সরঞ্জাম
সরঞ্জাম বলতে সেই সব বস্তুকে বুঝায় যার দ্বারা দৈনন্দিন কাজকর্ম দ্রুত ও সহজে করা সম্ভব হয়।
বিবরণ
[সম্পাদনা]নৃ-বিজ্ঞানীরা মনে করেন মানুষের বর্তমান অবস্থায় পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামের ব্যবহার। মানুষ তাদের প্রচলিত সরঞ্জাম ব্যবহার ও উন্নত করার মাধ্যমে কাজ কর্মে দ্রুততা নিয়ে এসেছে। সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ উন্নত ও আরও গতিময় হতে পেরেছে। প্রাচীন কালে আদিম মানুষ/গুহা মানবরা অসহায় জীবনযাপন করতো। তারা গুহায় লুকিয়ে বসবাস করতো থাকতো।[১]উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref>
ট্যাগের ক্ষেত্রে </ref>
ট্যাগ যোগ করা হয়নি[২]
- সংজ্ঞা
সরঞ্জামের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই তবে সামগ্রিক বিবেচনা করে বলা যেতে পারে, “সরঞ্জাম হল সেই বস্তু বা উপাদান যার সাহায্যে প্রচলিত কাজকর্ম আরও দ্রুত ও সহজে করা সম্ভব হয়” অথবা “দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সে সকল জিনিসকে সরঞ্জাম বলে যা দ্রুত ও সহজে কাজ করতে ব্যবহার হয় ” এখনে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, সরঞ্জাম কাজকে সহজ করে এবং কাজের গতি বৃদ্ধি করে। কাজ কর্মের গতি বৃদ্ধিতে সরঞ্জামের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]- অতি প্রাচীন
সরঞ্জাম প্রাচীনকাল হতে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় ২৬ লক্ষ বছর পূর্বের হাতুড়ী পাওয়া গেছে যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে অতিপ্রাচীন কালে সরঞ্জাম ব্যবহার হতো। অতি প্রাচীনকালে সরঞ্জামসমূহের প্রধান উপাদান ছিল: পাথর, প্রাণীর হাড়, গাছের ডাল।
- প্রাচীন
আদিম মানুষেরা প্রাণীর হাড়ের সাথে শক্ত পাথর যুক্ত করে হাতুড়ীর মতো সরঞ্জাম তৈরি করতো। যার মাধ্যমে শিকারের মাথায় আঘাত করতো,শক্ত কিছু ভাঙ্গার চেষ্টা করতো। আগুন জ্বালানোর জন্য তারা পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহারে করতো। কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে সরঞ্জামের আকার আকৃতির পরিবর্তন আসে। প্রাচীন সরঞ্জাম গুলো হল: গাছের লম্বা ডাল, বর্শা, ফলা, তীর ধনু।
- প্রাচীন পরবর্তী
মানুষ ধীরে ধীরে সঙ্ঘবদ্ধ হতে থাকে, নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে ফলে অধিক মানুষ একত্রে বসবাস করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে সভ্যতার দ্রুত বিকাশ ঘটে। এ সময় সরঞ্জামের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদকে আয়ত্তে আনে, বিভিন্ন ধাতব পদার্থের ব্যবহার সম্পর্কে অবগত হয়। পূর্বের সরঞ্জামের বদলে মানুষ ধাতব সরঞ্জাম ব্যবহার শুরু করে। লোহার ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। প্রাচীন পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ সরঞ্জাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হয় – সেগুলো পরিচালনা করার জন্য নতুন নতুন সরঞ্জাম তৈরি করা হয়। এভাবে সরঞ্জামের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে।[৩][২]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]দৈনন্দিন জীবনে সরঞ্জামের বহুল ব্যবহার রয়েছে। এখন বর্তমানে প্রায় সকল কাজের জন্য পৃথক পৃথক সরঞ্জাম পাওয়া যায়। ঘরোয়া কাজ থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সরঞ্জামের ব্যবহার।
- কাটার জন্য : দা,কাচি,ছুরী,কুড়াল
- আঘাত করার জন্য : হাতুড়ী, লৌহদণ্ড
