সর্বভারতীয় কৃষক সভা
সর্বভারতীয় কৃষক সভা अखिल भारतीय किसान सभा | |
---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | সহজানন্দ সরস্বতী |
প্রতিষ্ঠা | ১৯৩৬ |
বিভক্তি |
|
ভাবাদর্শ | কমিউনিজম মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ কৃষিবাদ প্রগতিবাদ |
রাজনৈতিক অবস্থান | বামপন্থা |
জাতীয় অধিভুক্তি | ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি |
ভারতের রাজনীতি রাজনৈতিক দল নির্বাচন |
সর্বভারতীয় কৃষক সভা (অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা, অখিল ভারতীয় কিষাণ সভা বা এআইকেএস নামেও পরিচিত) ছিল ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক ফ্রন্ট। ১৯৩৬ সালে সহজানন্দ সরস্বতী এই গুরুত্বপূর্ণ কৃষক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। তবে অংশ দুটি একই নামে পরিচিত: এআইকেএস (অজয় ভবন) এবং এআইকেএস (অশোক রোড)।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]কৃষকসভা আন্দোলন প্রথম শুরু হয়েছিল বিহারে, সহজানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে। তিনি কৃষকদের ভূ-সম্পত্তির অধিকারে জমিদারদের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কৃষকদের অভিযোগকে তুলে ধরার লক্ষ্যে ১৯২৯ সালে বিহার প্রাদেশিক কৃষক সভা (বিপিকেএস) গঠন করেছিলেন। এভাবেই ভারতে কৃষক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল।[১][২]
ধীরে ধীরে কৃষক আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে এবং সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায়; ১৯৩৪ সালে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি (সিএসপি) গঠন কম্যুনিস্টদের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে একত্রে কাজ করতে সহায়তা করেছিল।[৩] তবে ১৯৩৩ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ ভারতীয় কৃষক ও কৃষিশ্রমিক ফেডারেশনের যথাক্রমে সম্পাদক ও যুগ্ম-সম্পাদক এন.জি. রাঙ্গা এবং ই.এম.এস. নাম্বুদিরিপাদ প্রমুখ কৃষক নেতৃবৃন্দ একটি সর্বভারতীয় কৃষক সংস্থা গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল।[৪] এসব পরামর্শ আমলে নিয়ে ১৯৩৬ সালের ১১ এপ্রিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে সর্বভারতীয় কৃষক সভা (এআইকেএস) গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সরস্বতী সংস্থাটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।[৫] এছাড়াও দলটিতে রাঙ্গা, নাম্বুদিরিপাদ, কার্যনন্দ শর্মা, যমুনা কারযে, যদুনন্দন শর্মা, রাহুল সাংকৃত্যায়ন, পি সুন্দরায্য, রাম মনোহর লোহিয়া, জয়প্রকাশ নারায়ণ, আচার্য নরেন্দ্র দেব এবং বঙ্কিম মুখার্জীর মতো নেতারাও যোগদান করেছিলেন। ১৯৩৬ সালের আগস্টে প্রকাশিত কৃষক সভার ইশতেহারে জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ এবং গ্রামীণ ঋণ বাতিলের দাবি করা হয়। ১৯৩৭ সালের অক্টোবরে দলটি লাল পতাকাকে তাদের দলীয় পতাকা হিসেবে গ্রহণ করে।[৪] তবে কিছু দিনের মধ্যেই দলটির নেতাদের সাথে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়তে শুরু করে এবং বিহার ও যুক্ত প্রদেশে কংগ্রেস সরকারের সাথে তারা বারবার দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হন।[৪][৬]
১৯৩৬ সালেই বাংলায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভা গঠন করা হয়। মূলত, এ.কে ফজলুল হকের এর কৃষক প্রজা পার্টির কার্যকলাপকে প্রতিহত করতেই সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়। কৃষক সভার প্রথম বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন ১৯৩৬ সালের ১৬-১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। এ দলের মূল কর্মীরা ছিলেন আইন অমান্য, আন্দোলন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে গ্রেফতারকৃত প্রাক্তন দণ্ডিত অপরাধী ও আটক ব্যক্তিবর্গ। তবে তারা সাধারণ কৃষকদের মধ্যে অধিকারবোধ জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন। এছাড়া, ১৯৪০ সালে বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী নানকার, টঙ্ক, তেভাগা প্রভৃতি স্থানীয় আন্দোলনগুলো এ সংস্থার কর্মীদের দ্বারাই পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয়েছিল।[৭]
