দিবালোক সংরক্ষণ সময়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Daylight savings time থেকে পুনর্নির্দেশিত)
যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ডিএসটি ব্যবহৃত হয় না, কিন্তু উত্তর অক্ষাংশের উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলোতে দিবালোক সংরক্ষণ সময় একটি সাধারণ বিষয়।
  ডিএসটি প্রচলিত
  ডিএসটি প্রচলিত নয়
  ডিএসটি কখনই প্রচলিত হয়নি

দিবালোক সংরক্ষণ সময় বা ডেইলাইট সেইভিং টাইম (সংক্ষেপে ডিএসটি) হলো ঘড়ির সময় ১ অথবা ২ ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়ার একটি রীতি, যাতে ঘড়ির কাটার হিসাবে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই এক ঘণ্টা পরে ঘটে এবং বিকেলের ভাগে একটু অতিরিক্ত সময় সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সাধারণত এই রীতিতে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বসন্তকালে ঘড়ির কাঁটা ১ ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয় এবং শরতে আবার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়। ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন তার একটি খামখেয়ালিপূর্ণ প্রবন্ধে প্রথম এই নাটকীয় ব্যবস্থার ধারণা তুলে ধরেন; পরবর্তিতে এই ধারণাটি প্রথম ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ্যের সামনে তুলে ধরেন উইলিয়াম উইলেট নামের একজন ব্রিটিশ নির্মাতা ওয়েস্ট অফ ডেলাইট নামক একটি প্যামপ্লেটে।[১]

প্রয়োগ[সম্পাদনা]

Diagram of a clock showing a transition from 2:00 to 3:00.
মধ্য ইউরোপে যখন ডিএসটি চালু হয়, ঘড়িকে মধ্য ইউরোপীয় সময় (CET) রাত ২টা থেকে মধ্য ইউরোপীয় গ্রীষ্মকালীন সময় (CEST) রাত ৩টায় এগিয়ে নেয়া হয়।
Diagram of a clock showing a transition from 3:00 to 2:00.
মধ্য ইউরোপে যখন ডিএসটি শেষ হলো, ঘড়ির সময়কে রাত ৩টা সিইএসটি থেকে রাত ২টা সিইটি-তে পিছিয়ে নেয়া হয়। অন্যান্য অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে বদলে নেয়।

দিবালোক সংরক্ষণ সময় সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়, যখন এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয় শক্তি উৎপাদনে জ্বালানী খরচ কমানোর জন্য। কোনো কোনো অঞ্চল পরবর্তিতে প্রকৃত সময়ে ফিরে এলেও এখনও অনেক দেশ এই পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস একটি আইন পাশ করে, যাতে পুরো দেশকে "রণ সময়"-এর অধীন করে নেয়া হয়, যাতে পুরো যুদ্ধকালীন সময়টায় দেশের সময়কে একঘণ্টা এগিয়ে নেয়া হয়। এই ধারাবাহিকতায় পদ্ধতিটি যুক্তরাজ্যও অনুসরণ করে, যেখানে গ্রীষ্মকালীন সময়ে স্বাভাবিক সময় থেকে সময়কে আরো এক ঘণ্টা (অর্থাৎ ২ ঘণ্টা) এগিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তিতে শান্তিকালীন সময়ে রণ সময় একটি বিতর্কের বিষয়ে পরিণত হয়।[১]

যুক্তরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

যুক্তরাষ্ট্র, সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই ডিএসটি অনুসরণ করে আসছে তাদের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। বিতর্কিত ও ঝামেলাপূর্ণ এই পদ্ধতিটির বিতর্ক অবসানের জন্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং অধীন রাজ্যগুলোর মধ্যকার ঝামেলা দূর করতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস 'ইউনিফর্ম টাইম এ্যাক্ট' পাশ করে। এই বিধান অনুসারে সকল অঙ্গরাজ্যের জন্য কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিএসটি অনুসরণ করা হবে। তবে শুধুমাত্র সেই অঞ্চলটি বা রাজ্যটি এর আওতামুক্ত থাকবে, যেখানে রাজ্যটির আইনগত কিংবা রাজনৈতিক পরিচালক তা ব্যবহারে অসম্মতি জানাবেন। যাবতীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দিবালোক সংরক্ষণ সময় শুরু হয় এপ্রিল মাসের প্রথম রবিবার রাত ২টায় এবং শেষ হয় অক্টোবর মাসের শেষ রবিবার রাত ২টায়।[১]

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

২০০৯ সালের ২০ জুন থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ডিএসটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই নিয়ম দেশটিতে জনপ্রিয় হয়নি এবং পরবর্তিতে সরকার তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়। ভবিষ্যতে আর কখনও দেশটিতে ডিএসটি প্রবর্তন করা হবে না বলে সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিতর্ক[সম্পাদনা]

এই পদ্ধতিটি বিতর্কিত, কারণ বিকালের দিকে আলো যোগ করলে কেনাকাটা, খেলাধুলাসহ অন্যান্য যেসকল কাজে আলো বেশি কাজে লাগে সেগুলো লাভবান হলেও কৃষিকাজ, সান্ধ্যকালীন প্রমোদসহ বেশ কিছু কাজের সমস্যা করে। বিশেষ করে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কর্তৃক প্রবর্তিত 'রণ সময়'-এর চরম বিরোধিতা করেন কৃষকেরা, কারণ তাদের কৃষিকালীন সময় নির্ধারিত হয় সূর্যের হিসাবে, কিন্তু ব্যবসাকালীন সময় নির্ধারিত হয় ডিএসটি ধরে, যা চরম অসুবিধাজনক। রেল, বাস, বিমান ইত্যাদির সময় উল্টাপাল্টা হয়ে পড়ে, কারণ সব দেশে ডিএসটি প্রচলিত নয়।[১] ডিএসটির প্রাথমিক লক্ষ্য সান্ধ্যকালীন আলোর ব্যবহার হ্রাস। ডিএসটির ফলে ঘড়ির সময়ের পরিবর্তন অন্যান্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে। এর ফলে সময়ের হিসাব জটিল হয়ে পড়ে, সভা, ভ্রমণ, রেকর্ড সংরক্ষণ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, ভারি জিনিসপত্র ও ঘুমের ধারার ব্যাঘাত ঘটে। অনেক কম্পিউটার-নির্ভর ব্যবস্থা তাদের ঘড়িগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক করে নিলেও, এতে ভুলের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, বিশেষ করে যখন ডিএসটি বদলে স্বাভাবিক সময়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়।

যুক্তি[সম্পাদনা]

বিতর্ক থাকাসত্ত্বেয় এই পদ্ধতিটির পক্ষে যেসকল যুক্তি পেশ করা হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিকালের দিকে বেশি সময় আলো থাকলে সড়ক দূর্ঘটনার হার কমে যায়; তবে স্বাস্থ্য ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এর প্রভাব অস্পষ্ট।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Daylight Saving, Microsoft Encarta Encyclopedia 2004 Deluxe, CD Version. পরিদর্শনের তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]