হায়দ্রাবাদি হালিম
উৎপত্তিস্থল | ভারত |
---|---|
অঞ্চল বা রাজ্য | হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা |
প্রস্তুতকারী | হায়দ্রাবাদের কাউশ সম্প্রদায় দ্বারা তৈরি |
প্রধান উপকরণ | গমের আটা, মসুর ডাল, ছাগলের মাংস, ঘি, শুকনো ফল এবং জাফরান |
হায়দ্রাবাদের হালিম (/ˈhaɪdərəbædɪˈhæliːm/) ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের জনপ্রিয় একটি হালিম। হালিম বিভিন্ন রকমের ডাল, গম, মাংস এবং গরম মশলার সিদ্ধ করা ঘন মিশ্রণ। এটা মূলত আরবদের খাবার; হায়দ্রাবাদে নিজাম পরিবারের শাসনামলে এটির প্রচলন শুরু হয় আরব কাউসদের দ্বারা। হায়দ্রাবাদের স্থানীয় মসলার ব্যবহারে এটি হায়দ্রাবাদের অনন্য হালিমে পরিবর্তিত হয় আর সেটাই ১৯ শতকে স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে যায়।
এই হালিম তৈরি প্রক্রিয়া হায়দারাবাদি বিরিয়ানির ন্যায়। হায়দেরাবাদী হালিম বিবাহ, অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী খাবারে পরিণত হলেও, এটা বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারের সময় খাওয়া হয় তাৎক্ষণিক আমিষের জোগানের উদ্দেশ্যে। আর এই কারণে এটা রমজান মাসের একটা বিশেষ খাবারে পরিণত হয়েছে। হায়দ্রাবাদের হালিমের ব্যাপক জনপ্রিয়তার জন্য ২০১০ সালে ভারতের নিবন্ধ অফিস একে ভারতের ভৌগোলিক নিদর্শনের চিহ্ন হিসাবে ভারতের প্রথম অ-নিরামিষ খাদ্য হিসাবে চিহ্নিত করে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]সাধারণত হালিম হল আরবিয় খাবার [১][২] যা ময়দা, মাংস ও সহজলভ্য উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় । নিজামের শাসনামলে আরবের রীতি অনুযায়ী এই হায়দ্রাবাদের হালিমের সূচনা হয়; পরবর্তীতে মাহবুব আলি খান, মির উসমান আলী খান এই হায়দ্রাবাদের হালিমের প্রচলন ধরে রাখেন ।[৩][৪] আরব প্রধান ৭ম নাজিমের সময় হায়দ্রাবাদের হালিম জনপ্রিয় করায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল [১]। স্থানীয় উপাদান সমূহ এই হালিমের সাধ গন্ধ প্রধান হালিমের থেকে ভিন্ন করেছে । [৫]
প্রস্তুতি
[সম্পাদনা]প্রথাগতভাবে, একটি বড় বাটিতে (ডেকচী/বড় আকারের পাতিল) ১২ ঘণ্টা অল্প তাপে রান্না করা হয় । রান্না ভালভাবে করতে কমপক্ষে ২ জন সহকারী প্রয়োজন হয় । আর যদি হালিম বাসায় তৈরি করতে হয় তবে এটি ততক্ষণ পর্যন্ত তাপ দিতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না হালিমের মতো ভালভাবে সেদ্ধ হয় ।[৬][৭]
উপাদান
[সম্পাদনা]প্রধান উপাদান সমূহ হল :
- মাংস ( ছাগলের/মুরগীর)
- গমের আঁটা
- ঘি ( দুধ থেকে তৈরি বাতার)
- দুধ
- মসূর
- রসূন ও আদা বাটা (পেস্ট)
- হলুদ
- জিরা
- সজ ( জিরা)
- এলাচ
- দারুচিনি
- লবঙ্গ
- কালো মরিচ
- জাফরান
- তালের গুড়
- সাধারণ আঠা
- কাবাব চিনি
- শুঁকনো ফল ( পেস্তা, কাজুবাদাম, ডুমুর )
- বাদাম (কাঠবাদাম)
এসব উপাদানের মাধ্যমে হালিম তইরির পর পরিবেশের সময় এতে আরও যোগ করা হয় -
- রসা (উন্নত মানের ঘি )
- লেবুর টুকরা
- ধনে
- ভাঁজা ডিম
- ভাঁজা পেঁয়াজের আবরণ (হালকা প্রলেপ)
প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]পরিবেশন এবং ধর্মীয় কারণে হালিমের বিভিন্ন প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায় ।
- মিঠি ( মিষ্টি) হালিম । যা আরবের ঐতিহ্য ধরে রেখে সকালের খাবারের জন্য তৈরি করা হয় ।[১১]
- মুরগী হালিম ( সস্তা ) কিন্তু তেমন জনপ্রিয় নয় । )
- ছাগলের মাংসের হালিম ( এতে সবজী + শুঁকনো ফল যোগ করা হয় ) - এই হালিম খুবই জনপ্রিয় । হায়দ্রাবাদের সামান্য কিছু দোকানে এই হালিম পাওয়া যায় । [১২]
পুষ্টিগুণ
[সম্পাদনা]বহিঃস্থ চিত্র | |
---|---|
A slidshow of Hyderabadi haleem prepration images. Published on Flickr |
হায়দ্রাবাদের হালিম খুবই উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার [১৩][১৪], এবং এটি দ্রুত হজম হয় ।[৮][১৫] এতে থাকা শুঁকনো ফলে রয়েছে প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট । মাংস একে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে পরিণত করেছে । ২০১৩ সালে আরও একটি নতুন হালিমের প্রচলন হয়েছে যাতে রয়েছে অল্প প্রোটিন, ক্যালরি, ভিটামিন । হালিম স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয় বলে এটি অনেক নিরাপদ । [১৬][১৭][১৮]
