স্পেস শাটল কলম্বিয়া দুর্ঘটনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্পেস শাটল কলম্বিয়া দুর্ঘটনা
এসটিএস-১০৭ অভিযানের লোগো
তারিখ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৩; ২১ বছর আগে (2003-02-01)
সময়৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ ইএসটি (১৩:৫৯ ইউটিসি)
অবস্থানটেক্সাসলুইজিয়ানা
কারণউৎক্ষেপণের সময় এক্সটার্নাল ট্যাংক থেকে বিচ্ছিন্ন অংশের জন্য শাটলের বাম ডানার ক্ষতি
ফলাফলকলম্বিয়া শাটলের বিনাশ ও সাতজন নভোচারীর মৃত্যু; ২৯ মাস ধরে স্পেস শাটলের বহরকে মহাকাশ যাত্রা থেকে বিরত রাখা এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর সমগ্র বহরের অবসরপ্রাপ্তি
মৃত
তদন্তকলম্বিয়া অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন বোর্ড

শনিবার ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ তারিখে বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় স্পেস শাটল কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসলুইজিয়ানা রাজ্যের উপর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে সেখানকার সমস্ত সাতজন নভোচারীর মৃত্যু হয়েছিল। এটি দুর্ঘটনার দ্বারা সমাপ্ত দ্বিতীয় স্পেস শাটলের অভিযান। এর আগে ১৯৮৬ সালে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং সেখানকার সাতজন নভোচারীর মৃত্যু হয়েছিল।

এসটিএস-১০৭ নামে চিহ্নিত এই অভিযান কলম্বিয়া শাটলের ১৮তম উড্ডয়ন, স্পেস শাটল বহরের ১১৩তম উড্ডয়ন এবং চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনার পর ৮৮তম উড্ডয়ন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য এই অভিযান শুরু করা হয়েছিল এবং এর বেশিরভাগ গবেষণা শাটলের পেলোড বে-তে অবস্থিত স্পেসহ্যাব মডিউলের ভিতর সম্পন্ন করা হয়েছিল। উৎক্ষেপণের সময় স্পেস শাটল এক্সটার্নাল ট্যাংক থেকে অন্তরক ফোমের একটি অংশ খুলে পড়েছিল এবং স্পেস শাটল অর্বিটারের বাম ডানার তাপনিরোধক টালিকে আঘাত করেছিল। এর আগের স্পেস শাটল উৎক্ষেপণের সময়ও অন্তরক ফোমের অংশ খুলে পড়ে গিয়েছিল, যার ফলে নগণ্য থেকে প্রায়-দুর্ঘটনামূলক ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু কিছু প্রকৌশলীদের মতে কলম্বিয়া শাটলের ক্ষতি আরও ভয়ঙ্কর। পুনঃপ্রবেশের আগে নাসা ম্যানেজার অনুসন্ধান সীমিত রেখেছিল, কারণ এই ক্ষয় যাচাই করা হলে নভোচারীরা এই সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় তপ্ত বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস এই ক্ষতস্থানের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে ডানার অভ্যন্তরীণ গঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল, যার ফলে মহাকাশযানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং সেটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

এই দুর্ঘটনার পর স্পেস শাটলের উড্ডয়নের ক্রিয়াকলাপকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে স্থগিত করা হয়েছিল, যেমন চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনার পর করা হয়েছিল। জুলাই ২০০৫ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) নির্মাণ স্থগিত রাখা হয়েছিল এবং পরে এসটিএস-১১৪ থেকে শাটলের উড্ডয়ন পুনরায় চালু হয়েছিল। নাসা পরবর্তী অভিযানে বিভিন্ন কারিগরি ও গঠনগত পরিবর্তন এনেছিল, যেমন মহাকাশযানের তাপনিরোধক ব্যবস্থা উৎক্ষেপণ কতটা ভালোভাবে সহ্য করেছে তার জন্য নিরীক্ষণ ব্যবস্থা যোগ করা এবং মেরামতের অযোগ্য এমন ক্ষয় পাওয়া যায় এমন ক্ষেত্রে চিহ্নিত উদ্ধার অভিযান তৈরি করে রাখা। হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মেরামতির জন্য একটি অভিযান ব্যতীত বাকি সমস্ত স্পেস শাটল অভিযান কেবল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেই গিয়েছিল যাতে শাটল অরবিটারে কোনো ক্ষতির জন্য পুনঃপ্রবেশ অসম্ভব হলে নভোচারীরা সেই স্টেশনকে ব্যবহার করতে পারেন। স্টেশনটির নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর সমস্ত স্পেস শাটল বহরকে অবসর দেওয়া হয়েছিল।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

