চখাচখি
চখাচখি Tadorna ferruginea | |
---|---|
জোড়া | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | আন্সেরিফর্মিস |
পরিবার: | Anatidae |
উপপরিবার: | Tadorninae |
গণ: | Tadorna |
প্রজাতি: | T. ferruginea |
দ্বিপদী নাম | |
Tadorna ferruginea (পালাস, ১৭৬৪) | |
Range of T. ferruginea (Compiled by: BirdLife International and Handbook of the Birds of the World (2016) 2014.) Breeding Resident Non-breeding | |
প্রতিশব্দ | |
Casarca ferruginea |
চখাচখি (বৈজ্ঞানিক নাম: Tadorna ferruginea) (ইংরেজি: Ruddy Shelduck), চকাচকি বা খয়রা চখাচখি Anatidae (অ্যানাটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Tadorna (টাডোর্না) গণের এক প্রজাতির দারুচিনি রঙের বড় আকারের হাঁস।[১][২] চখাচখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মরচে-রঙ চখাচখি (ফরাসি tador = চখাচখি; ল্যাটিন ferrugineus = মরচে-রঙ)।[২] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৮৪ লাখ ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৩] গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছায় নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যুনতম বিপদযুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৪] শীতে বাংলাদেশে এরা পরিযায়ী হয়ে আসে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২] সমগ্র পৃথিবীতে আনুমানিক ১লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার চখাচখি রয়েছে।[৩] চখাচখি বলতে আসলে একটিমাত্র হাঁসকে বোঝায় না, বরং এক জোড়া হাঁসকে বোঝায়। জোড়ার পুরুষ হাঁসটিকে চখা আর স্ত্রী হাঁসটিকে চখি নামে ডাকা হয়। চখাচখি সবসময় জোড়ায় জোড়ায় থাকে আর জোড়ের বন্ধন খুব শক্ত। একারণেই এদের এমন নাম।
চখাচখি নামটির ব্যুৎপত্তি এর সংস্কৃত নাম : চক্রবাক ও চক্রবাকী।
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার উত্তর ও দক্ষিণাংশে চখাচখি দেখা যায়। বিশ্বের অনেক দেশে এরা পরিযায়ী হয়ে আসে। এশিয়ায় তুরস্ক থেকে জাপান পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি।[৪] শীতকালে বাংলাদেশের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের হাওর ও নদনদীতে এদের দেখা যায়।[২]
বিবরণ
[সম্পাদনা]চখাচখি বেশ বড় আকারের হাঁস। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৬৪ সেন্টিমিটার, ডানা ৩৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৪.৩ সেন্টিমিটার, পা ৬ সেন্টিমিটার ও লেজ ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় দেড় কিলোগ্রাম।[২] চখা ও চখির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। চখা কমলা-বাদামি থেকে দারুচিনি বর্ণের। মাথা ও ঘাড় হালকা বাদামি। ডানায় ধাতব-সবুজ পতাকা ও সাদা ঢাকনি-পালক থাকে। প্রান্ত-পালক ও লেজ কালো। প্রজনন মৌসুমে চখার গলায় সরু কালো বলয় হয়। চখি চখার চেয়ে আকারে সামান্য ছোট। চখির মাথা ফিকে রঙের, গলায় বলয় হয় না। চখাচখি উভয়ের চোখ বাদামি; ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস দেখতে চখির মত, তবে ডানার গোড়ার পালক ও ঢাকনি-পালক ধূসর বর্ণের।[১][২]
স্বভাব
[সম্পাদনা]চখাচখি পলিময় উপকূল, হ্রদ, বড় নদীর চর ও হাওড়ে বিচরণ করে, ঘন ঘাস বা ঝোপসম্বৃদ্ধ জলাশয় এড়িয়ে চলে। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। তবে শীতকালে ছোট ছোট ঝাঁকে বিচরণ করে। এরা প্রধানত নিশাচর। তবে ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলা সক্রিয় থাকে বেশি। এরা কখনও হাঁসের মত নরম কাদামাটিতে আবার কখনও রাজহাঁসের মত আর্দ্র তৃণভূমিতে খাবার খুঁজে বেড়ায়। চখাচখি সর্বভূক; এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে শস্যদানা, অঙ্কুরিত উদ্ভিদ, নরম পাতা, চিংড়ি ও কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী, শামুক, জলজ পোকামাকড়, কেঁচো, ব্যাঙ, সরীসৃপ ইত্যাদি। সাঁতার কাটার সময় এদের শরীরের সামনের দিকের অনেকাংশ পানিতে ডুবে থাকে। প্রজনন মৌসুমের পর প্রায় এক মাস যাবৎ এরা উড়তে পারে না। এসময় তাদের শরীরের সমস্ত পালক পরিবর্তিত হয়। ভয় পেলে এরা উচ্চস্বরে ডাকে: আঙক্-আঙক্। ওড়ার সময় হর্নের মত শব্দ করে ডাকে: আআখ...., অথবা ট্রাম্পেট বাজানোর শব্দ: পক-পক-পক-পক।[২]