জনপ্রিয়তা
[সম্পাদনা]সারাবিশ্বে হালিমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে । [১৯][২০] হায়দ্রাবাদের হালিমের জনপ্রিয়তা রয়েছে সারা ভারতজুড়ে ।[১৩] হায়দ্রাবাদের যে কোন অনুষ্ঠানে হায়দ্রাবাদের হালিম যেন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার । বিশেষকরে রমযানের সময়, সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে হালিম খাওয়া ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে ।[২১][২২] হায়দ্রাবাদের আশেপাশে এলাকাগুলোতে রয়েছে হায়দ্রাবাদের হালিমের জনপ্রিয়তা । [২৩] ২০১৪ সালে রমযানেই প্রায় ৫ বিলিয়ন আয় হয় হালিমের মাধ্যমে ।[২৪] এবং ২৫,০০০ জন মানুষ এই হালিম উৎপাদনের কাজে জড়িত ।[২৫] উৎপাদনকারী প্রায় ১ লক্ষ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) সাথে লভ্যাংশসহ বেতন প্রদান করে থাকে ।[২৬] রমজান মাসে ৬,০০০% অস্থায়ী দোকান বসে যা রমজান শেষ হওয়ার-পূর্ব পর্যন্ত ৭০% হালিমে যোগান দেয় ।[২৭][২৮] হায়দ্রাবাদের হালিমের ২৮% বিশ্বের ৫০ টি দেশে রপ্তানি করা হয় । [২৭]
২০১০ সালে হায়দ্রাবাদের হালিম ভারতের ভৌগোলিক চিহ্ন হিসাবে পদক লাভ করে ।[১৪][২৯] এবং এটিই হল ভারতের প্রথম মাংস সমৃদ্ধ খাবার যা ভারতের ভৌগোলিক চিহ্ন হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে । এর মানে এই হালিম ততক্ষণ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদের হালিম নামে বিক্রয় করা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এটি আদর্শ মান না অর্জন করে ।[২৮][৩০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Shahid, Sajjad (১৬ আগস্ট ২০১১)। "Biryani, Haleem & more on Hyderabad's menu"। The Times of India। ৬ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১১।
- ↑ "Ramadan, the month of unprecedented shopping in Hyderabad"। Overseas Indian। Ministry of Overseas Indian Affairs, Government of India। অক্টোবর ২০০৬। ৩০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১২।
- ↑ ক খ Siddique, Mohammed (১৮ আগস্ট ২০১০)। "In Hyderabad this Ramzan? Try the Haleem"। Rediff। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১০।
- ↑ Dey, Pranesh (৫ ডিসেম্বর ২০০৪)। "How the city succumbed to a new taste"। The Times of India। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১১।
- ↑ Karen Isaksen Leonard (২০০৭)। Locating home: India's Hyderabadis abroad। stanford university press। পৃষ্ঠা 14। আইএসবিএন 978-0-8047-5442-2। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- ↑ Vyas, Sheetal (১২ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "Deccan delight"। Sify। ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ "Hyderabadi Haleem to go global, outlets in US planned (Business Feature)"। Business Standard। ২৯ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ ক খ "Haleem boosts sex life"। The Times of India। ১৪ আগস্ট ২০১১। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১০।
- ↑ "Famous Hyderabadi Haleem dish gets patented"। Gulf News। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৩।
- ↑ Latif, Bilkees I. (১৯৯৯)। The Essential Andhra Cookbook with Hyderabadi Specialities। Penguin Books (India)। পৃষ্ঠা 95–97। আইএসবিএন 978-01-4027-184-3।
- ↑ "Barkas Street, a little Arabia in Hyderabad"। thefreelibrary.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১১।
- ↑ "Get ready for veg haleem"। The Times of India। ২৬ অক্টোবর ২০০৩। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১০।
- ↑ ক খ "My love affair with the Haleem began during Ramzan"। The Sunday Guardian। ১৭ জুন ২০১২। ১৪ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১২।
