হরিপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হরিপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
দেশভারত
অবস্থা'নীতিগতভাবে' অনুমোদিত
মালিকভারতীয় পারমাণবিক শক্তি নিগম
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
চুল্লির ধরনভিভিইআর
চুল্লী সরবরাহকারীরোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশনকে
বিদ্যুৎ উৎপাদন
তৈরি ও মডেলভিভিইআর-১০০০/৪১২

হরিপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র[১] ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৬ টি ইপিআর চুল্লি সহ ৬,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রস্তাবিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।[২] এটি ভারত সরকার ঘোষিত ৫ টি স্থানের মধ্যে একটি ও পারমাণবিক কেন্দ্রটির অনুমোদন ২০০৯ সালে দেওয়া হয়েছিল। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন (এনপিসিআইএল) দ্বারা প্রস্তাবিত এবং পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হরিপুর গ্রামে নির্মিত হবে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

পশ্চিমবঙ্গে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব প্রথম আসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর শাসন আমলে। ফ্রান্সের সহযোগিতায়, সাগরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবে করা হয়েছিল। কিন্তু সিপিআইএম দলের থেকে বিরোধিতা করা হলে প্রস্তাবটি স্থগিত হয়েগিয়েছিল। ভারতীয় পারমাণবিক শক্তি নিগম ২০০৬ সালে হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রস্তাবে সম্মতি জানান, সিপিএম প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল-কংগ্রেস প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিল। এছাড়াও রাজ্যের পরিবেশকর্মীদের একাংশও প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিল।[৩]

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ২০০৯ সালের শেষের দিকে রাশিয়া সফরকালে হরিপুরের প্রস্তাবিত পরমাণু-বিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারি অনুমোদন প্রদান করা হয়েছিল। এই সফরকালে রাশিয়ার সঙ্গে পাঁচটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে ভারতের চুক্তি হয়েছিল, তার মধ্যে হরিপুর অন্যতম ছিল।[১] দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় হরিপুরে প্রথম পর্বের দুটি পরমাণু চুল্লি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এছাড়াও তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামে চারটি পরমাণু চুল্লি স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ভারত সরকার রুশ সংস্থা রোসাটোম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কর্পোরেশনকে হরিপুরে হাজার মেগাওয়াটের ইউনিট-সহ একটি নিউক্লিয়ার পার্ক তৈরির বরাতও দিয়েছিল।[১] কিন্তু, রুশ সংস্থাটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ওড়িশায় স্থানান্তর করার প্রস্তাব করেছিল। প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ও পরমাণু শক্তি কমিশন সহ সকলেই খারিজ করে দিয়েছিল। অপরদিকে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকার ২০১১ সালে প্রস্তাবিত হরিপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প খারিজ দিয়েছিল।[১][৪][৫]

ভারত সরকার ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ভবিষ্যতে আরও চুল্লি স্থাপনের জন্য যে পাঁচটি স্থানের 'নীতিগতভাবে' অনুমোদন দিয়েছিল, তার মধ্যে হরিপুর ছিল।[২]

জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলন[সম্পাদনা]

স্থানীও বাসিন্দারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকেই জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে।[৬] জনগণ ২০০৬ সালের ১৭ই ও ১৮ই নভেম্বর পরপর দুই দিন এনপিসিআইএল-এর পর্যবেক্ষণ দলকে হরিপুরে প্রবেশ করা থেকে সফলভাবে প্রতিরোধ করেছিল। জুনপুট বাসস্ট্যান্ডে ২৮শে নভেম্বর একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রায় ১৫,০০০ জন মানুষ জড়ো হয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন পরিচালনার জন্য হরিপুর পরমানু বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রতিরোধ আন্দোলন নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প রদই করল রাজ্য"archives.anandabazar.com। Kolkata: Anandabazar Patrika। ১৮ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  2. "Proposals for New Atomic Power Plants"pib.gov.in (ইংরেজি ভাষায়)। Delhi: PIB Delhi। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  3. "হরিপুরে মেঘ কবে কাটবে, ধন্দে কর্তারা"Anandabazar। Kolkata: Anandabazar Patrika। ৪ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  4. "Wont allow any nuclear plant in West Bengal,including Haripur: Gupta"www.indianexpress.com (ইংরেজি ভাষায়)। The Indian Express। অগাস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  5. "FWIRE WB govt says no to nuclear power plant at Haripur"www.firstpost.com (ইংরেজি ভাষায়)। Kolkata: Firstpost। ১৭ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  6. "হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুত্ প্রকল্পে এগোচ্ছে কেন্দ্র"www.eisamay.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  7. "HARIPUR CALLING" (পিডিএফ)www.frontierweekly.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