উদ্ভিদভূগোল
উদ্ভিদভূগোল (ফাইটোজিওগ্রাফি) (গ্রিক φυτόν, ফাইটন = "উদ্ভিদ" এবং γεωγραφία, জিওগ্রাফিয়া = "ভূগোল" এছাড়াও বণ্টন অর্থে ব্যবহৃত হয়, থেকে আগত) বা বোটানিক্যাল ভূগোল জৈব-ভূগোলের একটি শাখা যা উদ্ভিদ প্রজাতিসমূহের ভৌগোলিক বণ্টন এবং ভূ-পৃষ্ঠে তার প্রভাবের সাথে সংশ্লিষ্ট। ফাইটোজিওগ্রাফি উদ্ভিদসমূহকে পৃথক প্রজাতিতে বিভক্তকরণ (বড় এবং ছোট উভয় পরিসরেই; এজন্য প্রজাত্যায়ন দেখুন) থেকে শুরু করে সমগ্র উদ্ভিদকুলের শ্রেনিবিন্যাস নিয়ন্ত্রণের সবকিছুর সাথেই সংশ্লিষ্ট। অন্যদিকে জিওবোটানি বা ভূ-উদ্ভিদতত্ত্ব নামক জীববিজ্ঞানের শাখাটি উদ্ভিদের উপর ভৌগোলিক স্থানের প্রভাবকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে।
ক্ষেত্রসমূহ
[সম্পাদনা]ফাইটোজিওগ্রাফি মূলত সাধারণ জীববিজ্ঞানের একটি অংশ যা বায়োজিওগ্রাফি তথা জীবভূগোল হিসেবে পরিচিত, তারই একটি শাখা। ফাইটোজিওগ্রাফারস তথা উদ্ভিদভূগোলবিদরা উদ্ভিদ সংস্থানের প্যাটার্ন এবং প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন। এসকল ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত বেশিরভাগ প্রধান প্রধান প্রশ্ন এবং তার ধরন ও দৃষ্টিভঙ্গির উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্ভিদ- এবং প্রানি-ভূগোলবিদদের মধ্যে মিল লক্ষ্য করা যায়।
বৃহত্তর অর্থে ফাইটোজিওগ্রাফি (বা জিওবোটানি, জার্মান সাহিত্যে) চারটি ক্ষেত্রকে ধারণ করে। দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবেশ, ফ্লোরা (উদ্ভিদকুল), ভেজিটেশন (গাছপালার গোষ্ঠী) এবং উৎস অনুসারে এগুলো হল যথাক্রমে:[১][২][৩][৪]
- উদ্ভিদ বাস্তুশাস্ত্র (বা মেসোলজি - তবে উদ্ভিদ এবং বায়োম অনুসারে শারীরবৃত্তীয়-বাস্তুসংস্থান পদ্ধতিও সাধারণত এই ক্ষেত্রটির সাথে যুক্ত)
- উদ্ভিদ ভূগোল (বা আরো ব্যাপক অর্থে ফাইটোজোগ্রাফি, কোরোলজি, ফ্লরিস্টিক্স)
- উদ্ভিদ সমাজবিজ্ঞান (অথবা ফাইটোসোশিওলজি, সাইনেকোলজি - তবে, এই ক্ষেত্রটি উদ্ভিদকুল গবেষণা থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় না, যেহেতু এটির মৌলিক উদ্দেশ্য গাছপালা অধ্যয়ন, এবং সেই পদ্ধতিরই একটি একক হল উদ্ভিদ সমিতি, যার ভিত্তিতে ফ্লোরাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়)
- ঐতিহাসিক উদ্ভিদ ভূগোল (বা প্যালিওবোটানি, প্যালিওজিওবোটানি)
ফাইটোজিওগ্রাফি মূলত দুটি প্রধান শাখায় বিভক্তঃ বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত ফাইটোজিওগ্রাফি এবং ঐতিহাসিক ফাইটোজিওগ্রাফি। প্রথমটি উদ্ভিদ সংস্থানকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান দিনের জৈব এবং অজৈব মিথস্ক্রিয়ার ভূমিকার প্রতি গুরুত্বারোপ করে; পরেরটি ট্যাক্সার (শ্রেণিবিন্যাসের একক) ঐতিহাসিক পুনর্গঠন, ছত্রভঙ্গ এবং বিলুপ্তির সাথে সম্পর্কিত।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
[সম্পাদনা]ফাইটোজিওগ্রাফির প্রাথমিক উপাত্ত উপাদানগুলি হল রাজনৈতিক একক বা ভৌগোলিক স্থানাঙ্কের মতো কার্যকরী ভৌগোলিক এককগুলি থেকে উপস্থিতি সংগ্রহ (কোনও প্রজাতির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুযায়ী)। এই উপাত্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদ্ভিদভূগোলীয় বা ফাইটোজিওগ্রাফিক রাজ্য (উদ্ভিদ রাজ্য) এবং উপাদান তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