- শক্ত ভাবে ধরার জন্য : চিমটা, সংযুক্ত কারী/প্লাইয়ার্স
- ঘুরানোর জন্য : রেন্স
- ভারী বস্তু উপরে তোলার জন্য : কপিকল, লিভার
- সেলাই করার জন্য : সূচ, সুই, সূচালো বস্তু
- গর্ত করার জন্য : কোদাল, নিড়ানি
সরঞ্জামের বিকল্প ব্যবহারযোগ্যতা থাকার কারণে প্রতিটি কাজের জন্য রয়েছে অগণিত সরঞ্জাম।[৪][৫][৬]
আকার আকৃতি
[সম্পাদনা]কাজ ভেদে সরঞ্জামের আকার আকৃতির ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সরঞ্জামের আকৃতি ছোট অথবা বড় হতে পারে, এ ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সহজে বহনযোগ্য ওজনে হালকা সরঞ্জাম বেশি প্রাধান্য পায়। সাধারণত ঘরোয়া কাজের জন্য ছোট আকৃতির সরঞ্জাম এবং শিল্প কারখানায় কাজ করার জন্য বড় আকৃতির সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়।
বৈশিষ্ট্য
[সম্পাদনা]সরঞ্জামের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় :
- সহজে বহনযোগ্য।
- সাধারণত ধাতব পদার্থের ও প্লাস্টিকের তৈরি।
- দীর্ঘ স্থায়ী হয়।
- বিকল্প ব্যবহারযোগ্য।
- নিরাপদ ব্যবহার।
- সার্বজনীনতা।
- আঞ্চলিক নাম রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]কৃষি সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]কৃষি কাজে যে সকল সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয় তাকে কৃষি সরঞ্জাম বলে। প্রাচীন কাল হতে কৃষি কাজে সরঞ্জামের ব্যবহার ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন কালে মেয়েরা কৃষি কাজ করতো, তারা পাথর ও কাঠ দিয়ে মাটি খুড়ে তাতে বীজ বপন করতো। অতীতের চাষ পদ্ধতি অনুসারী কৃষকেরা কাচি, নিড়ানি, কোদাল, লাঙ্গল ইত্যাদি সরঞ্জাম ব্যবহার করে কৃষি কাজ করে। বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে কৃষি সরঞ্জামের ক্ষেত্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। পোকার আক্রমণের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয় কীটনাশক ছিটানোর সরঞ্জাম।
গৃহ-স্থলী সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]গৃহের বিভিন্ন কাজে যে সকল সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয় তাই গৃহ-স্থলী সরঞ্জাম। গৃহ-স্থলী কাজ বলতে সাধারণত মেয়েলী কাজ সমূহকে বুঝানো হয়। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে রান্নাবান্না, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। অপর দিকে পুরুষেরা যে সকল সরঞ্জাম ব্যবহার করে তা হল : ঘরবাড়ি মেরামত ও টুকিটাকি কাজ, জীবিকা নির্বাহ। যদি কোন পেশা/বৃত্তির সাথে জড়িত থাকে তবে পেশা/বৃত্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত সরঞ্জাম গৃহে স্থান পায়।
- রান্নাবান্নার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম
হাড়ি, পাতিল, কলসি, পানপাত্র, চামচ, ঢাকনা, তাপ অপরিবাহী নেকড়া
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সরঞ্জাম
ঝাড়ু, কুলা, কোদাল, বালতি, মগ
- ঘরবাড়ি মেরামত ও টুকিটাকি কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম
হাতুড়ী,দা,কুড়াল
অফিস সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]দপ্তর/অফিসে যে সকল সরঞ্জাম ব্যবহার হয় তাই অফিস সহায়ক সরঞ্জাম। অফিস সরঞ্জাম গুলো হল :
বাইন্ডিং স্কচ টেপ, বাইন্ডিং ক্লীপ, পেন নাইফ, পিন রিমোভার, ফাইল বোর্ড, ফাইল কাভার, পেপারওয়েট, পেনহোল্ডার, রেজিস্টার খাতা, কলম, গাম/আঠা, জেমস ক্লীপ, পাঞ্চিং মেশিন, গার্ডফাইল, স্টেপলার মেশিন, কাচি, চাকু, Self Adhesive Notes, পেপার কাটার, ক্যালকুলেটর, কাগজ ইত্যাদি।
