কবর (কবিতা)
কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের এক অতুলনীয় অবদান। এটি কবির ‘‘রাখালী’’ কাব্যের অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি কাহিনী কবিতা যা ষাণ্মাত্রিক মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এ ধরনের কবিতাকে বলা হয় ‘ড্রামাটিক মনোলগ’। একজন গ্রামীণ বৃদ্ধের একে একে সকল প্রিয়জন হারানোর বেদনা কবি জসীম উদদীন দক্ষ বর্ণনায় ফুটিয়ে তুলেছেন। দীর্ঘ এ কবিতার চরণ সংখ্যা ১১৮।
১ জানুয়ারি ১৯০৩ সালে ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে কবির জন্ম। কবি যে ঘরে থাকতেন সে বাড়ির সামনে সিঁড়ি, সিঁড়ির দু’দিকে লেবু গাছ, মাঝখানে ডালিম গাছ। এই জায়গাটিই তাঁর কবিতার সৃষ্টির উৎসভূমি। তাঁর লেখনীতে উঠে এসেছে পল্লীমানুষের জীবনের হালচাল। ১৯২৫ সালে কবি জসীমউদ্দীন রচিত ‘কবর’ কবিতাটি প্রথম কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।[১] কবি সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ. ক্লাশের ছাত্র। কল্লোল পত্রিকার তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যায় ‘গ্রাম্য কবিতা’ পরিচয়ে মুদ্রিত ‘কবর’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাঠক মহলে বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল। কবি ছাত্র থাকা অবস্থায়ই কবিতাটি প্রবেশিকার (এস.এস.সি.) পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
বিষয়বস্তু
গ্রামীণ এক চিরায়ত বৃদ্ধের কষ্টের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে এই কবিতায়। বাংলা সাহিত্যে যেসব মর্মস্পর্শী কবিতা আছে, তার মধ্যে কবর একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের লেখা এই কবিতাটি শুধু প্রিয়জনদের জন্য শোক নিয়েই নয়, বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের একটি সুন্দর চিত্র অথচ নির্মম বটে। কবিতাটিতে গাঢ় বেদনা আর ভালবাসার রঙে আঁকা বাংলার পল্লীজীবনের এই অসাধারণ প্রতিচ্ছবি ফুঁটে উঠেছে। সর্বমোট ১১৮ পংক্তির কবিতাটির শুরুর স্তবকটি এরকম:
এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
কাহিনী বর্ণনাকারী এক গ্রামীণ বৃদ্ধ দাদু। আর শ্রোতা হলো তদীয় নাতি। যে পাঁচজন স্বজন হারানোর ব্যথা বৃদ্ধ দাদু এক এক করে বর্ণনা করেছেন তারা হলো: বৃদ্ধের স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ, নাতনী ও মেয়ে। এরা নাতীর দাদী, পিতা, মা,তা বুজি ও ছোট ফুপু। মৃত্যুর কারণ ও অন্যান্য তথ্য:
বুজি/নাতনি মারা যায় পচানো জ্বরে
ছোট ফুপু/মেয়ে মারা যায় সাপের কামড়ে
দাদির/স্ত্রীর গ্রামের নাম উজান-তলী
জোড়মাণিক বাবা-মা/ পুত্র-পুত্রবধূ
বুজি/নাতনির বিয়ে দিয়েছি কাজিদের বাড়ি (বনেদী পরিবার)
ছোট ফুপু মারা যায় ৭ বছর বয়সে
কবিতাটির শেষ স্তবকটি এরকম:
ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে,
অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুরে,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দূরে।
জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।
ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যুব্যথিত প্রাণ।
আলোচনা
‘কবর’ জসীম উদদীন বিরচিত বাংলা সাহিত্যের একটি বহুল পঠিত কবিতা। এটি মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত। বাঙালির প্রাণের আবেগ অতি নিবিড়ভাবে মিশে আছে এ শোক-প্রকাশক কবিতাটির পঙক্তিতে পঙক্তিতে। এটি একটি ড্রামাটিক মনোলগ বা একাকী কথন। নাতীকে উদ্দেশ্য করে বৃদ্ধ দাদু তাঁর জীবনের সকল প্রিয়জনকে হারানোর আকুতি ক্রমে ক্রমে ব্যক্ত করেছেন। বৃদ্ধের কাছে মনে হয় জীবনের নির্মম পথ তিনি আর চলতে পারনে না। তিনি নাতীকে বলছেন: ‘‘ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিয়ে ঘন আবিরের রাগে / অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে’’। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত এ কবিতাতে সৃষ্ট হয়েছে বিষাদকরুণ সাঙ্গেতিকতা। ১৯৩০-রে দশকে যখন ইউরোপীয় আধুনিক কাব্যের আদলে বাংলা কাব্যে আধুনিক কবিতার সূত্রপাত হয় একই সময়ে জসীম উদদীন রচনা করেছিলেন ‘কবর’।
কবর কবিতায় ব্যবহৃত ছন্দকে বলা হয় ষান্মাত্রিক মাত্রাবৃত্ত। এ কবিতার প্রতি চরণে ৩টি পূর্ণ পর্ব ও ১টি অপূর্ণ পর্ব আছে। পূর্ণ পর্বের মাত্রা ৬ ও অপূর্ণ পর্বের মাত্রা ২। মাত্রা বিন্যাস- ৬+৬+৬+২=২০।
তথ্যসূত্র
- ↑ "'কবর'-এর কারিগর জসীমউদদীন"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৬।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |