হার্শে ও চেজের পরীক্ষা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আলফ্রেড ডে হার্শেমার্থা চেজ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে টি২ ব্যাক্টেরিওফাজ ভাইরাস ও ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করে প্রমাণ করতে সমর্থ্য হন যে ডিএনএ-ই জিনগত বস্তু হিসেবে কাজ করে, এটি হার্শে ও চেজের পরীক্ষা নামে বিখ্যাত।[১] ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তারা এই গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার পান।

গবেষণার বিষয়বস্তু
মার্থা চেজ ও আলফ্রেড হার্শে

এটি যে সময় গবেষণা করে আবিষ্কার করা হয়েছিল, সেই সময় বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস ছিল যে প্রোটিন হল জিনগত বস্তু। কিন্তু এই গবেষণার ফলাফল পূর্বের সমস্ত ধারণার অবসান ঘটায়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, জীববিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে প্রোটিন জেনেটিক তথ্য বহন করে। এটি এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে প্রোটিনগুলি ডিএনএ-র চেয়ে জটিল। ফোবাস লেভেন এর প্রভাবশালী "টেট্রানিউক্লিওটাইড হাইপোথিসিস", যা ভুলভাবে প্রস্তাব করেছিল যে ডিএনএ অভিন্ন নিউক্লিওটাইডের একটি পুনরাবৃত্ত সেট, এই উপসংহারটিকে সমর্থন করেছিল। ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত আভেরি-ম্যাকলিওড-ম্যাককার্টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল প্রস্তাব করে যে ডিএনএ হল জেনেটিক উপাদান, কিন্তু সাধারণ বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি মেনে নিতে এখনও কিছু দ্বিধা ছিল, যা হার্শে-চেজ পরীক্ষার মঞ্চ তৈরি করেছিল।

হার্শে এবং চেজ, অন্যান্যদের সাথে যারা সম্পর্কিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন, তারা নিশ্চিত করেছেন যে ডিএনএ হল জৈব অণু যা জেনেটিক তথ্য বহন করে। এর আগে, অসওয়াল্ড অ্যাভেরি, কলিন ম্যাকলিওড এবং ম্যাকলিন ম্যাককার্টি দেখিয়েছিলেন যে ডিএনএ স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনির একটি স্ট্রেনকে অন্য স্ট্রেনে রূপান্তরিত করে। এই পরীক্ষাগুলির ফলাফল প্রমাণ দিয়েছে যে ডিএনএ হল জৈব অণু যা জেনেটিক তথ্য বহন করে।

গবেষণার বিবরণ[সম্পাদনা]

পরীক্ষা পদ্ধতি[সম্পাদনা]

হার্শে এবং চেজ একটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে প্রোটিনের সালফার পাওয়া যায় কিন্তু ফসফরাস পাওয়া যায় না আবার ডিএনএ তে ফসফরাস পাওয়া যায় কিন্তু সালফার পাওয়া যায় না। তারা লক্ষ্য করেন যে ব্যাকটেরিওফাজের ৫০% প্রোটিন ও ৫০% ডিএনএ যা প্রোটিন খোলকের মধ্যে অবস্থিত।

বিশেষ পরীক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে তারা কিছু ভাইরাসের ডিএনএকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ 32P দিয়ে চিহ্নিত করেন এবং কিছু ভাইরাসের প্রোটিন খোলককে 35S দিয়ে চিহ্নিত করেন। এরপর দুটি আলাদা মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া নিয়ে দুটিতে ওই দুই প্রকার ভাইরাস দিয়ে তারা সংক্রমণ ঘটান।

তারপর তারা ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত ভাইরাস দ্রবণটি সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রের মাধ্যমে আলাদা করেন যার উপরের অংশে ভাইরাসের প্রোটিন খোলকগুলি বর্তমান ছিল এবং নীচের অংশে ব্যাকটেরিয়ার দেহ থিতিয়ে পড়েছিল, যেহেতু ব্যাকটেরিয়ার দেহ ভাইরাসের তুলনায় বেশি ভারী।

ফলাফল[সম্পাদনা]

প্রথম দ্রবণের ফলাফল থেকে জানা যায় অর্থাৎ যেটায় তেজস্ক্রিয় সালফারযুক্ত ভাইরাস যোগ করা হয়েছিল, সেখানে অধঃক্ষেপে তেজস্ক্রিয়তা দেখা যায়নি।

প্রথম দ্রবণের ফলাফল থেকে জানা যায় অর্থাৎ যেটায় তেজস্ক্রিয় ফসফরাসযুক্ত ভাইরাস যোগ করা হয়েছিল, সেখানে অধঃক্ষেপে তেজস্ক্রিয়তা দেখা গেল।

সিদ্ধান্ত[সম্পাদনা]

অধঃক্ষেপে যেহেতু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, তাই একমাত্র ফসফরাস ই ভাইরাস থেকে ব্যাকটেরিয়ার দেহে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর ফসফরাস কেবলমাত্র ডিএনএ তে থাকার ফলেই বোঝা গেল, ডিএনএ ই আসলে স্থানান্তরিত হয়েছে। এভাবে প্রমাণিত হল ডিএনএ ই জিনগত বস্তু বা জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Hershey A, Chase M (১৯৫২)। "Independent functions of viral protein and nucleic acid in growth of bacteriophage"J Gen Physiol36 (1): 39–56। ডিওআই:10.1085/jgp.36.1.39পিএমআইডি 12981234পিএমসি 2147348অবাধে প্রবেশযোগ্য 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]