বিষয়বস্তুতে চলুন

সাটিরপাড়া কে.কে. ইন্সটিটিউশন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সাটিরপাড়া কে কে ইন্সটিটিউশন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ
অবস্থান
মানচিত্র

,
তথ্য
ধরনস্কুল ও কলেজ
নীতিবাক্যজ্ঞানই আলো
প্রতিষ্ঠাকাল১৯০১
প্রতিষ্ঠাতাস্বর্গীয় ললিত মোহন রায়
বিদ্যালয় কোড3010
ইআইআইএন112671
শিক্ষকমণ্ডলীপ্রায় ৭০জন
লিঙ্গছেলে
শিক্ষার্থী সংখ্যাপ্রায় ৩৫০০জন
ভাষাবাংলা
ওয়েবসাইটhttps://satirparakkinstitution.edu.bd

সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ নরসিংদী জেলার একটি প্রাচীন ও বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ। এর পূর্ববতী নাম "সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চবিদ্যালয়"। ১৯০১সালে তৎকালীন জমিদার ললিত মোহন রায় এই বিদ্যাপীঠ স্থাপন করেন। ২০১২ সালে এখানে কলেজ শাখা চালু হয়। বর্তমানে এখানে মোট শিক্ষক- শিক্ষিকা আছেন প্রায় ৭০ জন। বর্তমানে এর স্কুল ও কলেজ ২ টি শাখাই আছে। । বর্তমানে এর স্কুল পর্যায়ে ৩৫০০ ছাত্র এবং কলেজ পর্যায়ে ৩০০ ছাত্র ছাত্রী আছে। এটি প্রায় ৩০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত।

ললিত মোহন রায় এর নিজস্ব সাড়ে পাঁচ একর জমির উপর পিতা কালী কুমার রায়ের নামানুসারে ১৯০১ সালের ১ মার্চ ঢাকার পূর্বাঞ্চলে সর্ব প্রথম সবচেয়ে পুরাতন ঐতিহ্যমন্ডিত ইংরেজি বিদ্যালয়- সাটিরপাড়া কে. কে. ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে সাটিরপাড়া কালী কুমার উচ্চ বিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক অংশের সাথে কলেজ অংশটি সংযুক্ত হয়। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানের নাম পুনরায় সংশোধন করে রাখা হয় সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ।

ভৌগোলিক অবস্থান

[সম্পাদনা]

নরসিংদী শহরের দক্ষিণ পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা মেঘনা এবং উত্তরদিকে পীচঢালা প্রশস্ত রাজপথ রয়েছে। মাঝখানে ছায়াঢাকা পাখিডাকা কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ছাওয়া “সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন” বিদ্যাপীঠটি নরসিংদী শহরের ৬নং ওয়ার্ডস্থিত সাটিরপাড়ায় অবস্থিত।

ভৌত অবকাঠামো

[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো ভাল, নিজস্ব অখন্ড জমির পরিমাণ ৫৪১ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটক সহ মোট ২টি ফটক রয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাঙ্গণ বাউন্ডারী ওয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। বর্তমানে মূল ভবনটি দুই তলা বিশিষ্ট। এর পেছনে চারতলা বিশিষ্ট আরো একটি ভবন রয়েছে। মূল ভবনের সামনে রয়েছে দুই তলা বিশিষ্ট কলেজ ভবন। কলেজ ভবনের সামনে দৃষ্টিনন্দনীয় একটি পুকুর এবং তার সামনে রয়েছে একটি মসজিদ। এর সবকিছুই রয়েছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সীমানার ভিতরে। প্রতিটি ভবনের কক্ষগুলি বড় এবং সুপ্রশস্থ। সকল শিক্ষার্থীর সুবিধার জন্য অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, স্বয়ংসম্পূর্ণ বিজ্ঞানাগার ও অত্যাধুনিক ল্যাপটপ, কম্পিউটার সমৃদ্ধ স্মার্ট ক্লাসরুম রয়েছে। আসবাবপত্র এবং শিক্ষাপোকরণ যথার্থ রয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক শৌচাগার রয়েছে। অধ্যক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীর দপ্তর স্কুল ও কলেজ শাখার শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য পৃথক পৃথক মিলনায়তন ও শৌচাগার রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিক জ্ঞান লাভের জন্য একটি পাঠাগার ও পত্রিকার ব্যবস্থা রয়েছে। নিজস্ব মসজিদ ও নান্দনিক শহীদ মিনার স্কুল ও কলেজের আবহ এবং অবয়বকে সমৃদ্ধ করেছে। শৈল্পিক দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীঃ

[সম্পাদনা]

শিক্ষার্থী ছেলে মেয়েদের জন্য পৃথক ইউনিফরম ও স্কুল ব্যাজ রয়েছে। প্রাথমিক শাখায় আকাশী শার্ট ও ব্লু হাফপ্যান্ট। মাধ্যমিক শাখায় সাদা শার্ট ও ব্লু প্যান্ট, উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় ছেলেদের পেস্ট কালার শার্ট ও কালো প্যান্ট, মেয়েদের সাদা সালোয়ার কামিজ ও উপরে পেস্ট কালার এপ্রন।

