বিষয়বস্তুতে চলুন

বাংলাদেশ সরকার

পরীক্ষিত
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার থেকে পুনর্নির্দেশিত)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
 
এক নজরে
প্রতিষ্ঠাকাল১৭ এপ্রিল ১৯৭১ (1971-04-17)
(অস্থায়ী সরকার)
রাষ্ট্র বাংলাদেশ
নেতাবাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
নিয়োগকর্তাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
মূল গঠনবাংলাদেশের মন্ত্রিসভা
যার প্রতি দায়বদ্ধজাতীয় সংসদ
বার্ষিক বাজেট৭,৯০,০০০ কোটি (২০২৫-২৬)[]
সদর দপ্তরবাংলাদেশ সচিবালয়
ওয়েবসাইটwww.bangladesh.gov.bd

বাংলাদেশ সরকার, আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, হলো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সরকার। এটি নির্বাহী বিভাগ (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীমন্ত্রিপরিষদ), আইনসভা (জাতীয় সংসদ) এবং বিচার বিভাগ (সুপ্রীম কোর্ট) - এই তিনটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত। একক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সকল নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত।

১৯৭১ সালে অস্থায়ী সরকার গঠন এবং অস্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচবার পরিবর্তিত হয়েছ। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সরকারের প্রধান ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের মধ্যমণি ও নির্বাহী প্রধান। বহুদলীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে এখানে জনগণের সরাসরি ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচিত হন। আইন প্রণয়ন করা হয় জাতীয় সংসদেবাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে ১৬ ডিসেম্বর প্রণীত হয়, এবং এখন পর্যন্ত এতে ১৭টি সংশোধনী যোগ করা হয়েছে।[][]

দাপ্তরিক প্রধান
দপ্তর নাম দল দায়িত্বগ্রহণের সময়
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগ ২৪ এপ্রিল, ২০২৩
প্রধানমন্ত্রী পদশূন্য[] পদশূন্য ৫ আগস্ট থেকে
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস[] স্বতন্ত্র ৮ আগস্ট, ২০২৪
সংসদের স্পিকার পদশূন্য[] পদশূন্য ৬ আগস্ট থেকে
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নিরপেক্ষ ১১ আগস্ট, ২০২৪

নির্বাহী বিভাগ

বাংলাদেশের সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নির্বাহী বিভাগ। এটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পরিচালিত হয়, যিনি অন্যান্য মন্ত্রীগণকে বাছাই করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীগণ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন, যা মন্ত্রিসভা নামে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাহী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

রাষ্ট্রপতি

সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সংসদীয় পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ পদমর্যাদার অধিকারী হলেন রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার ন‍্যূনতম বয়স ৩৫ বছর। জাতীয় সংসদ সদস্যদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হন। স্পিকার (সংসদের পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বে ছিল প্রধান বিচারপতি) রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান। নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ গ্রহণের পর থেকে তাঁর মেয়াদকাল ৫ বছর। আবার রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে পারেন স্পিকারের নিকট পদত্যাগপত্র দাখিলের মাধ্যমে। সংবিধানের ৫০(২) ধারা মতে কোনো ব্যক্তি ধারাবাহিক ২ বারের অধিক মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।

রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ৫৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ ও ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ নিতে হয় না। একই সঙ্গে তাঁর ওপর আদালত এর কোনো এখতিয়ার নেই। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার স্বয়ং। রাষ্ট্রপতি প্রধামন্ত্রীর পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন। তাঁর নিকট কোনো বিল পেশ করার ১৫ দিনের মধ্যে তা অনুমোদন করতে হয়, নচেৎ তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে অনুমোদিত হয়ে যায়। তবে অর্থ বিলে সম্মতি দানে তিনি বিলম্ব করতে পারবেন না। দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে শারীরিক বা মানসিক কোনো কারণে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যায়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন হলো বঙ্গভবন, যেটি রাজধানী ঢাকার মতিঝিল এলাকার দিলকুশায় অবস্থিত। প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) ও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) হলো রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় নিয়োজিত দুটি বিশেষ বাহিনী।

প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হবে। এই পদ ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদিগকেও নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। যেই সংসদ সদস্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হিসেবে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে হলে বয়স ন‍্যূনতম ২৫ বছর হতে হয়। তিনি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রী, যিনি প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশ সংবিধানের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা সংবলিত ৫৫ ও ৫৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের শীর্ষে থাকবেন এবং মন্ত্রিপরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন।[] তিনি একইসাথে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভাপতি (চেয়ারপার্সন)। ৫ আগস্টের পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি বাসভবন ছিল গণভবন, যা ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত। বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত।

মন্ত্রিসভা

বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রধান প্রতিষ্ঠান। আইনসভায় প্রণীত আইনের আলোকে মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে এবং সম্পাদিত কার্যাবলীর জন্য সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংসদের নিকট দায়বদ্ধ থাকে।

স্থানীয় সরকার

বাংলাদেশে তিন স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। এই স্তরগুলো যথাক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনে বিভক্ত।

আইন বিভাগ

বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। এটি একটি এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা এবং ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে ৩০০ জন সংসদ সদস্য জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। বাকি ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত, যেসব আসন সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে বণ্টিত হয়।

বিচার বিভাগ

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বেশিরভাগ মামলা প্রথমত নিম্ন আদালতে রায় দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে স্থানান্তরিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রায় কার্যকর করতে আর কোন বাধা থাকে না, তবে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অপরাধী কে রাষ্ট্রপতি চাইলে জীবন ভিক্ষা দিতে পারে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. প্রতিবেদক, নিজস্ব (২ জুন ২০২৫)। "বাজেট বক্তৃতা শুরু, ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০২৫
  2. "Nasim swipes at Khaleda"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৮ জুলাই ২০১১। ১৯ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১১
  3. Constitutional amendments, বাংলাপিডিয়া হতে।
  4. "Hasina resigns; interim govt to be formed; all offices to open Tuesday"
  5. "Muhammad Yunus takes oath as head of Bangladesh's interim government"
  6. "রাষ্ট্রপতির আদেশে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে"বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৪
  7. "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০২০