স্পেস শাটল[সম্পাদনা]

উৎক্ষেপণের আগে স্পেস শাটল কলম্বিয়া। এক্সটার্নাল ট্যাংকের (ইটি) উপর বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করা অংশটি হচ্ছে বামদিকের বাইপড ফোম র‍্যাম্প এবং উৎক্ষেপণের সময় অরবিটারের উপর বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

স্পেস শাটল (ইংরেজি: Space Shuttle; স্পেইস্ শাট্যল্) হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিমানচালনা ও মহাকাশ প্রশাসন (নাসা) দ্বারা পরিচালিত আংশিক পুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান[১]:৫, ১৯৫ ১৯৮১ সালের এপ্রিলে এটি প্রথমবার মহাকাশে উড়েছিল[২]:III-২৪ মহাকাশে গবেষণার জন্য[২]:III-১৮৮ এবং বাণিজ্যিক, সামরিক ও বৈজ্ঞানিক মহাকাশযান পাঠানোর জন্য স্পেস শাটল ব্যবহার করা হতো।[২]:III-৬৬, ৬৮, ১৪৮ উৎক্ষেপণের সময় এটি একটি অরবিটার, একটি এক্সটার্নাল ট্যাংক (ইটি) ও দুটি সলিড রকেট বুস্টার (এসআরবি) নিয়ে গঠিত।[৩]:৩৬৩ এই অরবিটারটি হচ্ছে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও ডানাযুক্ত যান, যাকে উল্লম্বভাবে উৎক্ষেপণ এবং গ্লাইডার হিসাবে অবতরণ করানো হয়।[২]:II-১ সমগ্র স্পেস শাটল কর্মসূচি জুড়ে পাঁচটি অরবিটার পরিচালনা করা হয়েছিল,[১]:5 যার মধ্যে কলম্বিয়া মহাকাশ যাত্রার জন্য প্রথম উপযুক্ত অরবিটার। এর আগে বায়ুমণ্ডলে পরীক্ষার জন্য এন্টারপ্রাইজ তৈরি করা হয়েছিল। এই অরবিটারে ক্রু কম্পার্টমেন্ট থাকত, যেখানে নভোচারীরা সমগ্র অভিযান জুড়ে থাকতেন ও কাজকর্ম করতেন।[২]:II-৫ অরবিটারের পিছনের দিকে তিনটি আরএস-২৫ ইঞ্জিন (স্পেস শাটল মেইন ইঞ্জিন) বসানো থাকত, যা উৎক্ষেপণের সময় প্রয়োজনীয় ঘাত প্রদান করত।[৩]:II-১৭০ মহাকাশে পৌঁছনোর পর অরবিটারের পিছনের দিকে দুটি ছোট অরবিটাল ম্যানুভারিং সিস্টেম (ওএমএস) ইঞ্জিন ব্যবহার করা হতো।[৩]:II-৭৯