ফাইটোজিওগ্রাফিতে প্রশ্ন ও পন্থাগুলি মূলত প্রাণিভূগোলের সাথে ভাগ করে নেয়া হয়, যদিও প্রাণিভূগোল উদ্ভিদ সংস্থানের পরিবর্তে প্রাণী সংস্থানের সাথে অধিক সম্পর্কিত। ফাইটোজিওগ্রাফি শব্দটি নিজেই একটি বিস্তৃত অর্থ প্রস্তাব করে। বিজ্ঞানীরা শব্দটি কীভাবে প্রয়োগ করেন এবং তার সাথে বিজ্ঞান সাময়িকীগুলো শব্দটি যেভাবে ব্যবহার করে তার মধ্যে সুস্পষ্ট মিল রয়েছে। আমেরিকান জার্নাল অব বোটানি, একটি মাসিক প্রাথমিক গবেষণা জার্নাল, প্রায়শই "সিস্টেম্যাটিক্স, ফাইটোজিওগ্রাফি এবং বিবর্তন" শীর্ষক একটি বিভাগ প্রকাশ করে।আমেরিকান জার্নালের উদ্ভিদবিজ্ঞান এর "সিস্টেমেটিক্স এবং ফাইটোজিওগ্রাফি" বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে ফাইলোজিওগ্রাফি, জিনগত প্রকরণ সংস্থান, ঐতিহাসিক জৈব-ভূগোল এবং সাধারণ উদ্ভিদ প্রজাতির সংস্থানের প্যাটার্ন উল্লেখযোগ্য। জীববৈচিত্র্যের প্যাটার্নগুলো তেমনভাবে প্রকাশ করা হয় না। একটি ফ্লোরা বা উদ্ভিদকুল হল একটি নির্দিষ্ট স্থান বা নির্দিষ্ট সময়কালে সমস্ত উদ্ভিদ প্রজাতির একটি সম্মিলিত গোষ্ঠী, যেখানে প্রতিটি প্রজাতি ব্যাপকভাবে অন্যান্য প্রজাতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই গোষ্ঠী তথা ফ্লোরা সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে যেমন উদ্ভিদের উপাদান অনুসারে তৈরি হতে পারে। সেই উপাদানটি হতে পারে একটি জেনেটিক উপাদান, সেক্ষেত্রে প্রজাতিগুলো একই রকম জিনগত তথ্য ভাগ করে। যেমনঃ (ক) সাধারণ বিবর্তনীয় উৎস; সাধারণত একটি স্থানের সকল উদ্ভিদের একটি সাধারণ মাইগ্রেশন উপাদান থাকে, তাদের ঐতিহাসিক উপাদানগুলোও প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ কেননা নিকট অতীতে সকল উদ্ভিদ একই ঘটনার মধ্যে দিয়ে গেছে এবং তাদের পরিবেশগত ফ্যাক্টরগুলোর উপর ভিত্তি করে বাস্তুসংস্থানসংক্রান্ত উপাদানগুলোও সাদৃশ্যপূর্ণ। একটি পপুলেশন (জনসংখ্যা) হল কোন অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রজাতির সমস্ত আন্তঃসম্পর্কিত সংগ্রহ।
একটি অঞ্চল হল সেই সম্পূর্ণ অবস্থান যেখানে একটি প্রজাতি, একটি উপাদান বা একটি সম্পূর্ণ উদ্ভিদকুল উপস্থিত থাকতে পারে। এরিওগ্রাফি সেইসকল অঞ্চলের বর্ণনা গবেষণা করে, কোরোলজি তাদের বিকাশ নিয়ে চর্চা করে। আর ভূসংস্থান বা ট্রপোলজি হল সামগ্রিকভাবে সেই অঞ্চলকে বিভিন্ন স্থানীয় এলাকায় বিভক্তিকরণ। যেমন হতে পারে সেটি কোন জলাবদ্ধ ঝোপঝাড়। অঞ্চল এক্ষেত্রে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি প্রজাতিগুলির মিথস্ক্রিয়া তাদের ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। কোনও অঞ্চলের সীমারেখাসমূহ, বিভিন্ন যুগে সেগুলোর ধারাবাহিকতা, অন্যান্য নিকটস্থ স্থানগুলির তুলনায় তার সাধারণ আকার-আকৃতি কেমন প্রভৃতি তথ্য সংগ্রহ একটি অঞ্চল সম্পর্কে জানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হল এমন একটি অঞ্চল যা অনেক একচেটিয়া এবং আগেই যথেষ্ট বিস্তৃতি লাভ করেছে এমন ঘটনা থেকে মুক্ত। পারস্পরিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত উদ্ভিদসমূহকে ভিকারিয়াস বলা হয় (এ জাতীয় গাছগুলিকে ধারণ করে এমন অঞ্চলগুলিকেও ভিকারিয়াস বলা হয়)। পৃথিবীর পৃষ্ঠ বেশ কয়েকটি ফ্লোরিস্টিক রিজিয়ন বা উদ্ভিদীয় অঞ্চলে বিভক্ত, প্রতিটি অঞ্চল এক একটি পৃথক ফ্লোরা বা উদ্ভিদকুলের ধারক।