পরবর্তী বছরগুলোতে, সংগঠনটিতে ক্রমবর্ধমানভাবে সমাজতান্ত্রিক এবং কমিউনিস্টরা দ্বারা আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। ১৯৩৮ সালের দিকে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সভাপতিত্বে কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনটিতে[২] এই দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছিল।[৪] এরপর ১৯৪২ সালের মে মাসে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (যারা পরবর্তীতে ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে সরকারি অনুমোদন লাভ করে[৮]) সর্বভারতীয় কৃষক সভা অধিগ্রহণ করে নিয়েছিল। এই অধিগ্রহণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভাও অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সেখানে দলটির সদস্যসংখ্যাও যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।[৬] এটি কমিউনিস্ট পার্টির গণযুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং ১৯৪২ সালের আগস্টে শুরু হওয়া ভারত ছাড় আন্দোলন থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। এর ফলে, দলটিকে জনপ্রিয়তা হারাতে হয়। এমন কি, দলটির অনেক সদস্যও দলীয় আদেশ অমান্য করে এই আন্দোলনে যোগদান করে। রাঙ্গা, ইন্দুলাল ইয়াজনিক এবং সরস্বতীর মতো বিশিষ্ট সদস্যরাও খুব শীঘ্রই সংগঠন ত্যাগ করেন। যার ফলে ব্রিটিশপন্থী ও যুদ্ধ সমর্থকদের ছাড়া কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা তুলে ধরতে অসুবিধা হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজও সবসময় ভাবতো যে কমিউনিস্টরা তাদেরকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করবে।[৯]
১৯৬৪ সালে ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে, সর্বভারতীয় কৃষক সভাও দুইটি অংশে বিভাজিত হয়ে যায় এবং এই দুই অংশ কমিউনিস্ট পার্টির দুই অংশের সাথে যোগ দেয়।
বর্তমান সংস্থা
[সম্পাদনা]বর্তমানে দুটি সংস্থা এআইকেএস নামে কাজ করছে:
- সর্বভারতীয় কৃষক সভা (অজয় ভবন): ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত।
- সর্বভারতীয় কৃষক সভা (অশোক রোড): ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-এর সাথে যুক্ত।
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Swami Sahajanand and the Peasants of Jharkhand: A View from 1941 translated and edited by Walter Hauser along with the unedited Hindi original (Manohar Publishers, paperback, 2005).
- Sahajanand on Agricultural Labour and the Rural Poor translated and edited by Walter Hauser Manohar Publishers, paperback, 2005).
- Religion, Politics, and the Peasants: A Memoir of India's Freedom Movement translated and edited by Walter Hauser Manohar Publishers, hardbound, 2003).
- Swami And Friends: Sahajanand Saraswati And Those Who Refuse To Let The Past of Bihar's Peasant Movements Become History By Arvind Narayan Das, Paper for the Peasant Symposium, May 1997 University Of Virginia, Charlottesville, Virginia
- Bagchi, A.K., 1976, `Deindustrialisation in Gangetic Bihar, 1809- 1901' in Essays in Honour of Prof. S.C. Sarkar, New Delhi.
- Banaji, Jairus, 1976, "The Peasantry in the Feudal MOde of Production: Towards an Economic Model", Journal of Peasant Studies, April.
- Bandopadhyay, D., 1973, `Agrarian Relations in Two Bihar Districts', Mainstream, 2 June, New Delhi.
- Judith M. Brown, 1972, Gandhi's Rise to Power: Indian Politics, 1915–1922, London.
- Chaudhuri, B.B., 1971, `Agrarian Movements in Bengal and Bihar, 1919-1939' in B.R. Nanda, ed., Socialism in India, New Delhi.
- Chaudhuri, B.B., 1975, `The Process of Depeasantisation in Bengal and Bihar, 1885-1947', Indian Historical Review, 2(1), July, New Delhi.
- Chaudhuri, B.B., 1975a, `Land Market in Eastern India, 1793-1940', Indian Economic and Social History Review, 13 (1 & 2), New Delhi.
- Arvind Narayan Das, 1981, Agrarian Unrest and Socio-economic Change in Bihar, 1900-1980, Delhi : Manohar.
- Arvind Narayan Das (ed.),1982, Agrarian Movements in India : Studies on 20th Century Bihar, London : Frank Cass.
- Arvind Narayan Das, 1992, The Republic of Bihar, New Delhi : Penguin.
