বিষয়বস্তুতে চলুন

সালাহউদ্দিন আহমেদ অপহরণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সালাহউদ্দিন আহমেদ অপহরণ বাংলাদেশের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা ২০১৫ সালের মার্চে সংগঠিত হয়।[] তৎকালীন বিরোধীদলীয় মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজধানী ঢাকা হতে অন্তর্ধান হলে তার দল বিএনপি ও পরিবারের পক্ষ হতে দাবি করা হয় যে, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীসাংসদ সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার বাসা হতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে;[][] যদিও সরকারের তরফ থেকে তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করা হয়।[] দেশের অন্যতম প্রধান একটি দলের রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রীর এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ায় তা দেশে এবং বিদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং দেশি ও বিদেশী গণমাধ্যমে এটি নিয়ে সংবাদ প্রচার হয়।[][]

পরিচিতি

[সম্পাদনা]

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে সরকারি চাকুরীরত অবস্থায় সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করলে তার এপিএস হিসাবে নিয়োগ পান এবং তার আস্থাভাজন হিসাবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে প্রশাসনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে সরাসরি রাজনীতিতে চলে আসেন ও কক্সবাজার-১ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত দুটি সংসদ নির্বাচনেই এবং পরবর্তীতে ২০০১ সালের নির্বাচনেও জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রীসভায় যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।[] এসময় তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ও ২০১৩ সালে দলটির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রুহুল কবির রিজভী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ায় পর দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।[] বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

অন্তর্ধান

[সম্পাদনা]

২০১৫ সালের ১০ মার্চ তারিখে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে অপহৃত হন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী সালাহউদ্দিন আহমেদ।[] ঘটনাটি সম্পর্কে তার স্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করাকালীন ১০ মার্চ তারিখ রাত দশটার পর মোট ছয়টি গাড়িতে করে ২০/২৫ জন লোক এসে বাসার দারোয়ানকে ডিবির পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে দোতলার দরজা ভেঙে সালাহউদ্দিন আহমেদকে হাত ও চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।[] এসময় হতে পরবর্তী ২ মাসাধিককাল বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও তার কোনো হদিস বা সংবাদ পাওয়া যায়নি।[১০]

ফিরে আসা

[সম্পাদনা]

অপহৃত হওয়ার প্রায় দু’মাস পর ১১ মে ভারতের শিলংয়ের গল্ফ মাঠ এলাকায় তাকে পুনরায় দেখা যায় এবং স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে;[১০] যদিও সালাহউদ্দিন আহমেদ দাবী করেন যে, তিনি নিজে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে তাদেরকে নিজের পরিচয় দিয়ে জানান যে তাকে অপহরণ করে মুখ ঢেকে গাড়িতে কয়েকদিন ঘুরিয়ে এখানে এনে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে।[] উদ্ধারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বললে মেঘালয় রাজ্যের শিলং নগর পুলিশ তাকে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে পাঠায় এবং সেখান থেকেই তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় বাংলাদেশে তার স্ত্রীর নিকট ফোন করে তার অবস্থান ও ফিরে আসা সম্পর্কে জানান।[] পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট বাংলাদেশে পুনরায় ফিরে আসেন।[১১]

বিভিন্ন পক্ষের ভাষ্য

[সম্পাদনা]

বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ও পদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা দাবী করেন যে, সালাউদ্দীন আহমেদ আত্মগোপন করে আছেন।[][১০]

মামলা ও তদন্ত

[সম্পাদনা]

১২ মার্চ সালাহউদ্দিন আহমেদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন নিখোঁজ সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এবং এই আবেদনের শুনানি শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদকে ১৫ মার্চের মধ্যে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট; একই সাথে সালাহউদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া গেল কি-না সে বিষয়ে নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট ১২ এপ্রিল এই আবেদনটির নিষ্পত্তি করে বিজ্ঞ আদালত।[] অপরদিকে, পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করে মেঘালয় রাজ্য পুলিশের শিলং শহর কর্তৃপক্ষ।[][]

বিচার

[সম্পাদনা]

শিলং পুলিশ ভিসা ও পাসপোর্ট না থাকায় তার বিরোদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য বিদেশি আইনের অধীনে মামলা করলে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন বছর বিচার কার্য সম্পাদনের পর পুলিশের আনা অনুপ্রবেশের এই অভিযোগ নাকচ করে দেয় এবং একই সাথে তাকে দ্রুত বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনেরও নির্দেশ দেয়।[১২][১৩]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "সালাহউদ্দিন আহমেদ-এর আইন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পরেছে"। বিবিসি। ২১ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  2. "প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিরোধী দলকে ভয় দেখাতে অপহরণ নাটক -বিএনপি"। দৈনিক ইনকিলাব। ৫ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ 
  3. "নিখোঁজ সালাহউদ্দিন ভারতে গ্রেফতার"। দৈনিক ইত্তেফাক। ১৩ মে ২০১৫। ১৯ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ 
  4. "অপহরণ ঘোষণার আগেই ভারতে পালিয়েছেন সালাহউদ্দিন!"। দৈনিক জনকন্ঠ। ১৩ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "সালাহউদ্দিন রহস্যে যেসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না"। বিবিসি। ১৩ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ 
  6. "সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে রহস্যের জট"। ডয়েচ ভেল। ১৯ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ 
  7. "আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হাসিনা আহমেদ"মানবজমিন। ২০ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৯ 
  8. "বিএনপির নতুন মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ"দৈনিক যুগান্তর। ৩০ নভেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ 
  9. "অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে মামলা - নিখোঁজ সালাহউদ্দিন ভারতে গ্রেফতার"। ৪০, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫: ইত্তেফাক গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স লিঃ। ১৩ মে ২০১৫। ২৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  10. "সালাহউদ্দিন আহমেদ-এর আইন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পরেছে"। বিবিসি। ২১ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ 
  11. "দীর্ঘ ৯ বছর পর দেশে ফিরেছেন সালাউদ্দিন আহমেদ"। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২৪ 
  12. "সালাহউদ্দিন আহমেদ বেকসুর খালাস"দৈনিক মানবজমিন। ২৬ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯ 
  13. "দ্রুত দেশের মানুষের কাছে ফিরতে চাই: সালাহউদ্দিন আহমেদ"দৈনিক যুগান্তর। ২৮ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৯