অরবিটারের চারিদিকে তাপনিরোধক ব্যবস্থার (টিপিএস) এক স্তর থাকত, যা পুনঃপ্রবেশের সময় অরবিটারকে তাপের হাত থেকে রক্ষা করত। আগেকার মার্কিন মহাকাশযানে অপসারণকারী হিট শিল্ড ব্যবহার করা হতো, কিন্তু পুনঃব্যবহারের জন্য স্পেস শাটল অরবিটারে বহু ব্যবহারযোগ্য হিট শিল্ড ব্যবহার করার প্রয়োজন ছিল।[৪]:৭২–৭৩ পুনঃপ্রবেশের সময় টিপিএস-কে ১,৬০০ °সে (৩,০০০ °ফা) পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে হতো, কিন্তু অরবিটার যানের অ্যালুমিনিয়াম পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৮০ °সে (৩৫০ °ফা)-এর নিচে রাখতে হতো। এই টিপিএস মূলত চারটি সাবসিস্টেম নিয়ে গঠিত। স্পেস শাটল অরবিটারের অগ্রভাগ ও ডানার অগ্রভাগ ১,৩০০ °সে (২,৩০০ °ফা)-এর বেশি তাপমাত্রা সহ্য করত এবং সুরক্ষার জন্য সেখানে রিএনফোর্সড কার্বন-কার্বন (আরসিসি) ব্যবহার করা হতো। ১৯৯৮ সালে ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ড ও মহাকাশ বর্জ্য থেকে রক্ষা করার জন্য আরও পুরু আরসিসি চালু করা হয়েছিল।[২]:II-১১২–১১৩ অরবিটার যানের সমগ্র নিচের অংশে এবং অন্যান্য সবচেয়ে উত্তপ্ত পৃষ্ঠে কালো রঙের উচ্চ তাপমাত্রার পুনঃব্যবহারযোগ্য অন্তরক ব্যবহার করা হয়েছিল। অরবিটার যানের উপরের অংশে সাদা রঙের নিম্ন তাপমাত্রার পুনঃব্যবহারযোগ্য অন্তরক ব্যবহার করা হয়েছিল, যা ৬৫০ °সে (১,২০০ °ফা)-এর কম তাপমাত্রা থেকে সুরক্ষা প্রদান করত। পেলোড বেই দরজা এবং ডানার উপরের পৃষ্ঠে পুনঃব্যবহারযোগ্য পশমি অন্তরক ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখানে তাপমাত্রা ৩৭০ °সে (৭০০ °ফা)-এর নিচে।[৩]:৩৯৫

উড্ডয়ন[সম্পাদনা]

স্পেস শাটল অভিযান[সম্পাদনা]

এসটিএস-১০৭ অভিযানের সাতজন নভোচারী। বাম থেকে ডান: ব্রাউন, হাজবেন্ড, ক্লার্ক, চাওলা, অ্যান্ডারসন, ম্যাককুল, রামোন

এসটিএস-১০৭ অভিযানের সময় কলম্বিয়া মহাকাশযান স্পেসহ্যাব রিসার্চ ডবল মডিউল, অরবিটাল অ্যাক্সেলারেশন রিসার্চ এক্সপেরিমেন্ট ও এক্সটেন্ডেড ডিউরেশন অরবিটার প্যালেট বহন করেছিল।[৫]:৩০ এই অভিযানটি প্রি-লঞ্চ সার্টিফিকেশন লাভ করেছিল এবং উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এই অভিযানটি শুরু হয়েছিল। ২০০১ সালে ১১ জানুয়ারিতে এই মহাকাশযানটির উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ১৩ বার এই উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়েছিল এবং ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারিতে এর উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছিল।[৫]:২৮

২০০০ সালের জুলাই মাসে এসটিএস-১০৭ অভিযানের সাতজন নভোচারীদের বাছাই করা হয়েছিল।[৫]:২৮ রিক হাজবেন্ড এই অভিযানের কমান্ডার, যিনি মার্কিন বিমানবাহিনীর কর্নেল ও টেস্ট পাইলট ছিলেন। এর আগে তিনি এসটিএস-৯৬ অভিযানের সদস্য ছিলেন।[৬] উইলিয়াম সি. ম্যাককুল এই অভিযানের চালক, যিনি মার্কিন নৌবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।[৭] মাইকেল পি. অ্যান্ডারসন এই অভিযানের পেলোড কমান্ডার, যিনি মার্কিন বিমানবাহিনীর লেফটেনেন্ট কর্নেল ছিলেন। এর আগে তিনি এসটিএস-৮৯ অভিযানের সদস্য ছিলেন।[৮] ভারতীয় বংশোদ্ভূত কল্পনা চাওলা এই অভিযানের ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, যিনি এর আগে এসটিএস-৮৭ অভিযানের সদস্য ছিলেন।[৯] ডেভিড এম. ব্রাউনলরেল ক্লার্ক উভয় মিশন স্পেশালিস্ট হিসাবে প্রথমবার মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করেছিলেন এবং উভয়ই মার্কিন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন।[১০][১১] ইলান রামোন এই অভিযানের পেলোড স্পেশালিস্ট, যিনি ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর কর্নেল ছিলেন এবং তিনি প্রথম ইসরায়েলি নভোচারী।[১২][৫]:২৯

উৎক্ষেপণ[সম্পাদনা]