- অফিস সরঞ্জামের ব্যবহার
- একাধিক পাতা সংযুক্ত করার জন্য : সেলাই যন্ত্র
- কোন কিছু লিখার জন্য : কলম
- লেখার ভুল ত্রুটি মুছার জন্য : লেখা মুছার কালি।
- সংকেত পাঠানোর জন্য : ঘণ্টা।
- সত্যায়িত করার জন্য : সীলমোহর
অন্যান্য সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, সর্বক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। পূর্বে সরঞ্জাম বস্তুগত ভাবে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু বর্তমানে সরঞ্জাম অবস্তুগত রূপ লাভ করেছে। কম্পিউটারের বিভিন্ন সফটওয়্যারের মেনু-বারে টুলস/Tool নামক যে অপশন/বিকল্পটি রয়েছে তার অন্তর্গত প্রতিটি প্রোগ্রাম/সফটওয়্যারকে সরঞ্জাম বলা হয়। এবং এটি সার্বজনীন স্বীকৃত।
বিকল্প ব্যবহার
[সম্পাদনা]প্রত্যেকটি সরঞ্জামের বিকল্প ব্যবহার রয়েছে এবং বিকল্প ব্যবহার হয়ে থাকে। কাজের পরিস্থিতি ও ব্যবহারকারীর ইচ্ছা অনুসারে সরঞ্জামের বিকল্প ব্যবহার নির্ধারণ হয়। নির্দিষ্ট কাজের জন্যই বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম তৈরি করা হয়েছে। এটা ঠিক যে, সরঞ্জামের বিকল্প ব্যবহার করা যায় কিন্তু আমাদের সরঞ্জামের বিকল্প ব্যবহার হতে দূরে থাকতে হবে কারণ সরঞ্জামের বিকল্প ব্যবহার করলে কাজের গতি ও সরঞ্জামের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
- যে সকল কারণে সরঞ্জামের বিকল্প ব্যবহার হয়ে থাকে
- প্রয়োজনের সময় নির্দিষ্ট সরঞ্জাম খুঁজে না পাওয়া গেলে।
- সরঞ্জাম দেখতে একই রকম হলে।
- কাজ সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে।
- ব্যবহারকারীর নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশা থাকলে।
- পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে।
- সরঞ্জামের প্রতি অবহেলা।
- শারীরিক মানুষিক সমস্যা থাকলে।
প্রাণী জগতে সরঞ্জাম
[সম্পাদনা]মানুষ ছাড়া প্রাণী জগতে সরঞ্জামের ব্যবহার তেমন একটা দেখা যায় না। তবে কিছু প্রাণী আছে যারা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
শুধুমাত্র মানুষই উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করে। আর বাকী প্রাণীকুল প্রাকৃতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Jones, S., Martin, R. & Pilbeam, D., সম্পাদকগণ (১৯৯৪)। The Cambridge Encyclopedia of Human Evolution। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-32370-3। Also আইএসবিএন ০-৫২১-৪৬৭৮৬-১ (paperback)
- ↑ ক খ Primates and Their Adaptations, 2001 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে, M.J. Farabee. Retrieved on November 6, 2006.
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;lilley
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Nanotechnology: Big Potential In Tiny Particles, David Whelan. Retrieved on November 6, 2006
- ↑ Will this Tiny Science Usher in the Next Industrial Revolution?, Katrina C. Arabe. Retrieved on November 6, 2006
- ↑ Selection of tool diameter by New Caledonian crows Corvus moneduloides[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], Jackie Chappell and Alex Kacelnik November 29, 2003
- ↑ "Rolling Hills Wildlife Adventure: Chimpanzee"। ২৩ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৫।