লেখাপড়া ও ফলাফলঃ

[সম্পাদনা]

প্রতিদিন সকাল ১০.০০ ঘটিকায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরম্ভ হয় এবং ৪.০০ ঘটিকায় শেষ হয়। কলেজ ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮.৩০ মিনিটে শেষ হয় ১.০০। বৎসরে তিনটি সাময়িক পরীক্ষা ছাড়াও মাসিক ও সাপ্তাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। পি.এস.সি, জে.এস.সি এবং এস.এস.সি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীগণ উল্লেখযোগ্য ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত তিন বছরের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের গড় পাশের হার ৯৮% এ উন্নীত হয়েছে। এস.এস.সি পরীক্ষায় শিক্ষা বোর্ডের মেধা তালিকায় একাধিকবার শিক্ষার্থী স্থান লাভ করার গৌরব অর্জনে সক্ষম হয়েছে। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় এবং প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সাধারণ গ্রেডসহ টেলেন্টপুলে বৃত্তি প্রাপ্তি অব্যাহত রয়েছে।

সহপাঠ্য ক্রমিক কার্যাবলীঃ

[সম্পাদনা]

পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমিক কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণ উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সুবিশাল খেলার মাঠ রয়েছে। কলেজ মিলনায়তনে টেবিল টেনিস খেলার উপকরণ, ক্রিকেট সেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, হকিসেট রয়েছে।

যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থাঃ

[সম্পাদনা]

নরসিংদী জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত বিধায় সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করার সুব্যবস্থা বিদ্যমান। শহরের যে কোন স্থান থেকে স্বল্প পরিসরে অতি সহজেই নিরাপদে এখানে পৌছানো যায়।

শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানঃ

[সম্পাদনা]

নরসিংদী জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ।

কৃতী শিক্ষার্থীঃ

[সম্পাদনা]

সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজের সৃজন হিসেবে আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী, রাজনীতিক, প্রশাসক, শিল্পপতি, খ্যাতনামা শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, অগণিত গুণিজন এবং সুধীজন রয়েছেন।

পাঠদান শাখা ও বিষয়ঃ

[সম্পাদনা]

এখানে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষাসহ বর্তমান ক্যারিকুলামের সকল বিষয়, যথাযথভাবে পাঠদান করা হচ্ছে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

সাটিরপাড়া স্কুল ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন জমিদার ললিতমোহন রায়।

১৯০১ সালের ১ মার্চ নরসিংদীতে তৎকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহকুমার মধ্যে এবং নারায়ণগঞ্জ শহরের বাইরে ঢাকার পূর্বাঞ্চলে সর্বপ্রথম, সবচেয়ে পুরাতন ও ঐতিহ্যমন্ডিত ইংরেজি বিদ্যালয়টি- সাটিরপাড়া কে. কে. ইনস্টিটিউশন নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে এটা সাটিরপাড়া কালীকুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ নামে সু-পরিচিত।

স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রথম অবৈতনিক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন গফরগাঁও থানার শীতল চন্দ্র চক্রবর্তী। প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন দীননাথ মোদক, প্রতাপ চন্দ্র দাস, বিপিন চন্দ্র রায়।

১৯০৪ সনে সর্বপ্রথম এই বিদ্যালয় থেকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাটিকুলেশন পরীক্ষায় মাত্র ১১ (এগার) জন ছাত্র অংশ গ্রহণের মাধ্যমে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার দ্বার স্বগর্বে উন্মোচিত হয়। সে সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন শীতলচন্দ্র চক্রবর্তী।

১৯৬৪ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রী যুগেশ চন্দ্র সেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শ্রী হরেন্দ্র চন্দ্র সাহা। তিনি প্রয়াত হলে পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শ্রী রবীন্দ্র কুমার মৌল্লিক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় ১১ বছর কারাবরণ করেন।

পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিবাসী জনাব আঃ হালিম সাহেব। সেই সময়টাতে বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার। পরবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে আসেন জনাব সিরাজ উদ্দিন ভূইয়া।

১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন জনাব খন্দকার আঃ রহিম সাহেব। তিনি প্রায় ৩৫ বৎসর কর্মরত ছিলেন।

২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটির কলেজ অংশ এমপিওভুক্তির গৌরব অর্জন করে।

স্বদেশী আন্দোলনে অবদান

[সম্পাদনা]

এই স্কুল থেকে যেসব ছাত্র গুরুত্বপূর্ণ তাদের একজন হচ্ছেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজ। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সময় সেখানকার ছাত্র ছিলেন। সেসময় এখানে দুজন শিক্ষক ছিলেন মহিম চন্দ্র নন্দী এবং শীতল চক্রবর্তী। মহিম চন্দ্র নন্দী বিলাতী লবণ ফেলার অপরাধে ঢাকা জেলে বন্দি ছিলেন কিছুদিন। ১৯০৯ সালে ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী প্রথমবার জেল থেকে ছাড়া পেলে জেলগেটে শীতল চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ২৬, ৪৬-৪৭।