উৎক্ষেপণের ৮১.৯ সেকেন্ড পরে এক্সটার্নাল ট্যাংক থেকে বিচ্ছিন্ন ফোমের টুকরো অরবিটারের বাম ডানার উপর আছড়ে পড়েছিল।

পূর্বাঞ্চলীয় সময় অঞ্চল (ইএসটি) অনুযায়ী ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারিতে ১০:৩৯:০০ সময়ে কেনেডি স্পেস সেন্টার লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্পেস শাটল কলম্বিয়া উৎক্ষিপ্ত হয়েছিল। উৎক্ষেপণের ৮১.৭ সেকেন্ড (টি+৮১.৭ সেকেন্ড) পরে প্রায় ২১ থেকে ২৭ ইঞ্চি (৫৩ থেকে ৬৯ সেমি) দীর্ঘ ও ১২ থেকে ১৮ ইঞ্চি (৩০ থেকে ৪৬ সেমি) চওড়া ফোমের টুকরো এক্সটার্নাল ট্যাংকের বাম বাইপড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। টি+৮১.৯ সেকেন্ডে ঐ টুকরোটি ৬২৫ থেকে ৮৪০ ফুট প্রতি সেকেন্ড (৬৮৬ থেকে ৯২২ কিমি/ঘ) আপেক্ষিক বেগে কলম্বিয়া মহাকাশযানের বাম ডানার রিএনফোর্সড কার্বন-কার্বন (আরসিসি) আস্তরণের উপর আছড়ে পড়েছিল।[৫]:34 নিম্ন ব্যালেস্টিক গুণাঙ্কের জন্য এক্সটার্নাল ট্যাংক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাথে সাথেই ফোমের টুকরোটির বেগ কমে গিয়েছিল এবং অরবিটার এই ধীরগতির ফোমের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল।[৫]:60 তখন অভিযানের নভোচারী কিংবা গ্রাউন্ড ক্রু–কেউই এই আঘাতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেননি।[৫]:১৪০ টি+২ মিনিট ৭ সেকেন্ড সময়ে জোড়া এসআরবি এক্সটার্নাল ট্যাংক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং টি+৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময়ে এক্সটার্নাল ট্যাংক অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।[৫]:৩৫ অ্যান্ডারসন এক্সটার্নাল ট্যাংকের আলোকচিত্র তুলেছিলেন এবং ব্রাউন এটি নথিভুক্ত করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কেউই ফোমবিহীন বাইপডের কথা নথিভুক্ত করেননি।[৫]:১৪৮ টি+৪৩ মিনিট সময়ে কলম্বিয়া মহাকাশযান তার পরিকল্পনামাফিক কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল।[৫]:৩৫

পুনঃপ্রবেশ[সম্পাদনা]

২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে কলম্বিয়া মহাকাশযানের বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করে অবতরণ করার কথা ছিল।[৫]:৩৮ মহাকাশযানের ভিতরের নভোচারীরা জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছিলেন এবং পুনঃপ্রবেশের সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছিলেন।[১৩]:১.৫

ডিঅরবিট বার্ন[ক] করার ৪৫ মিনিট আগে হাজবেন্ড ও ম্যাককুল এন্ট্রি চেকলিস্ট অনুযায়ী কাজকর্ম করছিলেন।[১৩]:১.৬ ৮:১০ সময়ে ক্যাপসুল কমিউনিকেটর (ক্যাপকম) চার্লস ও. হোবঅ,[১৪] নভোচারীদের জানিয়েছিলেন যে তাঁদের ডিঅরবিট বার্ন সম্পন্ন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৮:১৫:৩০ সেকেন্ড সময়ে নভোচারীরা সফলভাবে ২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড ধরে ডিঅরবিট বার্ন সম্পন্ন করেছিলেন। ৮:৪৪:০৯ সময়ে ৪,০০,০০০ ফুট (১২০ কিমি) উচ্চতা থেকে কলম্বিয়া মহাকাশযান বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করেছিল এবং এই উচ্চতাকে এন্ট্রি ইন্টারফেস (entry interface) বলা হয়। মহাকাশযানটির বাম ডানায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দিয়ে তপ্ত বায়ু প্রবেশ করেছিল এবং অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো গলতে শুরু করেছিল।[৫]:9 এন্ট্রি ইন্টারফেসের সাড়ে চার মিনিট পর একটি সেন্সর বাম ডানায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি পরিমাণের বিকৃতি রেকর্ড করতে লেগেছিল। সেন্সরের উপাত্ত অভ্যন্তরীণ স্টোরেজে সঞ্চয় করা হয়েছিল এবং সেটি নভোচারী বা গ্রাউন্ড কন্ট্রোলারদের প্রেরণ করা হয়নি।[৫]:38 বাম ডানায় বেশি পরিমাণের ড্র্যাগের জন্য মহাকাশযানটি নিজ গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বামদিকে বেঁকে যাচ্ছিল, কিন্তু মহাকাশযানের ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমের সংশোধনের জন্য নভোচারীরা বা মিশন কন্ট্রোল এটি লক্ষ করতে পারেননি।[১৩]:১.৮ এরপর বাম চাকার সেন্সর তাপমাত্রা বৃদ্ধি রিপোর্ট করছিল।[১৩]:১.১০

