সুকুমারী দত্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুকুমারী দত্ত
১৯১০ খ্রিস্টাব্দে সুকুমারী দত্ত
জন্ম
গোলাপসুন্দরী

মাহেশ শ্রীরামপুর ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৯১০
জাতীয়তাভারতীয়
পেশা
  • অভিনেত্রী
  • গায়িকা
  • নাট্যকার
দাম্পত্য সঙ্গীগোষ্ঠবিহারী দত্ত (বি.১৮৭৫)
সন্তান১ কন্যা

সুকুমারী দত্ত ( ? - ১৯১০) (আসল নাম, গোলাপবালা বা গোলাপসুন্দরী বা গোলাপকামিনী) [১] ছিলেন ঊনিশ শতকের শেষের দিকে বাংলা থিয়েটারের একজন তারকা অভিনেত্রী, নাট্যকার। কীর্তন গায়িকা হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেন।[২]

জীবনী[সম্পাদনা]

ঊনিশ শতকের অবিভক্ত বাংলার গ্রামে জন্ম গোলাপসুন্দরীকে বৈষ্ণব পদাবলি গান শেখানোর উদ্দেশ্য তার মা তাকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। সম্ভবত শ্রীরামপুর মাহেশের কাছে গোলাপসুন্দরীর জন্ম। কলকাতায় সেসময় বেঙ্গল থিয়েটারে নারী চরিত্রে পুরুষেরাই অভিনয় করতেন। মাইকেল মধুসূদন চাইতেন বঙ্গ রঙ্গমঞ্চে নারী চরিত্রে মহিলারাই অভিনয় করুক। বিদ্যাসাগরের বিরোধিতা সত্ত্বেও মাইকেলের মত প্রতিষ্ঠা পেলে নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তার শর্মিষ্ঠা নাটকে যে চারজন মহিলা নিষিদ্ধ পল্লী হতে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে স্থান পান তাদের মধ্যে গোলাপসুন্দরী ছিলেন অন্যতমা। [৩]অভিনয়ের সঙ্গে সুকণ্ঠের অধিকারিণী ছিলেন তিনি। ওই নাটকে গোলাপ সুন্দরী নাম ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করলেও তাকে অভিনেত্রী হতে সাহায্য করেছিলেন 'গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার'-এর উপেন্দ্রনাথ দাস[৪] এখানে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২ জানুয়ারি তারই পরিচালিত ‘শরৎ-সরোজিনী’ নাটকে ‘সুকুমারী’ চরিত্রে অভিনয় করে গোলাপ সুন্দরী ‘সুকুমারী’ নামে পরিচিতা হন। [৫]

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই নাটকেরই অভিনেতা ধনী সূবর্ণসমাজের তরুণ গোষ্ঠবিহারী দত্তের সঙ্গে তার বিবাহ হয় এবং বিবাহের পর গোলাপসুন্দরী ''সুকুমারী দত্ত'' নাম নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ফেলে আসা জীবনের অভিশাপ মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। তাদের এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সামাজিক কারণে একসময় গোষ্ঠবিহারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় এবং গোষ্ঠবিহারী বিলেত চলে যান।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আর্থিক দুর্দশায় পড়ে, কন্যাসন্তানকে মানুষ করতে শেষপর্যন্ত সুকুমারী গৃহস্থ-জীবন ছেড়ে পুনরায় রঙ্গমঞ্চে আসেন। তার নিজের লেখা নাটক অপূর্ব্ব সতী নাটক মঞ্চস্থ হয় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল থিয়েটার আয়োজিত সুকুমারী-সাহায্য-রজনীতে। বিয়োগান্ত এই নাটকে 'নলিনী' ও তার স্বামী বিচ্ছিন্ন হলো ভদ্রসমাজের ষড়যন্ত্রে, ঠিক যেমন তিনি 'সুকুমারী' ও তার স্বামী 'গোষ্ঠবিহারি' পায়নি সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ। অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল নাটকটি। পরে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় তিনি বেঙ্গল থিয়েটারে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অশ্রুমতী’তে মলিনা'র চরিত্রে অভিনয় করেন। অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফীর চেষ্টায় সুকুমারীর অভিনয়নৈপুণ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছিল।

আনুমানিক ১৮৯০ খ্রী. অভিনয়-জীবন থেকে অবসর-গ্ৰহণ করেন।

অভিনীত নাটক—
  • সুরেন্দ্র-বিনোদিনী-তে নায়িকা - 'বিরাজমোহিনী'
  • পুরু-বিক্রম-এ (১৮৭৪) রাণী ‘ঐলবিলা’,
  • রজনী-তে ‘রজনী’,
  • কৃষ্ণকান্তের উইল-এ ‘রোহিণী’,
  • দুর্গেশনন্দিনী-তে 'বিমলা',
  • আনন্দমঠ-এ ‘শান্তি’,
  • বিষবৃক্ষ-এ 'সুরজামুখী'
  • মৃণালিনী -তে ‘গিরিজায়া’
  • অশ্রুমতি-তে (১৮৭৯) 'মলিনা'

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘অশ্রুমতী' নাটকে তার 'মলিনা' নাটক দেখে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আত্মকথা 'ঘরোয়া'-তে লেখেন -

অভিনয় হচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গে কথা মুখস্থ হয়ে যাচ্ছে। ‘মলিনা সেজেছিল সুকুমারী দত্ত। স্টেজ-নাম ছিল গোলাপী, সে যা গাইত! বুড়ো বয়সেও শুনেছি তার গান, চমৎকার গাইতে পারত। মিষ্টি গলা ছিল তার, অমন বড়ো শোনা যায় না। আর কী অভিনয়, এক হাতে পিদিমটি ধরে শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকতে ঢাকতে আসছে, যেন ছবিটি—এখনো চোখে ভাসছে’।

[৬]

সুকুমারী একজন কীর্তন গায়িকা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি সর্ব-মহিলা "হিন্দু মহিলা থিয়েটার" পরিচালনা করেন। শেষবয়সে তিনি বাড়ি বাড়ি গান গেয়ে বেড়াতেন। [৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Golap/Sukumari Dutta"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৩ 
  2. Smith, Bonnie G. (২০০৮)। The Oxford Encyclopedia of Women in World History (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford, UK: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 120। আইএসবিএন 978-0-19-514890-9 
  3. "প্রথম মহিলা নাট্যকার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৩ 
  4. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২০৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  5. Murshid, Ghulam (২০১৮)। Bengali Culture Over a Thousand Years (ইংরেজি ভাষায়)। Niyogi Books। আইএসবিএন 978-93-86906-12-0 
  6. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৪১)। 'ঘরোয়া’। বিশ্বভারতী। পৃষ্ঠা ৯৪।