[৫]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ফাইটোজিওগ্রাফির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রথম দিকে এর অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন প্রুশিয়ান প্রকৃতিবিদ আলেকজান্ডার ভন হাম্বোল্ট, যাকে প্রায়শই "ফাইটোজোগ্রাফির জনক" হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভন হাম্বল্ট ফাইটোজিওগ্রাফির একটি পরিমাণগত পদ্ধতির পক্ষে ছিলেন যা আধুনিক উদ্ভিদ ভূগোলকে নির্দেশ করে।
উদ্ভিদভূগোল নিয়ে অধ্যয়নের প্রথম দিকে উদ্ভিদ সংস্থানের সামগ্রিক নিদর্শনগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক নির্বাচনের নীতিটির সহ-আবিষ্কারক আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস প্রজাতির বৈচিত্র্যে অক্ষীয় নতিমাত্রা (পরবর্তী অনুচ্ছেদে দেখুন) নিয়ে আলোচনা করেছিলেন যা অন্যান্য জীবের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। তখন থেকে উদ্ভিদ ভূগোলের অনেক গবেষণাতেই এই প্যাটার্নটি বোঝার জন্য এবং এটি আরও বিশদভাবে বর্ণনা করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
১৮৯০ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস একটি আইন পাস করে যেটিতে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভিদের (এবং প্রাণীর) ভৌগোলিক বৈচিত্র্য আবিষ্কারের জন্য অভিযান প্রেরণের জন্য তহবিল বরাদ্দ করেছিল। এর মধ্যে প্রথম অভিযানটি ছিল ফ্রেডরিক ভার্নন কোভিল, ফ্রেডরিক ফানস্টন, ক্লিনটন হার্ট মেরিয়াম এবং অন্যান্যদের নিয়ে পরিচালিত দ্য ডেথ ভ্যালি অভিযান।[৬]
উদ্ভিদ ভূগোলের অধীনে পরিবেশের সাথে প্রজাতির অভিযোজনের ধরণগুলি বোঝার জন্যও বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। প্রধানত বৈশিষ্ট্য/পরিবেশ সম্পর্কের ভিত্তিতে ভৌগোলিক প্যাটার্নগুলি বর্ণনা করে সেগুলো করা হয়। ফাইটোজিওগ্রাফি ব্যতীত অন্য কোন বিভাগকে উপস্থাপন করে উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে এই প্যাটার্নগুলিকে ইকোজিওগ্রাফিকাল নিয়ম হিসেবে অভিহিত করা হয়। সম্প্রতি, ম্যাক্রোইকোলজি নামে পরিচিত একটি নতুন শাখার উদ্ভব ঘটেছে, যা বাস্তুবিদ্যার বিস্তৃত স্কেল (সময় এবং স্থান উভয় ক্ষেত্রে) প্যাটার্ন এবং ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে কাজ করে। ম্যাক্রোইকোলজি গাছপালা সহ অন্যান্য জীবের উপর সমান গুরুত্ব প্রদান করে।
অক্ষীয় নতিমাত্রায় উদ্ভিদভূগোল
[সম্পাদনা]জলবায়ু ও ভৌম (মৃত্তিকাসংক্রান্ত) কারণসমূহ উদ্ভিদবিস্তারকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ভূতাত্ত্বিককালের বিবর্তন হবার সাথে সাথে পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থানের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সৃষ্টির পর থেকে উদ্ভিদকুল বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক কালপর্বে নতুন নতুন স্থানে বিস্তার লাভ করেছে, পেয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আবাসস্থল। সেসব আবাসস্থলে আজও উদ্ভিদসমূহ বর্তমান রয়েছে। পৃথিবীর সমগ্র উদ্ভিদকুলের অবস্থানকে তিনটি প্রধান অক্ষাংশ-অঞ্চলে চিহ্নিত করা যায়। এগুলো হলোঃ