৮:৫৭ সময়ে কলম্বিয়া মহাকাশযান। পুনঃপ্রবেশের সময় বাম ডানা (নিচে) থেকে কিছু টুকরো বেরিয়ে আসছে, যা এই চিত্রে স্পষ্ট। কার্টল্যান্ড বিমানবাহিনী ঘাঁটির স্টারফায়ার অপটিকাল রেঞ্জ থেকে এই চিত্র তোলা হয়েছিল।

৮:৫৩:৪৬ সময়ে কলম্বিয়া ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল অতিক্রম করেছিল; তখন এর গতিবেগ মাখ ২৩ ও উচ্চতা ২,৩১,৬০০ ফুট (৭০.৬ কিমি)। তখন ডানার অগ্রভাগের তাপমার আনুমানিক ২,৮০০ °ফা (১,৫৪০ °সে)।[৫]:৩৮ ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশযান থেকে কিছু টুকরো বেরিয়ে আসছিল, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশযানের চারিদিকের বায়ুর হঠাৎ করে ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি হিসাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। মিশন কন্ট্রোলের এমএমএসিএস আধিকারিক রিপোর্ট করেছিলেন যে ৮:৫৪:২৪ সময়ে বাম ডানার হাইড্রোলিক সেন্সরের পাঠ সেন্সরের ন্যূনতম পাঠের নিচে নেমে গিয়েছিল। কলম্বিয়া তার পুনঃপ্রবেশ চালিয়েছিল এবং ইউটা, অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকোটেক্সাসের উপর দিয়ে ভ্রমণ করেছিল। সেখানে পর্যবেক্ষকরা মহাকাশযান থেকে কিছু টুকরো বেরিয়ে আসতে দেখেছিল।[৫]:৩৯

টেক্সাসের উপর একটি অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের ক্যামেরা থেকে ভগ্ন স্পেস শাটল কলম্বিয়ার দৃশ্য।

৯:০০:১৮ সময়ে মহাকাশযানটি ভয়ঙ্করভাবে ভেঙে পড়েছিল এবং এর ভিতরের সমস্ত উপাত্ত রেকর্ডিং তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।[১৩]:১.২০ ভূপৃষ্ঠে পর্যবেক্ষকরা মহাকাশযান থেকে নির্গত টুকরোর সংখ্যার হঠাৎ বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছিল এবং ভিতরের সমস্ত ব্যবস্থা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিল। ৯:০০:২৫ সময়ে মহাকাশযানের সামনের ও পিছনের অংশ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।[১৩]:১.২১ ভিতরের হঠাৎ ঝাঁকুনির জন্য ক্রু কম্পার্টমেন্ট মহাকাশযানের কাঠামোর অভ্যন্তরীণ দেওয়ালের সঙ্গে আঘাত করেছিল, যার ফলে ৯:০০:৩৫ সময়ে ক্রু কম্পার্টমেন্টের বায়ুচাপ কমে গিয়েছিল।[১৩]:১.২২ মহাকাশযানের টুকরোগুলো আরও ছোট টুকরোতে ভেঙে যাচ্ছিল এবং ভেঙে যাওয়ার এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট টুকরোগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে তোলা ভিডিওর পক্ষে খুবই ছোট। ৯:৩৫ নাগাদ সমস্ত টুকরো ও নভোচারীদের দেহাবশেষ ভূপৃষ্ঠে পড়েছিল।[১৩]:১.৭৭

