সুখদেব থাপার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সুখদেব থাপর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
শহীদ সুখদেব থাপার
জন্ম১৫ মে, ১৯০৮
মৃত্যু২৩ মার্চ ১৯৩১(1931-03-23) (বয়স ২২)
জাতীয়তাভারতীয় বিপ্লবী

সুখদেব থাপার (১৫ মে ১৯০৮ - ২৩ মার্চ ১৯৩১) ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন শহীদ। তিনি শহীদ ভগৎ সিংহের এক অনন্য বন্ধু হিসাবেও পরিচিত।

কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

বিপ্লবী সুখদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৮ সালের ১৫ মে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে।[১] শৈশব থেকেই তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার দেখেছিলেন এবং এ কারণেই তিনি দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে বিপ্লবী দলে যোগ দেন। সুখদেবের বাবার নাম ছিল শ্রী রামলাল থাপার। তিনি প্রসিদ্ধ সামাজিক কর্মকর্তা ছিলেন। সুখদেবের জন্মের ২ বছর পরেই তার বাবার মৃত্যু হয়।[২] সুখদেবের লালন পালন তার কাকা শ্রী অচিন্তরাম থাপার-এর কাছেই হয়। সুখদেবের জন্মের সময় তার কাকা অচিন্তরাম জেলে সাজা খাটছিলেন। এইরকম বিপ্লবী বাতাবরণে সুখদেব বড়ো হচ্ছেন। সুখদেব যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল, গভর্নর তার বিদ্যালয়ে আসে। প্রধান শিক্ষকের আদেশে ছাত্ররা সবাই গভর্নর কে স্যালুট করে, কিন্তু সুখদেব তা করেনি। তখন সুখদেবকে জিজ্ঞাসা করা হল কেন সে গভর্নরকে স্যালুট করল না, সুখদেব পরিষ্কার বলে দিল, সে কোনো ইংরেজকে স্যালুট করবে না।

পরবর্তীতে সুখদেব আর ভগৎ সিং মিলে বিপ্লবী দলের কাজ চালিয়ে গেলো। একটা বাড়ী ভাড়া নিল। দিনের বেলায় বাইরে থাকত আর রাত করে ফিরত। এভাবেই বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো। এ কারণে সুখদেব নিজের মাকে সেই বাড়িতে নিয়ে এলো। এবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে উত্তর দিত সে কাজ করে, অনেক দূরে রাস্তার কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করে বাড়ি আসতে দেরি হয়।

সুখদেব অনেক সাহসী ছিল। লাহোরে যখন বোম বানানোর কাজ শুরু হল, তখন সে ফিরোজপুর থেকে বোমের মালপাতি নিয়ে আসতো। একবার মাল আনতে গিয়ে সিপাহীদের ধাবায় চলে গেছিল। সুখদেবকে অনেক মার খেতে হয়েছে। সুখদেব চুপচাপ মার খেতে থাকে, কিন্তু কিছু বলেননি, কারণ তার ঠোলিতে পিস্তল, কার্তুজ তথা বোম বানানোর মাল মসলা ছিল। একজন সিপাহী বললেন এই ঠোলিতে কি আছে, সুখদেব বুদ্ধির প্রয়োগ করে হেসে বলল—সিপাই জি পিস্তল আর কার্তুজ আছে, সিপাহীরাও হেসে ফেলল আর কথা ঘুরিয়ে গেলো।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘোষণা দি ট্রিবিউনের প্রথম পৃষ্ঠা

যখন সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করতে গিয়ে লাঠি চার্জে লালা লাজপত রায় মারা যান, তখন স্যান্ডার্সকে হত্যা করেছিল যে বিপ্লবীরা তাদের মধ্যে সুখদেব ছিল। এই ঘটনাটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং বিপ্লবীরা আর সারা দেশে আনন্দ উদযাপিত হয়েছিল। স্যান্ডার্স হত্যার মামলাটি 'লাহোর ষড়যন্ত্র' নামে পরিচিতি লাভ করে। এক্ষেত্রে শিবরাম রাজগুরু, সুখদেব এবং ভগৎ সিংকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালের ২৩ শে মার্চ, বিপ্লবীরা ফাঁসির ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে এবং দেশের যুবকদের হৃদয়ে স্বাধীনতা লাভের এক নতুন তাগিদ তৈরি করে। ফাঁসির সময় সুখদেবের বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর।[৩]

উত্তরাধিকার এবং স্মারক[সম্পাদনা]

সুখদেব, ভগত সিং এবং রাজগুরুর জন্য জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ

জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ[সম্পাদনা]

জাতীয় স্মৃতিসৌধটি ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে অবস্থিত। লাহোর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে শিবরাম রাজগুরু, ভগত সিং এবং সুখদেব থাপারের মরদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়। প্রতি বছর ২৩ শে মার্চ তাঁদের মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণে রেখে "শহীদ দিবস" উদযাপিত হয়। শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদিত হয়। [৪][৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Mark of a martyr - Sukhdev Thapar"The Tribune India। ১৩ মে ২০০৭। ২৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৮ 
  2. Pramod Maruti Mande (২০০৫)। Sacred offerings into the flames of freedom। Vande Mataram Foundation। পৃষ্ঠা 251। আইএসবিএন 978-81-902774-0-2 
  3. রায়, প্রকাশ (২০২০)। বিস্মৃত বিপ্লবী তৃতীয় খণ্ড। চেন্নাই: নোশনপ্ৰেস চেন্নাই তামিলনাড়ু। পৃষ্ঠা ৩৮-৪০। আইএসবিএন 978-1-63873-011-8 
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :22 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. "Five decades on, heritage status eludes Hussainiwala memorial"দ্য ট্রিবিউন (চণ্ডীগড়)। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৮