- মেরুমন্ডল
- উষ্ণমন্ডল
- নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল
জলবায়ু ও ভূমির উচ্চতার প্রেক্ষিতে অক্ষাংশসহ এসব অঞ্চলকে আবার বিভিন্ন উপমন্ডলে বিভক্ত করা যায়। যথাঃ
- নিরক্ষীয় (Equatorial Zone)
- ক্রান্তীয় (Tropical Zone)
- উপক্রান্তীয় (Sub-tropical Zone)
- উষ্ণ-নাতিশীতোষ্ণ (Warm-temperate Zone)
- শীতল-নাতিশীতোষ্ণ (Cold-temperate Zone)
- মেরুমন্ডলীয় (Frigid Zone)
উদ্ভিদকুলাঞ্চল
[সম্পাদনা]ফ্লোরিস্টিক্স তথা উদ্ভিদকুলাঞ্চল হল কিছু অঞ্চলের উদ্ভিদকুলের গবেষণা। প্রচলিত ফাইটোজিওগ্রাফি মূলত ফ্লোরিস্টিক্স তথা উদ্ভিদকুলাঞ্চল এবং উদ্ভিদকুলগত শ্রেণিবিন্যাস তথা ফ্লোরিস্টিক্স শ্রেণিবিন্যাসের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করে।
চীন তার সমৃদ্ধ জীবজগতের জন্য উদ্ভিদবিদদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে যেহেতু এই দেশটি প্রাচীনতম অ্যানজিওস্পার্ম মেগাফসিলের সংগ্রহ ধারণ করছে।[৭]
উদ্ভিদকুলগত শ্রেণিবিন্যাস
[সম্পাদনা]উদ্ভিদকুলগত শ্রেণিবিন্যাস তথা ফ্লোরিস্টিক্স শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী পৃথিবীর ভূভাগ মোট ৩৭টি অঞ্চলে বিভক্ত হলেও এগুলো মূলত ৬ টি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত। অঞ্চলগুলো যথাক্রমে:
- উপ-সুমেরীয় (boreal/ holarktis) বর্গ
- পুরাক্রান্তীয় (paleotropic) বর্গ
- নবক্রান্তীয় (neotropic) বর্গ
- অস্ট্রেলীয় (australis) বর্গ
- দক্ষিণ-আফ্রিকীয় (capensis) বর্গ
- কুমেরু (antarktis) বর্গ
বাংলাদেশের অবস্থান
[সম্পাদনা]ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশ মূলত নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্ভুক্ত। দেশটির মূল ভূখণ্ড বঙ্গোপসাগর কর্তৃক গঠিত চাপের চূড়ায় অবস্থিত। স্থানটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারত - দুই উপমহাদেশের মধ্যবর্তী স্থলে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ একটি অঞ্চল। উদ্ভিদকুলগত দিক থেকে বিবেচনা করলেও বাংলাদেশ দুটি অপেক্ষাকৃত বৃহৎ অঞ্চলের সন্ধিস্থলে রয়েছে। যথা - ভারতীয় অঞ্চল (পশ্চিমে ) এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চল (পূর্বদিকে)। তাছাড়া বাংলাদেশ চীনা-জাপানী অঞ্চলের পশ্চিম দিকের সাথেও ঘনিষ্ঠ। সেকারণে এখানে কতিপয় বৃহৎ উদ্ভিদকুলগত অঞ্চলের সংমিশ্রণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।
ভূতাত্ত্বিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ বঙ্গীয় অববাহিকা বা Bengal Basin থেকে উত্থিত এবং রাজমহল, হিমালয় ও মেঘালয় অধিত্যকার মধ্যস্থলে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ। ধারণা করা হয় যে বঙ্গীয় অববাহিকা অন্ত্য-প্লাইওমিস কালে (৭০ লক্ষ - ২.৫ কোটি বছর পূর্বে) উত্থিত হওয়া শুরু হয় এবং প্লাইস্টোসিন কালে (১০ লক্ষ - ১.