নভোচারীদের উত্তরজীবিতা[সম্পাদনা]

পুনঃপ্রবেশের সময় স্পেস শাটল কলম্বিয়ার সমস্ত সাতজন নভোচারীদের মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু তাঁদের সঠিক মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ক্রু কম্পার্টমেন্ট ভেঙে যাওয়ার সময় তাঁরা যে ত্বরণ অনুভব করেছিলেন তা মারাত্মক নয়।[৫]:৭৭ তাঁরা যে প্রাণঘাতী ঘটনা অনুভব করেছিলেন তা ক্রু কম্পার্টমেন্টের বায়ুচাপ হ্রাস। এই বায়ুচাপ হ্রাসের হার ও সঠিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু এটি ৯:০০:৫৯ সময়ের আগেই ঘটেছিল। নভোচারীদের দেহাবশেষ থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা সবাই বায়ুচাপ হ্রাস অনুভব করেছিলেন। নভোচারীদের শিরস্ত্রাণে একটি ভাইজর ছিল যা বন্ধ করলে নভোচারীকে সাময়িকভাবে বায়ুচাপ হ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারত। কিছু নভোচারী তাঁদের ভাইজর বন্ধ করতে পারেননি এবং একজন নভোচারী কোনো শিরস্ত্রাণই পড়েননি; অর্থাৎ কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার আগেই বায়ুচাপ দ্রুতহারে কমে গিয়েছিল।[১৩]:1.24[১৫]:১০৩

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. কক্ষপথ থেকে কোনো জ্যোতিষ্কে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি দহন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rogers, William P.; Armstrong, Neil A.; Acheson, David C.; Covert, Eugene E.; Feynman, Richard P.; Hotz, Robert B.; Kutyna, Donald J.; Ride, Sally K; Rummel, Robert W.; Sutter, Joseph F.; Walker, Arthur B.C.; Wheelon, Albert D.; Yeager, Charles E. (জুন ৬, ১৯৮৬)। "Report of the Presidential Commission on the Space Shuttle Challenger Accident" (পিডিএফ)। NASA। জুলাই ১৩, ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৩, ২০২১ 
  2. Jenkins, Dennis R. (২০১৬)। Space Shuttle: Developing an Icon – 1972–2013। Forest Lake: Specialty Press। আইএসবিএন 978-1580072496 
  3. Jenkins, Dennis R. (২০০১)। Space Shuttle: The History of the National Space Transportation System। Stillwater: Voyageur Press। আইএসবিএন 978-0963397454 
  4. Baker, David (২০১১)। NASA Space Shuttle: Owners' Workshop Manual। Somerset, UK: Zenith Pressআইএসবিএন 978-1844258666 
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; caib_report নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. "Rick Douglas Husband"। NASA। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। আগস্ট ১১, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০২২ 
  7. "William C. McCool"। NASA। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। জুলাই ১৪, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০২২ 
  8. "Michael P. Anderson"। NASA। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। জুলাই ১৪, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০২২ 
  9. "Kalpana Chawla" (পিডিএফ)। NASA। মে ২০০৪। ডিসেম্বর ২৯, ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০২২ 
  10. "David M. Brown"। NASA। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। জুলাই ১৪, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০২২ 
  11. "Laurel Blair Salton Clark"। NASA। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। জুলাই ১৪, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০২২ 
  12. "Ilan Ramon"। NASA। ফেব্রুয়ারি ২০০৩। জুলাই ১৪, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৫, ২০২২ 
  13. "Columbia Crew Survival Investigation Report" (পিডিএফ)। NASA। ২০০৮। SP-2008-565। জুলাই ২৫, ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২ 
  14. Hotz, Robert Lee (জানুয়ারি ৩১, ২০১৩)। "Decoding Columbia: A detective story"দ্য লস এঞ্জেলেস টাইমস। জুন ৪, ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৪, ২০২৩ 
  15. Stepaniak, Philip C.; Lane, Helen W.; Davis, Jeffrey R. (মে ২০১৪)। Loss of Signal: Aeromedical Lessons Learned from the STS-107 Columbia Space Shuttle Mishap (পিডিএফ)। Washington, DC: NASA। মার্চ ৩, ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]