- Arvind Narayan Das, 1996, Changel : The Biography of a Village, New Delhi : Penguin.
- Datta, K.K., 1957, History of the Freedom Movement in Bihar, Patna.
- Diwakar, R.R., ed., 1957, Bihar Through the Ages, Patna.
- Mohandas Karamchand Gandhi, 1921, `The Zamindar and the Ryots', Young India, Vol. III (New Series) No. 153, 18 May.
- Mohandas Karamchand Gandhi, 1940, An Autobiography or The Story of My experiments in Truth, Ahmedabad.
- India, 1976, Bonded Labour System (Abolition) Act, 1976, New Delhi. JSES (Journal of Social and Economics Studies), 1976, `Sarvodaya and Development', Vol. IV No.1, Patna.
- Mishra, G., 1968. `The Socio-economic Background of Gandhi's Champaran Movement', Indian Economic and Social History Review, 5(3), New Delhi.
- Mishra, G., 1978, Agrarian Problems of Permanent Settlement: A Case Study of Champaran, New Delhi.
- Mitra, Manoshi, 1983, Agrarian Social Structure in Bihar: Continuity and Change, 1786–1820, Delhi : Manohar.
- Pouchepadass, J., 1974, `Local Leaders and the Intelligentsia in the Champaran Satyagraha', Contributions to Indian Sociology, New Series, No.8, November, New Delhi.
- Prasad, P.H., 1979, `Semi-Feudalism: Basic Constraint in Indian Agriculture' in Arvind N. Das & V. Nilakant, eds., Agrarian Relations in India, New Delhi.
- Shanin, Teodor, 1978, "Defining Peasants: Conceptualisations and Deconceptualisations: Old and New in a Marxist Debate", Manchester University.
- Solomon, S., 1937, Bihar and Orissa in 1934-35, Patna.
- Socialism in India, by Bal Ram Nanda, Nehru Memorial Museum and Library. Published by Vikas Publications, 1972.Page 205.
- A History of the All India Kisan Sabha, by Md. Abdullah Rasul. Published by National Book Agency, 1974.
- Peasants in History: Essays in Honour of Daniel Thorner, by Eric J. Hobsbawm, Daniel Thorner, Witold Kula, Sameeksha Trust.Published by Oxford University Press, 1981.
- Bihar Peasantry and the Kisan Sabha, 1936-1947, by Rakesh Gupta. Published by People's Pub. House, 1982.
- The Constitution of All India Kisan Sabha[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Encyclopaedia of Political Parties, by O. P. Ralhan, Published by Anmol Publications Pvt. Ltd., 2002. আইএসবিএন ৮১-৭৪৮৮-৮৬৫-৯. Page 1-10.
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Bandyopādhyāya, Śekhara (২০০৪)। From Plassey to Partition: A History of Modern India। Orient Longman। পৃষ্ঠা 523 (at p 406)। আইএসবিএন 978-81-250-2596-2।
- ↑ ক খ Peasant Struggles in India, by Akshayakumar Ramanlal Desai. Published by Oxford University Press, 1979. Page 349.
- ↑ Peasants in India's Non-violent Revolution: Practice and Theory, by Mridula Mukherjee. Published by SAGE, 2004. আইএসবিএন ০-৭৬১৯-৯৬৮৬-৯. Page 136.
- ↑ ক খ গ ঘ Mahatma Gandhi, by Sankar Ghose. Published by Allied Publishers, 1991. আইএসবিএন ৮১-৭০২৩-২০৫-৮. Page 262.
- ↑ Bandyopādhyāya, Śekhara (২০০৪)। From Plassey to Partition: A History of Modern India। Orient Longman। পৃষ্ঠা 523 (at p 407)। আইএসবিএন 978-81-250-2596-2।
- ↑ ক খ States, Parties, and Social Movements, by Jack A. Goldstone. Cambridge University Press, 2003. আইএসবিএন ০-৫২১-০১৬৯৯-১. Page 192.
- ↑ "বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১২।
- ↑ Caste, Protest and Identity in Colonial India: The Namasudras of Bengal, 1872-1947, by Shekhar Bandyopadhyaya. Routledge, 1997. আইএসবিএন ০-৭০০৭-০৬২৬-৭. Page 233.
- ↑ Peasants in India's Non-violent Revolution: Practice and Theory, by Mridula Mukherjee. Published by SAGE, 2004. আইএসবিএন ০-৭৬১৯-৯৬৮৬-৯. Page 347.