প্রজনন
[সম্পাদনা]মে-জুন মাস এদের প্রজননকাল। এ সময় তিব্বত ও উত্তর এশিয়ার অন্যান্য অংশে এদের প্রজনন ঘটে। উঁচু মালভূমির মধ্যে যে সব বাদা আর জলাভূমি আছে, তার পাশে মাটির গর্তে পালক দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গজদন্তের মত সাদা হয়। ডিমগুলো সংখ্যায় ৬-১০টি হয়। ডিমের মাপ ৬.৫ × ৪.৫ সেন্টিমিটার। চখি একাই ডিমে তা দেয়। এ সময় চখা বাসা পাহারা দেয়। ২৮-৩০ দিনে ডিম ফোটে।[২] ছানারা প্রায় ৫৫ দিনে উড়তে শেখে। দুই বছর বয়সে তারা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।[৫]
অস্তিত্বের সংকট
[সম্পাদনা]আবাসন ধ্বংস, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দূষণ, বার্ড ফ্লু ইত্যাদি নানা কারণে চখাচখির অস্তিত্ব বিশ্বব্যাপী হুমকির সম্মুখীন। মাংসের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক হারে চখাচখি শিকার করা হয়।[৫]
-
চখা
-
চখি
-
একদল চখাচখি, ভরতপুর, ভারত
-
চখাচখি পরিবার
-
উড়ন্ত চখাচখি
-
১৯৮৯ সালে প্রকাশিত সোভিয়েত ইউনিয়নের ডাকটিকিট
-
১৯০১ সালে অঙ্কিত চিত্র
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ১২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ১৭।
- ↑ ক খ Tadorna ferruginea ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ অক্টোবর ২০১২ তারিখে, BirdLife International এ চখাচখি বিষয়ক পাতা।
- ↑ ক খ Tadorna ferruginea[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ চখাচখি বিষয়ক পাতা।
- ↑ ক খ Ruddy shelduck ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে, ARKive এ চখাচখি বিষয়ক পাতা।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- চখাচখি বিষয়ক আরও তথ্য, World Association of Zoos and Aquariums (WAZA)
- The Internet Bird Collection ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে, চখাচখির আলোকচিত্র, ভিডিও ও ডাক।
- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- মধ্য এশিয়ার পাখি
- পরিযায়ী পাখি
- জলচর পাখি
- এশিয়ার পাখি
- আফ্রিকার পাখি
- ইউরোপের পাখি
- আফগানিস্তানের পাখি
- ভারতের পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- পাকিস্তানের পাখি
- নেপালের পাখি
- ভুটানের পাখি
- শ্রীলঙ্কার পাখি
- থাইল্যান্ডের পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- চীনের পাখি
- জাপানের পাখি
- হংকংয়ের পাখি
- মঙ্গোলিয়ার পাখি
- উত্তর কোরিয়ার পাখি
- দক্ষিণ কোরিয়ার পাখি
- বুলগেরিয়ার পাখি
- সাইপ্রাসের পাখি
- অস্ট্রিয়ার পাখি
- ডেনমার্কের পাখি
- মিশরের পাখি
- ইথিওপিয়ার পাখি
- ইরিত্রিয়ার পাখি
- রাশিয়ার পাখি
- বেলারুশের পাখি
- গ্রিসের পাখি
- ইরাকের পাখি
- ইরানের পাখি
- ইসরাইলের পাখি
- সুইডেনের পাখি
- সুইজারল্যান্ডের পাখি
- ফিনল্যান্ডের পাখি
- গ্রিনল্যান্ডের পাখি
- আইসল্যান্ডের পাখি
- হাঙ্গেরির পাখি
- ফ্রান্সের পাখি
- জার্মানির পাখি
- স্পেনের পাখি
- ইতালির পাখি
- রুমানিয়ার পাখি
- চেক প্রজাতন্ত্রের পাখি
- বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার পাখি
- ক্রোয়েশিয়ার পাখি
- বেলজিয়ামের পাখি
- আলবেনিয়ার পাখি
- কুয়েতের পাখি
- কাজাখস্তানের পাখি
- কিরগিজস্তানের পাখি
- উজবেকিস্তানের পাখি
- আর্মেনিয়ার পাখি
- আজারবাইজানের পাখি
- ওমানের পাখি
- বাহরাইনের পাখি
- কাতারের পাখি
- সৌদি আরবের পাখি
- সুদানের পাখি
- দক্ষিণ সুদানের পাখি
- আলজেরিয়ার পাখি
- তিউনিসিয়ার পাখি
- তুরস্কের পাখি
- লাওসের পাখি
- ইউক্রেনের পাখি
- মরক্কোর পাখি
- পশ্চিম সাহারার পাখি
- তুর্কমেনিস্তানের পাখি
- মলদোভার পাখি
- জর্ডানের পাখি
- লেবাননের পাখি
- মেসিডোনিয়ার পাখি
- লিশটেনস্টাইনের পাখি
- মন্টিনিগ্রোর পাখি
- নেদারল্যান্ডসের পাখি
- নরওয়ের পাখি
- পোল্যান্ডের পাখি
- পর্তুগালের পাখি
- ফিলিস্তিনের পাখি
- সার্বিয়ার পাখি
- সিশেলেসের পাখি
- স্লোভাকিয়ার পাখি
- স্লোভেনিয়ার পাখি
- ইয়েমেনের পাখি
- যুক্তরাজ্যের পাখি
- টাডোর্না
- ১৭৬৪-এ বর্ণিত পাখি
- পিটার সিমোন পালাস কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা
- তিব্বতের পাখি