- ↑ ক খ "Hyderabad Haleem' gets Geographical Indication certification"। Indian Council of Agricultural Research। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১২।
- ↑ "The Hyderabad haleem is now a Rs 100-crore brand name"। Deccan Herald। ১৮ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১২।
- ↑ Jayaram, P S (২২ জুলাই ২০১৩)। "Hyderabadi haleem is now low-cholesterol"। Khaleej Times। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ Radhakrishna, G S (২০ জুলাই ২০১৩)। "Meat of ostrich cousin low in fat"। The Telegraph (India)। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ "Haleem on the radar"। Post Noon। ১০ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৩।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Ciezadlo, Annia (৩০ জানুয়ারি ২০১২)। "Haute bedouin cuisine with Mezlai's Ali Ebdowa"। The Daily Beast। ৩০ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১২।
- ↑ Davidson, Alan (১৯৮১)। Food in Motion: The Migration of Foodstuffs and Cookery Techniques। Oxford Symposium। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 978-09-0732-507-9।
- ↑ Saqaf, Syed Muthahar (২১ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "'Nonbu Kanji,' a noble thing that paves way for communal harmony"। The Hindu। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১২।
- ↑ Alluri, Aparna (১০ আগস্ট ২০১২)। "Hyderabad's Charm Found in Ramadan Delights"। The New York Times। ১২ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৩।
- ↑ "Hyderabadi haleem now a click away"। Rediff। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১২।
- Jatania, Prachi (১৩ অক্টোবর ২০০৬)। Get a taste of Hyderabadi haleem। IBN Live। ৩০ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১১।
- "Haleem days are here again"। The Hindu। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬। ১০ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১২।
- ↑ Nemana, Vivekananda (২১ জুলাই ২০১৪)। ".....How Haleem Got All Hot and Heavy in Hyderabad"। Yahoo! News। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Mumbaiites get Haleem-ed"। MiD DAY। ৮ আগস্ট ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৩।
- ↑ "Hyderabadi Haleem treat for Vijayawadians"। The Siasat Daily। ২ আগস্ট ২০১১। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১১।
- ↑ ক খ "Taste and wealth"। Business Standard। ২০ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১২।
- ↑ ক খ Hyderabadi Haleem now close to being patented। NDTV। ২ সেপ্টেম্বর ২০১০। ৪ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১০।
- ↑ "Geographical indications journal no:37" (পিডিএফ)। Government of India। ৪ জানুয়ারি ২০১১: 9। ৪ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১২।
- ↑ Hyderabadi haleem now officially an asset of AP। IBN Live। ২ অক্টোবর ২০১০। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১১।
- "Culture:The original 'slow food' staple: A GI tag for the iconic Hyderabadi dish is reason to raise a toast"। Mint (newspaper) and The Wall Street Journal। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১১।
আরও পড়তে
[সম্পাদনা]- Pratibha Karan (১৯৯৮)। A Princely Legacy: Hyderabadi Cuisine। India: Harper Collins Publishers। আইএসবিএন 978-81-7223-318-1।
- Asema Moosavi (১৯৯৫)। Elegant East Indian and Hyderabadi Cuisine। Hyderabad: Deccan Snacks & Foods। আইএসবিএন 0-9699523-0-9।
- Bilkees Latif (১৯৯৯)। The Essential Andhra Cookbook with Hyderabadi Specialties। United Kingdom: Penguin Books। আইএসবিএন 978-0-14-027184-3।