হিতেশরঞ্জন সান্যাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হিতেশরঞ্জন সান্যাল
জন্ম(১৯৪০-০২-০১)১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০
সলপ পাবনা ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু২৩ নভেম্বর ১৯৮৮(1988-11-23) (বয়স ৪৮)
পিতা-মাতাবঙ্গরঞ্জন সান্যাল (পিতা)
পুরস্কারআনন্দ পুরস্কার (মরণোত্তর,১৯৯০)

ড.হিতেশরঞ্জন সান্যাল (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ – ২৩ নভেম্বর ১৯৮৮) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম অগ্রগণ্য গবেষক। শিল্প, জাতীয় আন্দোলন, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মধ্যযুগের বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের বিবর্তন ও বিশ্লষণে তার অনুসন্ধিৎসা ব্যপ্ত ছিল। কলকাতা সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আমৃত্যু ফেলো ছিলেন। [১]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

হিতেশরঞ্জন সান্যালের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার অধুনা বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার সলপ গ্রামে। পিতা বঙ্গরঞ্জন সান্যাল। হিতেশরঞ্জনের পড়াশোনা কলকাতাতেই। কলকাতার নারকেলডাঙ্গা হাইস্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল, সেন্ট পলস কলেজ থেকে বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসে এম.এ পাশ করেন। [১] এরপর বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের উপর গবেষণা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার অভিসন্দর্ভ ছিল - পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগ হতে ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগ সময়ের টেম্পল বিল্ডিং অ্যাকটিভিটিজ ইন বেঙ্গল: এ সোশ্যাল স্টাডি[২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

হিতেশরঞ্জনের কর্মজীবন শুরু হয় হুগলি জেলার কামারকুণ্ডু হাই স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে। তারপর তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জেলা বিবরণী সংস্থায় তথা (গেজেটিয়ায়) এবং কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টে কাজ করেন। এরপর হিতেশরঞ্জন সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজে ফেলো হিসাবে যোগ দিয়ে আমৃত্যু সেখানেই গবেষণারত ছিলেন। [১] [৩]

বাংলার সামাজিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণায় সমকালীন শিল্প, জাতীয় আন্দোলন, ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, গান্ধীবাদ, স্বরাজ ও সমবায়ের সামাজিক অবস্থান ইত্যাদিও গুরুত্ব পেয়েছে।[৩] সেজন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে সংগ্রহ করেছিলেন গ্রামবাংলার মানুষের ধর্মবিশ্বাস, সংস্কার-সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে গভীর ও ব্যাপক তথ্য। সেসমস্ত তথ্য সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজে রক্ষিত আছে।[৪]তার গবেষণাধর্মী বহু নিবন্ধ বিক্ষিপ্ত ভাবে কখনও ধারাবাহিক ভাবে 'সমকালীন', 'দেশ', 'চতুরঙ্গ'সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মধ্যযুগের সামাজিক ইতিহাসে বাংলায় ভক্তি আন্দোলনে তথা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সাধারণ মানুষ কীর্তন ও সঙ্গীতের মাধ্যমে সামিল হয়েছিলেন। হিতেশরঞ্জনও স্বাভাবিকভাবেই বাংলার কীর্তন ও সঙ্গীতের প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট হন এবং রচনা করেন বাংলা কীর্তনের ইতিহাস। এই গ্রন্থটির জন্য তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি অক্সফোর্ড, টরন্টো, প্যারিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বর্ধমানের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- 'শিক্ষা নিকেতন'-এর সম্পাদক ছিলেন। হিতেশরঞ্জন মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।

তার রচিত গ্রন্থসমূহ হল–

  • সান্যাল, হিতেশরঞ্জন। বাংলার মন্দির। কারিগর। 
  • সান্যাল, হিতেশরঞ্জন। বাংলা কীর্তনের ইতিহাস। কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা। 
  • সান্যাল, হিতেশরঞ্জন। মহাত্মা গান্ধী। বাতিঘর। 
  • সান্যাল, হিতেশরঞ্জন (১৯৮১)। দ্য সোশ্যাল মবিলিটি ইন বেঙ্গল। প্যাপিরাস, কলকাতা। 
  • সান্যাল, হিতেশরঞ্জন (২০১৯)। ট্রেন্ডস অফ চেঞ্জ ইন ভক্তি মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 9780199486700 


মৃত্যু[সম্পাদনা]

অধ্যাপক ড. হিতেশরঞ্জন সান্যাল ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর ভোরে আট চল্লিশ বৎসর বয়সে অকাল প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৭৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "বাঙালি জীবনে যা কালচার তাই নেচার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪ 
  3. "বাংলা কীর্তনের ইতিহাস - হিতেশ রঞ্জন সান্যাল পিডিএফ"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪ 
  4. "A guide to the Hitesranjan Sanyal Memorial Collection" (পিডিএফ)। ২০২২-১১-১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