২ কোটি বছর পূর্বে) সম্পূর্ণ হয়। শিবালিক আন্দোলনের পর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ চীন-জাপানী উদ্ভিদকুলগত অঞ্চলের পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু হয় এবং বেশ কিছু সংখ্যক উপনদী ও স্বয়ং ব্রহ্মপুত্র নদের দূরবর্তী উচ্চভূমির উদ্ভিদসম্ভারের কতকটা বয়ে নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশে সেগুলির গোড়াপত্তন ঘটে। ফলে এখানে তিনটি বৃহদাকার উদ্ভিদকুলাঞ্চলের অজস্র বৈচিত্র্যের সংমিশ্রণ ঘটেছে। আয়তনে পৃথিবীর প্রায় ০.০১ শতাংশ হলেও কেবল বাংলাদেশেই রয়েছে গোটা বিশ্বের সমগ্র নালিকাধর (vascular) উদ্ভিদসমূহের প্রায় ১.৫ শতাংশ।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Rizzini, Carlos Toledo (১৯৯৭)। Tratado de fitogeografia do Brasil: aspectos ecológicos, sociológicos e florísticos (Portuguese ভাষায়) (2 সংস্করণ)। Âmbito Cultural Edições। পৃষ্ঠা 7–11।
- ↑ Mueller-Dombois, Dieter; Ellenberg, Heinz (আগস্ট ১৯৭৪)। Aims and Methods of Vegetation Ecology। John Wiley and Sons। আইএসবিএন 1-930665-73-3। See Mueller-Dombois (2001), p. 567, .
- ↑ Pott, Richard (২০০৫)। Allgemeine Geobotanik: Biogeosysteme und Biodiversität (German ভাষায়)। Springer Spektrum। পৃষ্ঠা 13। আইএসবিএন 978-3540230588।
- ↑ Vulf, E. V. (১৯৪৩)। An Introduction to Historical Plant Geography। Chronica Botanica Company।
- ↑ Plant Geography. (n.d.). Retrieved from https://encyclopedia2.thefreedictionary.com/Plant Geography
- ↑ "Death Valley Expedition (1891)"। Historical Expeditions। Smithsonian National Museum of Natural History। ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ QIAN, HONG; WANG, SILONG (নভেম্বর ২০০৬)। "Phytogeographical Analysis of Seed Plant Genera in China": 1073–1084। আইএসএসএন 0305-7364। ডিওআই:10.1093/aob/mcl192। পিএমআইডি 16945946। পিএমসি 3292247 ।
গ্রন্থ-পঞ্জিকা
[সম্পাদনা]- Brown, James H.; Lomolino, Mark V. (১৯৯৮)। "অধ্যায় ১"। Biogeography (২য় সংস্করণ)। Sinauer Associates। আইএসবিএন 0878930736।
- Humbodlt, Alexander von; Bonpland, Aimé (১৮০৫)। Essai sur la geographie des plantes. Accompagné d'un tableau physique des régions équinoxiales fondé sur des mesures exécutées, depuis le dixiéme degré de latitude boréale jusqu'au dixiéme degré de latitude australe, pendant les années 1799, 1800, 1801, 1802 et 1803. (ফ্রেঞ্চ ভাষায়)। Schöll।
- Polunin, Nicholas (১৯৬০)। Introduction to Plant Geography and Some Related Sciences। McGraw-Hill।
- Wallace, Alfred R. (১৮৭৮)। Tropical Nature, and Other Essays। Macmillan।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Clements, Frederic E. (১৯২০)। "Plant Geography"। এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা।
- "Distribution of Plants"। New International Encyclopedia। ১৯০৫। [[Category:উইকিপিডিয়া নিবন্ধ যাতে নিউ ইন্টারন্যাশনাল এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে একটি উদ্ধৃতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে]]