হয়। নীলরতন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বস্তরেই প্রথম। এম.এসসি. তে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগ মিলিয়ে সর্বোচ্চ রেকর্ড নম্বর পেয়ে কুড়িটি স্বর্ণ পদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও এশিয়াটিক সোসাইটি প্রদত্ত পুরস্কার লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এসসি পড়ার সময়ই আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র ও আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসুর অধীনে গবেষণায় রত হন।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে নীলরতন ধর

১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে স্টেট স্কলারশিপ পেয়ে বিলেত যান। সেখানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে এবং প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ডি.এসসি উপাধি লাভ করেন।

শিক্ষকতা ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন হতে ফিরে আই.ই.এস নির্বাচিত হয়ে এলাহাবাদ ম্যুর সেন্ট্রাল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসাবে যোগ দেন। তার জীবনের বিখ্যাত কাজ Induced and photochemical reaction. আজীবন গবেষণার কাজে লিপ্ত থেকেছেন। ৯৪ বৎসর বয়সেও তার প্রিয় বিষয় Nitrogen Fixation নিয়ে গবেষণায় রত ছিলেন। তার মৌলিক গবেষণা পত্রের সংখ্যা ছয় শতেরও বেশি। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডক্টরেট এবং এস.এ. হিল ও জি. হিল স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল পুরস্কার কমিটিতে ১৯৩৮, ১৯৪৭ ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন বিভাগে বিচারক ছিলেন। ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।[২]

বিজ্ঞানের প্রসারে অবদান[সম্পাদনা]

এলাহাবাদে ইণ্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্স এর বাড়িটির জন্য তিনি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় পরে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে নীলরতন ধরের প্রথমা স্ত্রী বিজ্ঞানী শীলা ধরের মৃত্যুর পর তার নামাঙ্কিত করে। অত্যন্ত মিতব্যয়ী জীবনযাপন করতেন। বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বহু অর্থ দান কলেছেন। আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের নামে অধ্যাপক পদ ও আচার্য্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে লেকচারার পদ সৃষ্টি জন্য ১ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। চিত্তরঞ্জন সেবাসদনকে ১ লক্ষ টাকা এবং এ ছাড়া তার ৭ বছরের সম্পূর্ণ বেতন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেছেন। ভারত সরকার তাঁকে 'পদ্মশ্রী' খেতাব দিতে চাইলে তিনি তা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেন।[৩]

রচিত গ্রন্থসমূহ[সম্পাদনা]

  • আমাদের খাদ্য
  • জমির উর্বরতা বৃদ্ধির উপায়
  • নিউ কনসেপশন ইন বায়ো-কেমিস্ট্রি
  • ইনফ্লুয়েন্স অফ লাইট ইন সাম বায়ো-কেমিক্যাল প্রসেসেস

মৃত্যু[সম্পাদনা]

নীলরতন ধর ৯৪ বৎসর বয়সে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (দ্বিতীয় খণ্ড) চতুর্থ সংস্করণ তৃতীয় মুদ্রণ। আইএসবিএন  ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. news, magpie (২০১৯-০২-০৬)। "নীল রতন, জীবন রতনসহ উপমহাদেশের ছয় রত্নের জন্মস্থানের শেষ স্মৃতিটুকুও আজ বিলিন প্রায়"magpienews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১০ 
  3. "নীলরতন ধর / Nilratan Dhar (1892-1985) - Jessore, Jhenaidah, Magura, Narail"www.jessore.info। ২০২১-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১০